দেশের ব্যবসায়ীক মুল কেন্দ্র হিসাবে নারায়ণগঞ্জকে একটা সময় প্রাচ্যের ডান্ডি বলা হতো।সেই নারায়ণগঞ্জ আর বর্তমান নারয়ণগঞ্জ ব্যবসায়ীক কিংবা নাগরিক সুযোগ সুবিদার পাওয়া না পাওয়ার মাঝে কিছুটা তারতম্য থাকলেও ক্ষমতায়ণে ক্ষমতা ধরে রাখতে  ক্ষমতা পেতে যুগ যুগ ধরে বেশ লড়াই দেখতে পাই।

চলমান ধারাবাহিকতায় দেশে স্থানীয় নির্বাচন আসে এরপর জাতীয় নির্বাচন।৮০/৯০ দশকে  নির্বাচন সামনে এলে কিংবা নির্বাচনকালীন সময়ের যে পরিবেশটা ছিলো তা এখন আর খুজে পাওয়া যায় না। এর কারনও অবশ্য অনেক আছে। সেসময় সারা গ্রাম মিলে একটা ভালো নেতা পাওয়া তেমন একটা টাফ ছিলো না।তখন রাজনীতি মানে নেতাকে গরীবি হালে বসবাস করা।আর এখন নেতার অভাব নাই।ঘরে ঘরে নেতা,একই পরিবারে সবায় চায় নেতা হতে।এর মুলে আছে অর্থনিতির শক্ত একটা অবস্থান।প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জ বানিজ্যিক হওয়ায় এখানে রয়েছে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সেই সাথে রয়েছে ব্যবসায়ীক কারনে বিভিন্ন জেলার লোকজনের বসবাস।রয়েছে অসংখ্য পাতি নেতা চাদাবাজ যারা প্রভাবশালী ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় বসবাস করেন।

এখন নেতা হওয়া মানেই তার আর পিছে ফিরে তাকাতে হলো না।জীবনের যত আয়েশ আছে সব উপভোগ করা তার পক্ষে ব্যাপারই না। আর ক্ষমতাতো আছেই- যা দিয়ে দিনকে রাত করা রাতকে দিন করা ক্ষমতাবানদের হাতের ময়লা।রাজনৈতিক দলসহ আমরা জনগনরা এই তাদেরই আবার ভোট দেই যাদের আছে এক কালো অধ্যায়ের জীবন।সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে মিশিয়ে দেয় নেশা,মাদকের কারখানা আর ত্রাসের রাজত্য বানায় পাড়া মহল্লায়।

সিদ্ধিরগঞ্জের আরেক নেতা এলাকার গর্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা বিএনপির সাবেক সাংসদ গিয়াস উদ্দিনের ইউপি নির্বাচনগুলোতে দেখেছি,ভোটাররা তাদের অর্থ ব্যায়ে তাকে নির্বাচিত করান।কায়িক পরিশ্রমতো আছেই।মিছিল যখন শুরু হতো তখন প্রতি বাড়ী হতে হতে মিছিলে মানুষ শরিক হতো। অনেক রাত্র পর্যন্ত নির্বাচনী ক্যাম্পগুলোতে আড্ডা হত।শীতের ঠান্ডায় রং চা আর টুস বিসকিটের কর কর শব্দে মন স্বপ্ন দেখতো ভবিষৎ সুন্দরের।তখনো প্রতি দন্দ্বিতা ছিলো কিন্তু হিংশ্রতা ছিলো অপেক্ষাকৃত অনেক কম।

এখন সব স্থানেই কমার্শিয়াল হয়ে গেছে ভোটাভোটির ক্ষেত্রেও বাকি নেই।তবে জনগন যে কি জিনিস সেটা বুঝা মুশকিল।এখনকার পাবলিকের বাহিরে এক কথা ভেতরে অন্য কথা।কখন যে কাকে সাপোর্ট দিয়ে দেয় এটা নির্ভর করে ইজম সৃস্টির উপরে।এবারে ইজম সৃস্টির মাঝে নারায়নগঞ্জবাসী পরিবর্তন চায়।কেনো পরিবর্তন চায় তাদের অভিযোগগুলো শুনি৴

সাফল্য ব্যার্থতা সব মিলিয়েই  দীর্ঘ ১৮ বছর আইভি সিটি কর্পোরেসন চালিয়ে আসছেন।নির্বাচনকালীন আইভির ইসতেহারে যে সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বা প্রতিশ্রুতি ছিলো তার কতটুকুই বা বাস্তবায়ণ করা হয়েছিলো?

আসুন সংক্ষিপ্ত ভাবে জনগণের অভিযোগগুলো জেনে নেই।

০১।যানজট নিরসনে নতুন বাস ট্রাক টার্মিনাল নির্মান করা
০২।৫নং ঘাট দিয়ে শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মান করা
০৩।শতভাগ স্যানিটেসন নিশ্চিৎ করা
০৪।পানি সরবাহের নিশ্চিৎ করা।
০৫।নাগরিক সুযোগ সুবিদার নিশ্চিৎ করতে তথ্যপ্রযুক্তির অটোমেশন করা।
০৬।আপদকালীন পরিকল্পনা।
০৭।জলবায়ু ঝুকি ও ক্ষতিগ্রস্তদের মুল্যায়ন করা।
০৮।গ্রীন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ
০৯।সিআইপি ক্যাপিটেল ইনভেস্টম্যান্ট প্লান।
১০।কাচা বাজার উন্নয়ন ও ফুটপাত উদ্ধার।
১১।মেডিকেল কলেজ ও টেকনিক্যাল কলেজ নির্মাণ করা ।
১২।নারীর ক্ষমতায়ণে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
১৩।নাগরিক সেবা নিশ্চিৎকরণে ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করা।
১৪।দূষিত পানির শীতলক্ষ্যাকে দূষনমুক্ত করা।

শীতলক্ষ্যা নদীর পানি এতোটাই দূর্গন্ধ আর কালো যে এক সময় যে পানি খাওয়ার উপযোগী ছিলো তা এখন হাতমুখ ধৌত করার কাজেও ব্যবহার করা যায় না।পানির এমন ভয়ংকর রকম দূষণে মুল দায়ী ইন্ড্রাষ্ট্রিজ মালিকদের ডাইংকৃত ক্যামিকেল ও অন্যান্য বিষাক্ত বর্জ্য নির্ধিদায় শীতলক্ষ্যায় ফেলেন।মেয়র সহ সবাই বিষয়টি জানেন তবুও এর বিপক্ষে মেয়র সহ কেউ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

১৫।শীতলক্ষ্যার দুই পাড় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শেষ হয়নি।
১৬।সিটিতে একটিও পাবলিক টয়লেট নেই
১৭।ড্রেনেজ অবস্থার কোন উন্নতি নেই।বৃষ্টির একটু জলেই শহর নগর জলে ডুবে যায়।
১৮।আধুনিক মানসম্পর্ণ কোন মেডিক্যাল কলেজ কিংবা টেকনিক্যাল কলেজ নেই।
১৯। মশা পোকা মাকর নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভুমিকা ছিলো না।
২০। চাষাড়া এক শহীদ মিনার স্থান ছাড়া সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কোন পাবলিক অডিটরিয়াম নেই।
২০। খানপুর হাসপাতালের চিকিৎসার মান ও সেবা অনেকটা ভঙুর।নতুন কোন আন্তজার্তিক মানের হাসপাতাল নেই।
২১।খেলাধুলার অকেজু এক ওসমানী স্টেডিয়াম ছাড়া বড় আর কোন মাঠ নেই।

এ ছাড়াও আরো অসংখ্য প্রতিশ্রতি অনেকটা মুখ থুবরেই পড়ে আছে। শুধু মাত্র রাস্তাঘাট আর লাইটিং করতেই আইভির চলে যায় ১৮টি বছর তবুও শেষ হয়নি।বাকী কাজগুলো করতে তাকে আরো ১৮ বছর সময় দিতে হবে।এসব কথা শুধু আমার একার নয় এসব কথা সাধারন মানুষের।তাদের মতে মেয়র যে ভাবে যেই পরিমান হোল্ডিট্যাক্স সহ অন্যান্য ট্যাক্স নিয়েছেন তা বিগত কারো আমলেই এমন ভাবে আদায় করেনি-করতে পারেনি।আরো অভিযোগ আছে যে,কাজের টেন্ডার হলে একমাত্র মেয়রের পছন্দকৃত টেন্ডারবাজরাই টেন্ডার পান।

দিন শেষে অন্ধকারে নিমজ্জিত নারায়নগঞ্জের আনাচে কানাচে নতুন নতুন পাকা রাস্তা আর আলোতে শহরবাসী বসবাস করছেন কত কাল পর ? কেন? সেই সময়টুকুতে কি নারায়ণগঞ্জে অভিভাবক শুন্য ছিলো?এমন প্রশ্ন এবং উত্তর আমাদের সবার জানা আছে।

দেশ স্বাধীন পূর্ব ও স্বাধীনতার পর হতেই নারায়নগঞ্জে দুটি পরিবারই ক্ষমতাধর।পালাক্রমে তারাই সামাজিক,রাজনৈতিক,অর্থনৈনিক সর্বোক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তারা হলেন শামীম ওসমান পরিবার এবং মেয়র আইভির পরিবার।তাদের কেউ না কেউ নারায়ণগঞ্জকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন বা এখনো করছেন।দুটি পরিবারই আওয়ামীলীগের পরীক্ষিত পরিবার।প্রায় পাঁচ দশক যাবৎ তারা একে অন্যের উপর ক্ষমতা আর অহমিকার স্বরূপ প্রকাশে বাকযুদ্ধ করে চলছেন।তাতে তাদের ক্ষতির চেয়ে জনগনের ক্ষতিই বেশী।তাদের সম্মেলিত প্রয়াসে সারা দেশে নারায়ণগঞ্জ হয়ে উঠতে পারতো উন্নয়ণ আর নাগরিক সুযোগ সুবিদা পাওয়ার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত- নজির।

মতবেত শুরু.......

১৯৭৩ সালে পৌরসভা নির্বাচনে উভয় পরিবার আওয়ামীলীগ দল হতে সমর্থণ পাওয়ার বিবাদে জড়িয়ে পড়েন।সে সময় আলী আহম্মদ চুনকা আওয়ামীলীগ দল হতে সমর্থন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসাবে ভোটে লড়াই করেন।খান সাহেব ওসমান আলীর সন্তান শামসুজ্জোহা পরিবার সমর্থিত এবং আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী খোকা মহিউদ্দিন- আলী আহম্মদ চুনকার নিকট বিপুল ভোটে হেরে যান এবং পৌর প্রশাসক হিসাবে নির্বাচিত হন আইভির পিতা আলী আহম্মদ চুনকা।

শুরু হয় দুই পরিবারের রাজনৈতীক লড়াই।১৯৮০ সালেও জেলা আওয়ামীলীগ নারায়ণগঞ্জের নেতৃত্ব নিয়ে শামসুজ্জোহা আলী আহম্মেদ চুনকার কাছে হেরে যান।নারায়নগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব পান আইভির পিতা আলী আহম্মদ চুনকা।১৯৮৪ সালে আইভির পিতা আলী আহম্মদ চুনকার মৃত্যু ১৯৮৫ সালে সেলিনা হায়াৎ আইভি লেখাপড়ার জন্য বিদেশে অবস্থান করছিলেন।

১৯৯২ সালে আইভি দেশে এসে শহর আওয়ামীলীগের স্বাস্থ ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হন।আবারো বিদেশ সফর ফিরে আসেন ২০০৩ সালে পৌর নির্বাচনের ঠিক কয়েক দিন আগে এবং নির্বাচন করে জয়ী হয়ে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়াম্যান নির্বাচিত হন।

আবারো বাকযুদ্ধ প্রকাশ্যে আসে ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জের প্রথম সিটি মেয়র নির্বাচনে।তখন আওয়ামীলীগ সমর্থিত শামসুজ্জোহা পুত্র শামীম ওসমান ও চুনকা কন্যা আইভির সাথে লড়াইয়ে পূর্বের ন্যায় বিপুল ভোটে জয়ী হন আইভি।এমন কি শামীম ওসমানকে প্রায় ১লক্ষ ভোটের ব্যবধানে হারায়।এরপর হতে দুই পরিবারের মাঝে আবারো শুরু রাজনৈতিক কাদা ছুড়াছুড়ি।বাকযুদ্ধে লিপ্ত হন একে অন্যে।এই বাকযুদ্ধ ক্রমান্নে প্রকাশ্যে হতে থাকে।আইভির অভিযোগ ছিলো শামীম ওসমাধ গড ফাদার।ত্বকী হত্যা সহ সেভেন মার্ডারেও শামীম ওসমানকে জড়িয়ে কথা বলেন।এমন কি টিভিতে একটি টক শোতেও ছিলো অপ্রত্যাশিত একটি ঘটনা।

এবার ২০২২ সালের সিটি নির্বাচনের ন্যায় গতবার সিটি নির্বাচনেও ছিলো শামীমওসমান আইভির পরস্পর বিপক্ষ অবস্থান।কাদা ছুড়াছুড়ির সর্বোশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে প্রার্থী আইভির পক্ষ নিলেও আইভির লোকের অবিশ্বাসের প্রমান দিতে শামীম ওসমান বেআইনি ভাবে ভোট দেয়ার ব্যলট পেপার শো করতে হয়েছিলো।

নির্বাচীত মেয়র আইভির মতে সিটির উন্নয়ণমুলক ও জনস্বার্থে কাজ করতে গিয়েও পেয়েছেন ওসমান পরিবার হতে বিভিন্ন ধরণের বাধা।সাংসদ সেলিম ওসমানের সহযোগীতায় নিতাই গঞ্জের অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করতে পারলেও কিছু দিন যেতে না যেতেই নিতাইগঞ্জ আবারো সেই আগের অবস্থায় চলে আসে।নগরবাসীর চলাচলের পথ ফুটপাতের পেতি নেতারা দখল করে রাখলেও এর স্থায়ী সমাধানে আইভির সদিচ্ছা থাকলেও ওসমান পরিবারের শামীম ওসমান যেহেতু সে জনপ্রতিনিধি তাই সে হকারদের পক্ষ নেন।তারপরও আইভির চেস্টায় হকার উচ্ছেদ হয় এবং কিছু দিন অতিবাহিত হবার পর আবারো আগের রূপে হকাররা ফুটপাত দখল করে এখনো ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ওসমান পরিবার ও আলী আহম্মদ চুনকা পরিবারে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।

শামীমওসমানের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ঃ খান সাহেব ওসমান আলী ১৯০০ সালেতৎকালীন বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দিতে জন্মগ্রহন করেন।ত্রিশের দশকের দিকে তিনি নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসা করতেন এবং একটা সময়ে তারা নারায়ণগঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা হন।১৯৪৬ সালে খান সাহেবের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয়।তৎকালে নবাব হাবিবুল্লাহ্ পরাজিত করে প্রথম এমএলএ নির্বাচিত হন।এর আগে ১৯৩৫ সালে খান সাহেব ঐতিহাসিক বায়তুল আমান গড়েন।তাদের পরিবারের দাবী এবং লোকমুখে জানা যায় ১৯৪৯ সালে এই বায়তুন আমানে বঙ্গবন্ধুর পদ চারণায় প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের বৃহৎ ও একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকৃত দল আওয়ামীলীগ।১৯৭১ সালে খান সাহেব ওসমান আলীর মৃত্যুর পর ওসমান পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্ম একে এম শামসুজ্জোহা রাজনিতীতে আসেন।১৯৭০ সালে তিনি প্রাদেশিক সরকারের পরিষদ সদস্য নির্বাচীত হন।
১৯৭৩ সালে শামসুজ্জোহা সরকারের সাংসদ।মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে বাংলাদেশ সরকার ২০১২ সালে মরনোত্তর স্বাধীনতা পদক প্রদান করেন।শামসুজ্জোহার মৃত্যুর পর তার তিন ছেলের এক ছেলে নাসিম ওসমান সে সময় জাতীয় পার্টির সাংসদ নির্বাচীত হন।তার মৃত্যুর পর নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনে ব্যবসায়ীক ভাবে পরিচিত সেলিম ওসমান সাংসদ নির্বাচীত হন।১৯৯৬ সালে শামসুজ্জোহার তৃতীয় ছেলে বর্তমান নারায়ণগঞ্জের জনপ্রিয় নেতা একেএম শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সাংসদ নির্বাচীত হন যা এখনো বহাল আছেন।

সেলিনা হায়াৎ আইভির সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

সেলিনা হায়াৎ আইভি তিনি দেশের প্রথম নারী মেয়র হন ২০১২ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেসন নির্বাচনে।তার পিতাও আলী আহম্মদ চুনকাও ছিলেন নারয়ণগঞ্জবাসীর নয়নের মনি।শ্রমিক রাজনীতি করার সুবাদে তাকে তৃণমুল পর্যায় তার জনপ্রিয় ছিলো ধারণার বাহিরে।তিনিই নারায়ণগঞ্জের প্রথম নির্বাচীত পৌর প্রশাসক।তার পাচ সন্তানের মধ্যে প্রথম সন্তান সেলিনা হোসেন আইভি।পেশায় ছিলেন একজন চিকিৎসক।২০০৩ সাল হতে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনিই ছিলেন নারায়ণগঞ্জের নির্বাচীত পৌর প্রশাসক।এরপরের ইতিহাস সবার জানা।২০১২ সালে নবগঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেসনের প্রথম নগরমাতা নির্বাচীত হয়ে এবার ২০২২ সালেও লড়ছেন।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেসনের প্রায় পাচ লক্ষ ১৯ হাজার ভোটার।এই পাচ লক্ষ উনিশ হাজার ভোটারে নির্বাচন হবে তাই আসছে মেয়র কে হবেন?বরাবর আইভি নাকি অন্য কেউ?অন্য কেউ বলতে যা দেখছি তা হলো খন্দকার এ্যাডঃ তৈমুর আলম।সরকার দলীও মনোনীত আইভির নৌকার সাথে লড়বেন হাতি মার্কা।তারা চাচা ভাতিজা।গতবার নাসিক নির্বাচনে খন্দকার তৈমুর আলম আইভির সাথে ভোটে লড়া শুরু করেছিলেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসাবে কিন্তু নির্বাচনের কয়েক ঘন্টা আগে বিএনপির হাই কমান্ডের নির্দেশে নির্বাচনে অংশগ্রহণ হতে সরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।এবার সে বিএনপির নেতা হলেও লড়বেন স্বতন্ত্র ভাবে কারন বিএনপি নির্বাচনে আসবে না।দেখা যাক আগামী ১৬ জানুয়ারী ২০২২ এ জনগণের নির্বাচনী রায়ে কে জয়ী হন।

তবে নারায়নগঞ্জ উন্নয়ণে দল মত নির্বিশেষে কাজ করতে হবে।আইভি তেমনি একজন মেয়র যার কাছে দলের চেয়ে জনগনই মুখ্য।তার প্রমান গত বারই জনগন তাকে নির্বাচীত করিয়ে দেখিয়েছেন।নারায়নগঞ্জকে পুরোপুরি একটি আধুনিক শহর বানাতে হলে প্রয়োজন আছে শামীম ওসমানকে।তাকে বাদ দিয়ে উন্নয়ন করাটা অনেকটা টাফ।যেদিন শামীম আইভি মিলতে পারবে সেই দিনেই নারায়নগঞ্জের উন্নয়নের পরিপূর্ণতা আসবে।অবশ্য এর মধ্যে শামীম ওসমান সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ করেছেন নিজের অবস্থান।আইভির নাম না নিলেও নৌকাকে সে জেতাবেন সেই লক্ষ্যে কাজ করবেন বলে বলেন।এর মধ্যেই বিএনপির নেতা কর্মীদের ধর পাকর শুরু হয়ে গেছে।সরকারের কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনী বক্তব্য দিচ্ছেন জোরেসুরে যেন, যে করে হউক আইভিকে মেয়র আবারো বানাতে হবে।নতুবা নারায়ণগঞ্জের কোন নেতারই অস্থিত্ব থাকবে না।

এবারের নির্বাচনটা নারায়নগঞ্জবাসীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।মেয়র আইভির নেয়া পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে আইভিকেই আবারো মেয়র হিসাবে আসাটা অনেকে যুক্তিযুক্ত কারন বলে মনে করেন।আমাদের দেশের রাজনীতির এতোটাই নোংরা যে,দেশ দশের যে কোন উন্নয়ণে ক্ষমতাসীন দলের লোক হতে হয় নতুবা সে উন্নয়ণ উন্নয়ণ বলে চিৎকার করলেও কোন লাভ হয় না।সুতরাং জনগণ অনেকটা বাধ্য হয়েই সরকার দলীও প্রার্থীদের ভোট দেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যাক তথ্য মতে প্রায় ৮ লক্ষ লোকের বসবাস নারায়নগঞ্জ বাস্তবে নাসিকের মতে ১৫/২০ লক্ষ লোকের মত মানুষকে সেবা দেন।যাই হোক- যিনিই নির্বাচনে জয়ী হয়ে মেয়র হিসাবে আসুক না কেন জনগনের প্রত্যাশারগুলো যেন বাস্তবে রূপ নেয় এটাই চাওয়া।

----------------------------------------------

তথ্য ও ছবি
অনলাইন মাধ্যম।
বিশেষ কৃতজ্ঞ
মানব জমিন এর সাংবাদিক রবিন ভাইয়ের প্রতি।

0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ