সৃষ্টির উদ্দেশ্য

আজিজুল ইসলাম ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪, রবিবার, ০৮:৩৮:৫৯অপরাহ্ন বিবিধ ৯ মন্তব্য

পরম করুণাময় আল্লাহ তা’লা বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজের আদেশ দাও এবং অসৎ কাজ যাতে না হয় সে ব্যবস্থা করো। শক্তি থাকা সত্ত্বেও এই কাজ যদি তোমরা না করো, তবে তোমাদের ঈমানের মূল্য থাকবেনা। যে জাতি এই কাজ করেনা, সেখানে পাপকাজ বাড়তে বাড়তে এতো বেড়ে যায় যে, তারা ধ্বংস হয়ে যায় এবং সেই ধ্বংস থেকে ইমানদারগনও রেহাই পাননা। যেহেতু তাঁরা শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুশাসনগুলিই পালন করে আর সৎ কাজের নির্দেশ দেয়না এবং অসত কাজ হতে বিরত থাকার আহ্বান জানায়না, তাই তাদের শুধু নিছক ধমর্পালনের কোন মূল্য থাকতে পারেনা।”

জুম্মার নামাজের আগে প্রতি মসজিদের ইমাম সাহেব কিছু বয়ান করে থাকেন। মোহাম্মদপুর নূরজাহান রোডের মাথায় ‘বাইতুস্ সুজূদ’ মসজিদের ইমাম সাহেবের এই বয়ান শুনে আবেগী প্রায় হয়ে পড়ি কিছুটা। প্রশ্ন করতেই যাচ্ছিলাম যে, শক্তি যদি না থাকে, তখন! শোভন হবে কী-না, সেজন্য বিরত থাকলাম। ইমাম সাহেবের পরের কথাগুলোতে অবশ্য প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাই।

পবিত্র কোরআন এবং হাদিসের রেফারেন্স অংশটুকু আরবী ভাষায় বলে বয়ান করে যান ইমাম সাহেব অত্যন্ত সাবলীলতার সাথে। বলেন- তিনটি অপশন আছে আপনার –

(১) আপনাকে হাত দিয়ে আঘাত করতে হবে। হাঁ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপনাকে আঘাত করতে হবে। কেন জানি তিনি বাচ্চাদেরকে নামাজের আদেশ দেয়া সম্পর্কে বলতে লাগলেন আঘাত করার বিষয়টার বয়ান প্রসঙ্গে। আবার সমাজের অন্যায়ের কথা-ও বললেন যে, অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করতে হবে এবং শক্তি থাকলে প্রতিবাদের ভাষা হতে হবে আঘাত।

(২) বলেন তিনি, আঘাত করার মতো শক্তি যদি না থাকে, তবে জবান দিয়ে প্রতিবাদ করতে হবে। তবে প্রতিবাদের ভাষা এবং উপস্থাপনা এমন হতে হবে যেন, যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হচ্ছে, তিনি উত্তেজিত হয়ে না পড়েন অথবা যাতে তিনি মনে না করেন যে তাকে অপমানিত করা হচ্ছে। সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে হবে। আবার যদি আপনার প্রতিবাদে উনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন, তবে থামতে হবে আপনাকেই। আপনার উত্তেজিত হওয়া চলবেনা।

(৩) উল্লেখিত দু’টি পথে প্রতিবাদ করাও যদি সম্ভব না হয়, তবে আপনার মধ্যে এই অক্ষমতার জন্য একটা উদ্বেগের ভাব থাকতে হবে। চলমান অন্যায় কাজগুলির অবসান আপনি খুব সিরিয়াসলি চান, কিন্তু পারছেননা। এই না পারার জন্য আপনার মধ্যে উদ্বেগ থাকতে হবে এবং তা আপনার চেহারায় ফুটে উঠতে হবে। আপনাকে দেখে যেন মনে হয় আপনি এসমস্ত অন্যায় কাজের অবসান চান, কিন্তু পারছেননা। অর্থাৎ আপনার মধ্যে প্রতিবাদ করার একটা চেষ্টা থাকতে হবে, কাযর্কর করতে না পারলেও।

ইমাম সাহেব অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে শুধুমাত্র আল্লাহ-কে ডাকায় যে কোন ফায়দা নেই, এক গল্পের মাধ্যমে তার ব্যাখ্যা দিলেন। মহান আল্লাহ তা’লা জিব্রাইল (আঃ) কে একটা জাতিকে ধংস করতে বললেন। জিব্রাইল (আঃ) গিয়ে দেখেন, এক বুজুর্গ ব্যক্তি আল্লার ধ্যানে মগ্ন। শুধুমাত্র মহান আল্লাহ-কেই একমনে ডেকে চলেছেন, ইবাদত করে চলেছেন। জিব্রাইল (আঃ)এর খটকা লাগল। তিনি আল্লহর কাছে ফিরে গিয়ে ঘটনা বললেন এবং সেইসাথে এ-ও বললেন যে, যেদেশে এতো বুজুর্গ ব্যক্তি থাকতে পারেন সেদেশ আমি কীভাবে ধংস করি! মহান আল্লাহ বললেন, ওই ব্যক্তিকে আগে শাস্তি দিয়ে মারো, তারপর দেশ ধংস করো। কারন প্রতিবাদহীন বুজুর্গিয়ান কারো কোন উপকারে আসেননা, তাই তার বেচে থাকার কোন প্রয়োজনীয়তা থাকে কেমন করে?

এখানে মূল কথা হচ্ছে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করাই হচ্ছে জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য, চুড়ান্ত গোল। অন্যায় থাকলে প্রতিবাদ থাকতেই হবে, নতুবা অর্থাৎ অন্যায়-অবিচার-অনাচার বাড়তে বাড়তে এমন এক অবস্থা এসে যাবে যে, সে জাতি ধ্বংস হয় যাবে।

সৎ কাজের আদেশদান এবং অসৎ কাজের দমনের উদ্দেশ্যেই পরম করূণাময় আল্লাহ তা”লা আমাদের সৃষ্টি করেছেন। অন্যকোন কারনে নয়। ইমাম সাহেবের শেষকথা এটি,  মহান আল্লাহ তা’লার  নির্দেশমতো আমাদেরও ।

 

0 Shares

৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ