
স্নেহের শামীম,
কারও কোন বিপদে এখন আর এক পয়সার সাহায্যে আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এ অবস্থা আমার কাছে অসহ্য। সারা জীবন পরিশ্রম করে আজ বলতে গেলে একেবারে নতুন করে সংসার যাত্রা শুরু করতে হবে। কোন অপঘাতে যদি মৃত্যু হয়, জানি না কোন অকুলপাথারে সকলকে ভাসিয়ে রেখে যাব। কোনো দিন স্বপ্নেও ভাবিনি যে সংসার জীবন এমনি করে পেছনে ফিরে যেতে হবে। এ বয়সে নতুন করে দুঃখ–কষ্টের মধ্যে যাওয়ার মতো মনের বল আর অবশেষ নেই। যা হোক তোমাকে আশীর্বাদ করি, জীবনে সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে সামনে এগিয়ে যাও। আমার বন্ধুবান্ধবের সম্পর্কে যে কথা লিখেছ, ওতে আমি বিস্মিত হইনি, কারণ আমি অনেকের বন্ধু হলেও কেউ আমার বন্ধু ছিল না। কারণ এ সংসারে সকলেই স্বার্থের দাস, জীবনের মহত্ত্বের গুণাবলি কয়েকজনের আছে। আমার জীবনে অপরিচিত জন ছিল যাঁরা বিপদেআপদে তাঁরাই আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, পরিচিত কোন বন্ধুজন নয়।
শুনে খুশি হলাম, তুমি মানিকের স্নেহস্পর্শে আছ। ওদের কয়েকজনকে আমি বরাবর স্নেহের নয়, শ্রদ্ধার চোখেই দেখেছি। ওকে আমার শুভেচ্ছা জানাবে।
ইতি, আব্বা
এগারোই অক্টোবর উনিশ শ একাত্তর
এটি শহীদ বুদ্ধিজীবী সিরাজউদ্দীন হোসেন কর্তৃক তার পরিবারকে লেখা শেষ চিঠি। দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র পাঁচদিন আগে ১০ ডিসেম্বর শুরু হয় আরেক দফা বুদ্ধিজীবী হত্যা। হায়েনারা ১০ ডিসেম্বর ধরে নিয়ে যায় প্রথিতযশা সাংবাদিক সিরাজউদ্দীন হোসেনকে। তাঁকে আর পাওয়া যায়নি।
[কৃতজ্ঞতা – প্রথম আলো পত্রিকায় শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দীনের আরেক সন্তান নিউইয়র্কপ্রবাসী সাংবাদিক ফাহীম রেজা নূরের প্রকাশিত লেখা থেকে]
এটি মাত্র একটি গল্প। এরকম হৃদয় বিদারক ইতিহাসের নির্মম শিকার –
শিক্ষাবিদ – ৯৯১ জন,
সাংবাদিক – ১৩ জন,
চিকিৎসক – ৪৯ জন,
আইনজীবী – ৪২ জন,
অন্যান্য (সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী এবং প্রকৌশলী) – ১৬জন।
দেশ হারিয়েছে তার সূর্যসন্তানদের। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সকল শহীদ ও তাদের পরিবারের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
১৪টি মন্তব্য
আলমগীর সরকার লিটন
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সকল শহীদ ও তাদের পরিবারের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা
তৌহিদ
ধন্যবাদ ভাই, আপনিও ভালো থাকুন সব সময়।
জিসান শা ইকরাম
দেশকে মেধা শূন্য করার জন্য আলবদর বাহিনীর নেতৃত্বে এই বুদ্ধিজীবী হত্যা সংগঠিত হয়েছিল।
দেশ কে মেধা শূন্য করার প্রক্রিয়া এরা চালিয়েই যাচ্ছে।
আজকের এই দিনে জাতির সূর্যসন্তান, সকল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি।
তৌহিদ
বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে দেশকে শত বছর পিছিয়ে দিয়েছে সেই সকল পাকিস্তানি দোসররা। তা আবারও জেগে উঠছে। প্রতিহত করতে হবে সকলকে।
ধন্যবাদ ভাই, ভাল থাকুন আপনিও।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এই দেশকে মেধাশূণ্য , পঙ্গু করার জন্য এই দিনে ওরা পশু হয়ে উঠেছিল, মরিয়া হয়ে গিয়েছিল। এসব ঘটনা কিন্তু প্রায় সবার সাথেই ঘটেছে রাজাকার, আলবদর বাদে।
বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, হিন্দুদের কে শেষ করার জন্য ওরা শেষ মরণ কামড় দেয় ১৪ই ডিসেম্বর।
সমস্ত শহীদ, বুদ্ধিজীবীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো।
আপনাকেও অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
তৌহিদ
সুন্দর বললেন আপু , সকলে মিলে আবারও সোচ্চার হতে হবে। পাকিস্তানি দোসররা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
শ্রদ্ধা জানাই সকল শহীদ বুদ্ধিজীবী এবং তাদের পরিবারকে। ভালো থাকুন আপনিও।
ছাইরাছ হেলাল
সেই অপূরণীয় ক্ষতি জাতি এখন ও বয়ে যাচ্ছে।
আকারে ইঙ্গিতে অস্বীকার করাও হচ্ছে!!
তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।
তৌহিদ
বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে পাকিস্তানি দোসররা আমাদের শতবর্ষ পিছিয়ে দিয়েছে। এই ক্ষতি কোনদিন পূরণ হবার নয়। শ্রদ্ধা জানাই সকল বীর শহীদদের।
ভালো থাকুন আপনিও ভাই।
আরজু মুক্তা
ক্ষতি কিন্তু অপূরণীয়। আর তার মাশুল আমরা দিয়েই যাচ্ছি। এখন চলছে। পরিবর্তন হয়েছে কি?
মন্তব্য নিষ্প্রোয়জন।
তৌহিদ
এই ক্ষতি কোনদিন পূরণ হবার নয়। আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। শুভকামনা আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কিছু ক্ষতি অপূরণীয় যা কখোনোই পূরণ হয়না। মহান মানুষগুলো থাকলে আমরা অনেকদুর এগিয়ে যেতে পারতাম।
বিনম্র শ্রদ্ধা রইল তাদের জন্য॥ শুভ কামনা রইলো ভাইয়া আপনার জন্যও॥
তৌহিদ
বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে পাকিস্তানের দোসররা আমাদের শতবর্ষ পিছিয়ে দিয়েছে। এখন তারা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, সচেতন হতে হবে । সকল শহীদ বুদ্ধিজীবী এবং তাদের পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা রইল।
শুভকামনা আপু।
মনির হোসেন মমি
বিনম্ভ্র শ্রদ্ধাঞ্জলী। বুদ্ধি জীবি হত্যার পাকিদের মুল থিম ছিলো যুদ্ধে যেহেতু হেরে যাচ্ছে তাই শেষের দিকে এ দেশ যাতে আর উঠে দাড়াতে না পারে সে জন্য সর্বোশেষ বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করে।
তৌহিদ
বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে তারা আমাদের পিছিয়ে রাখার যে ষড়যন্ত্র করেছিল সেই তারা আজ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। শ্রদ্ধা জানাই সকল শহীদ বুদ্ধিজীবী এবং তাদের পরিবারের প্রতি।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই।