সায়মা রাতুল একে অপরের কাজিন। ছোট বেলা থেকেই ওরা দুজন দুজনকে পছন্দ করতো এবং তা আস্তে আস্তে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। ওদের সম্পর্কের কথা জানাজানি হলে দু’পক্ষের কেউই তা মেনে নেয় না। তাই বাধ্য হয়েই সবার অমতে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ওরা। তখন থেকে আর কেউ ওদের সাথে সম্পর্ক রাখেনি। রাতুল একটি বেসরকারি কোম্পানীতে জব করে। যা বেতন পায় তাতে সায়মা রাতুলের ছোট্ট সংসার বেশ ভালোই চলে। আত্মীয় স্বজন সবাইকে ছেড়ে, সবার থেকে দূরে গিয়ে খুব একটা খারাপ আছে তা নয়। রাতুল যেমন ভালোবাসে সায়মাকে, সায়মাও ঠিক তেমনই ভালোবাসে রাতুলকে। কাছের মানুষদের অনুপস্থিতি বিন্দু মাত্র টের পেতে দেয়নি কেউ কাউকে।
বিয়ের দশ বছর হলেও ওদের কোল আলো করে কোনো সন্তান আসেনি। এতে দুজনেই মনে মনে কষ্ট পেলেও কেউ কাউকে তা মুখ ফুটে বলে না। না বললেও দুজনেই বেশ বুঝতে পারে দুজনের কষ্টটা। দুজনেই আলাদা আলাদা ভাবে ডাক্তার দেখিয়েছে। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। তাই বাচ্চা না হবার কারণ হিসেবে কেবল সৃষ্টিকর্তা চান না বলেই ধরে নিয়েছে ওরা। বেশ ক’দিন ধরে সায়মা কিছু সমস্যা ফেস করছে। কখনো মাথা ঘুরাচ্ছে, কখনো গা গুলাচ্ছে তো আবার কখনো বমি হচ্ছে। সায়মা কারণটা বুঝতে পারছে না। সেদিন রাতুল অফিসে চলে গেলে সায়মা ডাক্তারের কাছে যাবে মনে করে বাসা থেকে বের হয়। ডাক্তার ধারণা করেন সায়মা মা হতে চলেছে। ব্যাপারটা শিউর হবার জন্য কিছু টেস্ট দেন। টেস্টের রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে জেনে সায়মা খুব খুশি। এতো দিন পর মহান রাব্বুল আলামীন ওদের দিকে মুখ তুলে চেয়েছেন।
সায়মা রাতুলকে ফোন করে খবরটা দিতে যাবে ঠিক এমন সময় মনে করলো না এভাবে নয়। আজ রাতুল বাসায় এলে সারপ্রাইজ দেবে। সায়মা কিছু গোলাপ ফুল আর গোলাপ শিউলির মালা কিনে নিয়ে বাসায় ফিরলো। সায়মা সুন্দর করে সেজেছে। রাতুলের পছন্দের লাল শাড়িটা পরেছে। খোঁপায় গোলাপ শিউলি ফুলের মালা জড়িয়েছে। কপালে একটা লাল টিপ পরেছে। রাতুলের পছন্দের খাবার গুলো রেঁধে অপেক্ষা করছে। কখন রাতুল আসবে, কখনো দেবে এই খুশির খবরটা। প্রচণ্ড উত্তেজনা নিয়ে পায়চারি করছে সায়মা।
রাতুলের অফিসে গিয়ে দেখে আজকে অফিসের পরিবেশটা কেমন থমথমে! সবাই কেমন রাতুলের দিকে কৌতুহলী দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। রাতুল কিছুটা নার্ভাস ফিল করে। সে নিজের রুমে গিয়ে বসতেই এমডি স্যার ফোন করে বলেন উনার রুমে যেতে। রাতুল তড়িঘড়ি করে যান স্যারের রুমে। স্যার একটা খাম এগিয়ে দিয়ে বলেন খুলে দেখুন রাতুল সাহেব। রাতুল ভয়ে ভয়ে খাম খুলে চমকে যায়। প্রোমশন লেটার। ঠিক তখনই কলিগরা এসে রাতুলকে চেপে ধরেন ট্রিট দেবার জন্য। রাতুল সায়মাকে খবরটা দিতে গিয়েও দিল না। ভাবলো সায়মাকে একটা সারপ্রাইজ দেওয়া যাক। রাতুল অফিস থেকে বের হয়ে ফুলের দোকানে গেলো। কিছু সুন্দর সুন্দর একগুচ্ছ গোলাপ ফুল কিনে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিল। এমন সময় দ্রুতগামী একটা ট্রাক এসে রাতুলকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো। সায়মা রাতুলের অপেক্ষায় পায়চারি করছে। আকস্মিক কলিংবেল বেজে উঠল। সায়মা দ্রুত দরজা খুলে দেখলো কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে হাতে লাশের খাটিয়া আর তাতে সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটা শরীর।
২৪টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
যখন সুখের সময় হয় তখন অনুুভবের সময় থাকে না।। অনেক আশার প্রদীপ জ্বালানোর কপাল সবার সয় না ।অনুুগল্প বেশ ভাালই লিিখছেন।
সুরাইয়া পারভীন
আমি জানি না এই থিমটায় কেনো মাথায় এলো। এটা এমন না হয়ে একটা সুখের গল্পও হতে পারতো। সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
ছাইরাছ হেলাল
কী লিখবো, কেমন করে লিখবো বুঝতে পারছি না। আর আপনি -ই বা সেটি কেমন করে নিবেন!!
লেখা নিয়ে সে অন্য আলাপ এখন বাদ থাকুক।
দু’জনের সারপ্রাইজ দেয়া আর হলো না, পড়ে থাকলো শুধুই একটি কাফন।
সুরাইয়া পারভীন
লেখা নিয়ে যা বলার থাকবে সেটাই বলেন ভাইয়া। আমি কেমন করে নেবো এটা ভাবতে বসলে আমার আর শেখা হবে না কিছু ই।
ছাইরাছ হেলাল
শেখা-শিখির কিছু নেই, আমি তো শিখি আপনাদের কাছ থেকেই।
মৃত্যুটি একটু গুছিয়ে ভিন্ন ভাবে বলা গেলে মনে হয় আরও সুন্দর হতো।
সুরাইয়া পারভীন
আমারও সেটাই মনে হয়েছিল ভাইয়া কিন্তু ঐ মুহূর্তে আর কিছুই লিখতে পারছিলাম তাই কোনো রকমে শেষ করেছি। আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
ফয়জুল মহী
নান্দনিক উপলব্ধির উপস্থাপন। বেশ মুগ্ধ হলাম।
সুরাইয়া পারভীন
পড়ার জন্য ধন্যবাদ
ভালো থাকুন সবসময়
আরজু মুক্তা
ট্রাজেডি!!!
কারও জীবন এভাবে থমকে যায়
সুরাইয়া পারভীন
একদম ঠিক বলেছেন আপু। আমি এমন একটি ঘটনা দেখেছি। বউ ছয় মাসের প্যাগনেন্ট বরং এক্সিডেন্ট করে মারা গেছে।
ধন্যবাদ অশেষ
রোকসানা খন্দকার রুকু
কষ্ট পেলাম। হয়ত নিয়তির এটাই চাওয়া। সুখ বোধহয় সবার জন্য না। দুজনের কেউই কাউকে জানাতে পারলনা।
শুভ কামনা আপু।
সুরাইয়া পারভীন
নিয়তির নির্ধারিত নিয়মের বাইরে যাবার সাধ্য কারো নেই/ থাকেও না। চমৎকার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু আপনাকে। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
সুপর্ণা ফাল্গুনী
বেদনাবিধূর লেখা। সুখ এভাবেই অধরা হয়ে রয়। সান্ত্বনা একটাই রাতুলের রক্ত তার শরীরে বেড়ে উঠছে। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন শুভ কামনা অফুরন্ত
সুরাইয়া পারভীন
সান্ত্বনা বৈকি কিন্তু কষ্টেও ভীষণ। বাচ্চাটি একটু একটু করে বেড়ে উঠবে আর রাতুলের কথা মনে পড়বে। সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ দিদিভাই
ভালো থাকুন সবসময়
রেহানা বীথি
অপেক্ষার কোনও সুখ-মুহূর্ত যেন এমন মর্মান্তিক না হয়। লেখাটার প্রথম প্যারার শেষ থেকেই পাঠক অনুমান করতে পারবে শেষে কি হতে চলেছে। সম্ভাব্য পরিণতি পাঠকের ভাবনার সঙ্গে যখন মিলে যাবে, তখনই সেটা গতানুগতিক। গল্প চায় চমক। একটার পর একটা শব্দ, বাক্য যেন চমকের আগ্রহ ধরে রেখে পাঠককে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায়।
ভালোবাসি বলেই কথাগুলো বললাম আপু।
ভালো থাকবেন সবসময়।
সুরাইয়া পারভীন
চমৎকার মন্তব্যের জন্য অজস্র কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আপু। পরের বার কথা গুলো মাথায় রেখেই লেখার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপু
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
রোকসানা খন্দকার রুকু
আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। ঘুম ভেঙে ব্লগে ঢুকলাম। লস কিছু হয়নি॥ টুকটাক সমালোচনা খুবই জরুরী। এমনটাই করবেন আপু কেউই কিছু মনে করবেনা। বরং ভালো কিছু বেড়িয়ে আসবে। অসংখ্য ধন্যবাদ।
সুরাইয়া পারভীন
একদম সঠিক বলেছেন রুকু আপু। সমালোচনা থেকেই শিক্ষা নেবো আমরা।
সুন্দর মতামতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আপু
শামীম চৌধুরী
আপনার সব ছোটগল্পই ভাল। তবে এটা একটু বেশী ভাল লাগলো।
সুরাইয়া পারভীন
দাদাভাই অনেক
সুরাইয়া পারভীন
দাদাভাই অনেক অনেক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
সাবিনা ইয়াসমিন
সারপ্রাইজ সব সময় আনন্দ বয়ে আনে না। কিছু সারপ্রাইজ সারাজীবনের জন্যে স্থির হয়ে যায়। দুজন দুজনের জন্য দুটো সারপ্রাইজ রেখেছিলো। কিন্তু কেউ কাউকে দেয়ার আগেই নিয়তি তার সারপ্রাইজ দিয়ে দিলো! এর মানে হলো যখনকার কাজ তখনই করা ভালো, অনেক সময় সারপ্রাইজ নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে দেখা দেয়।
বুঝলাম না কি বুঝলাম। অণুগল্পের চেষ্টা চালু রাখুন। ভালো লাগছে পড়তে 🙂
শুভ কামনা 🌹🌹
সুরাইয়া পারভীন
আমি ঠিক এমনটাই বুঝাতে চেয়েছি গল্পে মিষ্টি আপু। আপনি যথার্থ ভাবেই বুঝতে পেরেছেন বলেই এমন গুছিয়ে মন্তব্য করতে পেরেছেন। চমৎকার মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময় আপু❤️❤️
তৌহিদ
সবার শেষে এসে বেদনাহত হলাম আপু। নিয়তিকে খণ্ডানোর সাধ্য কারোরেই নেই।
শুভকামনা সবসময়।