
কলাবাগানের মাষ্টার মাইন্ডের শিক্ষার্থী বিকৃত যৌনাচারের শিকার হয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই মৃত্যুবরণ করেছেন- এই খবরটিতে খুবই বিচলিত হয়ে পড়েছি। সমাজে বসবাসকারী দেশের একজন নাগরিক হিসেবে এই বিকৃত যৌনাচারের অপসংস্কৃতি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা।
সমাজে প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এর ব্যাপকতা বাড়ছে৷ পত্র পত্রিকা বা টিভি খুললে এমন দিন কমই পাওয়া যায় যেদিন নারী শিশু নির্যাতনের খবর পাওয়া যায় না৷ কিন্তু কেন আশংকাজনক হারে বাড়ছে এই ধর্ষণ? এর পেছনে কি কারণ থাকতে পারে? সমস্যা সমাধানের জন্য এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা জরুরি৷
সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এসব বিকৃত যৌনাচারের পরিণতি দেখেও এখনো যদি টনক না নড়ে তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এক বিকৃত মানসিকতা নিয়েই জন্মগ্রহণ করবে তা বলাই বাহুল্য। প্রমাণ হলো অনেকেই বিশ্বাস করে– পোশাকই হচ্ছে ধর্ষণের অন্যতম কারন! এদের দেখার চোখে ভর করেছে যৌন সুড়সুড়ি। এরা অপজিট লিঙ্গকে লিপ্সাযুক্ত মননে গ্রহণ করতেই অভ্যস্ত।
কোথা থেকে পাচ্ছে এই লিপ্সু মানসিকতা? কিভাবে লালিত হচ্ছে তাদের শিশু মন? তার পরিবার কি তাহলে তাকে ধর্ষণের শিক্ষা দিচ্ছে? মোটেই নয়। এর পিছনে আছে অবাধ আকাশ সংস্কৃতি ও আমাদের হাতের মুঠোয় এডাল্ট কন্টেন্ট। এসব থেকে মুক্ত হয়তো হওয়া যাবেনা তবে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যৌনতা শুধু একটা বায়োলজিক্যাল বা শারীরিক বিষয় নয়, এর সাথে সামাজিক, মানসিক এবং সাংস্কৃতিক বিষয়গুলোও যুক্ত৷ শিশু ধর্ষণ বা উৎপীড়ণ কোন সমাজেরই প্রচলিত সংস্কৃতি বা নিয়মের সাথে মেলে না৷
সাধারণভাবে কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো ব্যাপক সামাজিক অবক্ষয়, নীতি-নৈতিকতার মানদণ্ডগুলির সর্বব্যাপী বিলুপ্তি ও মূল্যবোধের অধঃপতন৷ পরিবারের সদস্যরা ইলেকট্রিক ডিভাইস, মুঠোফোনে এবং অনলাইন মাধ্যমে ঠিক কি কি করছেন তা নজরদারীতে রাখুন। শিশুকাল থেকেই সুস্থ মানসিকতা গড়তে পরিবারকেই এগিয়ে আসতে হবে সবার প্রথম।
এই বদ্ধ পচা বিকারগ্রস্ত সমাজের গায়ে ফুটে ওঠা বিষ ফোঁড়া ফেটে গেছে, গলগল করে বেরিয়ে আসছে দুষিত পুঁজ, তারই লক্ষণ এসব বিকৃত যৌন লালসা, এইসব বিকারগ্রস্ত যৌন আচরণ৷ জীবন আচরণে সুস্থ, স্বাভাবিক যৌনতার চর্চা না থাকলে সেখানে বিকৃতিই জন্ম নেবে৷ শিশু ও নারীদের যখন যৌন বস্তু বিবেচনা করা হয়, তখন সমাজের সদস্যদের মধ্যে অকারণ বিকৃত যৌন কৌতুহল জাগবেই৷
সর্বস্তরে দরকার মুক্ত চিন্তার চর্চা, এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী ভোগের বস্তু৷ নারীর স্বাতন্ত্র্য, তার মেধা, বুদ্ধিমত্তা ও ব্যক্তিত্বকে সমাজ স্বীকার করতে চায় না৷ নারীকে অসম্মান করার যে প্রবণতা তা থেকে বেরিয়ে নারী-পুরুষ সম-মর্যাদার সুষম সমাজ বিনির্মাণ করতে হবে৷ নিজস্ব সংস্কৃতিকে দূরে ঠেলে দিয়ে আপনি আমি আমরা যখন হাইব্রিড সংস্কৃতিকে লালন করছি তখন এসব অনৈতিকতার সমস্ত দায়ভায় আমাদের উপরেই বর্তায়।
কাল আমাদেরই অন্য কোন বোন এর শিকার হোক আমরা মোটেই তা চাইনা।
[লেখার ছবি- নেট থেকে নেয়া]
২২টি মন্তব্য
সাখাওয়াত হোসেন
এটি একটি জঘন্য অপরাধ।
কঠোর আইনের আওতায় এনে এর দমন হওয়া দরকার।
তৌহিদ
অবশ্যই দরকার। সেইসাথে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।
ভালো থাকুন ভাই।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সর্বস্তরে দরকার মুক্ত চিন্তার চর্চা, এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী ভোগের বস্তু৷ নারীর স্বাতন্ত্র্য, তার মেধা, বুদ্ধিমত্তা ও ব্যক্তিত্বকে সমাজ স্বীকার করতে চায় না৷ নারীকে অসম্মান করার যে প্রবণতা তা থেকে বেরিয়ে নারী-পুরুষ সম-মর্যাদার সুষম সমাজ বিনির্মাণ করতে হবে৷ নিজস্ব সংস্কৃতিকে দূরে ঠেলে দিয়ে আপনি আমি আমরা যখন হাইব্রিড সংস্কৃতিকে লালন করছি তখন এসব অনৈতিকতার সমস্ত দায়ভায় আমাদের উপরেই বর্তায়।**** এই মানষিকতার পরিবর্তন যতদিন আসবেনা ততদিন এসব চলতেই থাকবে। সরাসরী কঠোর আইনী ব্যবস্থা নিলে কমে যেত॥ অসাধারণ লিখেছেন ভাইয়া। শুভ কামনা রইলো।🌹🌹
তৌহিদ
নারীকে সম্মান করতে হবে এই বিষয়টিকে মাথায় ঢুকানোর মত শিক্ষা আমরা সন্তানদের দিতে পারিনা, না পরিবার থেকে না শিক্ষাপীঠ থেকে। মুখে মুখে বলেই খালাস। যার ফলশ্রুতিতে এসব অনাচার দেখতে হচ্ছে।
ভালো থাকুন আপু।
মনির হোসেন মমি
ভবিষৎ প্রজন্ম যে কোন দিকে যাবে তা বলাই মুশকিল।এখন অল্পবয়সী এক কিশোরকে দেখছি এন্্রুয়েট নিয়ে চব্বিশ ঘনটাই পড়ে থাকে।কি দেখছে এন্ড্রুয়েট মোবাইল ইউজ একজন কিশোর ছেলে মেয়ের কী বা কতটা কতটা প্রয়োজনীতা আছে তা আমরা যেমন ভাবিনা তেমনি ভাবেন না সরকারও।সরকার ডিিজিটাল ঘরে ঘরে পৌছে দিয়ে তা রক্ষণাবেক্ষণ কন্ট্রোলের উদাসীনতা মানুষে অমানুষ করে দিচ্ছে।
উন্নত বিশ্বে একজন ১৮ বছরের নীচে কোন কিশোরই দোকান হতে সিগারেট ক্রয় করতে পারেন না আইনে বাধ্য হয়ে দোকানী তা বিক্রয়ে অপরাগতা স্বীকার করেন অথচ আমাদের দেশে? আইন আছে ঘুমিয়ে ধান্দা আছে জেগে।
আশার আলোখুবই ক্ষীর্ণতর হতে ক্ষীর্ণ হচ্ছে।
তৌহিদ
আমরা বড়রাই অনেকে নিজেরা বুঝিনা কিংবা অনুধাবন করতে পারিনা এসব বিষয়। বাচ্চারা বড়দের দেখে শিখবে সেটা আমরা বুঝতেও চাইনা। আহ্লাদে মানুষ করে বড় হয়ে একেকটা অমানুষ হয় অনেকেই।
ধন্যবাদ ভাইয়া, ভালো থাকুন।
শামীনুল হক হীরা
দারুণ।।। জবাব নেই।।শুভকামনা রইল।।
তৌহিদ
কি দারুন, কিসের জবাব নেই বলবেন?
এসব ফেসবুকীয় মন্তব্য এবং লেখা ব্লগে করা উচিত নয় ভাই। লেখাটি পড়ে কি বুঝলেন আর বুঝলেননা মতামতে সেটা প্রকাশ করুন। তবেই আপনি লেখক হিসেবে নিজের স্থান করে নিতে একধাপ এগিয়ে যাবেন।
ভালো থাকুন।
খাদিজাতুল কুবরা
আসলে একটি অপরাধের মূলে প্রোথিত সমস্যাটিই তুলে ধরেছেন। অপসংস্কৃতির বিনোদন এবং প্রযুক্তির অপব্যবহারই এই জঘন্য নৃশংসতার জন্য দায়ী। আমি আমার ছেলেকে ফোন না দিলে ও অন্য অভিভাবক দিচ্ছে। বাচ্চা বন্ধুর কাছে মোবাইলের চমকপ্রদ গল্প শুনে বাসায় এসে মরিয়া হয়ে আবদার ধরে ফোন পাওয়ার জন্য তাহলে এখন করণীয় কী। একটি প্যারেন্ট একা পারবেনা শিশু কিশোরের মৌলিক আদর্শ গড়ে তুলতে। পুরো সমাজকে সচেতন হতে হবে।
খুব ভালো বিষয় নিয়ে লিখেছেন। এটি নিয়ে সামাজিক উন্নয়ন প্রয়োজন।
তৌহিদ
সন্তানদের দিকে লক্ষ্য রাখা প্রত্যেকের কর্তব্য অথচ এই কাজটিই আমরা ঠিকমত করিনা।
সুন্দর বললেন আপু। অনেক ধন্যবাদ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আমি ও এই অপসংস্কৃতি, ভার্চুয়াল জগৎ আর স্মার্টফোনের বিভিন্ন এ্যাপস কে দোষারোপ করবো। ফোন খুললেই আপনাকে আগেই জঘন্য কিছু বিকৃত এ্যাড দিয়ে স্বাগতম জানাবে এবং তা প্রতিক্ষণে ক্ষণে দেখাবে দেখতে না চাইলেও। বিশেষ করে ইমো নামক এ্যাপস তো এটা বেশিই করে। এদের সব এ্যাড ই এসব নিয়ে। এটা যোগাযোগের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম এখানে পরিবারের সবাই অন্তর্ভুক্ত থাকে। এসব নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না। তাহলে এসব বাচ্চা বা কিশোরদের কাছ থেকে কিভাবে ভালো কিছু আশা করবেন? আজকাল নতুন কারো সাথে কথা বলতে গেলেই এসব সেক্সুয়াল বিষয়ে কথা বলতে চায় , তাহলে আমাদের মানসিকতা কোথায় পৌঁছেছে?? রন্ধ্রে রন্ধ্রে এই বিষ ছড়িয়ে গেছে , পচন ধরেছে মন মানসিকতায়।
অবিরাম শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
তৌহিদ
প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার আমরা করিনা। আর অপজিট লিঙ্গ দেখলেই কেন সেখানে সেক্স চলে আসে এই মস্তিষ্ক বিকৃতির অপশিক্ষা থেকে বেড়িয়ে আসতে মানসিক স্বাস্থ্যশিক্ষারর দিকে নজর দিতে হবে অবশ্যই।
ভালো থাকুন দি ভাই। চমৎকার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আলমগীর সরকার লিটন
বর্তমান সমাজব্যবস্থা খুবি খরাপ কোন শ্রদ্ধাবোধ নেই শুধু অহংকার হিংসা বিদ্বেষ ছড়ানো কারণ ভিন্নমাত্রিক তৌহিক দা
তৌহিদ
ঠিক বলেছেন ভাই, অনেক ধন্যবাদ।
মোঃ মজিবর রহমান
প্রিয় তৌহিদ ভাই, যত প্রচার তত বিক্রী, তাই নিডিয়ায় অন্যায় দেখে কিছু শ্রেনীর মানুষ আরও কুরুচীতে আক্রান্ত হচ্চছে। বিপক্ষে অনেক পাবেন কিন্তু পক্ষে পাবনা। বললেই তাই বলে কি প্রকাশ না করে মুখ বুযে বসে থাকব???
দেশি বিদেশি কিশোর গ্যাং দেখে অনেক কিশোর অন্যায়ে ঠুকছে, আবার কিছু বিকৃত ব্যাক্তি এইসব দেখে আবার ঔদিকেই ঝুকছে, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
সময় কম বেশি লিখার আর হলনা। ভালো থাকুন। সতত.
তৌহিদ
এসবের জন্য আমাদের নোংরা অপসংস্কৃতি দায়ী ভাই। ভালো থাকুন আপনিও।
মোঃ মজিবর রহমান
আর বিচারহীনতা বেশি বাড়াচ্ছে। ধন্যবাদ।
তৌহিদ
শুভকামনা জানবেন।
আরজু মুক্তা
প্রকাশ্যে একজনের বিচার হোক। আর বাড়িতে বাবা মায়েরা কোয়ালিটি টাইম দেক। মেয়েদের সম্মান করতে শেখাক। স্কুলে কাউন্সিলিং চালু হোক। নিশ্চয় সামনে ভালো কিছু হবে
তৌহিদ
আমিও চাই, উদাহরণমমূলক একট কঠোর শাস্তি জনসম্মুকে হোক। এমনিতেই অনেকে সাইজ হয়ে যাবে। এই অনাচার সহ্য করার মত নয়।
ধন্যবাদ আপু।
প্রদীপ চক্রবর্তী
এসবের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে এর মাত্রা বেড়েই চলবে।
তাই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত এবং এ বিষয়ের পরিবারের প্রধানরা তাঁদের সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখা ও সচেতনতার পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এসবের মাত্রা কমে আসবে।
.
তৌহিদ
একদম ঠিক বললেন দাদা। মন্তব্যে অনেক ভালোলাগা রইলো।
ধন্যবাদ জানবেন।