সারপ্রাইজ

আতা স্বপন ৪ জানুয়ারি ২০২৩, বুধবার, ১২:১৬:১৩পূর্বাহ্ন গল্প ৪ মন্তব্য

এক.

ফুলের দোকানটার পাশে দাড়িযে আছে সে।  আবু তালহা আদনান। বয়স ২৫কি ২৬ হবে।  অনেক্ষন হলো দাড়িয়ে আছে। দোকানির দেখা নাই। কোথায় যে গেল ?বিশেষ একটি দিনে বিশেষ কিছু করতে হবে। আগামী কাল বছরের প্রথম দিন প্রথম বিবাহ বার্ষিকী।এই দিনে ফারজানা এসেছিল তার জীবনে। দিনটিকে কিভাবে স্মরনীয় করে রাখা যায়? ভেবে ভেবে ফুলের দোকনটার সামনে এসে থামল সে।তার সাধ আছে সাধ্য নেই। ফুল ছাড়া কিই বা দিতে পারে।

একটি প্রাইভেট কোম্পনীতে ডাটা এন্ট্রির কাজ করে সে।সেই গাজীপুর থেকে এসে পল্টনে অফিস করে যাতায়াত ভাড়াতেই অর্ধেক চলে যায়।আবার অফিসে লেট হলে এক দিনের সেলারী কাটা যায় প্রায়শই। তার দু:খ বসরা বুঝে না। রাস্তার কাজ চলছে অফিসে আসতে পথে রাস্তা ব্লক করে কাজ হয়।ফলে প্রায়শই দেরি হয় তার। এর মধ্যে কোন ভিআইপির কারনে জ্যামে পরলেতো কথাই নেই।সেদিন প্রধানমন্ত্রি রাজারবাগ যাওয়ার কারনে রাস্তা ব্লক ছিল ফলে জ্যাম লেগে অফিসে আসতে দেরি হলো।বস কে বলতেই কথা শুনিয়ে দিল। মন্ত্রি রাজারবাগ গেছেতো আপনার কি? উনি কিন্তু ব্যাপরটা বুঝেছেন। তারপরও বসগিরি ফলাতে হবেত। এখনকার বসরা এমনই। মানুষকে হিমুলয়েট করে মজা পায়।

স্যার কি ফুল নিবেন?

ধ্যান ভাঙ্গে তার। হ্যাঁ

আমার একটা ফ্লাওয়ার বাস্কেট চাই

ঠিক আছে স্যার। তবে দামটা একটু বেশী

যাই দাম হোক দাও। একটু তারাতারি। বিকেল থাকতে থাকতে দ্রুত এখান থেকে বাসায় যেতে হবে। সন্ধ্যা হলেই বিপদ। রাস্তার অবস্থা ভাল না। খালি জ্যাম আর জ্যাম।রাত কাটায় কাটায় বারটার মধ্যে তাকে বাসায় পৌছতে হবে। একটা কেক আর ফ্লাওয়ার ভাসটা হাতে দিয়ে বলবে হ্যাপি এনভিার্সারী এন্ড হ্যাপি নিউ ইয়ার।কি একটা সারপ্রাইজ দেয়া হবে! ভেবেই বার বার পুলকিত হচ্ছে সে।

দুই.

ঘুম থেকে উঠতে সরাফত খাঁর আজও দেরি হয়ে গেল। ফজরের নামাজটা সময়মত পড়া হলো না। প্রত্যেকদিন ভাবে খুব ভোড়ে উঠে বাজামাত ফজরের নামাজ পড়ে কোরআন তেলওয়াৎ করবে। কিন্তু প্রায়দিনই সে ফজরের নামাজ ঠিক সময়ে পড়তে পারেনা। সুর্য ওঠার পর পড়ে

নামাজ শেষ করে তার খাটের পাসে থাকা টেবিলে দিকে তাকান সবসময়। বৌমা ফারজানা সকালের নাস্তা আর চা দিয়ে যায়। সাথে খবরের কাগজ। কাগজটা হাতে নিয়ে আপন মনে গজগজ করা তার প্রতিদিনের স্বভাব। খুন ধর্ষন গুম চুরি ডাকাতি ছিনতাই আর দুর্নিতি এসব খবর তিনি আগে পড়েন।আর গজগজ করেন।

কি হইল দেশটার। হায়রে সোনার বাংলাদেশ শেষকালে চোরের দেশ হইলি। হলমার্ক নিয়া কি কান্ড! শালারা! দুর্নিতি কাইরা দেশটারে তামা তামা বানাইয়া ফেলল। যারে বলে তামার বাংলাদেশ।

আজ টেবিলে চা নেই। তবে খবরের কাগজ আছে। তাতে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছেন তিনি।কিন্তু চা না থাকায় মেজাজ ক্রমেই উদ্ধগতি হচ্ছিল।খবরগুলোও আরো বেশী বিরক্তিকর মনে হচ্ছিল। একটা করে হেড লাইন পড়েন আর ঝাল ঝাড়েন নিজ মনে।

কালও রাজধানীর ১৬ পয়েন্টে থাকবে আ. লীগ

পুলিশ–বিএনপি সংঘর্ষে নিহত ১, রাজশাহীতে কাল হরতাল

মাঠে থাকবে আ.লীগ: ওবায়দুল কাদের

পুলিশে অবরুদ্ধ নয়াপল্টন

বিএনপির রাজনৈতিক ভুলের খেসারত জনগণ কেন দেবে: প্রধানমন্ত্রী

গওহর খান ‘থাপড়’ নাটকে নতুন মোড়

 এগুলা কোন খবর হইলো। দেশে খালি আ লীগ আর বিএনপিই থাকে? আরে কেউ থাকে না খালি হেগই পেচাল। থাপর নিয়া এইটা আবার কি নিউজ।এইটা একটু অন্যরকম – তিনি খবরটি মনযোগ সহকারে পড়তে লাগলেন।

গত ডিসেম্বরে ইন্ডিয়া’স র স্টার টিভি রিয়েলিটি শোয়ের চূড়ান্ত পর্ব উপস্থাপনা করার সময় ভারতীয় মডেল ও অভিনেত্রী গওহর খানকে থাপড় মেরে হইচই ফেলে দেন মোহাম্মদ আকিল মালিক নামের এক ব্যক্তি। সম্প্রতি আকিল দাবি করেন, গওহর খানকে থাপড় মারার পুরো ঘটনাই ছিল সাজানো নাটক। স্রেফ প্রচারণার জন্যই ওই নাটক সাজানো হয়েছিল। শুধু তা–ই নয়, জনসমক্ষে থাপড় মারার জন্য গওহর তাঁকে ঘুষ দিয়েছিলেন বলেও দাবি করেছেন আকিল। অবশ্য আকিলের এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন গওহর। তিনি আকিলকে মিথ্যাবাদীও বলেছেন।

কি তাজ্জব কান্ড! থাপরও প্রচারে মাধ্যম। আহা বিশ্বে থাপর দিয়া জয় জয়াকার হইয়া যাইতাছে আর আমাদের দেশে …………। ঠিক এসময় ফারজানা চা নিয়ে আসল।

বাবা আপনার চা। চিনি ছিলনাতো পাশের দোকান থেকে আনতে হল।এজন্য একটু দেরি হয়ে গেল।

মা জননী ! তুমি আমার লক্ষি মা। তোমার কাছে আমি কি বলেছি কেন চা দিতে দেরি হইলো? তুমি বৌ হইছো বইলা তুমি কি এই বাড়ির দাসি হইছো? তোমার একটা স্বাধীনতা আছে না। তুমি তোমার সুযোগ সুবিধামতো দিবা। তা মা চিনি ছিল না আমারে বললেইতো হইতো। আমি নিয়া আসতাম। থাক সেই কথা । আদনান কি অফিস থেকে আসে নাই এখনো?

না বাবা।

বে কুব ! বেকুব একটা! আর কিছুক্ষন পরে তোমাদের একটা মধুর দিন  আসছে হারামিটার ভ্রুক্ষেপ নাই।

শশুড়ের মুখে এমন কথা শুনে লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে গেল সে।

শরমের কিছু নাই মা। এইসব ন্যাচারাল বিষয়। এগুলোতে শরম পাওন ঠিক না। শরম পাইবা মিথ্যা কথা বলতে। খারাপ কাজ করতে। কি বল মা ঠিক না। আহা! সেই দিনগুলা কি ভোল যায় আমি আর তোমার শাশুড়ী দুইজনে কত কিছুই না করছি…………।

বউ এর সাথে সরাফত সাহেবের ভালো খাতির। তবে এইটা তার একটা অভিনয়। বৌদের খুশি না রাথতে পাড়লে এখন বৃদ্ধাশ্রমে জায়গা হয়। তার বন্ধু আব্দুল  জব্বারের  বেলায় এমন ঘটেছে। তারপর থেকে এই আতংক। আর তাইতো অভিনয়ের চেষ্টা। বৌ এর কাছে ভাল শশুর হয়ে থাকা। কিন্তু ফারজানা খুবই সাধারণ একটা মেয়ে। সে শশুড়ের জন্য জানপড়ান। সারক্ষন সংসার নিয়ে থাকে। স্বামী আর শশুর শাশুরী সংসাতো মোটে এই চারটি প্রানী। এদের নিয়েই চলে যায় তার বেলা।

কৈ গেলা বৌমা? খালি শশুর নিয়াই থাকবা? আমারে একটু পান ছেইচা দাও।

আসছি মা ।

তরিঘরি যাবার পথে হঠাৎ মাথা ঘুরে মেঝেতে পড়ে জ্ঞান হাড়ল সে।

ও আদনানের মা ও আদনানের মা চেচেয়ে উঠে বৌমাকে ধরে সোপাতে বসাল সরাফত খাঁ।

তোমার আবার কি হল? এমনভাবে ডাকছ কেন?

তারাতারি এদিকে আসো বৌমা মাথাঘুরে পড়ে গেছে।

তিন.

কলিং বেল বাজছে। বাড়য়ি মেহেবানী দরওজা খুলিয়ে।

বাংলাদেশে অন্য ভাষার চাষ হচ্ছে। বিষয়টা সরাফত সাহেবকে ভাবিয়ে তুলছে। রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই বলে আন্দোলন করেছেন ছাত্র বয়সে ।আজ সেই ভাষা বাদ দিয়া অন্য ভাষা ফিরে আসছে নবরুপে। আফসোস! বড়ই আফসোস! দড়জা খুললেন তিনি।

আসাসালামু আলাইকুম। কেমন আছো বাবা?

আমি ভাল আছি।হাতে এত্তসব কি এনেছিস?

না মানে....লজ্জা পেল সে।

এগুলো এখানে রেখে সোপায় বস। এখনই রুমে ঢুকতে পারবি না।ঘরে নার্স আসছে।

নার্স কেন বাবা? কার কি হয়েছে?

এখনও কিছু হয় নাই। তবে আল্লাহ চাহেত হবে্।

আদনান কিছু বুঝে উঠার আগেই ভিতর থেকে ভেসে এল আদম শিশুর কান্নার সুতিব্র চিৎকার।

ওগো এদিকে আসো এদিকে আসো নাতিন হইছে।নাতিন হইছে। ঘড়ির কাটা তখন বারটা পার করেছে।

বাহিরে আতশবাজির খেলায় নতুন বছরকে স্বাগত জানাচ্ছে বিশ্ব।

আদনান তার ফুলের ভাস আর কেকটার দিকে তাকিয়ে ভাবে কে কাকে সারপ্রাইজ দিল?

0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ