সব ক'টা জানালা খুলে দাও না
আমি গাইবো গাইবো
বিজয়ের-ই গান....সব ক'কটা জানালা খুলে দাও না।
খুলে গেছে পৃথবীর সকল দরজা জানালা তবুও তাকে আর ফিরে পাওয়া যাবে না।তিনি আসলেন,মানুষের মন জয় করলেন অতপর চলে গেলেন।২২ জানুয়ারী ২০১৯ ভোর ৪টার দিকে রাজধানীর বাড্ডায় নিজ বাসায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।(ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)।
বীর মুক্তিযুদ্ধা প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৫৭ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন।তার পিতার নাম ওয়াফিজ আহমেদ ও মাতার নাম ইফাদ আরা নাজিমুন নেসা।তিনি দেশের এক জন সংগীত ব্যক্তিত্ব।একা ধারে গীতিকার,সুরকার ও সংগীত পরিচালক।তিনি ১৯৭০ দশকের শেষ লগ্ন থেকে আমৃত্যু পর্যন্ত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পসহ সংগীত শিল্পে সক্রিয় ছিলেন।

একাত্তোরের মা জননী,‘
ও মাঝি নাও ছাইড়া দে ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে’,
‘সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য’
আমার গরুর গাড়ীতে,
সেই রেল লাইনের ধারে,
আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি,
আমার বুকের মধ্যেখানে,
আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন,
আমি তোমারি প্রেমও ভিখারি,
ও আমার মন কান্দে,ও আমার প্রাণ কান্দে,
আইলো দারুণ ফাগুনরে,
আমি তোমার দুটি চোখে দুটি তারা হয়ে থাকবো,
পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমারই ছোঁয়াতে যেন পেয়েছি,
তোমায় দেখলে মনে হয়,হাজার বছর আগেও বুঝি ছিল পরিচয়,
বাজারে যাচাই করে দেখিনি তো দাম,
আম্মাজান আম্মাজান,
স্বামী আর স্ত্রী বানায় যে জন মিস্ত্রি,
ঈশ্বর আল্লাহ বিধাতা জানে,
এই বুকে বইছে যমুনা,
সাগরের মতই গভীর,
আকাশের মতই অসীম,
প্রেম কখনো মধুর,কখনো সে বেদনা বিধুর,
পড়ে না চখের পলক,
যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে,প্রাণের চেয়ে প্রিয়,
কী আমার পরিচয়,
অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে,
তুমি আমার জীবন,আমি তোমার জীবন,
তুমি হাজার ফুলের মাঝে একটি গোলাপ,
ফুল নেব না অশ্রু নেব,
তুমি মোর জীবনের ভাবনা,হৃদয়ে সুখের দোলা,
তুমি আমার এমনই একজন, যারে এক জনমে ভালবেসে ভরবে না এ মন
উত্তরে ভয়ঙ্কর জঙ্গল দক্ষিণে না যাওয়াই মঙ্গল,
আমায় অনেক বড় ডিগ্রি দিসে,
এই জগৎ সংসারে তুমি এমনই একজন,
জীবন ফুরিয়ে যাবে ভালবাসা ফুরাবে না জীবনে,
পৃথিবীতো দু দিনেরই বাসা, দু দিনেই ভাঙে খেলাঘ,
অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন,
ওগো সাথি আমার তুমি কেন চলে যাও,
তুমি সুতোয় বেঁধেছ শাপলার ফুল নাকি তোমার মন,
একদিন দুইদিন তিনদিন পর, তোমারি ঘর হবে আমারি ঘর,
কী কথা যে লিখি, কি নামে যে ডাকি,,,,
নদী চায় চলতে,তারা যায় জ্বলতে,
চিঠি লিখেছে বউ আমার,

তার সৃষ্টির আরো অসংখ্যক গান আজীবন জনপ্রিয় হয়ে থাকবে মানুষের মনে।লেখক একটি গান লিখে খালাস,কণ্ঠ শিল্পী তার আওয়াজ দিয়ে গানটিকে শ্রুতিমধুর করে কিন্তু একটি গানকে দর্শক প্রিয়তা অর্জন করার ক্ষেত্রে সকল প্রকার জ্ঞান ধ্যান ধারনা একজন সূরকার বা সঙ্গীত পরিচালকের থাকতে হয় তবেই গানগুলো জনপ্রিয়তা পায়।সূরের ভূবনে অসম্ভব পরিশ্রমি এ কৃর্তীমান লোকটির অনুপস্থিতি নিঃসন্দেহে আমাদের সঙ্গীতাঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।রাষ্ট্র কেবল তার দায় সারা ভাব নিয়ে তাকে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক,জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং রাষ্ট্রপতির পুরস্কার সহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত করেছেন কিন্তু রাষ্ট্র কিংবা আমরা যারা স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির কথা বলে বেড়াচ্ছি,মুক্তিযুদ্ধকে পুজিঁ করে একের পর এক ক্ষমতার আসনে বসছি-ভেবেছি কি কখনো তার এ মৃত্যুর জন্য আসলেই দায়ী কে বা কারা?মাত্র ৬৩ বছরেই কি জীবন শেষ?না,আমি বলবো অন্য কথা,দায়ী আমি আমরা!স্বাধীন করে দিয়ে যাওয়া তার এই প্রিয় স্বদেশের লক্ষ্য ভ্রষ্ট জাতি।আমার এ মতামতের সাথে অন্য কারো মতের মিল নাও থাকতে পারে কিন্তু বাস্তবতা আমার কথা ই বলবে।

তিনি ১৯৭১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৭১ এ  বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন মাত্র ১৫ বছর বয়সে। তখন তিনি ঢাকার আজিমপুরের ওয়েস্টটেন্ট হাইস্কুলের ছাত্র।সেই কচি মনেই দেশ প্রেম গেথে যায়।তার মুক্তিযুদ্ধকালীন কিছু ঘটনা তারই মুখে আসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসালমীর সাবেক আমীর রাজাকার গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে।

২৫ মার্চ রাতের গণহত্যা দেখার পর প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেন বুলবুল ও তার কয়েক জন বন্ধু।প্রথমে বিহারিদের বাসা থেকে অস্ত্র ছিনতাই করে ছোট একটি মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন করেন তারা।পরে জিঞ্জিরায় মুক্তি যোদ্ধাদের ঘাঁটি তৈরি করেন।সেখানে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণে টিকতে না পেরে ঢাকায় ফিরে আসেন বুলবুল।এসে জানতে পারেন বড় ভাই ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ টুলটুল মুক্তি যোদ্ধাদের গেরিলা দল ক্র্যাক প্লাটুনে যোগ দিয়েছেন।এর পরে বড় ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া গ্রেনেড নিয়ে জুলাই মাসের মাঝা মাঝি সময়ে নিউ মার্কেটের ১ নম্বর গেইটে পাকিস্তানি বাহিনীর লরিতে আক্রমণ করেন বুলবুল ও তার বন্ধূ সরোয়ারা।

ঠিক অগাস্টে ভারতের মেলা ঘরে গিয়ে এক দফা প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে ঢাকার লালবাগ এলাকায় আবারো কাজ শুরু করেন বুলবুল ও তার বন্ধু সজীব।তাদের প্লাটুনের নাম ছিল ওয়াই (ইয়াং) প্লাটুন।অক্টোবরে রোজার মাসে আবার ভারতে যাওয়ার সময় কুমিল্লা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাঝামাঝি তন্তর চেকপোস্টে পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের হাতে বন্দি হন বুলবুলরা চারজন।অমানবীয় নির্যাতনের পর তাদেরকে উলঙ্গ অবস্থায় বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারে।সেই জেল খানায় অন্তত ৫৫ জন মুক্তি যোদ্ধাকে বন্দি করে রেখেছিল পাকিস্তানি বাহিনীরা।
রোজার ঈদের দিন সন্ধ্যায় ব্রাক্ষণ বাড়িয়ায় পুলিশ কর্মকর্তা ছিরু ও তার ছেলে সহ ৩৯ জনকে আলাদা করে জেল থেকে বের করে এনে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা।তাদের মধ্যে এক জন প্রাণে বেঁচে যান।দুই দিন পর তাদের চার বন্ধুকে ব্রাহ্মণ বাড়িয়া শান্তি কমিটির অফিস দানা মিয়ার বাড়িতে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। সেই রাতেই সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হন বুলবুলরা।

এ তো তার মুখের শুনা কথা যা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাজাকার গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে কিন্তু বাস্তবতা ছিল আরো কঠিন আরো ভয়ংকর-জীবন মরন খেলা।খুবই পরিতাপের বিষয় যে যখন মুক্তি যুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় তখনিই ২০১২ সালের অগাস্টে তারঁ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার ঠিক পরের বছর খুন হয়েছিল তারই ছোট ভাই আহমেদ মিরাজ।২০১৩ সালের ৯ মার্চ রাতে কুড়িঁল ফ্লাই ওভারের পাশ থেকে পুলিশ মিরাজের লাশ উদ্ধার করে।সেই হৃদয় বিদারক ঘটনার বিচার না পাওয়ায় তার মন হতাশায় আর নিজ নিরাপত্তা নিয়ে ছিলেন তিনি চিন্তিত বলা বাহুল্য ২০১৮ সালের মে মাসে এক সাক্ষাৎকারে তিনি গ্লিটজের এর সাথে এ সব কথা সেয়ার করেন “ভাইয়ের বিচার পাইনি-ওটা হলো অভিমান।এটা অভিমানের বিষয়।আমি সরকারের নির্দেশেই কিন্তু ট্রাইব্যুনালে দাঁড়িয়েছি।এটা অভিমান ছিল।.এটা তো আমি বলবই।”
এর পর সরকার তার নিরাপত্তার অজুহাতে পুলিশী ছায়ায় রাখেন বলা যায় অনেকটা গৃহ বন্দির মতন।এ ভাবে বন্দি ছিলেন প্রায় অর্ধ যুগ।মানবেতর এ জীবনে শরীরে ও মনে অসুখ এসে বাসা বাধে।যে মানুষটির মন মানষিকতা ছিলো আকাশঁ ছোঁয়া,স্বাধীন দেশে স্বাধীনতা অর্জনকারীরা সেই পাক আমলের মতো ঘরে বন্দি থাকবে এ কেমন কথা!,গান ও সূরের পাগল,জীবন ভর জীবনকে মুক্ত বিহঙ্গে উড়াতে উড়াতে এসেছেন সেই মানুষই হঠাৎ বন্দী! যেন খাচাঁর পাখি! তার শরির আর কতটা বা ভাল থাকবে বা রাখতে পারবেন তা বলাই বাহুল্য।এমন কি নিজ চিকিৎসা করার সুযোগও তেমন মেলেনি তার!যাও চিকিৎসা করিয়েছেন তাও চোরের মতন চিকিৎসা নিয়েছে বারডেমে।এমন কি স্বাধীন রাষ্ট্রের এই অপরাধী(রাজাকারের বিরুদ্ধে)স্বাক্ষীর ব্যক্তিটার কাছে মানুষ বাসা ভাড়া পর্যন্ত দিতে চাইত না।এক সময় জীবন ও সমাজের প্রতি বিরক্ত হয়ে তার ফেইসবুকে এ জগৎ হতে তিনিঁ নিজেকে নিজেই মুক্তি চেয়েছেন
"অপরাধ তার সে কেন যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছিল!
সে কেন শীর্ষ রাজাকারের বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দিয়েছিল!"
কেন?কেন?কেন?এতো সব কেনো এর ভিতর একটাই উত্তর,এ দেশ তারঁ ছিলো না,এ জাতি তারঁ নয়।এ দেশ জাতি নাপাকিদের কন্ট্রোলে।তাইতো তারঁ মতন অসংখ্য মুক্তি যোদ্ধা,সমর্থক আজো নীরবে নিভৃতে কাদেঁ।রাজাকার আর তৈরি হওয়া বা হচ্ছে অকৃজ্ঞ নষ্ট ভ্রষ্ট প্রজন্মের পর প্রজন্মের দাপটে অভিমানে কেউ দেশে,কেউ বা বিদেশে,কেউ আবার আত্মপরিচয় গোপন রেখে কোন মতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
হয়তো বা স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় এখন, যদি কখনো এ শক্তির পরাজয় ঘটে স্বাধীনতার পক্ষের সমর্থকরা হয়তো বা দেখতে পাবে প্রয়াত এই বীরের মতন আরো অসংখ্য বীরের রক্তাক্ত স্বদেশ।আমরা তা চাই না,এখনো সময় আছে এ সরকারকে ভাববার যেন আর কোন বীর মুক্তিযোদ্ধা কিংবা স্বাধীনতার পক্ষের মেধাবী,সৃষ্টিশীলরা এ ভাবে তার মতন রাজাকারের হাতে খুন হওয়ার ভয়ে অকালেই ঝরে না পড়েন।এ জীবনে যা তিনি দিয়ে গেছেন তা অমুল্যধন।ভাবা কি যায়!মাত্র পনের ষোল বছর বয়সে মা মাটি মানুষের তরে পাগল হয়ে জীবনকে মৃত্যুর মুখে রেখে স্বাধীনতা এনে দিল আমাদের।সেই মানুষটার দেশ প্রেম নিয়ে আর কি বলার আছে।আমরা প্রোটেক্টসনস চাই না,চাই স্বাধীন দেশে বীরের বেশে নিশ্চিন্তে জীবন যাপন করতে।এর জন্য সরকার রাষ্ট্রীয় ভাবে যা ব্যাবস্থা রাখার করে রাখবেন।

এই বরেণ্য বীর যোদ্ধাকে
"সংগ্রামী লাল স্যালুট "
এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

কৃতজ্ঞতায়:বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যম
সোনেলার রুবা আপুর ফেবুক ওয়াল
এবং শ্রদ্ধেয় পি,ফারুক ভাই

0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ