
একটা দেশের রাষ্ট্রনায়ক মানেই অনেক অনেক ক্ষমতার অধিকারী। সূর্য যেমন পৃথিবী-সহ এই মহাবিশ্বকে আলোকিত করে রাখে, ঠিক একজন রাষ্ট্রপ্রধানও উনার মানবিকতার গুনে পুরো একটা দেশেই আলো ছড়িয়ে রাখতে পারে। এককথায় বলতে গেলে রাষ্ট্রনায়ক হলেন গোটা একটা দেশের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক ক্ষমতাধর ব্যক্তি। এতো এতো ক্ষমতার অধিকারী হওয়া স্বত্ত্বেও কখনও-কখনও তাঁরা অসহায় হয়ে পড়েন আততায়ীর কাছে। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও কিছুই করার থাকে না ক্ষমতাধর রাষ্ট্রনায়কদের।
তো এই পৃথিবীতে সভ্যতার সূচনা লগ্ন থেকে এযাবতকাল পর্যন্ত যেসব রাষ্ট্রনায়ক আততায়ীর কাছে হার মেনেছিল বা প্রাণ হারিয়েছিল, সে সকল রাষ্ট্রনায়কদের ছোট একটা তালিকা নিম্নরূপ:
১। ভারতের জাতির পিতা ছিলেন, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। (মহাত্মা গান্ধী)
১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারিতে রাজধানী দিল্লির এক সন্ধ্যাকালীন প্রার্থনাসভায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন। সেখানেই তাঁকে পর পর তিনটি গুলি করে হত্যা করেন, এক হিন্দুত্ববাদী।
২। আমেরিকার ৩৫ তম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি।
তাঁকে হত্যা করা হয় ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর ডালাসে। হুড খোলা গাড়িতে সওয়ারি ছিলেন সস্ত্রীক প্রেসিডেন্ট। তাঁর হন্তক লি হার্ভে ওসওয়াল্ড রাস্তার ধারের একটি বাড়ির ছ’তলা থেকে প্রেসিডেন্টের মাথা লক্ষ্য করে তিনটি গুলি চালান।
৩। লেনিনের ভাবশিষ্য ছিলেন মার্কসবাদী বিপ্লবী লিওন ট্রটস্কি।
তিনি ছিলেন রুশ বিপ্লবের প্রথম সারির নেতা। ১৯৪০ সালের ২১ অগস্ট তাঁকে হত্যা করা হয়।
৪। আব্রাহাম লিঙ্কন।
তিনি ছিলেন আমেরিকার ষোড়শ প্রেসিডেন্ট। তাঁকে ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল, একটি থিয়েটারে মাথার পিছন থেকে গুলি করে খুন করেন আততায়ী। সন্ধে ৬টা নাগাদ লিঙ্কনের উপর হামলা হয়। পরের দিন সকাল ৭টায় মৃত্যু হয় তাঁর।
৫। মার্টিন লুথার কিং।
তিনি ছিলেন আমেরিকান ব্যাপ্টিস্ট মন্ত্রী এবং আফ্রিকান-আমেরিকান মানবাধিকার কর্মী। আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার গণআন্দোলনের নেতা ছিলেন মার্টিন। ভারতের মহাত্মা গান্ধীর অহিংসা আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি শ্বেতাঙ্গদের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরোধিতা করে আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৬৮ সালে মার্টিনকে সামনে থেকে গুলি করে খুন করা হয়।
৬। বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
স্বাধীনতা পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিও ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নং বাড়িতে কিছু উশৃংখল সেনাবাহিনীর সদস্যরা সপরিবারে তাঁকে হত্যা করে।
৭। বাংলাদেশের ৮ম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
তিনি ১৯৮১ সালের ৩০শে মে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব বন্দর নগরী চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একদল অফিসার কর্তৃক তিনি নিহত হন।
৮। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রিরা গান্ধী।
তিনি ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর সকাল ৯টা ২০ মিনিটে তাঁর সফদরজং রোডের বাসভবনের বাগানে হাঁটছিলেন। তাঁর বাড়ি থেকে এক ব্রিটিশ সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দিতে আকবর রোডের অফিসে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিলেন। ঠিক সেই সময়েই তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালান তাঁর রক্ষীরা।
৯। রাজীব গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
তিনি ছিলেন প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীর বড় ছেলে। তিনি রাজীব গান্ধী ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁকে হত্যা করা হয় ১৯৯১ সালের ২১ মে। রাজীব তখন ভোটের প্রচারে দক্ষিণ ভারতে। তামিলনাড়ুর শ্রীপেরুমবুদুরে একটি জনসভা ছিল। সভাস্থলে পৌঁছে বুলেটপ্রুফ গাড়ি থেকে নেমে ডায়াসের দিকে এগোচ্ছিলেন রাজীব। একের পর এক শুভার্থীরা মালা পরিয়ে দিচ্ছিলেন তাঁক। শুভেচ্ছা জানিয়ে পা ছোঁওয়ার পরই কোমরে বাঁধা আরডিএক্স বেল্টে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটান। ঠিক ১০টা বেজে ১০ মিনিটে। সাথে সাথেই প্রাণ হারায় প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী।
১০। পাকিস্তানের প্রথম এবং একমাত্র মহিলা প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো।
তিনি ১৯৮৮ এবং ১৯৯৩ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। মাঝে প্রায় ন’বছর আড়ালে থেকে আবার ২০০৭ সালে দেশে ফেরেন ভুট্টো। ঠিক করেন নির্বাচনে লড়বেন। প্রচারও শুরু করে দেন। কিন্তু ভোটের ঠিক দু’সপ্তাহ আগে একটি জনসভায় হত্যা করা হয় ভুট্টোকে।
১১। আধুনিক বিশ্বে সর্বশেষ রাষ্ট্রনায়ক হত্যার ঘটনা সংঘটিত হয় জাপানে।
আসলে পদমর্যাদার সঙ্গে যেমন ক্ষমতা হাতে আসে, তেমনই বিপুল দায়িত্বের কাঁটার মুকুটও চেপে বসে মাথায়। সেই মুকুট সামলাতে আঁচড় তো লাগবেই। কিন্তু কোনও কোনও আঁচড় দগদগে ঘা হয়ে প্রাণঘাতীও হয়ে ওঠে। ২০২২ সালের ৮ জুলাই জাপানের প্রাক্তন এবং দীর্ঘতম সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেরও সম্ভবত তা-ই হল। শিনজোকে হত্যা করলেন টেটসুয়া ইয়ামাগামি। যিনি নিজের বয়ানে জানিয়েছেন, শিনজোর কাজে সন্তুষ্ট ছিলেন না তিনি। তাই তাঁকে হত্যা করা হয়।
এতেই বোঝা যায় যে, এই পৃথিবীতে যাকিছু আছে সবকিছুই অনিশ্চিত! কেবল জীবের মৃত্যুর নিশ্চিত।
১০টি মন্তব্য
রোকসানা খন্দকার রুকু
মৃত্যু নিশ্চিত কিন্তু এমন মৃত্যু নয়। যেগুলো সহিংসতায় প্রান যায় হয়তো আমরা তাদের কাছে অনেক কিছুই পেতাম। শুভকামনা দাদা।
নিতাই বাবু
সুন্দর মন্তব্য! ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন আশা করি।
নার্গিস রশিদ
রাষ্ট্র প্রধান হওয়ার অনেক ঝুঁকি। শুভ কামনা।
নিতাই বাবু
ঠিকই বলেছেন দাদা। সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
মনির হোসেন মমি
তথ্য বহুল এবং একটি সংরক্ষণমুলক পোস্ট।ইতিহাস জানা দরকার।
নিতাই বাবু
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি, মনির দাদা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
অনেক তথ্যবহুল একটা পোস্ট, দাদা।
অজানা বিষয় নিশ্চয় সকলের জানা হবে।
নিতাই বাবু
সুন্দর মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞচিত্তে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি, দাদা।
হালিমা আক্তার
জীবনের সব কিছুই অনিশ্চিত। তবে এমন মৃত্যু কাম্য নয়। দেখা গেছে সকল রাষ্ট্রনায়ক ই তাদের খুব কাছের মানুষের হাতে মৃত্যু বরণ করেছেন। বেড়া তো ঘরের ইঁদুর ই কাটে। শুভ কামনা রইলো।
নিতাই বাবু
সুন্দর বিশ্লেষণমূলক মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞচিত্তে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি, দিদি।