
সুন্দরবনে গিয়ে হরিণদের নিজ হাতে চিপস খাওয়ানোর কথা কেউ বললে মানুষ ভাববে লোকটা নিশ্চিৎ পাগল। যেখানে ল্যান্স ক্যামেরা ছাড়া ওদের ছবি তোলাও কঠিন, এমনকি ক্যামেরার ক্লিক আওয়াজটাও যেখানে হরিণদের দৌড়ে পালানোর অন্যতম কারণ হতে পারে। আমি বলি এটা অবাস্তব না, সুন্দর বনের এমন একটা অংশ আছে যেখানে হরিণ ও বানররা আপনার হাত থেকে খাবার খাবে আর কুমিরদের দেখতে পাবেন একেবারে হাতের নাগাল থেকে। যারা আগে গিয়েছেন সুন্দবনে তারা নিশ্চিৎ ধরে ফেলেছেন এটা সুন্দরবনের করমজল ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র। পশুর নদীর তীরে ৩০ হেক্টর জমির ওপর বন বিভাগ এই পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে তুলেছে। এটা মুলত সুন্দর বনের অংশেই একটা হরিণ ও কুমিরের প্রজনন কেন্দ্র। তবে এখানে বাঘও দেখতে পাবেন, আমি আপনাদের দেখাবো, ছবি তুলে এনেছি 😉
(২) নদী পথে খুলনা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার এবং মংলা থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে এ পর্যটন কেন্দ্রটির অবস্থান। আমি করমজল দুইবার গিয়েছি, প্রথম বার গিয়েছিলাম এই লঞ্চে।
(৩) ট্রলার নিয়াও অনেকে চলে আসছে এখানে। এই খালটা পশুর নদী থেকে সুন্দর বনের ভেতরের দিকে চলে গেছে।
(৪) করমজল ঘাটেই রয়েছে সুন্দরবনের একটি মানচিত্র। এই মানচিত্রে এক নজরে সুন্দরবনটাকে দেখা যাবে।
(৫) কুমিরের ডিম। পাশেই রয়েছে একটি সুন্দরবন সংগ্রহশালা, ওখানেই এগুলো রয়েছে।
(৬) এটাই আমার তোলা বাঘের ছবি, আসলে বাঘের কংকাল, পেছনে হরিণের চামড়া, এগুলোও ঐ সংগ্রহশালায়ই রয়েছে।
(৭) হরিণগুলো পর্যটকদের হাত থেকে খাবার খাচ্ছে।
(৮) এগুলো টিকটিকি না, সবই কুমিরের ছানা।
(৯) এখানে রয়েছে ছোট ছোট অনেকগুলো চৌবাচ্চা। কোনটিতে ডিম ফুটে বের হওয়া কুমির ছানা, কোনটিতে মাঝারি আকৃতির আবার কোনটিতে আরও একটু বড় বয়সের লোনা জলের কুমিরের বাচ্চা।
(১০) এখানে একটা ওয়াচ টাওয়ারও রয়েছে, তবে ভাঙ্গাচোরা বিধায় খুবই সাবধানে উঠতে হয়, এখন মেরামত করেছে কিনা কে জানে?
(১১) ওয়াচ টাওয়ারে উঠে তোলা কুমিরের চৌবাচ্চাও হরিণদের জন্য করে রাখা দেয়াল ঘেরা আবাস।
(১২) মানচিত্র পেছনে ফেলে বনের মধ্যে দক্ষিণে চলে গেছে আঁকাবাঁকা কাঠের তৈরি হাঁটা পথ। পথের নাম মাঙ্কি ট্রেইল। এই নামের স্বার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায় ট্রেইলে পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গেই। পুরো ট্রেইল জুড়েই দেখা মিলবে সুন্দরবনের অন্যতম বাসিন্দা রেসাস বানরের।পথের দুই ধারে ঘন জঙ্গল। এ বনে বাইন গাছের সংখ্যা বেশি। রয়েছে সুন্দরী গাছও, সেই সাথে দেখা মিলবে প্রচুর শ্বাসমুলের।
(১৩) একজন বসে আছে একেবারে পথ আগলে।
(১৪) কাঠের ট্রেইলটা এক কিলোমিটারের বেশী দীর্ঘ আর নির্জন, একা হাটলে গা ছমছম করবে নিশ্চিৎ।
(১৫) তিনি বসে কিছু একটা ভাবছে।
(১৬) মাথার উপড় ডানা ঝাপটানোর শব্দে খুঁজে পেলাম একটি বুলবুলি পাখি।
(১৭) ট্রেইলের শেষ মাথায় একেবারে পশুর নদীর ধারে একটা ছোট্ট কুঁড়ে, সেখানে বসে জিরিয়ে নেওয়া যায় অনায়াসে।
(১৮) ভেতরের দিকের সরু খালের পাড়ে গাছের ডালে বসে আছে বেশ কিছু পাখি।
(১৯) একেবারে দক্ষিণ পাশে দেয়াল ঘেরা বড় পুকুরে আছে রোমিও, জুলিয়েট আর পিলপিল। জেলেদের জালে ধরা পড়া এই তিন লোনা পানির কুমিরকে ২০০২ সালে সুন্দরবনের করমজলে আনা হয়। রোমিও-জুলিয়েটের বয়স এখন ২৩। এই জুটি প্রজননক্ষম হয় ২০০৫ সালে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কৃত্রিম উপায়ে কুমির উৎপাদনে মূল অবদান তাদেরই। জুলিয়েট আকারে রোমিওর চেয়ে সামান্য ছোট। লোনা পানির এই প্রজাতির কুমির আশি থেকে একশো বছর বাঁচে। ওনি কোন জন জানা হলোনা।
(২০) আপন মনে বসে আছে একটা ঘুঘু পাখি।
(২১) সদয় পরিদর্শনের জন্য কর্তৃপক্ষ ধন্যবাদ জানিয়ে আবার যেতে বলেছে।
(২২) ঘুরে যথেষ্ট ক্লান্ত ছিলাম, তাই সফেদা ফলগুলোকে মনে হয়েছিল অমৃত।
২১টি মন্তব্য
ইঞ্জা
বেশ মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে ছবি গুলো দেখছিলাম, বেশ সুন্দর একটি জায়গা ভ্রমণ করে এলেন ভাই, খুব ভালো লাগলো পোস্টটি।
ধন্যবাদ।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ ইঞ্জিনিয়ার ভাই, ভালো থাকুন সব সময়।
কামাল উদ্দিন
আপনার জন্যও শুভ কামনা সব সময়।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অনেক সুন্দর হয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা
কামাল উদ্দিন
আপনার জন্যও শুভ কামনা সব সময়।
সুপায়ন বড়ুয়া
অনেক সুন্দর ছবি গুলো দেখে
হারিয়ে যাই বনে
কামাল ভাইয়ের কল্যানে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা।
কামাল উদ্দিন
বনে হারাতে মন চাচ্ছে, কিন্তু হারানোর এখন আর সুযোগ নাই দাদা।
সুপায়ন বড়ুয়া
ছবিতে হারাই কিছুক্ষন
বাসায় আছি যতক্ষন
লেখা দিয়ে অভয় পাই
লেখা আমার মন্তব্য চাই।
শুভ কামনা।
ফয়জুল মহী
হে প্রভু আমাদের সকলকে নিরাপদ রাখো, অসাধারণ
কামাল উদ্দিন
হুম, ধন্যবাদ।
নীরা সাদীয়া
পশুপাখিকে ভালোবাসি বলে অন্য রকম এক আত্মতৃপ্তি পেলাম! আপনার ছবির মাধ্যমে নতুন এক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হলো।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ আপু, সকল জীবকে ভালোবাসায় এক অন্য রকম তৃপ্তি আছে।
ছাইরাছ হেলাল
অনেক স্মৃতির এ বন,
মনে করিয়ে দিলেন। আহা।
কামাল উদ্দিন
স্মৃতি বড় জ্বালাময়……নাকি সুখস্মৃতি বড় ভাই?
জিসান শা ইকরাম
করমজল তিনবার গিয়েছি,
কিন্তু একবারও আপনার মত ছবি তোলা হয়নি।
রোমিও জুলিয়েটকে দেখেছি, দেখেছি হরিন, তবে কাঠের পথের উপরে বসে থাকা এমন বানর দেখার সৌভাগ্য হয়নি।
পোস্ট ভাল হয়েছে।
কামাল উদ্দিন
আপনার তো সবই দেখা, শুধু একটা বানর না দেখলে আর কি সমস্যা? ভালো থাকবেন ভাই।
হালিম নজরুল
বেশ কয়েকবার গিয়েছি। বানরদের সাথে দুষ্টামি করেছি। ভাল লেগেছে।
কামাল উদ্দিন
বানরের দুষ্টুমি তো সর্বদাই আমাদের ব্যপক বিনোদন দেয়।
রুমন আশরাফ
ভীষণ ভাল লাগলো ছবিগুলো দেখে। অনেক তথ্যও পাওয়া গেলো। ভাল থাকবেন ভাই।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ রুমন ভাই, আপনিও ভালো থাকুন সব সময়।