
মানুষের রাগ পরিমাপ করার জন্য হলেও বাসে চড়া উচিৎ। আপনি যদি নিজেকে চরম রকম শান্ত রাখতে পারেন! আপনি তখন এটা শুধু মৃদু ঠোঁট বাঁকা করে, পরিমিত হাসি ফিরিয়ে দিয়ে দারুন প্রশান্ত চিত্তে উপভোগ করবেন।
নিজেকে অনেক বোঝাতে বোঝাতে অবশেষে আপনি জয় উপভোগ করবেন ঠান্ডা কলিজায়।
ঈদ পরবর্তী সময়টাতে হুজুগে মূল্য বর্ধিত সকল ক্ষেত্রে পকেটটা আপনাকে দরকারের বেশি ভারী করে বিনোদন অথবা আত্মীয় স্বজনের নিমন্ত্রন রক্ষার্থে পথে বেড়োতে হবে। নইলে আপনি কুপোকাৎ,,,খাইছেন ধরা।
উদরে বোঝাই বিদ্যের বহর ঝর ঝর করে বেহাত হয়ে যাবে, সে আপনি বুঝেও বুঝবেন না। তখন রাগ কিংবা মেজাজের পারদ কোন মাত্রায় পৌঁছবে! তার হুঁশ জ্ঞান কি আর যথাসময়ে কোনো কাজে দেয়? দ্যায়না রে ব্রাদার! দ্যায়না।
কানে তুলো আর পিঠে কুলো বাঁধার কথা শুধু প্রবাদ বাক্য হয়ে পাঠ্য পুস্তকেই শোভা বর্ধন করে গেলো যুগ যুগ ধরে। সময়োপযোগী সময়ে সে বাক্য বড় ঘোমটার আড়ালেই পর্দা বজায় রেখে চলে। বাস কন্ডাক্টর আর ড্রাইভারের দৌড়াত্বে আপনি অসহায়,,,,বড়জোড় রাগ বা মেজাজের তার ছিঁড়ে গেলে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কিছুদিন রগরগা সংবাদের রসদ জুটে যায়,,,,'যাত্রী এবং বাস হেল্পারের সাথে ভাড়া নিয়ে বচসায় সংঘর্ষ,,, আহত এত - নিহত এত' বলে।
গেটলক বলে কোনো কথা নেই বাস সার্ভিসে। গেটলক মানে হলো, যে ক'টা সিট সে ক'টা যাত্রী বোঝাই হয়ে যাবার পরে গেট লক করে দেয়ার কথা,, হেল্পার, ড্রাইভারের উপরি উপার্জনের খায়েশে তা উপর্যুপরি যাত্রী ওঠানো বাসে অনিয়মে নিয়ম হয়ে গেছে। প্রতিবাদ করতে যাবেন? ওই যে বললাম আগেই!!! সংঘর্ষ এড়াবেন কি করে? আপনার বিদ্যে, আইন জ্ঞান সব ভেস্তে যাবে এই জাতীয় লোকেদের সাথে প্রতিবাদে জড়ালে। এরপর তো আরো আছে,,, এদের সিন্ডিকেট বলে যে বিশাল ব্যাপার আছে! কাজেই আপনাকে পিঠে কুলো আর আর কানে তুলো দেওয়া ছাড়া উপায় কী? আর যদি আপনি তাও না পারেন তো রেডি হয়ে যান সংঘর্ষে জড়াতে।
গাজিপুর থেকে ফেরার পথে বাসের সামনের সিটে বসে পড়েছি তড়িঘড়ি ধাক্কাধাক্কি খাওয়ার ভয়ে। ক'জনার সিট তা খেয়াল করিনি। কিছুক্ষন বাদে নাঃগঞ্জের নারী যাত্রী উঠলেন আমার ঠিক সামনেই। ব্যাটারী রাখা কাভারের উপর বসেছেন তিনি। আরো কিছু সময় বাদে আমার দিকে তাকিয়ে বেজায় নাখোশ আর তীব্র ঝাঁঝের সাথে বলে উঠলেন,,," তিনজনার সিটে বইছেন খালি দুইজনে?" ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সিটের দিকে তাকিয়ে দেখি - হ্যাঁ,,, সাহেব আর আমার মাঝে যতুটুকু দূরত্ব আছে, আমি চেপে বসলে আরেকজন চেপেচুপে যায়গা নিয়ে বসতে পারবেন। আমি ধীর এবং অতিশয় শীতল গলায় বললাম,,,, আপনি বসবেন?
উনি পাছা ঘুরাইয়া ধপ করে এসে আমার ডান পাশে বসে গেলেন- আপনে কই যাইবেন? ঘাড় ঘুরিয়ে এবার তাঁকে একটু দেখে নিলাম,,, আমার খুব কাছ ঘেসে বসা এই মানুষটাও আমার মতই একজন নারী। হয়ত বিভেদটা অন্য কোনোখানে। ঘাড় সোজা সামনের কাঁচের দিকে তাকিয়ে বললাম--- রামপুরা.....
১২টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
যথার্থ উপস্থাপন। হ্যা, গন্ডগোল ঝুটঝামেলা এড়িয়ে যেতে চাইলে অবশ্যই মগজ কুল রাখা চাই। ইদ বেহেসেবি খরচ এড়ানোর ত কোন পথ নাই। শুধু ঘরে সমাজ ও আত্নীয়হীন বসে থাকলে পারবেন। সেটা হয়! না।
বন্যা লিপি
ঝুট ঝামেলা বলে বলেই আসলে আমরা অনিয়মকে প্রশ্রয় দিতে থাকি সবসময়। নইলে আমরা যাদের অশিক্ষিত, বা ছোটলোক বলে গাল দেই! তাঁদের সাথে তর্ক ঝগড়া করে করে আর কতটুকু কি হয়েছে আজ পর্যন্ত? মাথা ঠাণ্ডা রেখে ভাবুন তো একটু? প্রত্যেকটা সেক্টরে অনিয়ম, দূর্নীতি এখন গলা টিপে ধরেছে জনসাধারনের। A-Z বিশৃংখলা এমন রাষ্ট্র কার কাম্য? দেখবেন একদিন বিশৃঙ্খলা বাড়তে বাড়তে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। তবু মানুষের মাঝে শৃঙ্খলা ফিরবে না।
মোঃ মজিবর রহমান
কি করবেন বলুন! মানুষ আজ ধৈর্য্য ধরতে আর ভয় পেতে পেতে আমরা মরার আগেই বারবার মরছি। কিন্তু প্রতিবাদ আজ রাজনৌতিক হয়েছে গেছে। মাইর হয়েছে রাজনৌতিক। দেশ আজ অরাজকতায় দেশ নিয়ে রাজনৌতিকভাবে ছিনিমিনি খেলছে। আমুল পরিবর্তন চাইলে ভাংতে হবে অনেক আইন, ভাংতে হবে আর মরা শিখতে হবে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা হা কি অবস্থা। তবে মাথা ও পকেট দুটোই ঠান্ডা রাখা জরুরি।।।
শুভ কামনা রইলো।
বন্যা লিপি
এরপরে আরো একজন মহিলা উঠলেন ওই সিটটাতে। তিনিও ভীষণ বিরক্ত যাবতীয় বিষয় নিয়ে— নগদ
ভাড়া দিয়া উঠছি,,,এই সিটে বওয়ার জন্য? উনি বসতেও পারছিলেন না,,, সিটে জলকাদা লেগে আছে। খুব কষ্ট হচ্ছিল তার। আমি কতক্ষণ দেখলাম তাকিয়ে তাকিয়ে। আমার হাতে টিস্যু ছিলো। ঝুঁকে সিটটা মুছে দিলাম চুপচাপ। তারপর তিনি ইজি হয়ে বসতে বসতে আমাকে একটা ছোট্ট থ্যাংকইউ গিফট করলেন। আমি নিরাসক্ত বদনে আরেকটা টিস্যু বের করলাম হ্যান্ড ব্যাগ থেকে।
খাদিজাতুল কুবরা
আপু আপনার ভাষা প্রয়োগ বরাবরই সমৃদ্ধ। লেখাটা পড়ে মনে পড়ল চট্টগ্রামের লোকাল বাসের দৃশ্য। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ড্রাইভার, হেলপার, যাত্রীর ঝগড়া দেখার জিনিস।
অসংগতিগুলো নিয়ে যদি ও আপাতদৃষ্টিতে হাসি পায়, কিন্তু এগুলো বদলানো দরকার সমূলে।
বন্যা লিপি
অসংগতি বরং আমার মাথা ব্যাথা ধরে। হাঁসফাঁস লাগে। এমনটা তো হবার কথা নয়! অসহিষ্ণু হয়ে যাচ্ছে সবকিছু। এত কেন অনিয়ম?
হালিমা আক্তার
চট্টগ্রাম মেট্রো মুরাদপুর থেকে পতেঙ্গা যায়। চমৎকার সার্ভিস। আমি ১০ মাস এ বাসে জি ই সি মোড় থেকে বারিক বিল্ডিং যেতাম। নির্দিষ্ট স্থান এবং টিকেট ছাড়া যাত্রী উঠা নামা করতো না। নামার সময় বাস থামিয়ে আগে যাত্রী নামিয়ে তারপর উঠাতো। ঢাকাতে এ রকম দেখি নাই। শুভ রাত্রি।
খাদিজাতুল কুবরা
হ্যা আপু এখনো আছে মেট্রো সার্ভিস।
সাবিনা ইয়াসমিন
তোমার কপাল ভালো তুমি উপকারের বদলে একটা থ্যাংকস পেয়েছিলে, (সিট মুছে দিয়ে) যা বর্তমান সময়ে খুবই দুর্লভ বস্তু।
সবটা হজম করতে পারলে বাসভ্রমণ কিন্তু বেশ উপভোগের।
বন্যা লিপি
ভোঁতানুভূতি নিয়ে আসলেই সয়ে যাওয়া সহজ সবকিছু। এই নাগরিক লাইনের চেয়ে দূর যাত্রায় বাস ভ্রমন আমার কাছে বেশি উপভোগ্য। ডিসেম্বরে জিদ ধরে বলেছিলাম বাসে যাব গ্রামে। ওই যাত্রা আমি উপভোগ করি প্রফুল্ল চিত্তে।
হালিমা আক্তার
বাস যাত্রার কতো বিচিত্র অভিজ্ঞতা। এখানে ধৈর্যের পরীক্ষা হয়ে যায়। নামেই গেটলক। বাদুড় ঝোলার মতো ঝুলিয়ে যাত্রী নিবে কিছু বলা যাবে না। মাঝে মাঝে কিছু যাত্রীর আচরণ ও অসহিষ্ণু। শুভ কামনা রইলো।