
সোনেলা নামকরণ এবং সোনেলা ব্লগ সাইট তৈরী হয়েছে বলেই যে এটি পরিপূর্ণ সাইট হয়ে সবার মাঝে উপস্থিত হয়েছে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। এরপর আমাদের সামনে যে কাজটি বাকি ছিলো তা হচ্ছে এর ব্যানার, বা হেডার। ডেভলপার বলে দিয়েছেন যে, ব্যানার এর সাইজ হবে ১২০০x ২১০ পিক্সলের। এই সাইজ আনুযায়ী ব্যানার আমি বানাবো কিভাবে? ব্যানারে লেখা থাকবেই বা কি? কোন অক্ষরে কি রঙ দেবো? অক্ষরের ডিজাইন কেমন হবে? সারাক্ষণ এই নিয়ে চিন্তা। দ্রুত করতে হবে ব্যানার। গ্রাফিক্স জানা কাউকে প্রয়োজন একাজের জন্য।
লিজাকে কল দিলামঃ লিজা তুই গ্রাফিক্স এর কাজ জানো?
লিজাঃ তেমন জানি না, শিখছি কেবল। কেনো ভাইয়া?
আমিঃ আমাকে ব্যানার বানিয়ে দে কয়েকটা। সাইটের নাম সোনেলা। সোনেলা নামটি সোনালী অক্ষরে থাকবে। সোনেলা লেখার নীচেই থাকবে এই বাক্য 'সোনেলা দিগন্তে জলসিঁড়ির ধারে', এটি অন্য রঙয়ের হবে। ব্যানার গুলো বিভিন্ন পালা পার্বন, উৎসব, ঋতু, জাতীয় দিবস অনুযায়ী হবে। অর্থাৎ লেখার ব্যাক গ্রাউন্ডে এসবের প্রতিফলন থাকবে। সময় পাবি দুই দিন।
লিজাঃ দুই দিন মাত্র! দুই দিনের মধ্যে আমি পারবো না ভাইয়া।
আমিঃ পারবো না মানে? পারতে হবে তোকে। বলেই লাইন কেটে দিলাম। আমি জানি ও করবে এই কাজ দুই দিনের মধ্যেই।
পাঁচ ছয় ঘন্টা পরে লিজার ফোনঃ ভাইয়া সোনালী রঙের অক্ষর করা যায় না। যেটা যায় সেটা হলুদ আর কমলার মিশ্রণে যেমন হয় তেমন। আমি বললাম ' আমার সোনালী অক্ষর চাই, কিভাবে দিবি তা তুই জানো, আমি না। বহুত জ্বালাতন করেছ তুই গত এক বছর। আমার জন্য মাত্র দুইদিন তুই জ্বালাতন সহ্য করতে পারবি না? উত্তরে লিজা বললোঃ আচ্ছা দেখি ভাইয়া।
আসুন লিজাকে একটু পরিচয় করিয়ে দেই। ততক্ষনে ও ব্যানারের কাজ করুক
ফেইসবুকে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাই। প্রফাইল পিকচারে একটা আইসক্রিমের ছবি। সাধারনত তখন এই সব আইডি আমি ফ্রেন্ড করি না। কি মনে করে যেন এক্সেপ্ট করলাম। এরপর ও শুধু পোক দিত, আমিও দিতাম। বুঝতাম ও আইসক্রিম পছন্দ করে। বললাম একদিন ওকে, তুই কি সারাদিন আইসক্রিম খাও? উত্তরে বললো হ্যা ভাইয়া আমি প্রচুর আইসক্রিম খাই। এই প্রশ্নটাই আমার কাল হলো। এরপর দিনে যতবার আইসক্রিম খায় ততবার তার ছবি দিতে থাকে আমাকে। আইসক্রীমের দোকানে, বাসায়, অফিসে বসে আইসক্রিম খাওয়ার ছবি সেসব। ধমক দিয়ে একদিন বললামঃ তুই যদি আর আইসক্রিম খাওয়ার ছবি দিছো তাইলে তোরে আমি ব্লক করবো। হিহি করে উত্তর দিলো ও, ভাইয়া ব্লক করে দেখিয়ে তো, পারো কিনা। ব্লক আর করি না। তবে ম্যাসেজ সিন করা বন্ধ করলেই কল দিতো, ভাইয়া আমার ছবি দেখোনা কেন? আচ্ছা আমি আর ছবি পাঠাবো না। এরপরে ক্যামনে রাগ রাখি ওর উপরে?
দ্বিতীয় দিনেই দুটো ব্যানার পাঠিয়ে দিলো মেইলে। একটুও আর এডিট করতে বলা লাগেনি। আমি যেমন চেয়েছিলাম তেমনই হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় দিনেই ওর ফোন, রিসিভ করে ওর গলার মত লাগলো না। ওর মা ফোন দিয়েছেন' এই তুমি কে? লিজাকে কি কাজ দিয়েছো? মেয়েটা দিন রাত এই কাজ নিয়ে পরে আছে। এত খাটাচ্ছো পারিশ্রমিক দিতে হবে ওকে। '' আমি হাসতে হাসতে বললাম, অবশ্যই পারিশ্রমিক দেবো। আপনি চিন্তা করবেন না। তা কত দেবো পারিশ্রমিক? " উনি বলে গেলেন ' আমি জানি এই ধরনের কাজের জন্য মজুরী প্রতি ঘন্টায় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। '' আমিও বললাম ; আচ্ছা দেবো, লিজাকে ঘন্টা হিসেব করে রাখতে বলবেন।
লিজা দুই দিনেই ষোলটি ব্যানার করে পাঠিয়েছে আমাকে। এই দুই দিন ও রাত দিন এই ব্যানার নিয়েই ছিলো। ভোর রাতে ঘুমাতো দুই ঘন্টা। এরপর উঠেই অফিসে দৌড়।
কি পারিশ্রমিক দেবো এই আমার অত্যন্ত শ্নেহের বোনটিকে? কত টাকায় কিনবো আমি ওর শ্রদ্ধা?
সোনেলায় ব্যানার স্থাপনের পরে ওদের বাসায় গিয়েছিলাম এক গাদা বিভিন্ন রকমের আইসক্রিম নিয়ে। ওর মা ভেবেছিলেন আমি লিজার দু এক বছরের বড় হবো। আমাকে দেখে তিনি হতবাক হয়ে গেলেন। ভাই ডেকে ফেললেন, জিসান ভাই। একসাথে চা নাস্তা খাচ্ছি এক টেবিলে তিনজনে। লিজা আমাকে ডাকে ভাইয়া, ওর মা ডাকে ভাই। হাসতে হাসতে বললাম ' লিজার পারিশ্রমিক কত দেবো?
লিজার মার উত্তর কি যে বলেন ভাই, পারিশ্রমিক কেন আবার? লিজা বলেঃ ভাইয়া কিসের পারিশ্রমিক?
এই পোষ্ট উৎসর্গ করলাম লিজা তোকেই। আমি জানি এই পোষ্ট তুই পড়বি। সোনেলার জন্মকালীন ইতিহাসের সাথে তুইও যে জড়িয়ে আছিস।
লিজার করা কয়েকটি ব্যানারঃ
কোন ব্যানার কি উদ্দেশ্যে বানানো তা আপনারাই বুঝবেন। এরপরই সোনেলা চলমান হলো। ব্লগাররা ধীরে ধীরে জমায়েত হতে থাকলেন সোনেলার উঠোনে। আরম্ভ হলো সোনেলার পথচলা।
#সোনেলার_জন্মকালীন_চিন্তাভাবনা- ৩ ( শেষ পর্ব )
Thumbnails managed by ThumbPress
২৭টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
ছবি দেখলাম পড়ে আবার লিখব কথা।
জিসান শা ইকরাম
সুধু ছবি দেইখ্যেন না 🙂
মোঃ মজিবর রহমান
পড়ব ভাই রাত্রে।💟
ইঞ্জা
ওরে বাবা, ব্যানার নিয়ে এতো হ্যাঁপা, মুগ্ধ হয়ে বোন লিজার কাজ গুলো বারে বারে দেখছিলাম আর মুগ্ধ হচ্ছিলাম, ধন্যবাদ লিজা আপুকে। 😊
জিসান শা ইকরাম
আরো অনেক হ্যাঁপা ছিলো ভাই সব কিছু মিলিয়ে। তা আর বললাম না। বলতে গেলে কমপক্ঞকমপক্ষে পোস্ট লাগবে 🙂
লিজা অনেক পরিশ্রম করেছে পরেও, সুধু ব্যানার নয়, আভ্যন্তরিন বেশ কিছু কাজ ও ই শিখিয়েছে আমাকে।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
স্বাভাবিক, ২০১১/১২ থেকে এখন পর্যন্ত কত হ্যাপায় না দেখলেন আপনি এবং হয়ত ভবিষ্যতেও দেখতে হবে, এরপরও আপনার আর আমাদের এগুতে হবে সকল বাধা অতিক্রম করে।
শুভেচ্ছা ভাইজান।
জিসান শা ইকরাম
হ্যা আমরা একসাথে থাকবো ইনশ আল্লাহ।
ইঞ্জা
আমীন।
বন্যা লিপি
আইসক্রিম খাওয়া লিজা তো দারুন জিনিয়াস!! কত কত স্মৃতীময় লেখা। দারুন সব ইতিহাস জানতে পারছি আপনার লেখায়।আপনি আসলেই একটা সোনেলা পাগল 😊😊
আর এই পাগলামো টুকু না থাকলে সোনেলা আজ তাঁর নিজস্ব অবস্থানে দাঁড়াতে পারতোনা।
আপনার সু-স্বাস্থ্য কামনা করছি।
জিসান শা ইকরাম
লিজা অনেক শ্রম দিয়েছে সোনেলার জন্য।
এই শ্রম দিয়েছে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার টানে।
পাগলতো কিছুটা বটেই, নইলে এত কস্ট করে বিনা স্বার্থে কি ব্লগ পরিচালনা করি? 🙂
শুভ কামনা
নাজমুল হুদা
আইসক্রিমের মতোই গল্পটি অসাধারণ ।
বরফ জমে আছে স্নেহের ,পরিশ্রমের, ভালোবাসার এসব নিয়ে সোনেলার ইতিহাস।
ভালো লাগলো 😍
জিসান শা ইকরাম
সুন্দর এবং পারফেক্ট মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ হুদা।
সোনেলার সাথে থেকো।
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
লিজার প্রতি থাকলো অসীম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। কখনো দেখা হলে আইসক্রীম খাওয়াবো। লিজা আপনি ভালো থাকবেন সবসময়!
নাজমুল হুদা
আমি কী দোষ করছি ,, আইসক্রিম কী আমার খাওয়ার ইচ্ছে নাই 😍
জিসান শা ইকরাম
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে আরজু। ঢাকায় এলে দেখা করিয়ে দেবো।
হুদার মন্তব্যের জবাবে আপনি মন্তব্য করেছেন।
শুভ ব্লগিং।
নিতাই বাবু
আপনার কাছ থেকে সোনেলার জন্ম ইতিহাস জানতে পেরেছি। যা আগে জানা ছিল না। সোনেলার জন্ম ইতিহাস জানতে পেরে সোনেলার প্রতি আরও ভালোবাসা বেড়ে গেল। আশা করি এই ভালোবাসা ধরে রাখার চেষ্টা করে যাবো।
পরিশেষে লিজা দিদিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আপনাকে শুভেচ্ছা অভিনন্দন জানাচ্ছি।
জিসান শা ইকরাম
আপনি সোনেলার একজন সোনালী মানুষ দাদা।
আমরা আশাকরি, নিয়মিত আপনাকে পাবো।
শুভ ব্লগিং।
সাবিনা ইয়াসমিন
জেনে ভালো লাগলো। আশা করছি এই পোস্ট পড়ে লিজারও ভালো লাগবে। আপনার উৎস্বর্গ যথার্থ হয়েছে।
শুভ কামনা 🌹🌹
জিসান শা ইকরাম
লিজার অবশ্যই ভালো লাগবে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
শুভ ব্লগিং।
তৌহিদ
লিজার জন্য শুভকামনা রইল। আহারে ভাবছি সেই সময় কেমনটা লাগছিলো আপনার! মায়েরও ভাই, মেয়েরও ভাই!! ☺☺
সোনেলার প্রতি অকৃতিম ভালোবাসা দেয়া এই মানুষগুলোর কাছে সোনেলা ঋণী হয়ে থাকবে চিরকাল।
জিসান শা ইকরাম
লিজার মাও আমার চেয়ে বয়সে ছোট ছিলো। মজা পাচ্ছিলাম তিনজনেই 🙂
লিজার প্রতি কৃতজ্ঞতা।
শুভ ব্লগিং
রেজওয়ান
সোনেলার অসাধারণ ছোয়া দিয়েছিলেন লিজাপু💓অনেক শুভকামনা রইলো আপুর জন্য😇
প্রদীপ চক্রবর্তী
ভালো উপস্থাপন দাদা।
লিজা আপুর জন্য শুভকামনা রইলো।
প্রিয় সোনেলার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও
শুভকামনা।
ভালো থাকুন দাদা সবসময়।
মনির হোসেন মমি
ব্যানারের ইতিহাস জানা হল বেশ ঘটা করেই।আমরা ব্লগাররা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। শেষ পর্বের জন্য অপেক্ষায়। ভাল থাকবেন ভাইজান।
মোঃ মজিবর রহমান
সব শ্রমের যায়না কিনা
সব শ্রম হৃদয় পুসে যায় রাখা
যেথায় গড়াগড়ি স্নেহ শ্রদ্ধা।
লিজার পারিশ্রমিক মুল্য সোনেলা
লিজার শ্রমে সোনেলা
যায়কি ভোলা বোন্টিরে
থাক সোনেলার পরদার মাঝে।
আপনাদের কল্যানে সোনেলা তাই সবাই মন খুলে লেখে আপনভোলা।
শ্রদ্ধা আর ভালবাসা রইল সোনেলার সকল কারিগিরের প্রতি।
ছাইরাছ হেলাল
আহা! সেই সব দিন।
লিজাও থেকে যাবে আমাদের কৃতজ্ঞতায়।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
সোনেলার এই পথচলা অব্যাহত থাকুক ও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাক।