
কাশ্মীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য মুগ্ধ হয়ে আমরা তাকে ভু-স্বর্গ কিংবা এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ইত্যাদি বলে থাকি, কিন্তু কাশ্মীরে যাওয়ার পর দেখালাম ওখানকার প্রকৃতিই শুধু নয় ওখানকার মানুষগুলোর মনও অনেক সুন্দর, যা পর্যটকদের মনে সত্যিই দাগ কাটে। বাংলাদেশী ক্রিকেট টিম, বিশেষ করে সাকিব আল হাসান কাশ্মীরে এতো বেশী জনপ্রিয় তা দেখে সত্যিই অবাক হতে হয়।
নাগিন লেক। কাশ্মীর উপত্যকার অন্যতম সেরা, এই লেকটি বিখ্যাত ডাল লেকের অংশ। জাবারওয়ান পাহাড়ের ঢালে এটি অবস্থিত। রঙিন কাপড় ও ঝালর দিয়ে সাজানো ছোট ছোট কিছু নৌকা আছে এই লেকে, যাতে আরামদায়ক বসার আসন দেওয়া থাকে, সেই আসনে শুয়ে বসে লেকের সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। স্থানীয় ভাষায় এগুলোকে শিকারা বলে। নির্ঝঞ্জাট নিরিবিলি কোন হাউজ বোটে থাকতে হলে নাগিন লেকের বিকল্প নাই। মূল ডাল লেকে এতো বেশি মানুষ আর হাউজবোট রয়েছে যে ওখানে নিরিবিলি নাই বললেই চলে। নাগিন লেকে একদিন থাকার সৌভাগ্য হয়েছিলো আমার, আসুন আমার ক্যামেরায় চিনে নেই কাশ্মীরের বিখ্যাত নাগিন লেককে।
তবে কাশ্মীর সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি তাতে বুঝে গেছি কমপক্ষে তিনবার কাশ্মীর না গেলে কাশ্মীরকে পূর্ণরূপে দেখা সম্ভব নয়। প্রথমটা হলো আগস্ট থেকে নভেম্বর মাস, যখন শীতের প্রকোপ খুবই কম থাকে আর গাছে গাছে থাকে পাকা লালরঙা আপেল। দ্বিতীয়টা হলো ডিসেম্বর জানুয়ারী, যখন ওখানে তুষার ঝরে। তৃতীয়টা হলো এপ্রিল যখন সবগুলো পাহাড়ের মাথায় থাকবে বরফের সাদা টুপি আর আনন্দে হাসবে টিউলিপরা।
(২) পুরো কাশ্মীর ঘুরে দেখানোর জন্য আমাদের ড্রাইভার সাহিল নাগিন লেকের যেই পাড়ে নামিয়ে দিয়েছে হাউজ বোটগুলো সবটাই অপর পাড়ে, দূর থেকে দেখেই আমরা সেই বোটগুলোর প্রেমে পড়ে গেলাম।
(৩) অগত্যা শিকারায় চড়ে নাগিন লেকের স্বচ্চ শীতল জল পারি দিয়ে হাউজ বোটগুলোর কাছে যেতে হলো।
(৪) রাত্রিযাপন আর বসবাসের জন্য দামি আসবাব ও ঝাড়বাতি দিয়ে মনোমুগ্ধকরভাবে সাজানো হাউজ বোটের ভেতরের রাজকীয় পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হলাম সবাই। এটা আমাদের হাউজ বোটের ড্রইং রূম।
(৫) আমিও আরো একজনের থাকার জন্য এই রূম বরাদ্দ হলো।
(৬) এমন ঝকঝকে তকতকে টয়লেট পাবো সত্যিই ভাবতে পারিনি।
(৭) জলের উপড়ে ঝুলে থাকা পেছনের বারান্দাটা দেখলে সত্যিই মনটা ভালো হয়ে যায়,
(৮) হাউজ বোটে উঠে একটু ফ্রেস হয়েই আমাদের দশ জনের টিম তিনটি শিকারা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম শিকারা রাইডে নাগিন লেক দেখবো বলে।
(৯/১০) আরো চমৎকৃত হলাম আমাদের শিকারা চলা শুরু করার পরই একটার পর একটা ভাসমান দোকান আমাদের শিকারায় এসে তাদের পশার মেলে ধরছে, আর ওরা এতোটাই প্রফেশনাল যে, কিছুনা কিছু ঠিকই আমাদেরকে কিনতে হচ্ছে।
(১১) নাগিন লেকের শাপলা বনে বন ধরে একটা শিকারা এগিয়ে যাচ্ছে, দুরে দেখা যাচ্ছে আকবর ফোর্ট।
(১২) একটি ভাসমান ফুলের দোকান আমাদের শিকারার দিকে এগিয়ে আসছে।
(১৩/১৪) এক সময় আমরা নাগিন লেকের গ্রামীন অংশে চলে এলাম, এখান দিয়ে প্রচুর কাশ্মীরি লোকজন নৌকা নিয়ে যাতায়াত করে, অনেকে এই অংশটাকে গোল্ডেন লেকও বলে থাকে। এই অংশটার বিশেষত্ব হলো এখানে প্রচুর শাপলা ফুল ফুটে, আর শাপলা ফুলগুলো এতো সুগন্ধি সত্যিই অবাক হতে হয়।
(১৫/১৬) শাপলা ফুলের সুগন্ধে মুগ্ধ হয়ে আপুদের দলটা ফুল তুলে তাদের খোপায় গুজে দেওয়ার পর তিনজন হাসিতে চব্বিশ খানা।
(১৭/১৮) অনেককে দেখলাম শাপলা পাতা তুলে নিয়ে যাচ্ছে, এসব ওরা কি করবে কে জানে?
(১৯) কি পাখি নাম জানিনা, দেখতে কিছুটা ডাহুকের মতো।
(২০) এক সময় সন্ধ্যা নেমে এলো নাগিন লেকে, দূরে পাহাড়ের উপর আকবর ফোর্টে বাতি জ্বলে উঠলো আর ততোক্ষণে শীত ও বেশ ঝেকে বসেছে, আমরা শিকারা নিয়ে ছুটে চললাম হাউজ বোটের দিকে।
(২১) হাউজ বোটের ডাইনিংএ বসে শ্রীনগরের মোগল দরবার থেকে আনা কিছু মোগল আর কিছু কাশ্মীরি খাবার খেয়ে যখন তৃপ্তির ঢেকুর তুললাম তখন মুখ থেকে এমনিতেই বেড়িয়ে আসলো সত্যিই এটা স্বর্গ।
(২২) পরদিন ভোরে উঠেই দেখলাম লেকের পানি বগলাচ্ছে, মানে বৃষ্টি হচ্ছে, আর সেকি শীত! মোটা জ্যাকেটটা গায়ে চড়িয়ে নাস্তা করেই বের হওয়ার প্রস্তুতি নিলাম, সামনে একটা ব্যস্ত দিন, বৃষ্টিটা না হলেই কি ভালো হতো না?
(২৩) ড্রাইভার সাহিল আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে, নাগিন লেকের অপর পাড়ে পৌছে তাই বৃষ্টিতেই শিকারা থেকে বের হয়ে ছুট লাগাইলাম আমাদের গাড়ির দিকে……..
১৮টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
উপভোগ্য । আল্লাহ সবাইকে সহী সালামতে রাখো।
কামাল উদ্দিন
হুমম, ধন্যবাদ।
জিসান শা ইকরাম
মুগ্ধ হয়ে ছবি দেখছি আর বর্ননা পড়ছি।
হাউজ বোটের ভেতরের রাজকীয় পরিবেশ দেখে তো তব্দা খেয়ে গেলাম। এত্ত সুন্দর হাউজ বোটের অভ্যন্তর!
একবারই যাওয়া হলোনা, তো তিনবার আর কখন যাবো?
এমন একটি পোস্টের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
আমার এখনো আরো দুইবার যাওয়ার ইচ্ছেটা বাকী রয়ে গেছে, কাশ্মীরের স্বাভাবিক জীবন কবে শুরু হবে কে জানে?……..ভালো থাকবেন ইকরাম ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
আহা আহা, স্বপ্নের কাশ্মীর।
যতই দেখি দেখা শেষ হয় না।
কামাল উদ্দিন
কিন্তু ওখানকার মানুষগুলো বড় বেশী কষ্টে আছে বড় ভাই।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ভাইয়া কি দেখালেন ! আমি ছবি দেখেই আত্নহারা। আকবর ফোর্ট টা দেখে সবচেয়ে বেশি আন্দোলিত হয়েছি, যদিও অনেক দূরে ছিল। হাউজ বোট এতো সুন্দর হতে পারে যে কোনো রাজকীয় বাড়ির অন্দরমহল মনে হচ্ছে। জাস্ট অসাধারণ, অসাধারণ আর অসাধারণ। সত্যিই আমার খুব হিংসা হচ্ছে আপনার উপর।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সন্ধ্যার আকবর ফোর্ট টা বেশী সুন্দর
কামাল উদ্দিন
আমি তো সব সময়ই বলি, আপনাদের এই হিংসা আসলে আমার প্রতি আপনাদের ভালোবাসা বা আশির্বাদ……..শুভেচ্ছা জানবেন আপু।
সুপায়ন বড়ুয়া
ওয়াও !
হাউজ বোট গুলো এতো সুন্দর।
এমনিতেই প্রেমে পড়া যায়।
খুব ভাল লাগলো।
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ দাদা, কাশ্মীরের প্রেমে ওখানে আরো দুইবার যাওয়ার পরিকল্পনা আমার মাঠায় আছে। জানিনা কবে কাশ্মীর আবার সাধারণ পর্যটকদের জন্য উম্মুক্ত হবে।
সুরাইয়া পারভীন
হাউজ বোট এতো সুন্দর !!
ঝকঝকে তকতকে ওয়াশরুম
আহা! কাশ্মীর মন চাইছে
একবার শুধু একবার তোমার নাগিন লেকে ভাসতে।
সত্যিই মনোমুগ্ধকর 💜
কামাল উদ্দিন
নাগিন লেকটা আসলে ডাল লেকের একটা অংশ, কিন্তু মূল ডাল লেকে শত শত হাউজবোট আর মানুষের আনাগোনায় একেবারে হাট বাজারের মতো অবস্থা। সেই তুলনায় নাগিন লেক অনেক নির্জন আর চমৎকার পরিবেশ। ভালো থাকবেন আপু।
তৌহিদ
শ্রীনগর আসলেও অনেক সুন্দর যায়গা। পৃথিবীরর স্বর্গ বুঝি একারনেই একে বলা হয়। ছবিগুলো অসাধারণ লাগছে।
সুন্দর পোস্টের জন্য ধন্যবাদ ভাই।
কামাল উদ্দিন
ভুস্বর্গ বলে কথা, শুভ কামনা জানবেন তৌহিদ ভাই।
নিতাই বাবু
আপনার জীবন স্বার্থক ভ্রমণে! আমাদের স্বার্থকতা আপনার ভ্রমণ পোস্ট দেখে এবং পড়ে! এই পোস্টেও কাশ্মির নিয়ে অনেককিছু জানা হলো, দেখাও হলো। শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় দাদা।
কামাল উদ্দিন
নেশা থাকলে যা হয় আরকি, এক বেলা কম খেয়ে হলেও ভ্রমণ করতে হবে…….ভালো থাকবেন দাদা।
হালিম নজরুল
ক্ষেতের ছবিগুলো চমৎকার লাগল।