সুন্দর বনের “করমজল”

কামাল উদ্দিন ২২ মার্চ ২০২০, রবিবার, ০৭:১২:৪৩অপরাহ্ন ভ্রমণ ২১ মন্তব্য

সুন্দরবনে গিয়ে হরিণদের নিজ হাতে চিপস খাওয়ানোর কথা কেউ বললে মানুষ ভাববে লোকটা নিশ্চিৎ পাগল। যেখানে ল্যান্স ক্যামেরা ছাড়া ওদের ছবি তোলাও কঠিন, এমনকি ক্যামেরার ক্লিক আওয়াজটাও যেখানে হরিণদের দৌড়ে পালানোর অন্যতম কারণ হতে পারে। আমি বলি এটা অবাস্তব না, সুন্দর বনের এমন একটা অংশ আছে যেখানে হরিণ ও বানররা আপনার হাত থেকে খাবার খাবে আর কুমিরদের দেখতে পাবেন একেবারে হাতের নাগাল থেকে। যারা আগে গিয়েছেন সুন্দবনে তারা নিশ্চিৎ ধরে ফেলেছেন এটা সুন্দরবনের করমজল ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র। পশুর নদীর তীরে ৩০ হেক্টর জমির ওপর বন বিভাগ এই পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে তুলেছে। এটা মুলত সুন্দর বনের অংশেই একটা হরিণ ও কুমিরের প্রজনন কেন্দ্র। তবে এখানে বাঘও দেখতে পাবেন, আমি আপনাদের দেখাবো, ছবি তুলে এনেছি 😉


(২) নদী পথে খুলনা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার এবং মংলা থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে এ পর্যটন কেন্দ্রটির অবস্থান। আমি করমজল দুইবার গিয়েছি, প্রথম বার গিয়েছিলাম এই লঞ্চে।


(৩) ট্রলার নিয়াও অনেকে চলে আসছে এখানে। এই খালটা পশুর নদী থেকে সুন্দর বনের ভেতরের দিকে চলে গেছে।


(৪) করমজল ঘাটেই রয়েছে সুন্দরবনের একটি মানচিত্র। এই মানচিত্রে এক নজরে সুন্দরবনটাকে দেখা যাবে।


(৫) কুমিরের ডিম। পাশেই রয়েছে একটি সুন্দরবন সংগ্রহশালা, ওখানেই এগুলো রয়েছে।


(৬) এটাই আমার তোলা বাঘের ছবি, আসলে বাঘের কংকাল, পেছনে হরিণের চামড়া, এগুলোও ঐ সংগ্রহশালায়ই রয়েছে।


(৭) হরিণগুলো পর্যটকদের হাত থেকে খাবার খাচ্ছে।


(৮) এগুলো টিকটিকি না, সবই কুমিরের ছানা।


(৯) এখানে রয়েছে ছোট ছোট অনেকগুলো চৌবাচ্চা। কোনটিতে ডিম ফুটে বের হওয়া কুমির ছানা, কোনটিতে মাঝারি আকৃতির আবার কোনটিতে আরও একটু বড় বয়সের লোনা জলের কুমিরের বাচ্চা।


(১০) এখানে একটা ওয়াচ টাওয়ারও রয়েছে, তবে ভাঙ্গাচোরা বিধায় খুবই সাবধানে উঠতে হয়, এখন মেরামত করেছে কিনা কে জানে?


(১১) ওয়াচ টাওয়ারে উঠে তোলা কুমিরের চৌবাচ্চাও হরিণদের জন্য করে রাখা দেয়াল ঘেরা আবাস।


(১২) মানচিত্র পেছনে ফেলে বনের মধ্যে দক্ষিণে চলে গেছে আঁকাবাঁকা কাঠের তৈরি হাঁটা পথ। পথের নাম মাঙ্কি ট্রেইল। এই নামের স্বার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায় ট্রেইলে পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গেই। পুরো ট্রেইল জুড়েই দেখা মিলবে সুন্দরবনের অন্যতম বাসিন্দা রেসাস বানরের।পথের দুই ধারে ঘন জঙ্গল। এ বনে বাইন গাছের সংখ্যা বেশি। রয়েছে সুন্দরী গাছও, সেই সাথে দেখা মিলবে প্রচুর শ্বাসমুলের।


(১৩) একজন বসে আছে একেবারে পথ আগলে।


(১৪) কাঠের ট্রেইলটা এক কিলোমিটারের বেশী দীর্ঘ আর নির্জন, একা হাটলে গা ছমছম করবে নিশ্চিৎ।


(১৫) তিনি বসে কিছু একটা ভাবছে।


(১৬) মাথার উপড় ডানা ঝাপটানোর শব্দে খুঁজে পেলাম একটি বুলবুলি পাখি।


(১৭) ট্রেইলের শেষ মাথায় একেবারে পশুর নদীর ধারে একটা ছোট্ট কুঁড়ে, সেখানে বসে জিরিয়ে নেওয়া যায় অনায়াসে।


(১৮) ভেতরের দিকের সরু খালের পাড়ে গাছের ডালে বসে আছে বেশ কিছু পাখি।


(১৯) একেবারে দক্ষিণ পাশে দেয়াল ঘেরা বড় পুকুরে আছে রোমিও, জুলিয়েট আর পিলপিল। জেলেদের জালে ধরা পড়া এই তিন লোনা পানির কুমিরকে ২০০২ সালে সুন্দরবনের করমজলে আনা হয়। রোমিও-জুলিয়েটের বয়স এখন ২৩। এই জুটি প্রজননক্ষম হয় ২০০৫ সালে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কৃত্রিম উপায়ে কুমির উৎপাদনে মূল অবদান তাদেরই। জুলিয়েট আকারে রোমিওর চেয়ে সামান্য ছোট। লোনা পানির এই প্রজাতির কুমির আশি থেকে একশো বছর বাঁচে। ওনি কোন জন জানা হলোনা।


(২০) আপন মনে বসে আছে একটা ঘুঘু পাখি।


(২১) সদয় পরিদর্শনের জন্য কর্তৃপক্ষ ধন্যবাদ জানিয়ে আবার যেতে বলেছে।


(২২) ঘুরে যথেষ্ট ক্লান্ত ছিলাম, তাই সফেদা ফলগুলোকে মনে হয়েছিল অমৃত।

0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ