সে আজ আড়াল স্মৃতিতে

ছাইরাছ হেলাল ১৯ এপ্রিল ২০১৯, শুক্রবার, ০৯:৫৪:১৫অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩৫ মন্তব্য

ঝট করে একজন মহামতি কামেল লোক আকস্মিক/অকস্মাৎ একটি লিঙ্ক পাঠালেন, সাথে ছয় ছোট্ট মেসেজ, এই কিন্তু সেই, সেইইইইইই! যুগপৎ আনন্দ-বিস্ময়ে বিস্মিত। না কোন কবি না কবি কুলের ন্যায় ইনিয়ে বিনিয়ে ত্যানা ত্যানা কুচিকুচি করে এধার কা মাল ওধারে নেয়ার কোন ইচ্ছে নেই, তবে সঙ্গ দোষে লোহা ডুবে যায়, যাহা বলিতে তাহাই বলিব, যাহা বলি তাহাই, বলি, বলিব-ও।
যা বলছিলাম, এখন থেকে প্রায় যুগাধিকাল আগে বন্ধুদের সমভিব্যাহারে, এক নৈশভোজে উপস্থিত হওয়ার বিরল সৌভাগ্য (এখন মনে করি) অর্জন করেছিলাম। সেখানেই ছবির এই শিশুটির সাথে দেখা হয়। খাওয়া দাওয়া হেব্বি ছিল, খুব ট্যাঁস!! এহ্‌, বানিয়ে বলে ফেলেছি!! অভ্যাস সঙ্গদের সাথের। দেখুন যুগান্তরের খাবার!! কী কী খেয়েছি তা কিন্তু মনে নেই, ট্যাঁস কিন্তু বলে ফেলেছি। যাদের টি খেয়েছি তাদের কওম/গোত্র গোত্রপতি গোত্র-পত্নী কিচ্ছু জানিনা, আবছায়া, খাচ্ছি কিন্তু। এই শিশুটিকে দেখে ছবি-মন আচানক অস্থির হয়ে গেল। কী যেন আছে এই শিশুটির ছবিতে। উসখুস করে করে খাবার-সাথিদের জানালাম, তারা অবশ্য এই সব উদ্ভট মন-বস্তুর সাথে পরিচিত, হ্যাপা তাদের অনেক পোহাতে হয়েছে। দুঃখের বিষয়, ছবি তোলার টিনের বাক্সটি সাথে ছিল না। অগত্যা আবার প্রায় জোর করে পরের দিনের দাওয়াত নেয়া, যাদের খাচ্ছি তারা কিচ্ছুটি জানে না। শিশুদের ছবি তোলার বাতিক নিয়ে একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল, টাইট হয়ে বসুন, শুনতে/ পড়তে ইচ্ছে না হলেও ভাব নিন, ভান করুন, কবিদের মত, খুব মন দিয়ে পড়ে উল্টিয়ে ফেলতেছেন!!

নানা বাড়ি যেতাম, এখন ও যাই, বুড়ো হওয়ার কারণে একটু কম। সেখানে প্রায় ছিন্নমূল একটি ছোট্ট মেয়ে শিশুটিকে ছবির সাবজেক্ট হিশেবে পছন্দ হয়ে যায় (ছবি দেখান যাবে না), খালি গায়ে খালি পায়ে ছিন্ন একটি প্যান্ট পড়া কালো কুচকুচে, গলায় একটি বড় পুতি জাতীয় কিছুর একটি মালা, আমি ওর পিছু নিয়েছি, সে ও আমার পিছু। অনেক ছবি তুললাম, মন ডুবিয়ে। এই শুরু, প্রতি বছর দুতিন বার নানা বাড়ী গেলেই অকে খুঁজে বের করতাম, কাছাকাছিই ছিল ওদের বাড়ি। বছর তিন চারেক এম ই চলছিল, খবর পেলেই/খবর দিলেই চিলে আসত, তার পর বছর দুয়েক আর যাওয়া হয়নি, কোথায় না কোথায় ছিলাম। এর হঠাৎ গিয়ে আবার খোঁজ নিয়ে জানলাম, বিয়ে হিয়এ গেছে, দূরে চলে গেছে, সেই কুট্টি শিশুটির ছবি আজও বয়ে বেড়াচ্ছি।

যাই হোক পরের দিন আবার গেলাম, বিধি বাম, সব কিছু ঠিক আছে, আমার ছবি-চোখ যে ছবির জন্য দ্বিতীয়বার ছুটে এসেছে তাকে আর খুঁজে পাচ্ছে না। ট্রাজেডি আপনার শোনেন, আমি বহন করলাম। খুব কাকতালিয় ভাবে কয়েকদিন আগে হঠাৎ একটি ছবি পেয়ে গেলাম। সময়ের চোরা স্রোতে যা হারিয়েই ছিল।
উহ্‌ , দেখলেন! কবিদের সোহবতে কী সব কু-অভ্যাস তৈরি হয়য়!! ছুঁয়ে থাকবেই। আসল কথা বাদ দিয়ে শুধুই ত্যানা পেঁচানো।
কবিদের দুঃখের কথা বলি, বাজার সুবিধের না, অনন্যোপায় হয়ে এখন হরিপদের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে, আরও কোথায় কোথায় যেতে হবে কে জানে!! একজন আবার জংশন-ট্রেন চালাচ্ছে!! দেখবেন এখুনি তেড়ে আসতে চাইবে, জারিজুরি ধরে ফেললে এই ই হয়। একটি মজার কাহিনী বলে, কবি প্রবর বাতাস ভাঁজ করে/ভাঁজ দিয়ে আপনার পকেটে ভড়ে দেবে, গিলিয়ে-ও দিতে পারে চেপে ধরে যুৎ মত পেলে, নিজে কিছু নিচ্ছে না, পাহাড় গলিয়ে, চৌক্ষে গালা লাগিয়ে, আপনার গলায় জড়িয়ে দিতে পারে, একটু পরে পাহাড় জেগে উঠে আড়মোড়া ভেঙ্গে আপনাকে পিষ্ট করলে, প্রাণ ওষ্ঠাগত হতে থাকবে, ত্যাঁদড় কবি দূরে দাঁড়িয়ে হাসি-হাসি কান্না-কান্না ভাব করে কাব্য করে বসতে পারে.........

দেখেছিলাম তাকে পর্বত গাত্রে, বরফ শৃঙ্গে,
সমুদ্র-ফেনায়, ডলফিন ও শুশুকের পিঠে,
মহা কালের বেশে, ছিনতাই করে, টুপ করে ডুব সাঁতারে
অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থেকে;
সেই যে ঘুমিয়ে গেল, জেগে উঠে
কিল/চর/থাবড়া আর দিল না।

দেখলেন তো একদম ক্যারাব্যারা অবস্থা!! শিবের গীত আপনাদের শুনতেই হবে। কবিদের সাথে থাকা বলে কথা;
ধরুন, মসজিদ থেকে বের হয়ে আসার পথে, সূর্য দেব প্রতিজ্ঞা রক্ষায় নামে, চক চকে ছিলা চান্দি বরাবর রোদ ছুঁড়ে ফাটিয়ে ফেলতে না পারলেও টগবগ সে করাবেই। করুক, যার যেমন কু-অভ্যাস। হঠাৎ দেখি বোতল ব্রাশের ঝাঁকড়া গাছটি ছত্রিশ দাঁতে হাত মেলে ডাকছে!! আজব!! আশপাশ দ্রুত দেখে নিশ্চিত হলাম, টার্গেট আমি-ই। দ্রুত পা মেলে গা-ঘেঁসে দাঁড়ালাম, ঘটনা কী!! রোজ তো চারে চারে আট বার এ-পথু হই!! না, মানে দেখতে ভাল্লাগে!!
দেখুন দেখুন কবিদের সাথে থেকে কী অভাব্য স্বভাব!! ভাগ্যিস বে-পথু (কবি) হয়নি!! চৈত আর বোশেখে গরমে কবিদের একটু আটক থাকত সময় (পাগল বলিনি কিন্তু)! বৃষ্টি নেমে এলে আবার চেতে উঠে অঝোর ধারায় আবর্জনা ফলিয়ে যাবে, সামান্য অপেক্ষা মাত্র।

গতকাল তার জন্মদিন ছিলো। ভাল থাকুন আম্মাজান, স্ব-মহিমায়।
এই প্রার্থনা-ই করি নিপাট সহ-মানুষের বেশে (কবিদের মত দুষ্ট না হয়ে-ই)

বিস্মৃতির অতল থেকে উঠে আসা সে দিনের শিশুটির পুরো খান্দানের হৃদপিণ্ডের গতি পরিমাপক
মনিটরটি চোখের সামনেই ঝুলে থাকে।

বিদ্রঃ বরেণ্য পাঠককুলের উল্টো-ঠোঁটের তাচ্ছিল্যের বুনুনি হাসিটুকু উপেক্ষায় রাখছি।
জানিতো কবিরা খুব খারাপ হয়।

0 Shares

৩৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ