সমাজে বিকৃত যৌনাচার কেন?

তৌহিদুল ইসলাম ৮ জানুয়ারী ২০২১, শুক্রবার, ০৯:০৭:৩৭অপরাহ্ন সমসাময়িক ২২ মন্তব্য

কলাবাগানের মাষ্টার মাইন্ডের শিক্ষার্থী বিকৃত যৌনাচারের শিকার হয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই মৃত্যুবরণ করেছেন- এই খবরটিতে খুবই বিচলিত হয়ে পড়েছি। সমাজে বসবাসকারী দেশের একজন নাগরিক হিসেবে এই বিকৃত যৌনাচারের অপসংস্কৃতি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা।

সমাজে প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এর ব্যাপকতা বাড়ছে৷ পত্র পত্রিকা বা টিভি খুললে এমন দিন কমই পাওয়া যায় যেদিন নারী শিশু নির্যাতনের খবর পাওয়া যায় না৷ কিন্তু কেন আশংকাজনক হারে বাড়ছে এই ধর্ষণ? এর পেছনে কি কারণ থাকতে পারে? সমস্যা সমাধানের জন্য এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা জরুরি৷

সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এসব বিকৃত যৌনাচারের পরিণতি দেখেও এখনো যদি টনক না নড়ে তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এক বিকৃত মানসিকতা নিয়েই জন্মগ্রহণ করবে তা বলাই বাহুল্য। প্রমাণ হলো অনেকেই বিশ্বাস করে– পোশাকই হচ্ছে ধর্ষণের অন্যতম কারন! এদের দেখার চোখে ভর করেছে যৌন সুড়সুড়ি। এরা অপজিট লিঙ্গকে লিপ্সাযুক্ত মননে গ্রহণ করতেই অভ্যস্ত।

কোথা থেকে পাচ্ছে এই লিপ্সু মানসিকতা? কিভাবে লালিত হচ্ছে তাদের শিশু মন? তার পরিবার কি তাহলে তাকে ধর্ষণের শিক্ষা দিচ্ছে? মোটেই নয়। এর পিছনে আছে অবাধ আকাশ সংস্কৃতি ও আমাদের হাতের মুঠোয় এডাল্ট কন্টেন্ট। এসব থেকে মুক্ত হয়তো হওয়া যাবেনা তবে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যৌনতা শুধু একটা বায়োলজিক্যাল বা শারীরিক বিষয় নয়, এর সাথে সামাজিক, মানসিক এবং সাংস্কৃতিক বিষয়গুলোও যুক্ত৷ শিশু ধর্ষণ বা উৎপীড়ণ কোন সমাজেরই প্রচলিত সংস্কৃতি বা নিয়মের সাথে মেলে না৷

সাধারণভাবে কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো ব্যাপক সামাজিক অবক্ষয়, নীতি-নৈতিকতার মানদণ্ডগুলির সর্বব্যাপী বিলুপ্তি ও মূল্যবোধের অধঃপতন৷ পরিবারের সদস্যরা ইলেকট্রিক ডিভাইস, মুঠোফোনে এবং অনলাইন মাধ্যমে ঠিক কি কি করছেন তা নজরদারীতে রাখুন। শিশুকাল থেকেই সুস্থ মানসিকতা গড়তে পরিবারকেই এগিয়ে আসতে হবে সবার প্রথম।

এই বদ্ধ পচা বিকারগ্রস্ত সমাজের গায়ে ফুটে ওঠা বিষ ফোঁড়া ফেটে গেছে, গলগল করে বেরিয়ে আসছে দুষিত পুঁজ, তারই লক্ষণ এসব বিকৃত যৌন লালসা, এইসব বিকারগ্রস্ত যৌন আচরণ৷ জীবন আচরণে সুস্থ, স্বাভাবিক যৌনতার চর্চা না থাকলে সেখানে বিকৃতিই জন্ম নেবে৷ শিশু ও নারীদের যখন যৌন বস্তু বিবেচনা করা হয়, তখন সমাজের সদস্যদের মধ্যে অকারণ বিকৃত যৌন কৌতুহল জাগবেই৷

সর্বস্তরে দরকার মুক্ত চিন্তার চর্চা, এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী ভোগের বস্তু৷ নারীর স্বাতন্ত্র্য, তার মেধা, বুদ্ধিমত্তা ও ব্যক্তিত্বকে সমাজ স্বীকার করতে চায় না৷ নারীকে অসম্মান করার যে প্রবণতা তা থেকে বেরিয়ে নারী-পুরুষ সম-মর্যাদার সুষম সমাজ বিনির্মাণ করতে হবে৷ নিজস্ব সংস্কৃতিকে দূরে ঠেলে দিয়ে আপনি আমি আমরা যখন হাইব্রিড সংস্কৃতিকে লালন করছি তখন এসব অনৈতিকতার সমস্ত দায়ভায় আমাদের উপরেই বর্তায়।

কাল আমাদেরই অন্য কোন বোন এর শিকার হোক আমরা মোটেই তা চাইনা।

[লেখার ছবি- নেট থেকে নেয়া]

৬৫৯জন ৪৮৬জন
14 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ