সেদিনের সেই দিন

মুহাম্মদ শামসুল ইকরাম পিরু ২৮ মার্চ ২০২০, শনিবার, ০৯:২৫:০৩অপরাহ্ন গল্প ২৯ মন্তব্য

ঘুম থেকে জেগেই কিছুটা বোহেমিয়ান টাইপ প্রবালের মধ্যে একটা তাড়া লক্ষ্য করা গেলো। সকাল দশটার মধ্যে পৌছাতে হবে গুলশান দুই তে। ঢাকার রাস্তার যা অবস্থা তাতে সময় মত পৌছানোই একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ মনে হচ্ছে। তারপরেও দ্রুতই ফ্রেস হয়ে শার্ট প্যান্ট পরিধান করলো। হাত ঘড়িটা খুঁজে পাচ্ছে না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখলো একবার। ফুলহাতা শার্ট এর হাতা কিছুটা ভাজ করে কনুই এর কাছে। না ঘড়িটা হাতে না থাকলে মানাচ্ছে না, রুপালী ঘড়িটা বাম হাতে দিলে মানাবে। কোথায় যে রেখেছে ঘড়িটা! সময় মত যদি পাওয়া যায় সব কিছু! ড্রয়ার, ল্যাপটপের পাশ, বালিশের পাশ সব স্থানে খোঁজা শেষ, নেই নেই কোথাও নেই। অবশেষে ডান হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো হাতের মুঠোর মধ্যেই ঘড়িটা রেখে সারা ঘর খুঁজে বেড়াচ্ছে। ও যে এত্তবড় ভোলানাথ তা শান্তাকে বলা যাবে না মোটেও।

ধানমন্ডি পনের নাম্বার থেকে গুলশান-২, অনেক পথ। উবার নিয়ে পৌছাতে পৌছাতে এগারোটার বেশী বেজে গেলো। একঘণ্টা বিলম্ব প্রথম দিনেই। সময় জ্ঞান নিয়ে শান্তা কথা না বললে হয় আবার। ধানসিঁড়ি রেস্তোরাঁয় বসার কথা শান্তার, দ্রুতই রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করে। কোনার টেবিলে শান্তাকে দেখে চিনতে মোটেই বেগ পেতে হয়নি। শান্তার চোখের সামনে দিয়ে টেবিলের চেয়ার টেনে বসলো প্রবাল। শান্তার চোখ রেস্তোরাঁর টিভির স্ক্রিনে। কি দেখছে শান্তা এত মনযোগ দিয়ে যে, ওর উপস্থিতি বুঝতে পারলো না!
টিভির দিকে তাকিয়ে দেখে প্রবাল, কোথাও আগুন লেগেছে, হাজার হাজার উৎসুক জনতা, উদ্ধার কর্মীদের তৎপরতা এসব দেখাচ্ছে টিভিতে লাইভ। বনানী এফআর টাওয়ারে আগুন লেগেছে।

' হাই, আমি প্রবাল।' কথা শুনেই ঘোড় লাগা দৃষ্টিতে প্রবালের দিকে তাকালো শান্তা। বুকে কেমন ধুকধুক শব্দ টের পাচ্ছে নিজে। প্রবাল...... এত সুন্দর হয় কোনো পুরুষ! মুহুর্তের মধ্যে নিজেকে প্রবালের পাশে কল্পনা করলো, মানাবে তো ওকে প্রবালের পাশে? শরীর আড়ষ্ট হয়ে গিয়েছে, মুখ থেকে কোন মতে উচ্চারন করলো, হাই প্রবাল কেমন আছো? কথা বলতে বলতে কখন জড়তা কেটে গিয়েছে দুজনার। একসময় কিছুক্ষণের জন্য কথারা স্তব্দ হয়ে যায়, দুজনের হাত দুজনের মুঠোর মধ্যে। দুজনের সমস্ত কথা যেন ট্রান্সফার হয়ে যাচ্ছে দুজনার মাঝেই, কত জনমের চেনা যেন দুজন।

আগে থেকেই পরিকল্পনায় থাকা মুন্সিগঞ্জের পদ্মা রিসোর্টে গেলো দুজনে। উদ্দেশ্য পদ্মায় নৌকায় চড়া। চৈত্রের এই গরমে দুজনে চড়ল নৌকায়। প্রেম ভালোবাসার কাছে গরম তো নস্যি আসলে। হালকা দক্ষিনা বাতাসে সময় চলে যাচ্ছিল স্বপ্নের মত। স্বপ্নে দেখা সোনালী বেতের নৌকাতেই যেন দুজনে ভাসছে, সন্ধ্যার পূর্বক্ষণে নদীর পানিও সোনালী রঙ ধারণ করেছে। সেই সোনালী সন্ধ্যায় হঠাৎ শান্তার আবদার আমি ডাবের পানি খাবো। সেই সন্ধ্যায় কোথায় পাবে প্রবাল ডাব! মাঝিকে নৌকা তীরে ভিড়াতে বলে দুজনে ডাবের খোঁজে গেলো। অবশেষে শান্তার চাহিদা মত শাস ওয়ালা ডাব পাওয়া গেলো।
"তুমি কি ডাবের শাস খুবই পছন্দ করো? সারাদিনে তো অন্য কোন খাবার নিয়ে এত আগ্রহ দেখাও নি।" প্রবালের এই প্রশ্নের উত্তরে শান্তা মিষ্টি করে হেঁসে বলল ' হ্যা, খুবই'। প্রবাল মনে মনে বললো, আমি একাই তারছেড়া না 🙂  এরপরে দুজনে দেখা করেছে অনেক বার।

আজকেও দুজনের দেখা করার কথা ছিল। করোনা ভাইরাসের অবরুদ্ধ সময়ে ফোনেই দুজন ' ভালো বাসি তোমায় ' বলতে পারলো।

করোনা কতজনের কত প্লান যে মাটি করে দিলো,

0 Shares

২৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ