শীতের ভোর। সূর্য তখনো পুরোপুরি জাগেনি। ঘন কুয়াশা। রাস্তা জনশূন্য। গাড়ীঘোড়াও বের হয়নি তেমন। এই সবকিছু ঠেলে ফেলে আমি ছুটে যেতাম তোমার কাছে, তোমার ডিউটি রুমে, যেখানে সারারাত তুমি নির্ঘুম কাটিয়েছো রোগীদের জন্য। ক্ষুধাপেটে হয়তো ঝিমুচ্ছো, তাই সাথে করে তোমার জন্য কিছু নাশতা নিতাম। কী যে ভালো লাগতো তোমার সেই ঘুমুঘুমু ফোলা চোখদুটো দেখতে। আর তোমার ঠোঁটের কোণে সেই মুচকি হাসি, "কী যে পাগলামি করোনা তুমি!" ৭টা বেজে গেলেই আমি ক্লাসে দৌড় দিতাম, মনের মধ্যে অসম্ভব রকমের ভালোলাগা নিয়ে।
আমাদের প্রথম একসাথে ঘুরতে যাওয়ার কথা মনে আছে তোমার? ওই যে হসপিটাল থেকে রিকশা নিলাম দুজন। কোনো ছেলের পাশে প্রথম এভাবে রিকশায় বসতে সংকোচ হচ্ছিলো আমার। তুমি বললে, "চিন্তা করোনা, মাঝখানে ব্যাগ রেখে বসছি!" আমি হেসে দিলাম। কীভাবে যেন সময়টা কেটে গেলো। এরপর দুজন প্রায় ২ কিলো হেঁটে বাসায় ফিরলাম। আমাকে আমার বাসার গলির কাছে পৌঁছে দিয়ে চলে গেলে তুমি। অদ্ভুত সুন্দর কিছু মুহূর্ত কাটিয়েছি সেদিন।
যেদিন আমার জন্য তুমি গোলাপ নিয়ে আসলে, মনে হয়েছিল, আমার মত সুখী কেউ নেই পৃথিবীতে! মুখে কিছুই বলোনি, কিন্তু আমার অবচেতন মন কখন যে তোমার মনের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছিলো, জানি না।
দুজনের খুব ব্যস্ত সময়ের মধ্যে নিজেদের জন্য ঠিকই সময় বের করে ফেলতাম।
দুই প্যাকেট চিপস নিয়ে রিকশায় করে ঘুরতাম দুজন। কী যে আনন্দ ছিলো তখন মনে। ক্যাম্পাসের সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বের হতে পারলেই মনে হতো, "কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা!" তারপর ফুটপাত ধরে হাঁটতে থাকতাম, আর চলতো অফুরন্ত কথা! মনে হতো, এই কথার কি কোনোই শেষ নেই? তুমি বলতে, "দুআ করো, আমাদের এই কথা যেন কোনোদিন শেষ না হয়!"
বান্ধবীদের নাম করে বাসা থেকে যখন আনাড়ি হাতে তোমার জন্য কোনো খাবার বানিয়ে নিয়ে আসতাম, আর তুমি সেগুলো খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে, মনে হতো বিশ্ব জয় করে ফেলেছি!
আর খুব পছন্দ করতে আমার গলার গান। কানে ফোন লাগিয়ে সারারাত ঘন্টার পর ঘন্টা শুনে যেতে আমার গান, সময়ের কোন হিসাব থাকতো না। ফজরের আযান কানে আসলে দুজনেই হতভম্ব হয়ে পড়তাম। আর আমিও গানের লিরিক্স মুখস্ত করে রেডি হয়ে থাকতাম, তোমাকে গান শুনাবো বলে।
দুজন কতো করে চাইতাম যেন সারাজীবনের জন্য পাশের মানুষটাকে কাছে পাই। সৃষ্টিকর্তা আমাদের নিরাশ করেননি। আমাদের সম্পর্কের সুন্দর একটা পরিণয় হলো।
আজ তুমি আছো, আমিও আছি, শুধু নেই চাওয়াপাওয়াবিহীন অসীম ভালোলাগার অফুরন্ত আমাদের সেই ভালোবাসাটা! আজ সেই মুচকি হাসির পাগলাটে ধরনের আমার সেই ভালোবাসার মানুষটাকে অনেক খুঁজেও পাইনা তোমার মাঝে। ঘুম থেকে উঠে তোমার ঘুমন্ত মুখটার দিকে অপলক তাকিয়ে ভাবি, কোথায় গেলো আমার সেই মানুষটা? এটাই কি সেইজন? নাকি সেই মানুষটার বসবাস ছিল শুধুই আমার কল্পনাতে?
খুব অচেনা লাগে তোমাকে।।
২০টি মন্তব্য
ইঞ্জা
চাওয়া পাওয়া জীবনের এক অমোঘ নিয়ম, কিন্তু সংগ্রামী জীবনের প্রতি বাঁকে বাঁকে প্রেমের পাগলামি কখন যে হারিয়ে যেতে বসে তা শুধু সময়ই বোঝে ।
লেখাটি বেশ গুছিয়ে লিখেছেন বলে ভালো লাগলো।
শুভেচ্ছা। -{@
পথহারা পাখি
ধন্যবাদ -{@
সাবিনা ইয়াসমিন
জীবনের অনেক চাওয়ার জিনিসটা যখন পাওয়া হয়ে যায় তখন মানুষের মনে এক ধরনের ক্লান্তি এসে ভর করে।তখন সেই তিব্রতা বোধ টাও আর আগের মত থাকে না ।খুব সুন্দর লিখেছেন।শুভকামনা রইলো অনেক। -{@
পথহারা পাখি
সবাই ভালো থাকুক, এই কামনা -{@
পথহারা পাখি
ধন্যবাদ 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
“ভালবাসা হল বেনারসী শাড়ির মত, ন্যাপথালিন দিয়ে যত্ন করে আলমারিতে তুলে রাখতে হয়, তাকে আটপৌরে ব্যবহার করলেই সব শেষ।”—- সমরেশ মজুমদারের ” সাতকাহন” উপন্যাসের এই কথাগুলো এখনও মনে লেগে আছে। আপনার লেখা পড়ে এই লাইনটিই মনে হলো।
ভালো লিখেছেন।
পথহারা পাখি
ভালোবাসা যতদিন অধরা থাকে, ততদিনই রঙিন লাগে 😔
মাহমুদ আল মেহেদী
অস্বাধারন ভাবে মিলিল যে জীবনের সাথে।
পথহারা পাখি
লেখাটি বাস্তব জীবনেরই খন্ডচিত্র… (-3
মোঃ মজিবর রহমান
তোমাকে গান শুনাবো বলে!!!
জীবনে একসঙ্গে থগাক্তে পারছেন শুকরিয়া। আর ঘুরে বেড়ানো ঐ প্রেমের সময়ের সৃতি আঘাত দিল বর্শার মত মনে।
খুব খুবসুন্দর লিখেছেন।
শুভেচ্ছা অবিরত। -{@ -{@ -{@
পথহারা পাখি
ধন্যবাদ…
মায়াবতী
ভালবাসা গুলো দিনে দিনে কেনো এমন ফিকে হয়ে যায় আজো বুঝি না! কাছে এসে পাশে থেকে যদি ভালবাসা টা ই হারিয়ে যায় তাহলে দূর বহু দূর থেকে না হয় ভালবাসা টা কে আকঁড়ে ধরে রাখা ই শ্রেয় নয় কি?
ভাল লাগলো লেখা টি পড়ে, এই ভাল লাগা টা আসলে কেমন যেন ছিন্ন বীণার তারের মত লাগছে জানেন! তবে খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন আপনি।
পথহারা পাখি
তবুও স্বপ্ন বুনি, ফিকে হয়ে যাওয়া ভালোবাসাকেই নতুন করে আলো-পানি দেই….ফুল-ফলের আশায় 😞
জিসান শা ইকরাম
এমন ভালোবাসা থাকুক আজীবন,
আসলে ভালোবাসার প্রথম দিনগুলো অমলিন থাকবে আমৃত্যু,
ব্যস্ততার কারনে হয়ত সেই রঙ আর আগের মত থাকবে না, তবুও মেতে থাকুক সবাই ভালোবাসার প্রথম দিকের দিনগুলোতে।
অত্যন্ত আবেগ দিয়ে লিখেছেন।
আবেগটি বুঝা যায় লেখায়।
আরো লেখুন,
পথহারা পাখি
কিন্তু সবাই তো চায়না ভালোবাসার স্মৃতিগুলো বুকে জড়িয়ে রাখতে!
সময় পেলেই লিখবো…আশা করি।
ছাইরাছ হেলাল
আপনার গুছিয়ে লেখার হাত দেখছি চমৎকার।
লিখুন এবং লিখুন, সময় পেলেই লিখুন।
পথহারা পাখি
ধন্যবাদ 🙂
রিতু জাহান
আসলে কি ভালবাসা হারায়? নাকি প্রকাশের ধরন পাল্টায়?
আমার মনে হয় প্রকাশের ধরন পাল্টায়।
বেশ সুন্দর প্রকাশ।
ভালো থাকুন ভালবাসায়।
পথহারা পাখি
ধরন পাল্টাক, তাও বেঁচে থাকুক ভালোবাসা… (3
আগুন রঙের শিমুল
সব পাওয়া হলে নষ্ট জীবন।