সিটিং ডিজিজ

ইঞ্জা ১ মার্চ ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ০৩:৩৯:১০অপরাহ্ন চিকিৎসা ৮ মন্তব্য

 

লেখাটি যদিও সংগ্রহীত এরপরেও সবার জানা উচিত বলেই আজ লেখাটি ব্লগে নিয়ে এলাম, আসলে আমরা যারা অফিস করি তাদের অবশ্যই জানা উচিত আমরা কতো ভয়াবহ রোগের শিকার হচ্ছি, আর এই রোগ থেকে আমাদের নিষ্কৃতি পাওয়া কি ভাবে সম্ভব তা ছোট পরিসরে জানাটা লাভজনক, আরো বৃহত পরিসরে জানতে চাইলে গুগল মামা আছে, কি বলেন? - ইঞ্জা (3

আসুন লেখাটি পড়িঃ

আপনি অধূমপায়ী । মদ, গাজা, চিনি আপনার দুচোখের বিষ । মাংস, চর্বি খাননা, কোক-পেপসি চাননা, যারা খায় তাদেরকেও করেন ঘেন্না । সকালে একঘন্টা জিমে কাটান, তুমুল ব্যায়াম করেন । তারপর প্রিমিও গাড়ীতে অফিসে যান । দৌড়ে লোকাল বাস ধরার যন্ত্রণা বা যাত্রীদের সঙ্গে ঠেলাঠেলি আপনার জন্য কষ্ট কল্পনা । নয়টা পাঁচটা ডেস্কে বসে কাজ করেন অফিসে । তারপর গাড়ীতে ঘূমিয়েই ফেরেন বাড়ী । সুখের সংসার আপনার । দাম্পত্য আপনাকে অশান্তি নয়- দিয়েছে মানসিক প্রশান্তি । রাতে পরিবারের সাথে ঘন্টা কয়েক টিভি দেখেন বা কম্পিউটার নিয়ে বসেন ।

অথবা ধরেন আপনি student, সারাদিন লাইব্রেরীতে মুখ গুজে পড়ে থাকেন । মনোযোগ বিঘ্নিত হবে তাই এদিক সেদিক যাননা । ক্যান্টিনে আপনার ভয়, যদি আড্ডা জমে যায় । সময়ের সর্বোত্তম ব্যাবহার করছেন । সো নট নড়ন-চড়ন ।
যে কেউ বলবে আপনার life style টা ঈর্ষণীয় ভাবে সুস্বাস্হকর । কিন্ত বিশ্বাস কি করবেন- আপনি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার বা sudden death এর মারাত্মক ঝুকিতে আছেন ? একজন ভিক্ষুক যে দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে বেড়ায় তার তুলনায় আপনার হঠাৎ মরে যাবার ঝুকি ৪০ ভাগ বেশী । কিন্ত কেন ? কোন সে ভিলেন যা লুকিয়ে আছে আপনার জীবনাচরনে? আর কুরে কুরে খেয়ে ফেলছে আপনার আয়ূ?

হ্যাঁ Sitting disease নামের নতুন এক মহামারী রোগের গোড়াপত্তন হয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞানে । বিরতিহীন লম্বা সময় বসে থাকা (তা অফিস জব, লাইব্রেরী ওয়ার্ক, ধর্মকর্ম, টিভি দেখা, কম্পিউটার ফেসবুকিং যাই হোক) হৃদরোগ ও হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে । গবেষনায় এটি সুপ্রমানিত । এমনকি আপনি এক ঘন্টা উসাইন বোল্টের গতিতে দৌড়ানোর পর যদি ছয়ঘন্টা অফিস-লাইব্রেরী-টিভি-কম্পিউটারে বসে থাকেন তবে আপনার (দৌড়ানোর) লাভের গুড় কিন্তু (বসে থাকার) পিপড়ায় খেয়ে ফেললো । বিরতিহীন বসে থাকার ফলে আমাদের শরীরবৃত্তে যে নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটে তা থেকেই এ sitting disease এর উৎপত্তি ।

এ Sitting disease একটা পেশাগত বিপত্তি (Occupational hazard) ও বটে । সেদিন হয়তো বেশী দূরে নয় যখন হার্ট এটাকে আক্রান্ত রোগী তার অফিসের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিবে তাকে কেন বসে বসে কাজ করতে হলো । তবে যে চিকিৎসক মধ্যদুপুর থেকে মধ্যরাত অবধি চেম্বারে বসে বছরের পর বছর রোগী দেখে যান- সে হয়তো তার অকাল-মরনকালে নিজের অর্থলিপ্সা ছাড়া আর কিছুকে দায়ী করার সুযোগ পাবেনা কখনো ।

এ থেকে বাঁচতে হলে কাজের বা বিনোদনের ফাকে ফাকেই আপনাকে নড়াচড়া করতে হবে, উঠে দাড়াতে হবে, অদূরে দুয়েক মিনিট হেটে আসতে হবে- মূল উদ্দেশ্য হল বসে থাকাটা যেন এক নাগাড়ে না হয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে হয় । এজন্য পাশের desk এ গিয়ে সহকর্মীকে জিজ্ঞাস করতে পারেন তার কুশল । যতবার ফোন আসবে কথা বলতে পারেন উঠে দাড়িয়ে, হেটে হেটে । অর্থ্যাৎ যে কোনো ছল ছুতো উছিলায় বিরতিহীন বসে থাকাটায় ব্রেক দিতে হবে । ঘন্টায় পাঁচ-দশ মিনিট সময় ক্ষয় করতে হবে এ নড়াচড়ায় । মাঝে মাঝে হাত পা ঝারা দিন, পা দুটো সটান করুন সম্মুখে, আড়মোড়া ভেঙ্গে শরীরটাকে মোচড়-টোচর দিন । অফিসের বস যদি এ হাটাহুটাকে কাজের ক্ষতি মনে করে তবে এ status টা share করে দিন তার ওয়ালে ।

এতো গেলো অফিসটাইমের কথা । বিকাল আর রাতের সময়টার জন্য একটা সুপরামর্শ দিব আপনাকে? ঘরের টেলিভিশনটা ভেঙ্গে ফেলুন । এজন্য রান্নাঘরের ‘পুতা’ টাই যথেষ্ট । আপনি কল্পনাও করতে পারবেননা এই টিভি আপনার দেহ-মন-মস্তিস্ককে ঘুনে পোকার মত কিভাবে ধ্বসিয়ে দিচ্ছে । টিভি (ইদানীং ফেসবুক) আপনাকে ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখতে পারঙ্গম । টিভি দেখা বাদ দিয়ে ঐ সময়টা বাচ্চাদের নিয়ে খেলুন । বউকে নিয়ে এদিক সেদিক ঘুরুন, গুন গুন করে গাইতে থাকুন- জানালা খুলে আকাশ দেখো, টিভি দেখোনা । বউবাচ্চা না থাকলে ঘুরে ঘুরে আমাবস্যা-পূর্ণিমার ছবি তুলুন- তবু TV, Computer এর সামনে নিশ্চল বসে থাকবেন না ।

Sitting disease নামক মহামারী হতে আমাদের মুক্তি মিলুক ।।

0 Shares

৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ