শেষ বিকেলের রোদ্দুর_৪

সুরাইয়া পারভীন ৫ নভেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ০৭:২৭:১১অপরাহ্ন গল্প ২৪ মন্তব্য

প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। ওকে একবার দেখতে ইচ্ছে করছে, কথা বলতে ইচ্ছে করছে।মনে হচ্ছে সব বাঁধন ভেঙে চুরে এক দৌঁড়ে ছুটে গিয়ে আঁছড়ে পড়ি তার বুকের। জাপটে ধরে জিজ্ঞেস করি, কি করে রয়েছো দূরে? কি করে পারছো কথা না বলে থাকতে? এতো নিষ্ঠুর হলে কি করে? একবারও মনে পড়ে না আমাকে! এই কি সেই যে আমায় পাগলের মতো ভালোবাসতো। এক মুহূর্ত চোখের আড়াল করতো না।

নাহ্ , আর সহ্য করতে পারছে না মোহনা।সহ্য করাও যায় না। ভালোবাসার মানুষ থেকে দূরে থাকা, কথা না বলে থাকা যে কতোটা যন্ত্রণার তা কেবল তারাই জানে যারা হারিয়ে ফেলছে প্রেম, প্রিয়জনকে।

মোহনা সেল ফোন হাতে নিলো।  নম্বর ডায়াল করে আবার কেটে দিলো। মরে যাবে সেও ভালো তবু কল দেবে না। বড্ড অহংকারী জেদি মোহনা কখনো মাথা নোয়াবে না। বলবে না কথা কিছুতেই, কষ্টে কষ্টে নিঃশেষ হবে কিন্তু আত্মসম্মান খোয়াবে না। মোহনার বিরহের কান্না এবার ক্ষোভে বদলে গেলো। নেট ওপেন করে ফেইসবুকে লিখতে বসলো।

প্রিয় অনিন্দ্য,

আবুল হোসেন খোকনের সৃষ্টি মিথিলা বইয়ের নায়িকা মিথিলা নই আমি। তাই আমি কখনোই আমার একরোখা জেদ, আত্মাহংকার, আত্মসম্মান, তুমিহীন সুখী হবার অলীক স্বপ্ন, সব সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে তোমার সামনে নতজানু হবো না। কেউ না জানুক তুমি তো জানো জ্বলে পুড়ে একটু একটু করে শেষ করবো নিজেকে তবুও কারো কাছে  করবো না আত্মসমর্পণ।

ইতি, কেউ নই আমি

ল্যাপটপে ফেইসবুক ওপেন করে ইনবক্সে যেতেই দেখলো অর্ণবের ম্যাসেজ ।

শেষ কথপোকথনের কিছু অংশ আনসিন রয়েছে।

অর্ণবঃ হা হা হা,,,
ফোনে চার্জ নেই। ১৫% যেকোনো সময় বন্ধ হবে।

মোহনা রিপ্লাই দিলো,,,,

মোহনাঃ ফোনের আর দোষ কী? সারাদিন টিপাটিপি করলে চার্জ থাকবে?

সাথে সাথে রি-রিপ্লাই এলো

অর্ণবঃ কি করেন? মিটিং এ যান নি

মোহনাঃ মাত্র এলাম

অর্ণবঃ মিটিং এ কি হলো?

মোহনাঃ কি জানি? কি যেনো একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা হলো?

অর্ণবঃ মানে কি? আপনি ছিলেন না!

মোহনাঃ ছিলাম তো,,, কিন্তু অন্যমনস্ক

অর্ণবঃ ভালো,,, অন্যমনস্কে  কি ভাবছিলেন?

মোহনাঃ কতো কি এলোমেলো ভাবনা ,,, সেগুলো কি আর এখন মনে আছে?

অর্ণবঃ আপনার কি খুব মন খারাপ?

মোহনাঃ না। কেনো বলুন তো?

অর্ণবঃ আপনার পোস্ট করা চিঠিটি দেখলাম। কি হয়েছে বলুন তো? কে এই অনিন্দ্য?

মোহনাঃ অনিন্দ্য একটি কাল্পনিক নাম মাত্র, আর এ লেখারও কোনো মানে নেই। জাস্ট লেখার জন্যই লেখা।

অর্ণবঃ আমাকে আপনার শিশু মনে হয়?

মোহনাঃ কেনো বলুন তো?

অর্ণবঃ এই যে কি সুন্দর হাতে মোওয়া ধরিয়ে দিচ্ছেন।

মোহনাঃ ওহ আচ্ছা!,,,,হা হা হা

অর্ণবঃ বলতে না চাইলে ঠিক আছে, কিন্তু তা বলে,,,

মোহনাঃ আহা! বাদ দিন না

অর্ণবঃ আচ্ছা এই মুহূর্তে বাদ দিলাম,,, পরে শুনবো।

মোহনা অর্ণবের টাইমলাইনে চার সংখ্যার একটা কোড দেখে জানতে চাইলো কি এটা

অর্ণবঃ ওটা একটা সিক্রেট কোড।কেউ জানে না , আমি জানি। হা হা হা

মোহনাঃ হুম,,,, বলা যাবে কি?

অর্ণবঃ ওটা একজনার গোপন কার্ডের নম্বর। অনেকেই ধারণা করেছে ফেইসবুক বন্ধু সংখ্যা। হা হা হা

মোহনাঃ অন্যের নম্বর আপনার টাইমলাইনে কি করে?

অর্ণবঃ কাউকে বলেন না প্লীজ।

মোহনাঃ আপনার কি মনে হয় আমাকে বলুন তো?
সারা দুনিয়া ঢোল পিটিয়ে বেড়াবো?

অর্ণবঃ জানি বলবেন না।  তবে ঐ যে আশেপাশে হারামী গুলারে সর্তক করে অভ্যস্ত তাই বলা আর কি

মোহনাঃ হা হা হা,,, বলতে না করেছেন তাই না!
এখন ঠিকই বলে বেড়াবো। পাগলকে নৌকা দোলাতে বারণ করার কী দরকার ছিলো?

অর্ণবঃ মাইর কি খাইছেন কভু!

মোহনাঃ মোহনাকে মারবে এমন মানুষ নেই জীবনে। সবাই আমাকে ভয় পায়।

অর্ণবঃ আমিও ভয় পাইছি,,,আসতে কতোক্ষণ?

মোহনাঃ আসবে না।

অর্ণবঃ আইসা পড়ছে অলরেডি। চোখ খুললেই দেখতে পাবেন।

মোহনাঃ তাই নাকি? যদি কেউ আসেও মারতে পারবে না। এতো মায়াবতী মানুষকে কেউ মারতে পারে!

অর্ণবঃ আরে না পাগলী।
এই মার কি সেই মার?
এ তো আদরের মার, সোহাগের মার।
এটাও বোঝে না।

মোহনাঃ হুম ভালো থাকুন। আল্লাহ হাফেজ

অর্ণবঃ আপনিও ভালো থাকুন। আল্লাহ হাফেজ

পরেরদিন সকালে,,,,

অর্ণবঃ Good Morning 💓

মোহনাঃ শুভ সকাল। কেমন আছেন?
ম্যাসেঞ্জার এ্যাড করলাম। দেখি কতোটা অত্যাচারিত হতে হয়? পরে না হয় আবার,,,

অর্ণবঃ আছি আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনি কেমন আছেন? আশা করছি অত্যাচারিত হবেন না।

মোহনাঃ কি করে বুঝলেন?

অর্ণবঃ Idea, But not sure.

মোহনাঃ আচ্ছা দেখুন তো আমাকে এক্টিভ দেখাচ্ছে কি না? সবুজ আলোটা জ্বলছে কি না?

অর্ণবঃ হ্যাঁ এক্টিভ দেখাচ্ছে।

মোহনাঃ সে তো আমি আপনাকে লিখছি তাই সবুজ বাতি জ্বলছে কি?

অর্ণবঃ না
মোহনাঃ তবে ঠিক আছে।

অর্ণবঃ আমাকে কি এক্টিভ দেখায়।?

মোহনাঃ না তো, আপনিও অফ করে রেখেছে?

অর্ণবঃ হুম,, হা হা হা

মোহনাঃ কিন্তু কেনো? কি দরকার আপনার অফ করে রাখা?

অর্ণবঃ একটা মজার ব্যাপার আছে। কিছু মহিলা খুব জ্বালায়। কারণে অকারণে কল দেয় ভালো লাগে বলুন?

মোহনাঃ হা হা হা,, মহিলারাও জ্বালায়।আজিব তো।

অর্ণবঃ কি বিশ্বাস হয় না? কেউকে যদি  শুভ সকাল বলি তবে তো আর কথাই নেই

মোহনঃ হা হা হা হা,,,এই রে আমিও তো লিখছি। আমাকেও  তাদের দলে ভাবছেন না তো।

অর্ণবঃ আরে না গুড্ডি

মোহনাঃ গুড্ডি কি গো?

অর্ণবঃ গুড্ডি বলতাম আমাদের ছোট বেলার বন্ধুদের।
এই আপনি আপনি করতে ভালো লাগে?

মোহনাঃ আমার তো ভালোই লাগে। আপনি বলতে ও শুনতে খুব ভালো লাগে।

অর্ণবঃ আপনি কথার মাঝে কেমন পর পর লাগে।

মোহনাঃ পরই তো। আমরা সবাই পর,কেউ কারো নয় আপন।

অর্ণবঃ তুমিও চলে না।  তুমি কেবল পার্টনারের বেলায় মানায়।

মোহনাঃ হুম , বুঝলাম। তুই বেস্ট,,,তাই তো

অর্ণবঃ Yes,,, You are absolutely right dear

শেষ বিকেলের রোদ্দুর_১
শেষ বিকেলের রোদ্দুর_২ 
শেষ বিকেলের রোদ্দুর_৩

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ