
গতকাল সন্ধ্যা থেকে প্রচন্ড ঝড়বৃষ্টিতে ইলেক্ট্রিসিটি ছিলোনা। কখন যে আসবে তাও জানিনা! টিভিতে এটিএন বাংলা চ্যানেলে বহুল আলোচিত ড. মাহফুজুর রহমান স্যারের গানের অনুষ্ঠান “হিমেল হাওয়া ছুঁয়ে যায় আমায়” শুরু হতে যাচ্ছে! চরম অস্থিরতায় আছি। এমন সময় দুই সেকেন্ডের আলোক ঝলকানি দেখে মনে যেই একটু সান্ত্বনা পেলাম কিন্তু বেত্তমিজ বিদ্যুৎ আবার ঠুস্ করে চলে গেলো। নাই নাই নাই আর তার দেখা নাই।
এদিকে প্রায় পৌনে এগারোটা বাজে। রিমোট হাতে নিয়ে বসে আছি বিদ্যুৎ এই বুঝি এলো! অতি উত্তেজনায় আমি আগেই টিভির সুইচ অন করে রেখেছিলাম যাতে বিদ্যুৎ আসার পরে আর একটা সেকেন্ডও সময় নষ্ট না হয়। অবশেষে দশ মিনিট পরে কানে এলো মনে দোলা দিয়ে যাওয়া বহুল প্রতীক্ষিত সেই সুর-
“বুকেরই মাঝখানে কত যে কষ্ট হয়
আজ শুধু মন হলে
সবি ছিলো অভিনয়
ফিরে এসো ফিরে এসো
তুমি ফিরে এসো! ….
– সুরের পাখি ড. মাহফুজ স্যার।”
জাস্ট অসাধারণ! হান্ড্রেড ক্ল্যাপস ফর ইউ স্যার।
তবে দুঃখ একটাই, বিদ্যুৎ না থাকার কারনে গানের অনুষ্ঠানটির প্রথম অংশের প্রায় আধাঘণ্টা মিস করেছি আপনার সুরেলা কন্ঠে গাওয়া কিছু গান। এই করোনায় বিধিনিষেধ থাকায় দেশের বাইরে শ্যুটিং এ যেতে পারেননি বলে ব্যাকগ্রাউন্ডে প্রতিটি গানের জন্য আলাদা আলাদা স্টিল ছবি ব্যবহৃত হয়েছে বুঝতে পারছি। যেমন – পাখির গানে ময়ূরের স্ট্যাচু, ফুলের গানে দৃষ্টিনন্দন বাগানবিলাস, বরফের গানে এন্টার্কটিকার হিমশীতল বরফের ছবি ইত্যাদি। ভিডিও এডিটিংকারী টিকটকবাসীদের চেয়ে যথেষ্ট দক্ষ ছিলো।
“যারা টিভি দেখেন তারা ড. মাহফুজুর রহমানকে ভালোবাসেন। – বলেছেন মুন্নি সাহা।
মুন্নি সাহার উপস্থাপনায় স্যারের গানের মাঝখানে মাঝখানে তার কথাগুলোকে কোকিলের কুউউউ কুউউউউ সুরেলা ডাকের চেয়ে কোন অংশেই কম মনে হয়নি আমার। এরপরে টিভির রিমোটকে ভালোবাসার কথা বললেন মুন্নি সাহা। তবে সে রিমোট স্যার নিজেই নাকি আমরা দর্শকরা তা ডিশ সংযোগের কিঞ্চিৎচাপায় ঠিক বুঝতে পারিনি।
কত সুন্দর মন ভোলানো কথায় মুন্নি সাহা আমাদের মাতিয়ে রেখে আবারও সামনের বছর স্যারের গান শোনানোর অগ্রীম দাওয়াত দিলেন যা একজন ভদ্রোচিত সামাজিক বোধসম্পন্ন ব্যক্তি মাত্রই করা সম্ভব। এই করোনাবন্দি সময়ে সবাই অসভ্য অসামাজিক হয়ে গিয়েছে। ঈদের দিন পর্যন্ত কেউ দাওয়াত দেয়নি! অথচ মুন্নি সাহাকে নিয়ে অনেকেই অনেক ট্রল করেছেন। তাদের পক্ষ থেকে আজ আমি ক্ষমা চাইছি স্যার।
ড. মাহফুজ স্যারের গানের ভক্ত আমি সেই ২০১৭ সাল থেকেই যখন প্রথম তার গান শুনি। তাঁকে নিয়েও অনেকেই ট্রল করেছেন তবে আমি কিন্তু তাঁর পক্ষেই ছিলাম যার প্রমান দুইশ’ এর অধিক লাইক কমেন্টস প্রাপ্ত ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে ফেসবুকে দেয়া আমার একটি স্ট্যাটাস। বিশেষ প্রয়োজনে অবিশ্বাসীদের জন্য প্রমাণ স্বরুপ স্ট্যাটাসটির স্ক্রিনশট সরবরাহ করা যেতে পারে।
আমি লিখেছিলাম-
“ঈদ উপলক্ষে এটিএন বাংলায় ড.মাহফুজুর রহমানের “স্মৃতির আলপনা আকি” একক সঙ্গীতানুষ্ঠানটি দেখলাম। সব গান ভালো লেগেছে তা বলবোনা তবে তার কিছু গানের কথা ছিল অসাধারন।
যারা ফেসবুকে তাকে নিয়ে ব্যাঙ্গ আর উপহাস করে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন বা দিবেন বলে মনস্থির করেছেন তাদের বলছি – ক্যামেরার সামনে একবার দাঁড়িয়ে দেখবেন কেমন লাগে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি অনেকেই উল্টা পাল্টা কান্ড করা শুরু করে দেবেন।
সবচেয়ে বড় কথা এ ধরনের গানের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাওয়ার জন্য সাহস আর কলিজা লাগে বুঝলেন? শুধু টাকাপয়সা ক্ষমতা বা টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক হলেই সবকিছু হয়নারে ভাই। একটু পজিটিভলি চিন্তা করলেই তা বুঝতে পারবেন।
সাহসী পদক্ষেপের জন্য মাহফুজ সাহেবকে সাধুবাদ জানাই।”
আজ এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে আমিই সঠিক ছিলাম। কারন গত দু’বছরের তুলনায় মাহফুজ স্যারের কন্ঠে যথেষ্ট মাধূর্যতা এসেছে। সবচেয়ে ভালো লেগেছে এবারের গানগুলোয় সিনেমার নায়কদের মত তিনি দু’হাত বাড়িয়ে পেট মোচর দেননি দেখে। আর তিনি নিজেই কিছু গান লিখেছেন জেনে মুগ্ধ হয়েছি আমি! সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি।
প্রিয় ব্লগার ইকরাম জিসান ভাই ২০১৮ সালের ১৭ই জুন ফেসবুকে “ড. মাহফুজুর রহমান স্যারের কাছে গান শিখতে চাই” নামক একটি ইভেন্টস এ আমন্ত্রণ জানিয়ে লিখেছিলেন- “আসুন আমরা গোইং (ইভেন্টস এ লাইক) দিয়ে মহান শিল্পীর গান উপভোগ করি। যদি বিশ্বকাপে সারা দেশ মেতে ওঠে, যদি জাস্টিন বিবার নিয়ে বিভোর হয়ে থাকে গোটা বিশ্ব তবে আমাদের এই প্রিয় শিল্পী ড. মাহফুজুর রহমান কে নিয়ে আমরা কেন চুপ করে থাকবো।”
দু’বছর পরে ২০২০ এ এসে সেই ইভেন্টস এ লাইক দিয়ে সাড়া দেইনি বলে আজ নিজেই অনুতপ্তবোধ করছি। আফসোস! এতদিনে আমি কিছুটা হলেও গান শিখতে পারতাম। স্যরি জিসান ভাই।
মাহফুজ স্যার, বেঁচে থাকলে আগামীবছর আবার আপনার গান শুনবো। পরিশেষে, এই অধমের ছোট্ট একটি বাসনা- আপনার সুরেলা কন্ঠে জন ডেনভারের ইউ ফিল আপ মাই সেন্সেস গানটি শুনতে চাই। প্লিজ! গান পিপাসু ব্যক্তির অন্তিম ইচ্ছে মনে করে আশাকরি নিরাশ করবেননা। জানেনইতো নিন্দুকেরা অনেক কথাই বলে। ইউ কিপ ইট অন স্যার।
গড ব্লেস!
২৩টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
কি গান শুনাইলো কাল রাত থেকে সকাল পর্যন্ত প্রচন্ড ঝড়ের তান্ডব আর বৃষ্টি পেয়েছি। আমি টিভি দেখিনা। সাহস লাগে , সংস্কৃতি মনা হওয়া লাগে, সর্বোপরি টাকা লাগে তাহলে এমন কিছু করে দেখানো যায়। প্রথমে সুন্দরী বৌকে তারপর নিজেই নেমে গেল। সে চাইলে এদেশের প্রান্তিক পর্যায়ের শিল্পীকে তুলে ধরতে পারতো অনায়াসে নিজেকে হাসির পাত্র না করে। তার গানের কথাগুলো ভালো, সে মানুষ হিসেবে ও শুনেছি ভালো। সে কিন্তু আমার দুলাভাই হয় কারন ইভা আমাদের ভার্সিটির বন্ধু ছিলো। ইভা তখন ঘোষিকা ছিল এটিএন এর। আমার জানামতে সে তথাকথিত বাথরুম সিঙ্গার ছিল। প্রথমবার যখন জানলাম সে বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী , পুরাই আউল্লা ঝাউল্লা লাইগা গেল।প্রতিভার কদর করতে হয় কিন্তু এদের দুজনের গান শুনলে আমার কাছে হাস্যকর লাগে। ইভার একটা গান ভালো লেগেছে ‘হৃদয়ের কথা’ সিনেমার। আপনার উচ্ছাস দেখে ভালো লাগছে। আগামী বছর আবার তার গান শুনতে পান এই কামনা করি। আপাতত পুনঃ প্রচার হলে ভালো করে শুনবেন
তৌহিদ
আপু ক্ষমতা থাকলে অনেক কিছু করা যায় আবার টাকা থাকলেই অনেক কিছু করার সাহস সবার থাকেনা। বিস্তারিত মন্তব্যে ভালোলাগা রইলো।
ভালো থাকুন।
হালিম নজরুল
যারা মাহফুজুর রহমানকে নিয়ে ট্রল করে, আমি তাদেরকে নিন্দা করতে প্রস্তুত আছি।
তৌহিদ
ধন্যবাদ ভাই। খুশি হলাম।
জিসান শা ইকরাম
আমার ভাগ্য খারাপ যে গতরাতের গানগুলো শুনতে পারিনি 🙁
আসলে কয়টায় প্রগ্রাম তাই ভুলে গিয়েছিলাম।
একটা বিষয় অবাক লাগে যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার গাওয়া গান নিয়ে এত হাসাহাসি, ফানি ট্রলের পরেও তিনি তার গান গাওয়ার সাধনা চালিয়ে যাচ্ছেন ! গানের প্রতি ওনার ডেডিকেশন কিন্তু অবাক করার মতই।
” যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলোরে …… ” এটি ওনার মত আর কেউ ধারন করেছে বলে আমার মনে হয়না।
ফানি গ্রুপে ইনভাইট করেছিলাম 🙂
তবে এবার কেন জানি ওনাকে নিয়ে ফান করতে ইচ্ছে করল না।
পোস্ট ভালো হয়েছে ভাই।
শুভ কামনা।
তৌহিদ
আসলেও তার গানের উন্নতি হয়েছে। অনেকেই ট্রল করছেন সেটাই স্বাভাবিক। তিনি এগিয়ে চলুন এটাই কাম্য।
ভালো থাকুন ভাই।
ফয়জুল মহী
আমি মাফুজ স্যার এবং মুন্নি সাহার ভক্ত নয়। তাই লেখা নিয়ে আমার মন্তব্যও নাই। সুপর্ণা দিদির মন্তব্য দেখে একটা মজার ঘটনা মনে পড়লো । আমি তখন সৌদির হাফার আল বাতনে ব্যবসা করি। আমি আমাদের বৃহত্তর নোয়াখালী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক । এই কারণে বৃস্পতিবার রাতে বাংলাদেশীর সাথে আড্ডা দিতাম। যেহেতু শুক্রবারে সবার ছুটি তাই দুরের কাছের সবাই শহরে এসে বাঙ্গালী পাড়ায় আড্ডা দিত। হোটেলের সামনে এমন এক আড্ডায় পনর বিশ জনের জটলা ও তর্ক । যেন মারামারি হবে । এক পক্ষ বলে ইভা স্যারের মেয়ে আরেক পক্ষ বলে স্ত্রী। আমি এবং আরো দুইজন গিয়ে হাজির হলাম আমার হাতে যায় যায় দিন ম্যাগাজিন। ৬ রিয়েল দিয়ে কিনতাম ( ১২৪ টাকা ও সালটা মনে নাই ) সেই সংখায় ঠাকুর মাহামুদ ইভার রহমানকে নিয়ে লিখেছে । এবং আমি কৌতুক বসত দেখেই সেটা আগে পড়ে আমার সাথের লোককে বলি। তারা দুইজন সবাইকে শান্ত হয়ে বসতে বলে এবং এখন প্রমাণ হবে বউ না মেয়ে তবে শর্ত হলো যারা হারে তারা সবাইকে চা নান্তা করাতে হবে। যায় যায় দিন খুলে আবদুক হক ভাই পড়ে সবাইকে শুনালেন। পরে তিনশত রিয়েল বিল তিনিই পরিশোধ করেন কারণ সমিতির সভাপতি তিনি। এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ছিলেন। এখন সে সবার পরিচিত কারণ ক্ষমতা এবং টাকা। হয়তো একদিন এটিএন টিভিই থাকবে না।
তৌহিদ
হা হা হা, মহীভাই মন্তব্যে ফাটিয়ে দিলেন কিন্তু। অনেক ধন্যবাদ ভাই।
সুপায়ন বড়ুয়া
“সবচেয়ে বড় কথা এ ধরনের গানের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাওয়ার জন্য সাহস আর কলিজা লাগে বুঝলেন? শুধু টাকাপয়সা ক্ষমতা বা টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক হলেই সবকিছু হয়নারে ভাই। একটু পজিটিভলি চিন্তা করলেই তা বুঝতে পারবেন।“
সহমত ভাইজান। সবার দ্বারা সব কিছু হয় না। গান আর নাচ শুধু তরুনরাই করবে তাতো নয়।
বয়স সবার বাড়বে তাই বলে ইচ্ছাশক্তিকে বলি দিতে হবে কেন ?
ওনার ইচ্ছা শক্তি আর প্রয়াসকে স্যালুট জানাই।
ভাল লিখলেন। শুভ কামনা।
তৌহিদ
ধন্যবাদ দাদা, সঠিক বলেছেন। তাঁর সাহসের তারিফ করতেই হয় আসলে। তিনি এগিয়ে চলুন এটাই কাম্য।
ভালো থাকুন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
আমি শেষের কয়েকটা কলি শুনেছি তার আগে কারেন্ট ছিলো না।
অনেকেই তাঁকে নিয়ে মজাটাঠ্রা করে।
কেন করে সত্যি কথা বলতে আজও আমার অজানা।
কিন্তু এখনো উনি উনার জায়গায় অটুট আছেন।
সেটা অনেক বড় বিষয়।
ভালো পোস্ট দাদা।
তৌহিদ
জ্বী দাদা, ঠিক বলেছেন। শুভকামনা রইলো দাদা।
কামাল উদ্দিন
ওনার গান নিয়া ফেজবুকে এতো বেশী সমালোচনা হয় যে, আমারও মনে হয় ওনার আসলে গান গাওয়াটা উচিৎ নয়।
তৌহিদ
তাঁর ইচ্ছে হয়েছে গাইছে ভাই। ইচ্ছেটাকেই সম্মান জানালাম আর কি!
কামাল উদ্দিন
হুমম, ওনার গানের গলাটা ভালো হতো তাও একটা কথা ছিল।
ছাইরাছ হেলাল
গানের প্রতি তার অফুরান ভালবাসা আবার প্রমানিত।
তৌহিদ
হ্যা ভাইয়া, তাঁর অদম্য ইচ্ছের তারিফ করতেই হয়। ভালো থাকুন।
সঞ্জয় মালাকার
ওনার ইচ্ছা শক্তি আর প্রয়াসকে স্যালুট জানাই।
ভাল লিখলেন। শুভ কামনা দাদা।
তৌহিদ
ভালো থাকুন দাদা।
মাহবুবুল আলম
তৌহিদ ভাই!
মাহফুজুর রহমানের গান নিয়ে অনেক ট্রল হয়, আপনার এ আলোচনাটিট্রিল কি না তা বুঝতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। আমার মতে এটি বেশ রক্ষণশীল ট্রল। ভুল হলে মার্জনা করবেন। আপনার অঞ্চলেরইতো সন্তান, হাহাহাহা।
তবে আমার দৃষ্টিতে তিনি পেশাদার শিল্পী না হলেও শিল্পী তো। কী বলেন?
তৌহিদ
পজিটিভ ট্রল বলতে পারেন। আসলে তার অদম্য ইচ্ছেকে ছোট করতে চাইনি।
ভালো থাকুন ভাই।
শামীম চৌধুরী
তোমার লেখা পড়ে হাসতে হাসতে শেষ। কাল স্যারের কাছে একটি চিঠি দিয়েছি। উত্তর আসলে তোমার এখানে আবার লিখবো।
তৌহিদ
অপেক্ষায় আমিও রইলাম ভাই। ভালো থাকুন।