বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পেয়েছিল মেয়েটা
অষ্টমঙ্গলায় ফিরে এসে আরও ছটা
একদিন দুপুরে, শাশুড়ি ঘুমিয়ে, সমস্ত শাড়ি বের করে
ছ'তলার বারান্দা থেকে উড়িয়ে দিল নীচের পৃথিবীতে ।
শাশুড়ি পরিয়ে দিয়েছেন তাকে সাদা থান
উনিশ বছরের একটা মেয়ে, সে একা ।
কিন্তু সেই থানও এক ঝটকায় খুলে নিল তিনজন, পাড়ার মোড়ে
একটি সদ্য নগ্ন বিধবা মেয়ে দৌড়াচ্ছে আর চিৎকার করছে, বাঁচাও
পেছনে তিনজন, সেকি উল্লাস, নির্বাক পাড়ার লোকেরা ।
বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পেয়েছিল মেয়েটা ।
অষ্ট মঙ্গলায় ফিরে এসে আরও ছটা......

বেগম সুফিয়া কামাল(ছবি- অন্তর্জাল)

আজ নারী জাগরণের কবি বেগম সুফিয়া কামালের মহাপ্রয়াণ দিবস। শ্রদ্ধা প্রিয় কবি সুফিয়া কামাল...

উপরে যেমন বলেছিলে, তোমার দেশে এখনো এমন দেখা যায়, কখনো বা একটু ভিন্নভাবে...
কিন্তু তুমি বলেছিলে,

তোমাদের ঘরে আলোর অভাব কভু নাহি হবে আর
আকাশ-আলোক বাঁধি আনি দূর করিবে অন্ধকার

তুমি গেয়েছো বিধাতার গান, রচিয়াছো তাহার মহিমা কীর্তন। দুই হাত তুলে তুমি বলেছ,

তুলি দুই হাত করি মোনাজাত
হে রহিম রহমান
কত সুন্দর করিয়া ধরণী
মোদের করেছ দান,

গাছে ফুল ফল
নদী ভরা জল
পাখির কন্ঠে গান
সকলি তোমার দান৷

মাতা, পিতা, ভাই, বোন ও স্বজন
সব মানুষেরা সবাই আপন
কত মমতায় মধুর করিয়া
ভরিয়া দিয়াছ প্রাণ৷

তাই যেন মোরা তোমারে না ভলি
সরল সহজ সত্‍ পথে চলি
কত ভাল তমি, কত ভালোবাস
গেয়ে যাই এই গান৷

 

শিশুদের কতোখানি ভালোবাসতে মাতা তুমি তা আমাদের সকলেরই জানা। আজকের শিশুর মাঝেই ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে তুমি। তাইতো বলেছিলে,

তোমাদের গানে, কল-কলতানে উছসি উঠিবে নদী-
সরস করিয়া তৃণ ও তরুরে বহিবে সে নিরবধি
তোমরা আনিবে ফুল ও ফসল পাখি-ডাকা রাঙা ভোর
জগৎ করিবে মধুময়, প্রাণে প্রাণে বাঁধি প্রীতিডোর।

তুমি চীরঞ্জীব বলেছিলে এই ধরণীর কবি ও লেখকদের। বিদায় নিয়েছিলে বিদায়ীর হয়ে বিদায়ীকে,

কুহেলী উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী-
গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে
রিক্ত হস্তে। তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতেপারি না কোন মতে।

সংক্ষেপে কবি সুফিয়া কামালের জীবনীঃ

জন্মঃ সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে মামার বাড়িতে।

পিতার নামঃ সৈয়দ আবদুল বারী।

মাতার নামঃ সাবেরা বেগম ।

উল্লেখযোগ্য রচনাঃ
>কাব্যগ্রন্থঃ সাঁঝের মায়া (১৯৩৮)
মায়া কাজল (১৯৫১)
মন ও জীবন (১৯৫৭)
শান্তি ও প্রার্থনা (১৯৫৮)
উদাত্ত পৃথিবী (১৯৬৪)
দিওয়ান (১৯৬৬)
মোর জাদুদের সমাধি পরে (১৯৭২)
>গল্পঃ কেয়ার কাঁটা (১৯৩৭)
>ভ্রমনকাহিনীঃ সোভিয়েতে দিনগুলি
>স্মৃতিকথাঃ একাত্তুরের ডায়েরি (১৯৮৯)

উল্লেখযোগ্য পুরস্কারঃ
সুফিয়া কামাল ৫০টির বেশী পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মাঝে কয়েকটিঃ
>বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬২)
>সোভিয়েত লেনিন পদক (১৯৭০)
>একুশে পদক (১৯৭৬)
>বেগম রোকেয়া পদক (১৯৯২)
>জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (১৯৯৫)
>দেশবন্ধু সি আর দাস গোল্ড মেডেল (১৯৯৬)
>স্বাধীনতা দিবস পদক (১৯৯৭)

দম্পতিঃ সৈয়দ নেহাল হোসেন (১৯২২-১৯৩২; বিধবা)
কামালউদ্দিন আহমেদ (১৯৩৭-)

সন্তানঃ আমেনা আক্তার
সুলতানা কামাল
সাঈদা কামাল
শাহেদ কামাল
সাজেদ কামাল
উল্লেখযোগ্য কর্মকান্ড সংক্ষেপেঃ
~১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর সুফিয়া কামাল পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি নিজে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং এতে অংশ নেয়ার জন্য নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন।
~১৯৫৬ সালে শিশুদের সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা হোস্টেলকে ‘রোকেয়া হল’ নামকরণের দাবী জানান।
~১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধের প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনে তিনি জড়িত ছিলেন। এই বছরে তিনি ছায়ানটের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
~১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন, পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ইতিপূর্বে প্রদত্ত তমঘা-ই-ইমতিয়াজ পদক বর্জন করেন।
~১৯৭০ সালে মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন।
~১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাসভবন সংলগ্ন গোটা ধানমন্ডি এলাকা পাকিস্থানী বাহিনীর নিরাপত্তা হেফাজতে ছিল, আর ঐ সময় তিনি ধানমন্ডিতে নিজ বাসভবনে সপরিবারে নিরাপদে অবস্থান করেন ।
~স্বাধীন বাংলাদেশে নারীজাগরণ আর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি উজ্জ্বল ভূমিকা রেখে গেছেন। ~১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শরিক হয়েছেন, কার্ফ্যু উপেক্ষা করে নীরব শোভাযাত্রা বের করেছেন। মুক্তবুদ্ধির পক্ষে এবং সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিপক্ষে আমৃত্যু তিনি সংগ্রাম করেছেন। প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।

২০ নভেম্বর , ১৯৯৯ সালে তিনি সুন্দর এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে, অসংখ্য গুণাগ্রহীদের কাঁদিয়ে ইহোলোক ত্যাগ করেন। আজ কবির মহাপ্রয়াণ দিবসে জানাই নিরন্তর শ্রদ্ধা।

0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ