শ্রীনগরের নাগিন লেক

কামাল উদ্দিন ৫ মে ২০২০, মঙ্গলবার, ০৭:৫৯:৫৪অপরাহ্ন ভ্রমণ ১৮ মন্তব্য

কাশ্মীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য মুগ্ধ হয়ে আমরা তাকে ভু-স্বর্গ কিংবা এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ইত্যাদি বলে থাকি, কিন্তু কাশ্মীরে যাওয়ার পর দেখালাম ওখানকার প্রকৃতিই শুধু নয় ওখানকার মানুষগুলোর মনও অনেক সুন্দর, যা পর্যটকদের মনে সত্যিই দাগ কাটে। বাংলাদেশী ক্রিকেট টিম, বিশেষ করে সাকিব আল হাসান কাশ্মীরে এতো বেশী জনপ্রিয় তা দেখে সত্যিই অবাক হতে হয়।

নাগিন লেক। কাশ্মীর উপত্যকার অন্যতম সেরা, এই লেকটি বিখ্যাত ডাল লেকের অংশ। জাবারওয়ান পাহাড়ের ঢালে এটি অবস্থিত। রঙিন কাপড় ও ঝালর দিয়ে সাজানো ছোট ছোট কিছু নৌকা আছে এই লেকে, যাতে আরামদায়ক বসার আসন দেওয়া থাকে, সেই আসনে শুয়ে বসে লেকের সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। স্থানীয় ভাষায় এগুলোকে শিকারা বলে। নির্ঝঞ্জাট নিরিবিলি কোন হাউজ বোটে থাকতে হলে নাগিন লেকের বিকল্প নাই। মূল ডাল লেকে এতো বেশি মানুষ আর হাউজবোট রয়েছে যে ওখানে নিরিবিলি নাই বললেই চলে। নাগিন লেকে একদিন থাকার সৌভাগ্য হয়েছিলো আমার, আসুন আমার ক্যামেরায় চিনে নেই কাশ্মীরের বিখ্যাত নাগিন লেককে।

তবে কাশ্মীর সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি তাতে বুঝে গেছি কমপক্ষে তিনবার কাশ্মীর না গেলে কাশ্মীরকে পূর্ণরূপে দেখা সম্ভব নয়। প্রথমটা হলো আগস্ট থেকে নভেম্বর মাস, যখন শীতের প্রকোপ খুবই কম থাকে আর গাছে গাছে থাকে পাকা লালরঙা আপেল। দ্বিতীয়টা হলো ডিসেম্বর জানুয়ারী, যখন ওখানে তুষার ঝরে। তৃতীয়টা হলো এপ্রিল যখন সবগুলো পাহাড়ের মাথায় থাকবে বরফের সাদা টুপি আর আনন্দে হাসবে টিউলিপরা।


(২) পুরো কাশ্মীর ঘুরে দেখানোর জন্য আমাদের ড্রাইভার সাহিল নাগিন লেকের যেই পাড়ে নামিয়ে দিয়েছে হাউজ বোটগুলো সবটাই অপর পাড়ে, দূর থেকে দেখেই আমরা সেই বোটগুলোর প্রেমে পড়ে গেলাম।


(৩) অগত্যা শিকারায় চড়ে নাগিন লেকের স্বচ্চ শীতল জল পারি দিয়ে হাউজ বোটগুলোর কাছে যেতে হলো।


(৪) রাত্রিযাপন আর বসবাসের জন্য দামি আসবাব ও ঝাড়বাতি দিয়ে মনোমুগ্ধকরভাবে সাজানো হাউজ বোটের ভেতরের রাজকীয় পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হলাম সবাই। এটা আমাদের হাউজ বোটের ড্রইং রূম।


(৫) আমিও আরো একজনের থাকার জন্য এই রূম বরাদ্দ হলো।


(৬) এমন ঝকঝকে তকতকে টয়লেট পাবো সত্যিই ভাবতে পারিনি।


(৭) জলের উপড়ে ঝুলে থাকা পেছনের বারান্দাটা দেখলে সত্যিই মনটা ভালো হয়ে যায়,


(৮) হাউজ বোটে উঠে একটু ফ্রেস হয়েই আমাদের দশ জনের টিম তিনটি শিকারা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম শিকারা রাইডে নাগিন লেক দেখবো বলে।


(৯/১০) আরো চমৎকৃত হলাম আমাদের শিকারা চলা শুরু করার পরই একটার পর একটা ভাসমান দোকান আমাদের শিকারায় এসে তাদের পশার মেলে ধরছে, আর ওরা এতোটাই প্রফেশনাল যে, কিছুনা কিছু ঠিকই আমাদেরকে কিনতে হচ্ছে।


(১১) নাগিন লেকের শাপলা বনে বন ধরে একটা শিকারা এগিয়ে যাচ্ছে, দুরে দেখা যাচ্ছে আকবর ফোর্ট।


(১২) একটি ভাসমান ফুলের দোকান আমাদের শিকারার দিকে এগিয়ে আসছে।


(১৩/১৪) এক সময় আমরা নাগিন লেকের গ্রামীন অংশে চলে এলাম, এখান দিয়ে প্রচুর কাশ্মীরি লোকজন নৌকা নিয়ে যাতায়াত করে, অনেকে এই অংশটাকে গোল্ডেন লেকও বলে থাকে। এই অংশটার বিশেষত্ব হলো এখানে প্রচুর শাপলা ফুল ফুটে, আর শাপলা ফুলগুলো এতো সুগন্ধি সত্যিই অবাক হতে হয়।


(১৫/১৬) শাপলা ফুলের সুগন্ধে মুগ্ধ হয়ে আপুদের দলটা ফুল তুলে তাদের খোপায় গুজে দেওয়ার পর তিনজন হাসিতে চব্বিশ খানা।


(১৭/১৮) অনেককে দেখলাম শাপলা পাতা তুলে নিয়ে যাচ্ছে, এসব ওরা কি করবে কে জানে?


(১৯) কি পাখি নাম জানিনা, দেখতে কিছুটা ডাহুকের মতো।


(২০) এক সময় সন্ধ্যা নেমে এলো নাগিন লেকে, দূরে পাহাড়ের উপর আকবর ফোর্টে বাতি জ্বলে উঠলো আর ততোক্ষণে শীত ও বেশ ঝেকে বসেছে, আমরা শিকারা নিয়ে ছুটে চললাম হাউজ বোটের দিকে।


(২১) হাউজ বোটের ডাইনিংএ বসে শ্রীনগরের মোগল দরবার থেকে আনা কিছু মোগল আর কিছু কাশ্মীরি খাবার খেয়ে যখন তৃপ্তির ঢেকুর তুললাম তখন মুখ থেকে এমনিতেই বেড়িয়ে আসলো সত্যিই এটা স্বর্গ।


(২২) পরদিন ভোরে উঠেই দেখলাম লেকের পানি বগলাচ্ছে, মানে বৃষ্টি হচ্ছে, আর সেকি শীত! মোটা জ্যাকেটটা গায়ে চড়িয়ে নাস্তা করেই বের হওয়ার প্রস্তুতি নিলাম, সামনে একটা ব্যস্ত দিন, বৃষ্টিটা না হলেই কি ভালো হতো না?


(২৩) ড্রাইভার সাহিল আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে, নাগিন লেকের অপর পাড়ে পৌছে তাই বৃষ্টিতেই শিকারা থেকে বের হয়ে ছুট লাগাইলাম আমাদের গাড়ির দিকে........

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ