সম্পর্কের টানাপোড়েন পর্ব-০৬

সুপর্ণা ফাল্গুনী ১১ মার্চ ২০২০, বুধবার, ১১:১১:৩৭পূর্বাহ্ন গল্প ২৪ মন্তব্য

তন্বী আজকে কর্মস্থলে যোগদান করতে গেলো। ওর অফিসের সবার সাথে পরিচিত হলো কিন্তু একজনের সামনে এসে থমকে গেলো। এমন একটি অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে তন্বী কিছুক্ষণ স্ট্যাচু হলেও নিজেকে সামলে নিলো। তন্বীর ষোড়শী প্রেম আজ তার সামনে দাঁড়িয়ে। অফিসের ম্যানেজার আকাশ ওর পূর্বপরিচিত, শুধু পরিচিত বললে ভুল হবে ওর একসময়ের জীবন, ভালোবাসা। তন্বী তখন মাত্র স্কুলজীবন শেষ করেছে, কলেজে ভর্তি হবে। কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে ওর সাথে পরিচয়। ভর্তি ফরম পূরণ করতে গিয়ে আকাশের সাহায্য পেয়েছিল। একদিন তন্বীর বাসায় একটি সুন্দর খাম আসলো।

স্বাভাবিকভাবেই সদ্য স্কুল শেষ করা মেয়ের কাছে চিঠি আসা নিয়ে বাবা-মা বকাবকি করলো। তন্বী কিছু বুঝতে না পেরে অঝোরে কাঁদলো। পরে ওর মা ওকে চিঠিখানা খুলে দেখালো। তন্বী যেন বোবা হয়ে গেলো। ওতো এর কিছুই জানে না। ভাগ্য ভালো আকাশ নাম, ঠিকানা কিছু লিখেনি, শুধু কিছু ভালোলাগার কথা লিখেছিলো। যখন কলেজে গেলো দেখলো আকাশ দাঁড়িয়ে আছে কলেজের সামনে। কথা বলতে গিয়ে জানতে পারলো ঐ চিঠি আকাশ তাকে দিয়েছে। তন্বী বললো, আপনি আমার ঠিকানা কোথায় পেলেন?' আকাশ বললো,' ফরম পূরণ করতে গিয়ে তোমার ঠিকানা মুখস্থ করে নিয়েছিলাম। তোমার মনের কথা জানতে চাই।' তন্বী বললো,' সে বাবা-মায়ের অমতে কিছু বলতে পারবেনা।' আকাশ তন্বীকে ভাবার সময় দিলো আর ছোট্ট একটি প্যাকেট ও কিছু গোলাপ তুলে দিলো হাতে। তন্বী নিতে চায়নি, জোর করে দিয়ে বললো, 'বাইরে সিনক্রিয়েট করোনা, ভালো না লাগলে বাসায় নিয়ে বা রাস্তায় ফেলে দিও।' তন্বী চুপচাপ নিয়ে নিল। সেদিন আর কলেজে ঢুকলো না তন্বী, সোজা বাসায় চলে আসলো।
জিনিসগুলো ফেলতে গিয়েও ফেলতে পারেনি, সারা শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছিলো।

প্রথম প্রেমের প্রস্তাব, উপহার ওকে অস্থির করে দিচ্ছিলো। ও সবকিছু ব্যাগের মধ্যে লুকিয়ে রাখলো। বাসায় এসে দরজা বন্ধ করে প্যাকেট খুলে একটা টেডি বিয়ার, কবিতার বই আর একটা চিঠি পেলো সাথে কিছু ফুলের পাপড়ি ছিলো। চিঠির ভাষাগুলো ওর মনকে নাড়া দিয়ে গেলো। বারবার লুকিয়ে পড়লো তবুও যেন মন ভরছে না ওর। কবিতার বইয়ে লেখা ছিলো , 'হে সুজন তোমার মতো স্বজন আছে মোর ক'জন।' সাথে শাড়ী পড়া গাঁয়ের একটি মেয়ের ছবি লাগানো । তন্বী এবার সত্যিই আকাশের উপহারের মায়ায় জড়িয়ে গেলো। ক্লাস শুরু হলে প্রতিদিন আকাশের সাথে দেখা হতো, কথা হতো। কিছুদূর পর্যন্ত প্রতিদিন এগিয়ে দিতো তন্বীকে। আকাশের প্রেমে একদিন ও কলেজ মিস্ করতো না।

সবই ঠিকঠাক চলছিলো হঠাৎ আকাশ তন্বীকে ওর জীবন থেকে সরে যেতে বললো। তন্বী প্রথমে ভেবেছিলো আকাশ ওর সাথে মজা করছে কিন্তু আকাশ যখন রাগ দেখালো, কঠোরভাবে ওকে সরে যেতে বললো তন্বীর জীবনে প্রথম মনে হলো ,ও যেন রাস্তার ভিখারি। তন্বী ওর অপরাধ জানতে চাইলো । আকাশ কোনকিছু বললো না। তন্বী বাসায় এসে বাথরুমে ঢুকে ঝর্ণা, পানির কল ছেড়ে দিয়ে ভিজতে লাগলো আর বুকের সমস্ত কান্না ধুইয়ে দিচ্ছিলো। আজ সেই আকাশের সামনে দাঁড়িয়ে সে না পারছিলো বের হয়ে আসতে না পারছিলো ওখানে থাকতে।

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ