
স্তন ক্যানসার, আমার কাছে এক আতংকের রোগ, এই রোগে আমার মাতৃসম চিরকুমারী ছোট খালাম্মাকে হারিয়েছি, হারিয়েছি আমার স্নেহের খালাতো বোনকে, যে আমার সমবয়সী ছিলো, মাত্র ছয় মাসের ছোট।
আমার খালাম্মার যখন প্রথম ধরা পড়লো আমিই উনাকে মাদ্রাজে পাঠালাম আমার ইমিডিয়েট ছোট ভাইকে সাথে দিয়ে, ওখানেই উনার অপারেশন হয়, ডাক্তার ছোট ভাইকে বলে দিয়েছিলো, খালাম্মা বাঁচলেও বড়জোর ছয় বছর বাঁচবেন কিন্তু ডাক্তারকে ভুল প্রমাণ করে উনি বেঁচে ছিলেন আট বছর।
উনাকে এবং ছোট বোনটিকে দেখেছিলাম কত না যন্ত্রণার ভিতর দিন কাঁটাতে, আজ দুজনেই স্মৃতির অতলে হারিয়ে গেছেন, কিন্তু আমাদেরকে সজাগ করে দিয়ে গেছেন এই মরণ ব্যাধির ব্যাপারে, এই জন্যই আজকের এই লেখার অবতারণা।
বাংলাদেশী মহিলাদের মধ্যে ক্রমশই এই রোগের আক্রমণ বাড়ছে, প্রতি বছরই এই রোগে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে, প্রায় বছরে ১৬ থেকে ১৮ হাজার, তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে ব্রেস্ট ক্যানসার থেকে সেরে ওঠা সম্ভব।
নীচে রইল এই রোগের ১০টি লক্ষণ—
১) কমবেশি সব মহিলাদের স্তনেই লাম্প থাকে, এর মধ্যে কয়েকটি ক্যানসারাস ও কয়েকটি নন-ক্যানসারাস।
এই ব্রেস্ট লাম্পগুলি অনেক সময় আন্ডারআর্ম বা কলার বোনের তলাতেও দেখা যায়, এছাড়া স্তনবৃন্তের আশপাশেও এই ধরনের লাম্প থাকে যেগুলি টিপলে শক্ত লাগে এবং অবস্থান পরিবর্তন করে না। এমন কিছু দেখলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
২) কোনও রকম র্যাশ নেই স্তনে, তবু ইচিং বা চুলকানির মতো অনুভূতি হচ্ছে, এমন কিছু কিন্তু ক্যানসারের লক্ষণ, অনেক সময় এর সঙ্গে নিপ্ল থেকে হালকা হালকা রস নিঃসৃত হয়, স্তনের ত্বকেও কিছুটা পরিবর্তন আসে, তাই চুলকানির মতো কিছু হলে নিজে থেকে কোনও ক্রিম বা লোশন লাগাবেন না, আগে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলবেন।
৩) স্তনে টিউমার থাকলে তা আশপাশের ব্রেস্ট টিস্যুগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং তার ফলে স্তনে একটা ফোলা ফোলা ভাব দেখা যায়, এরই সঙ্গে স্তনে লাল ভাবও থাকে, স্তনে হাত দিলে বা চাপ দিলে ব্যথাও লাগে।
৪) কাঁধ এবং ঘাড়ের ব্যথাও ব্রেস্ট ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে কারণ এই ক্যানসার স্তন থেকে খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ে শরীরের এই অংশগুলিতে, এই সমস্ত জায়গায় ব্যথা হলে সাধারণের পক্ষে জানা সম্ভব নয় তা মাস্ল পেইন নাকি ক্যানসারের কারণে ঘটছে, তাই পরীক্ষা করে নেওয়াই ভাল।
৫) স্তনের আকার এবং সাইজ পরিবর্তনও এই ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে, সচরাচর এই বিষয়টি পার্টনারের চোখেই বেশি পড়ে, তেমন কিছু শুনলে বিষয়টি উড়িয়ে দেবেন না, নিজেই আয়নার সামনে স্তনটি পরীক্ষা করুন এবং ক্যানসারের পরীক্ষা করিয়ে নিন।
৬) স্তনে লাম্প সব সময় বড় আকারের হয় না, ছোট ছোট ফুসকুড়ির মতো লাম্পও দেখা যায় স্তনবৃন্তের আশপাশে, অন্তর্বাস পরে থাকার সময় যদি ঘর্ষণ অনুভব করেন, বিছানায় শোওয়ার সময় যদি ব্যথা লাগে তবে চিকিৎসকের কাছে যেতে দেরি করবেন না।
৭) ব্রেস্টফিডিং করছেন না অথচ স্তনবৃন্ত থেকে অল্প অল্প দুধের মতো জলীয় পদার্থ নিঃসরণ হচ্ছে এমনটা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে যাবেন, এটি ব্রেস্ট ক্যানসারের অন্যতম বড় লক্ষণ। অনেক সময় স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত পড়তেও দেখা যায়।
৮) স্তনবৃন্ত হল স্তনের অসম্ভব সংবেদনশীল অংশ, যদি দেখেন যে স্তনবৃন্ত স্পর্শ করলেও তেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে না বা একেবারেই অনুভূতিহীন হয়ে গিয়েছে তবে তা ব্রেস্ট ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। স্তনবৃন্তের ত্বকের তলায় ছোট ছোট টিউমার তৈরি হলেই এমনটা হয়।
৯) স্তনবৃন্ত চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া, বেঁকে যাওয়া বা স্তনবৃন্তের শেপ অসমান হয়ে যাওয়া ক্যানসারের লক্ষণ, বিশেষ করে যদি ব্রেস্টফিডিং না চলাকালীন অবস্থাতেও এই বিষয়গুলি চোখে পড়ে। সঙ্গীকে বলুন ভাল করে পর্যবেক্ষণ করতে, সামান্য সন্দেহ হলেই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
১০) স্তনের উপরের ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়া, অনেকটা কমলালেবুর খোসার মতো, ক্যানসারের প্রাথমিক স্টেজের লক্ষণ, দিনের মধ্যে একটা সময় তাই ভালভাবে স্তনটি পর্যবেক্ষণ করা উচিত, যে কোনও লক্ষণ চোখে পড়লেই দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং পরীক্ষা করান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশেই এড়ানো যায়, এই সহজ নিয়মগুলো হলোঃ
১. শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, বিশেষত স্থূলতার সাথে স্তন ক্যান্সারের একটি যোগসূত্র রয়েছে।
২. প্রত্যেক নারীরই প্রতিদিন আধঘণ্টা ব্যায়াম অথবা যেকোনো ধরনের শারীরিক পরিশ্রম করা উচিত, যেমন ধরুন ঘরের কাজ করা যাতে শারীরিক পরিশ্রম হয়, কেননা এটা নারীদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে অনেকাংশে মুক্ত রাখে।
৩. স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে, সবজি জাতীয় খাবার যেমন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, ব্রকলি ফলমূল ইত্যাদি খাবার বেশি খেতে হবে, এ ধরনের সবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়ানো যায়।
৪. অতিরিক্ত মদ্যপান বা মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫. সবার উচিত যেসব মাছে ওমেগা ফ্যাটি তেল আছে, সেইসব মাছ প্রতি মাসেই তাদের খাদ্য তালিকায় রাখা।
স্তন ক্যান্সার কোনো লজ্জার বিষয় নয় বা কোনো গোপন রোগ নয়, প্রতি ৬ মিনিটে একজন নারী যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন সেটাকে লজ্জার বা গোপন রোগ ভাববার আর কোনো সুযোগ নেই, আমাদের সকলের সচেতনতাই পারে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে।
সচেতন হোন, নিজে বাঁচুন।
আমি অনুরোধ করবো লজ্জা না করে এই পোস্ট নিজেরা কপি, প্রিন্ট কপি করুন, নিজের স্ত্রী, সন্তান, বোনকে একটা করে কপি দিন, এই লজ্জার বা গোপনীয়তার কিছুই নয়, বরঞ্চ সচেতনতা জরুরী।
সমাপ্ত।
তথ্যসূত্রঃ গুগল, মেডিকেল সাইন্স।
ছবিঃ গুগল।
৪২টি মন্তব্য
অশোকা মাহবুবা
খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অনেকেই মনে করেন এই বিষয়টি শুধুমাত্র নারীরা সচেতন হলে চলবে। সঠিক না। পুরুষদেরকেও জানতে হবে যেন সে তার সঙ্গীকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং সময়ের আগেই চিকিৎসা শুরু করতে পারে। যথাসময়ে চিকিৎসা শুরু হলে অধিকাংশ স্তন ক্যান্সারই নিরাময়যোগ্য। সুতরাং প্রয়োজন শুধু সচেতনতার। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো বিস্তারিত তুলে ধরার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ইঞ্জা
সম্পূর্ণ সঠিক বলেছেন আপু, এ শুধু নারী নয়, সকল পুরুষদেরও এ বিষয়ে জানতে হবে, তাহলেই হয়ত পেতে পারে এই মরণঘাতী থেকে নিস্তার।
আন্তরিক ধন্যবাদ আপু, শুভেচ্ছা। 😊
রেহানা বীথি
আমার কয়েকজন পরিচিত এই রোগের শিকার হয়ে মারা গেছেন। প্রয়োজন সচেতনতা। গুরুত্বপূর্ণ পোস্টটির জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
ইঞ্জা
আপু আমি এর ভয়াবহতা দেখেছি, আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা যেন এমন কষ্টকর মৃত্যু যেন কাউকে না দেন। 😢
ধন্যবাদ।
নাজমুল আহসান
খুবই গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট ভাই। অহেতুক লোকলজ্জা যেন কারও অমঙ্গলের কারণ না হয়। আল্লাহ সবার মঙ্গল করুন। আমিন।
ইঞ্জা
সত্যিই তাই ভাই, এর ভয়াবহতা আমি দেখেছি, সুতরাং কোন লজ্জা নয়, নয় লুকোছাপা।
আমীন।
মোহাম্মদ দিদার
খুবই উপকাী উপকারী পোস্ট
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই।
আরজু মুক্তা
অনেক কিছু জানলাম। শিখলাম।
খুবই গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। অযাথা লজ্জা করে লাভ নেই।
ধন্যবাদ আপনাকে।
ইঞ্জা
সত্যই তাই আপু, লজ্জা করে বরঞ্চ ক্ষতি হবে।
ধন্যবাদ।
তৌহিদ
তথ্যসমৃদ্ধ লেখা দাদা। এসব বিষয়ে আমাদের সকলের সচেতনতা জরুরী।
শুভকামনা রইলো।
ইঞ্জা
সম্পূর্ণ একমত ভাই, ধন্যবাদ।
শাহরিন
সহমত ভাইয়া। সবাইকে সচেতন করতে এই লেখাটি অনেক সহায়তা করবে। আমার ও কাছের ও পরিচিত মানুষ হারিয়েছে এই ভয়াবহ অসুখে।
ইঞ্জা
দুঃখ লাগে আপু যখন দেখি অসচেতনতার কারণে এই ভয়াবহ রোগে পড়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা হয়। 😢
ধন্যবাদ আপু।
তৌহিদ
সবার জন্য সচেতনতামূলক এই লেখাটি স্টিকি করার অনুরোধ করছি।
ইঞ্জা
আন্তরিক ধন্যবাদ ভাই।
নাজমুল আহসান
জনসচেতনতা ও গুরুত্ব বিবেচনা করে পোস্টটি স্টিকী করা যায় কিনা ভেবে দেখতে ব্লগ সঞ্চালককে অনুরোধ করছি।
ইঞ্জা
অপরিসীম ধন্যবাদ ভাই।
নিতাই বাবু
আপনার এই পোস্ট দশের জন্য খুবই উপকারে আসবে বলে আমি মনে করি। আপনার জন্য শুভকামনা।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ সতত প্রিয় দাদা।
সাবিনা ইয়াসমিন
খুব বেশিদিন না, মাত্র দুই বছর হলো এই রোগে আক্রান্ত হয়ে আমার পরিবারের অত্যন্ত কাছের একজন মৃত্যু বরণ করেছেন। কি ভয়াবহ যন্ত্রনায় তিনি প্রান ত্যাগ করেছিলেন তা মনে করার সাহস আমার নেই।
খুবই দরকারি একটি পোস্ট দিলেন ভাইজান। এই নিয়ে যত প্রচার হবে, মানুষের মাঝে সচেতনতা ততো বৃদ্ধি পাবে।
ইঞ্জা
জ্বি আপু, এর ভয়াবহতা আমিও দেখেছি।
ধন্যবাদ।
ছাইরাছ হেলাল
খুব ভয় লাগে দুঃখ লাগে, এসব দেখলে/শুনলে।
খুব-ই দরকারি লেখা, আমাদের সচেতনতাই এই ঘাতক ব্যাধি থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।
ইঞ্জা
সত্যই বলেছেন ভাইজান, ধন্যবাদ।
মনির হোসেন মমি
নারীদের অবহেলা লজ্জাবোধ এ রোগের জন্য বেশ ঝুকিপূর্ণ। খুব গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট।প্রিয়তে রাখলাম।
ইঞ্জা
সত্যিই তাই ভাই, একে মোটেও অবহেলা করা যাবেনা।
ধন্যবাদ।
মোঃ মজিবর রহমান
সমাজের অনেক মা, বোন ঝিয়ের এই রোগ। সুতরাং সবার উচিত এই গুরুতপুরন পোস্টি স্টিকি হোক ও সবার জানা অতিব দরকার
ইঞ্জা
শতভাগ সহমত ভাই
জিসান শা ইকরাম
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পোষ্ট,
এ বিষয়ে নারী এবং পুরুষের উভয়েরই সচেতন হওয়া দরকার।
এমন পোষ্ট শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
অনিঃশেষ ধন্যবাদ ভাইজান।
কি অবস্থা ওখানে, ডাক্তার দেখিয়েছেন কি?
সঞ্জয় মালাকার
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট দাদা,
পড়রে বিষয় গুলু জানতে পারলা, আর যারা লজ্জা পাবে তারাই বিপদে পড়বে।
ধন্যবাদ দাদা শুভকামনা রইলোো।
ইঞ্জা
অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা, খুব খুশি হলাম। 😊
শবনম মোস্তারী
অনেক গুরত্বপূর্ণ একটি পোষ্ট ভাইয়া।
অনেক কিছু জানলাম।
একমাত্র সচেতনতাই পারে এর ভয়াবহতা রোধ করতে।
ইঞ্জা
একদম ঠিক বলেছেন আপু, আমাদের সবার সচেতন হতে হবে।
ধন্যবাদ অহর্নিশ। 😊
হৃদয়ের কথা
জনসচেতনা এবং প্রচার মুলক পোষ্ট। শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ।
ইঞ্জা
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। 😊
রেজওয়ান
অত্যন্ত প্রয়োজনীয় লেখা! সকলেরই পড়া উচিৎ😇
ইঞ্জা
ঠিক বলেছো রেজওয়ান, ভালোবাসা জেনো। 😍
রেজওয়ান
আপনিও ভালবাসা নিবেন ভাইজান❤
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা 😊
শফিক নহোর
খুব দামি পোস্ট । পড়লাম অনেক কিছু জানলাম । ধন্যবাদ দাদা ।
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা ও শুভকামনা ভাই