স্তন ক্যানসার, (লজ্জার নয়, সতর্কতা জরুরী)

ইঞ্জা ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ০৮:০৩:৩১অপরাহ্ন চিকিৎসা ৪২ মন্তব্য

স্তন ক্যানসার, আমার কাছে এক আতংকের রোগ, এই রোগে আমার মাতৃসম চিরকুমারী ছোট খালাম্মাকে হারিয়েছি, হারিয়েছি আমার স্নেহের খালাতো বোনকে, যে আমার সমবয়সী ছিলো, মাত্র ছয় মাসের ছোট।
আমার খালাম্মার যখন প্রথম ধরা পড়লো আমিই উনাকে মাদ্রাজে পাঠালাম আমার ইমিডিয়েট ছোট ভাইকে সাথে দিয়ে, ওখানেই উনার অপারেশন হয়, ডাক্তার ছোট ভাইকে বলে দিয়েছিলো, খালাম্মা বাঁচলেও বড়জোর ছয় বছর বাঁচবেন কিন্তু ডাক্তারকে ভুল প্রমাণ করে উনি বেঁচে ছিলেন আট বছর।
উনাকে এবং ছোট বোনটিকে দেখেছিলাম কত না যন্ত্রণার ভিতর দিন কাঁটাতে, আজ দুজনেই স্মৃতির অতলে হারিয়ে গেছেন, কিন্তু আমাদেরকে সজাগ করে দিয়ে গেছেন এই মরণ ব্যাধির ব্যাপারে, এই জন্যই আজকের এই লেখার অবতারণা।

বাংলাদেশী মহিলাদের মধ্যে ক্রমশই এই রোগের আক্রমণ বাড়ছে, প্রতি বছরই এই রোগে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে, প্রায় বছরে ১৬ থেকে ১৮ হাজার, তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে ব্রেস্ট ক্যানসার থেকে সেরে ওঠা সম্ভব।

নীচে রইল এই রোগের ১০টি লক্ষণ—

১) কমবেশি সব মহিলাদের স্তনেই লাম্প থাকে, এর মধ্যে কয়েকটি ক্যানসারাস ও কয়েকটি নন-ক্যানসারাস।
এই ব্রেস্ট লাম্পগুলি অনেক সময় আন্ডারআর্ম বা কলার বোনের তলাতেও দেখা যায়, এছাড়া স্তনবৃন্তের আশপাশেও এই ধরনের লাম্প থাকে যেগুলি টিপলে শক্ত লাগে এবং অবস্থান পরিবর্তন করে না। এমন কিছু দেখলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

২) কোনও রকম র‌্যাশ নেই স্তনে, তবু ইচিং বা চুলকানির মতো অনুভূতি হচ্ছে, এমন কিছু কিন্তু ক্যানসারের লক্ষণ, অনেক সময় এর সঙ্গে নিপ্‌ল থেকে হালকা হালকা রস‌ নিঃসৃত হয়, স্তনের ত্বকেও কিছুটা পরিবর্তন আসে, তাই চুলকানির মতো কিছু হলে নিজে থেকে কোনও ক্রিম বা লোশন লাগাবেন না, আগে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলবেন।

৩) স্তনে টিউমার থাকলে তা আশপাশের ব্রেস্ট টিস্যুগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং তার ফলে স্তনে একটা ফোলা ফোলা ভাব দেখা যায়, এরই সঙ্গে স্তনে লাল ভাবও থাকে, স্তনে হাত দিলে বা চাপ দিলে ব্যথাও লাগে।

৪) কাঁধ এবং ঘাড়ের ব্যথাও ব্রেস্ট ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে কারণ এই ক্যানসার স্তন থেকে খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ে শরীরের এই অংশগুলিতে, এই সমস্ত জায়গায় ব্যথা হলে সাধারণের পক্ষে জানা সম্ভব নয় তা মাস্‌ল পেইন নাকি ক্যানসারের কারণে ঘটছে, তাই পরীক্ষা করে নেওয়াই ভাল।

৫) স্তনের আকার এবং সাইজ পরিবর্তনও এই ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে, সচরাচর এই বিষয়টি পার্টনারের চোখেই বেশি পড়ে, তেমন কিছু শুনলে বিষয়টি উড়িয়ে দেবেন না, নিজেই আয়নার সামনে স্তনটি পরীক্ষা করুন এবং ক্যানসারের পরীক্ষা করিয়ে নিন।

৬) স্তনে লাম্প সব সময় বড় আকারের হয় না, ছোট ছোট ফুসকুড়ির মতো লাম্পও দেখা যায় স্তনবৃন্তের আশপাশে, অন্তর্বাস পরে থাকার সময় যদি ঘর্ষণ অনুভব করেন, বিছানায় শোওয়ার সময় যদি ব্যথা লাগে তবে চিকিৎসকের কাছে যেতে দেরি করবেন না।

৭) ব্রেস্টফিডিং করছেন না অথচ স্তনবৃন্ত থেকে অল্প অল্প দুধের মতো জলীয় পদার্থ নিঃসরণ হচ্ছে এমনটা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে যাবেন, এটি ব্রেস্ট ক্যানসারের অন্যতম বড় লক্ষণ। অনেক সময় স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত পড়তেও দেখা যায়।

৮) স্তনবৃন্ত হল স্তনের অসম্ভব সংবেদনশীল অংশ, যদি দেখেন যে স্তনবৃন্ত স্পর্শ করলেও তেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে না বা একেবারেই অনুভূতিহীন হয়ে গিয়েছে তবে তা ব্রেস্ট ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। স্তনবৃন্তের ত্বকের তলায় ছোট ছোট টিউমার তৈরি হলেই এমনটা হয়।

৯) স্তনবৃন্ত চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া, বেঁকে যাওয়া বা স্তনবৃন্তের শেপ অসমান হয়ে যাওয়া ক্যানসারের লক্ষণ, বিশেষ করে যদি ব্রেস্টফিডিং না চলাকালীন অবস্থাতেও এই বিষয়গুলি চোখে পড়ে। সঙ্গীকে বলুন ভাল করে পর্যবেক্ষণ করতে, সামান্য সন্দেহ হলেই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

১০) স্তনের উপরের ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়া, অনেকটা কমলালেবুর খোসার মতো, ক্যানসারের প্রাথমিক স্টেজের লক্ষণ, দিনের মধ্যে একটা সময় তাই ভালভাবে স্তনটি পর্যবেক্ষণ করা উচিত, যে কোনও লক্ষণ চোখে পড়লেই দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং পরীক্ষা করান।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশেই এড়ানো যায়, এই সহজ নিয়মগুলো হলোঃ

১. শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, বিশেষত স্থূলতার সাথে স্তন ক্যান্সারের একটি যোগসূত্র রয়েছে।

২. প্রত্যেক নারীরই প্রতিদিন আধঘণ্টা ব্যায়াম অথবা যেকোনো ধরনের শারীরিক পরিশ্রম করা উচিত, যেমন ধরুন ঘরের কাজ করা যাতে শারীরিক পরিশ্রম হয়, কেননা এটা নারীদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে অনেকাংশে মুক্ত রাখে।

৩. স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে, সবজি জাতীয় খাবার যেমন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, ব্রকলি ফলমূল ইত্যাদি খাবার বেশি খেতে হবে, এ ধরনের সবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়ানো যায়।

৪. অতিরিক্ত মদ্যপান বা মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে।

৫. সবার উচিত যেসব মাছে ওমেগা ফ্যাটি তেল আছে, সেইসব মাছ প্রতি মাসেই তাদের খাদ্য তালিকায় রাখা।

স্তন ক্যান্সার কোনো লজ্জার বিষয় নয় বা কোনো গোপন রোগ নয়, প্রতি ৬ মিনিটে একজন নারী যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন সেটাকে লজ্জার বা গোপন রোগ ভাববার আর কোনো সুযোগ নেই, আমাদের সকলের সচেতনতাই পারে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে।
সচেতন হোন, নিজে বাঁচুন।

আমি অনুরোধ করবো লজ্জা না করে এই পোস্ট নিজেরা কপি, প্রিন্ট কপি করুন, নিজের স্ত্রী, সন্তান, বোনকে একটা করে কপি দিন, এই লজ্জার বা গোপনীয়তার কিছুই নয়, বরঞ্চ সচেতনতা জরুরী।

সমাপ্ত।

তথ্যসূত্রঃ গুগল, মেডিকেল সাইন্স।
ছবিঃ গুগল।

0 Shares

৪২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ