সন্দেহের অবশিষ্টাংশ

সাবিনা ইয়াসমিন ১৩ মে ২০২০, বুধবার, ০১:৪৭:২৭পূর্বাহ্ন গল্প ২৮ মন্তব্য

বিয়ের মাস ছয়েক পর থেকেই পাল্টে যেতে লাগলো অঞ্জন। সে গতরাতেও ঘুমায়নি। অনলাইনে সারারাত জেগে কার সাথে যেন কথা বলেছে। সকালে জিজ্ঞেস করতেই উল্টো রাগ হলো।

–বললো সন্দেহ করা কমাও জান। বিশ্বাস করতে শেখো। এমন করলে সংসার বেশিদিন টিকে না সোনা।

তারপর থেকে প্রশ্ন করা কমিয়ে দিয়েছে। প্রেম তারপর বিয়ে। সংসার না করার প্রশ্নই আসে না।

- ফোন ধরলে না কেন?
= মিটিংয়ে ছিলাম।
- মেসেজও দিয়েছি
= দেখেছি, রিপ্লাই দিতে মনে ছিলো না।
- এতো জরুরী একটা ব্যাপারে লিখলাম, আর রিপ্লাই দিতে ভুলে গেলে!
= দেখো, ব্যাপারটা তোমার কাছে জরুরী কিন্তু আমার কাজের চাইতে জরুরী নয়। আর যখন তখন আমার উপর নির্ভর করা কমাও।
- রাতেও তুমি ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকো, নয়তো ঘুমিয়ে যাও। কথা বলার সময়ই পাই না।
= সারাদিন অফিস করে ঘরের ব্যাপার গুলো কি আমাকেই দেখতে হবে?  টাকা গুলো অফিস থেকে আমায় এম্নি এম্নি দেয় না।

মৌ ভাবতে থাকে কিভাবে নির্ভরশীলতা কমানো যায়। বাইরে কোথাও চাকরী করা যেতো, কিন্তু  তাতেও অঞ্জনের আপত্তি। উহু, চাকরী করা যাবে না। তাহলে সময় কাটবে কিভাবে! ঘরের কাজ সেরে, সারাদিন গান শুনে আর বই পড়ে তার অবসর যেন কাটেই না। বিশেষ  করে রাতে যখন অঞ্জন তার অনলাইন জগতে ব্যস্ত হয়ে যায়। তার হঠাৎ মাথায় এলো, একটা ফেসবুক আইডি করে নিলে কেমন হয়!

অফিসে গিয়ে অঞ্জন শান্তি পাচ্ছে না। মৌয়ের উপর যতই রাগ দেখাক, সেতো জানে মৌয়ের সন্দেহ ভুল নয়। অফিসে নতুন জয়েন করা মেয়েটার প্রতি সে আসলেই দূর্বল হয়ে পড়েছে। যদিও সে দুইদিকেই মেইনটেইন করার চেষ্টা করে, কিন্তু সেভাবে হয়ে উঠছে না। আর মেয়েটিও তার প্রতি বেশ দূর্বল। রাতে তার সাথে চ্যাট না হলে দুজনেই অসুস্থবোধ করে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? মৌ অনেক লক্ষী মেয়ে। অঞ্জনের জীবন ধন্য হয়েছে তাকে বউ হিসেবে পেয়ে।

কিন্তু কি করা যায়! কিভাবে দুইদিক সামাল দিবে সে!
হঠাৎ আইডিয়া চলে আসে! মৌকে একটা ফেসবুক আইডি করে দিলে কেমন হয়!

********************************************************************************

- মৌ তুমি তোমার ফেসবুক থেকে আমাকে আনফ্রেন্ড করেছো! ফেসবুকের পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করেছো কেন?

= হু। আমি আসলে ব্লক করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা ভালো দেখাতো না। আর পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করা খুব দরকার ছিলো , কারণ আমি চাইনা আমার আইডিতে তুমি প্রবেশ করো।

- সকালে দেখলাম, তোমার ফ্রেন্ড এক হাজার প্লাস, সাথে পাঁচ হাজার ফলোয়ার! কারা তোমার লিস্টে আছে দেখি, আজই তোমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিএক্টিভেট করে দিবো।

এই বলে অঞ্জন নিজেই মৌয়ের মোবাইল ফোন হাতে নিলো।

- মৌ! তুমি তোমার ফোন লক করে রেখেছো!!
= হ্যা। প্রাইভেসির জন্যে এটা সবাই করে।
- মানে! আমি তোমার হাজব্যান্ড....

টুং টুং টুং টুং মৌয়ের মেসেঞ্জারে কল আসছে.. অঞ্জনের কথা শেষ না হতেই ফোনটা তার হাত থেকে একরকম খাঁমছে নিয়ে এক দৌড়ে চলে গেলো কিচেনে।

- কে ফোন করেছে? কার সাথে কথা বলছো মৌ?
= এইতো অনলাইন শপিং গ্রুপের একটা মেয়ের সাথে। অনলাইনে কিছু জিনিসের অর্ডার দিয়েছিলাম।

- কিন্তু আমি যে স্ক্রীনে দেখলাম একটা লোকের ছবি!
= অঞ্জন, তুমি এবার থামবে? এতো সন্দেহ করা ঠিক না সোনা। অহেতুক সন্দেহ করে সংসারে কেন অশান্তি ডেকে আনছো? তুমিও অনলাইনে ঘুরো অথবা ঘুমাও।  আর শোনো, আমার বেডে আসতে দেরি হবে। অনেক জিনিস অর্ডার করেছি। ভিডিও কলে সব ভালো ভাবে দেখে কনফার্ম হয়ে তারপর কিনবো।

অঞ্জনের চোখে ঘুম নেই। মোবাইলের নেট বন্ধ করে, একহাতে মাথার চুল টানতে টানতে, সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে একমনে ভাবছে।
সে স্ক্রিনে ছবির সাথে ভেসে উঠা নামটাও দেখেছিলো..

মৌ কিচেন ছেড়ে চলে এসেছে ড্রইংরুমে। খুব আস্তে আস্তে কথা বলছে..
– উফফফ আজ বেঁচে গেছি! এ্যাই শোনো, কালই তুমি একটা নতুন আইডি করে নিও। আকাশ বাদে যেকোনো একটা নাম দিলেই হবে। আর আমিও একটা ফেইক আইডি করেছি,,, আবেগী মন। রিক্যু দিও ***

0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ