
দেশে ফিরেছেন সাফ গেমস বিজয়ী মেয়েরা। সাংবাদিক মিডিয়া বিশিষ্টজনদের শুভেচ্ছায় ভাসতে ভাসতে তাদের অবস্থা যেন আশ্বিন মাসে ঝড়। জয়ের পর থেকেই আমজনতার ফেসবুকও ভেসে গিয়েছে নারী ফুটবলারদের শুভেচ্ছায়।
সাবিনা, কৃষ্ণাদের অপেক্ষায় দেশবাসী, এলাকাবাসী, সাংবাদিক, মিডিয়া এমনকি যারা অদ্যবদী নামও জানতেন না তারাও আজ উৎসুক জনতা। আমরাও মুচমুচে লেকসাস বিস্কিট আর চা হাতে টিভির সামনে বসে বলছি- সাবাস মেয়েরা। কিন্তু তারপর,,,
তারপর,,, খেলার বাইরেও চলছে তাদের ফিটনেস কিংবা চুলের স্টাইলের আলোচনা। যে ছেলের কোনকালেই ছোট চুলের কালো মেয়ে পছন্দ না সেও পণ করেছে বিয়ে করলে সাবিনার মতো ছোটচুলের মেয়েকেই করবে। আর খেলা- ধুলায় সুযোগ সুবিধা না থাকলেও বড় হলে বিয়ে হবে এটা নিশ্চিত। আর খরচাপাতির জন্য মামা তো আছেনই! তিনি খাচ দিলে কথা দিয়েছেন বিয়ে খরচের ইনতেজাম তিনিই করবেন।
ফুটবল জ্বরের মধ্যেই সেরা ১০ সুন্দরী খেলোয়ারের তালিকায় চলে এসেছেন আমাদের জাহানারা আলম। জাহানারার কাজলের স্টাইল নিয়ে চলেছে বেসুমার তর্ক- বিতর্ক। কাজল কোম্পানীগুলোর মারামারীর সমূহ সম্ভাবনাও ছিল, তিনি আসলে কোন ব্রান্ড ব্যবহার করেন এটা নিয়েই। আমার ধারনা সামনে কাজলের বিশেষ ব্রান্ডের এম্বাসেডর হয়ে অনেকগুলো নজরকরা বিঙ্ষাপনও আসতে পারে জাহানারাকে নিয়ে। তারপর,,,,
তারপর,,,, আমরা মেয়েরাও দেদারসে কাজল কিনছি। আমার মতো কুতকুতে চোখের মানুষও কাজল লাগিয়ে নিজেকে জাহানারার জায়গায় দেখছে। ছেলেরাও প্রতিজ্ঞা করে বসেছে বিয়ে করলে কাজল পরা মেয়েকেই করবে।
কিন্তু তারপর,,,এসব কতোকাল। আমার কাছে এসব " তেলা মাথায় চরম তেলবাজী" ছাড়া কিছুই না? সামনে কোনভাবে হেরে গেলেই আমরা সবাই পল্টি মারার জাত, আবার পল্টি মারবো।
কেউ কেউ এর মধ্যে বলছেনও, এটা সাময়িক। খেলোয়ার হলো পাকিস্তানের কিংবা ভারতের। কথা কিন্তু ঠিকই! কারন পাশের দেশ ভারতে কিংবা পাকিস্তানের নারী- পুরুষ খেলোয়ারের আমাদের মতো এতো আকাশ পাতাল বেতন, সুযোগ সুবিধার বৈষম্য নেই। বিরাট কোহলী আর স্মৃতি মন্দনা সেখানে সমান সমান। জাতীয় প্রোগ্রামগুলোতে তারা একসাথেই দাঁড়ায়, কথা বলে, সম্মানিতও হয়।
আমরা যারা এতোকাল সাকিব আল হাসান বন্দনায় ব্যস্ত ছিলাম। তার সূখ, স্বাচ্ছন্দ্য স্টাইল নিয়েও ব্যস্ত ছিলাম। তাদের জন্য বলছি; শুনুন,
- সাকিব আল হাসানের বউ মাসে বিউটিশিয়ানের পেছনে যতো টাকা খরচ করে। আমাদের নারী খেলোয়াররা তার চেয়েও অনেক কম বেতন পায়।
১০০০০- ৪০০০০ টাকা বেতন পাওয়া একজন খেলোয়ার তার পরিবার চালিয়ে নিজেকে কতটুকু মেইনটেইন করতে পারে। মাস শেষে হাত ব্যালান্স, ব্যাংক ব্যালান্স তো দুরের কথা তাদের প্রিয়জনদের গহনা বিক্রি করে খেলায় নামতে হয়।
এরপর মেয়েদের সামনের সম্ভাবনা কি কি থাকছে। তার কথা বলাই বাহুল্য। বাজেটের বিরাট সংকট থাকে মেয়েদের বেলায়। যারা মাঠ ভালোবেসে নিজেকে উৎসর্গ করে দেশের জন্য তার জন্য বরাদ্দ কিছুই নেই। অযথা কদিন মাতামাতির পর বাজেট থাকে না বলেই হারিয়ে গেছে অনেক বিজয়ী নারীরা।
করোনাকালীন সময়ে সাকিব আল হাসানরা কোথায় ছিলেন? বিলাস বহুল ওয়েস্টার্ন কান্ট্রির এপার্টমেন্টে। তাদের পরিবার সেখানেই বসবাস করে। একসময় ধনীদের তালিকায়ও হয়তো নামও লেখাবেন। দেশ তাদের দিচ্ছে তারা কেন নেবেননা?
আর করোনার সময় বাংলাদেশের নারী খেলোয়াররা কেমন ছিলেন! অনেক আলোচনার পর তারা নাম মাত্র ভর্তুকি পেয়েছেন। না খেয়ে না দেয়ে কষ্টে তাদের জীবন চলেছে। কেউ কেউ কিছুই পাননি।
অপুষ্টি, সুযোগ বঞ্চিত, নানা দূর্ভৌগ কাটিয়ে মাঠে নামা একজন নারী খেলোয়ারের কাছে কিইবা আশা করা যেতে পারে? এর মধ্যে থেকে যা আসছে তা অনেক বেশি। সামনের সকল বৈষম্য দুর করুন। তাদের পুরুষ খেলোয়াড়দের মতো বেতন- ভাতাদীসহ সকল সুযোগ - সুবিধা দিন। তারা এ মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে আরও অনেক ভালো কিছু করবে।
নারী খেলোয়ারের সুযোগ সুবিধায় কি করছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এড়িয়ে যাওয়াদের কাছে অনুরোধ সারা বছর মুরগীর রান আপনারাই কেন খাবেন। কিংবা মুরগী দিয়ে পোলাও বানিয়ে মোরগ পোলাও বলেই বা আর কতো চালাবেন। নারীদের সমতায় রাখুন। আজকে তারা যেমন খোলা আকাশ দেখতে দেখতে এসেছে, তেমনি আপনাদের মনের নপুংশক চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন। দেখবেন অনেক ভালো ফল আসবে। আর হারিয়ে যাবে না কোন খেলোয়ার। কিংবা আজকের সাফল্য আগামীতেও সাফল্যই থাকবে।
গল্প দিয়ে শেষ করা যাক,
মা মেয়ে গেছে বিয়ের দাওয়াতে। অনেক পদের মধ্যে মুরগীর রোষ্টও ছিলো। পরিবেশক মেয়ের বাটিতে রোষ্টে মুরগীর চাপ দিয়েছেন।
মা তা দেখে বললেন, - বাবা এটা বদলে নিয়ে এসো। কারন আমার মেয়ে রান খেতে পছন্দ করে। যথারীতি চাপের বদলে রান এলো।
মেয়ে তখন ভাবছে, - মা তো আমার পছন্দ জানে তাহলে কোনদিন বাড়িতে রান খেতে দেয় না কেন?
মা খেতে দেয় তার ছেলেকে, স্বামীকে। ইচ্ছে থাকার পরও মেয়েকে দিতে পারে না। আমি যদি এই জেনারেশানের হয়ে রান খেতে না পারি তাহলে মা তো কখনোই পায়নি।
মেয়েও পরিবেশককে ডেকে বললেন, মাকেও চাপ বদলে রান দিন। তারও পছন্দ।
এ হলো আমাদের চিরাচরিত নারী জীবনের হিসাব নিকাশ। সমাজের প্রতিটি অঙ্গনেই, নারী যতো সফলই হোক না কেন, চিত্র, দৃশ্যপট একই।
আমাদের দেশের অনেক প্রধান কর্নধার আজ নারী। অথচ বড় বড় বৈষম্য তেনারাও দেখেও না দেখার ভান করেন। মায়েরা, এবার সময় এসেছে মেয়েদের দাওয়াত বাড়িতে রান খাওয়ানো বন্ধ করে বাড়িতেও ছেলেদের সাথে সমান ভাগ করুন। দেখবেন অনেক নারী সাকিব আল হাসানেরও জন্ম হবে।
ছবি- নেট থেকে।
৯টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
কাজি সালাহ উদ্দিন সাহেবেদের গাড়ির তেলের , ভ্রমণ, আরাম প্রিয়তা কমিয়ে তাদের দিলে কোন সমস্যা থাকার কথা না। তারা যেভাবে নাস্তার টেবিলে চলে স্টা কমালে আমাদের দেশের গরিবতা অনেক কমে যাবে ইনশা আল্লাহ। অন্য বিষয়ে বলব না।
রোকসানা খন্দকার রুকু
তারা বিজয়ীদের বসতেও দেয় নাই। নিজেরা ভুড়ি উঁচা করে চেয়ারে আসিন ছিল।।।
অশেষ কৃতজ্ঞতা ভাই 🌹
মোঃ মজিবর রহমান
এটা ওদের ব্যার্থতা। আরো একবার প্রমাণ করে দিলো যে, সন্মান জানাতে জানেনা। তাদের কলুষতা প্রকাশ করল
রোকসানা খন্দকার রুকু
জী ভাই, অনেক অনেক শুভকামনা 🌹
হালিম নজরুল
এদেশের মানুষ এখনো নারী শুধুই নারী মনে করে, কিন্তু সেও যে মানুষ এটা মনে করে না। দুঃখজনক।
হালিম নজরুল
আমার অংক কবিতাটিতে মন্তব্যে লিখেছিলেন বুঝতে পারেননি, যেন বুঝিয়ে দিই। সংক্ষেপে চেষ্টা করেছি।
কবিতাটির কমেন্টে গেলে পাবেন। ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইল আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অশেষ কৃতজ্ঞতা ভাই
ফারজানা তৈয়ূব
তারপরও নারী খেলোয়াড়েরা এগিয়ে যাক এই আশাব্যক্ত করছি।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অশেষ কৃতজ্ঞতা 🥰