শ্বশুরমশাই

প্রদীপ চক্রবর্তী ২৬ জুন ২০২০, শুক্রবার, ০৯:১৮:০৫অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩১ মন্তব্য

আমি সর্বদাই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অনুসারী।
তাই সাধু ও চলিতভাষা কখন কোথায় বসিবে তাহা নিয়া আজকাল চুকাইনা!
বরং সে কালো হোক আমি যে তাকে ভালোবাসিতে রাজী। যদি তার হৃদমন্দির সরল ও সুন্দর হয়।
তাহার পিতা কেরানি তবে কঠিন লোক।
তবুও তার পিতা আমাকে তাঁর একমাত্র কন্যার জামাতা করিতে চান। এছাড়া বহুটাকা দিবেন বলে আশ্বাসও দিয়েছেন। এতসব টাকাপয়সাতে যে আমার ইচ্ছে নেই। তা কী তার পিতা জানেন?
অবশেষে তাঁর মেয়ের সাথে আমার বাগদান ও সম্প্রদান হইয়াছে কোন এক শীতের রাত্রিতে।
মেয়ের গলায় একটা গোলাপের মাল্য ছাড়া পাঁচপদে কোন স্বর্ণ দিলেন না। এমনকি আমি তাঁহার কন্যার জামাতা হিসেবে হাতেরও আংটি পেলাম না।
কিন্তু আজও দ্বিরাগমনে যাওয়ার নিমন্ত্রণ দেন নাই তার পিতা। বলা যায় সদ্যজাত আমার শ্বশুর বড়ই কঠিন লোক। যে কিনা আজও তার একমাত্র মেয়ের জামাইকে নিমন্ত্রণ দিতে আগ্রহী নয়।
তার পিতা কঠিন বলে আমি কী আর কঠিন হইব?
আমার সহধর্মিণী তার পিতাকে দেখিবার জন্য অনেক কান্নাকাটি করিতে লাগিলো। আমি আর সহ্য না করতে পেরে তাকে নিয়ে চলিলাম শশুরালায়ে।
ঘরে পৌঁছাইবার পূর্বে আমাকে দেখিয়া শ্বশুরমশাই বলিয়া উঠিলেন বাবা তুমি কখন আমার মেয়েকে নিয়া বাড়ি চলিয়া যাইবে?
তাঁহার মেয়ে এমন কথাশুনে বলিয়া উঠিলো বাবা, এতদিন পর আপনার একমাত্র মেয়ের জামাই এসেছে। আর বাড়িতে এসেই তুমি এমন কথা বলিতেছ?
শ্বশুরমশাই তার আদরের একমাত্র মেয়েকে বলিলেন দেশে দুর্ভিক্ষ চলিতেছেরে মা। তাই জামাইকে আমি আমার বাড়িতে রাখিতে চাই না। বরং দুজনি আজ বৈকালে চলিয়া যাও।
যদ্যপি ঐদিন ছিলো অমাবস্যা।
কোন মেয়েই তার বাপের বাড়ি থেকে স্বামীকে সাথে নিয়ে বাড়ি ফিরে না। অদ্য বৈকালেই আমাদের বাড়ি ফিরিতে হইলো।
তবুও আমি রাগ করি নাই।
আমি তো জানিনা আমার শ্বশুরমশাই এত কঠিন লোক। কিন্তু তাঁহার মেয়ে কালো হলে কী হলো আমার মনের মত এক মানুষ পেয়েছি। তাই আমি আজ ধন্য তাহাকে নিয়া।
কোন এক বর্ষার ঘনঘটায় আমার শ্বশুরমশাইকে বঙ্কিমচন্দ্র আসিয়াও বুঝাইতে পারিলেন না।
আজও আমি তাঁহার কাছে বাংলায় ভাষায় হ য র ল ব রইয়া গেলাম। কিন্তু আমার শ্বশুর যে বাংলাভাষার প্রাচীনপন্থি লোক। তাই আর তিনি আমায় জামাই আদর করিতে চান না।
অবেশেষে আমিও একদিন বঙ্কিমচন্দ্রের অনুসারী হইয়া তাঁকে আমার শ্বশুরমশাইয়ের কথা বলিলাম।
বঙ্কিমবাবু আমায় বলিলেন দেখো প্রদীপ,তুমি তোমার শ্বশুরকে বরং ত্যাগ করিতে পারো!
তবে বাপের বাড়ি থেকে নিমন্ত্রণ আসিলে তাঁহার মেয়ে কৃষ্ণাকে পাঠাইয়ো।
আমি সানন্দে বঙ্কিমবাবুর কথা গ্রহণ করিলাম।
আজও কৃষ্ণার পিতা নিমন্ত্রণ পাঠাননি। এমনকি কৃষ্ণাও যাইতে চায় না তার বাপের বাড়ি।
আমি যে শ্বশুরবাড়ির নিমন্ত্রণ পাওয়ার আশায় আজও অপেক্ষায় থাকি। শুনেছি জামাই বৃদ্ধ হলে নাকি জামাই আদর ভাটা পড়ে যায়। তবে যাই হোক আমার শ্বশুরমশাই আজও বেঁচে আছেন।
.
অতঃপর আজ আমার গুরুদেব বঙ্কিমচন্দ্রের জন্মদিন।
তাই জন্মদিনে জানাই অগাধ শ্রদ্ধাঞ্জলি।

0 Shares

৩১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ