
মোহনাঃ আবার কবে কথা হবে,কে জানে?
অর্ণবঃ কেন কোথাও চলে যাবেন নাকি ?
মোহনাঃ না
অর্ণবঃ তাহলে? বললেন যে কবে কথা হবে কে জানে?
মোহনাঃ ফোনে ম্যাসেঞ্জার নেই
অর্ণবঃ ওহ তাই? মেসেঞ্জার ইনস্টল করে নিন।
মোহনাঃ না বাবা।
অর্ণবঃ আপনি সেটিংস থেকে অফ করে রাখবেন। দ্যান চাইলে ব্লক ও করে রাখতে পারেন। এই রে আপনি না বললেন উঠবেন।
মোহনাঃ কতজনকে ব্লক করবো? রাতদিন সমান করে ফোন দেয়। রাতে দেরী করে ঘুমাতে যাই। কল এলে জাস্ট অসহ্য লাগে।
অর্ণবঃ Very sad dear! এটাই আমাদের চরিত্র হয়ে গেছে। সরি লেট করিয়ে দিচ্ছি।
মোহনাঃ আচ্ছা ভালো থাকুন। এখন রেডি হবো।
অর্ণবঃ আপনার গল্প শোনার অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থাকুন।আল্লাহ হাফেজ।
মোহনাঃ আমার কোনো গল্প নেই। আপনার আছে? আপনি বলেন আমি শুনবো।
অর্ণবঃ এটা বললে হবে বন্ধু!
মোহনাঃ আসছি! আল্লাহ হাফেজ
অর্ণবঃ ওকে, টেক কেয়ার। বাই
মোহনাঃ I don’t like that word ‘bye’
অর্ণবঃ সেটা কেনো?
মোহনাঃ বাই মানে চলে যাওয়া, হারিয়ে যাওয়া, না ফিরা, হতে পারে চিরো বিদায়।আসছি, ছাড়ছি, রাখছি এগুলো বলেন।
অর্ণবঃ ওকে মাই হার্ট সরি 😭😭এই কানে ধরলাম।আর বলবো না।হলো তো
মোহনাঃ মাই হার্ট 😱😱
অর্ণবঃ See you, Akhon jao meeting will start soon. Allah hafez
মোহনাঃ যাও কী! যান,,,হা হা হা
মোহনা বেড়িয়ে পড়লো মিটিং এর উদ্দেশ্যে। রিক্সায় বসে বিষণ্ণ উদাসীন মোহনা মিনিট দশেক আগের স্মৃতিতে ফিরে গেলো। কিছুক্ষণ আগে অর্ণবের সাথে হওয়া কথোপকথন নিয়ে ভাবছে। মানুষটা তিন বছর ধরে লিখছে কিন্তু সে দেখেইনি। আজই প্রথম এতো কথা হলো। বেশ সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে কথা বলতে পারে। এই মুহূর্তে মোহনার ভাবনার পুরো আকাশ জুড়ে যেনো অর্ণবেরই বিচরণ। গন্তব্যে পৌঁছে রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া মিটিয়ে দিলো। তারপর বৈঠকের জন্য নির্ধারিত কক্ষে গিয়ে বসে পড়লো।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। মোহনা সেই আলোচনায় স্বশরীরে উপস্থিত থাকলেও তার মস্তিষ্ক জুড়ে অন্য কিছু চলছে। বৈঠকে যদি কেউ মোহনাকে জিজ্ঞেস করতো কি নিয়ে কথা হচ্ছে? বিশ্বাস করুন কিছুই বলতে পারতো না সে। লজ্জাকর অবস্থায় পড়তে হতো। কপাল ভালো যে এমন কিছু ঘটলো না।
আলোচনার কক্ষে বসে থাকতে যেনো বেশ বিরক্ত লাগছে, ছটফট লাগছে। মোহনা যেনো নিজেকে আবিষ্কার করলো উড়নচণ্ডী বারমুখী মানুষটা ঘরে ফেরার জন্য অস্থির।এমন তো হবার কথা নয়। এই মুহূর্তে তার মন চাইছে ঘরে ফিরতে আর ফেবু খুলে বসতে।কি অদ্ভুত ব্যাপার না!
হঠাৎই মোহনার ভাবনার আকাশ থেকে সকালে যোগ হওয়া অর্ণব নামক ভাবনাটি সরে গিয়ে, কালো মেঘের আস্তরনে ঢেকে গেলো মস্তিষ্ক নামক বস্তুটি। নিজের অজান্তেই বেড়িয়ে গেলো একটা দীর্ঘশ্বাস। প্রচণ্ড মন খারাপ ( মন খারাপ কারণ বলবো কোনো এক পর্বে)
মিটিং থেকে বেড়িয়ে হাঁটতে শুরু করলো মোহনা। শেষ বিকেলের ছায়ায় মেইন রোডের ধার ঘেঁষে একা একা হাঁটতে ভালোই লাগছে মোহনার। হঠাৎ ভালোলাগারা মিলিয়ে গিলে বিষাদে আচ্ছাদিত হলো মন।
হঠাৎ হঠাৎ ভালোলাগারা কি জানি কোথায় মিলিয়ে যায়? খারাপলাগারা এসে ভীড় করে উঠানে, অদ্ভুত এক চাপ সৃষ্টি করে মনের কোণে। আর তখন অঝর ধারায় অশ্রু ঝরে কপোল বেয়ে। হবারই কথা। যে পথে দু’জনার পদচিহ্ন আঁকা সে পথে আজ মোহনা একা
এই সেই পথ, যে পথের প্রতিটি ধাপে ধাপে রয়েছে সুখের স্মৃতি। একসময় সুখের হলেও আজ তা বিরহের স্মৃতি। মোহনা আপন মনে বলে চলে কথা গুলি,,,
এই শহরে কোথাও একা নই আমি
এই শহরে ছায়ার মতো পায়ে পায়ে-
ঘোরে ফিরে তোমার স্মৃতি
আবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে মোহনা। সেদিনের সেই সুখের স্মৃতি এখন বিষাক্ত সাপ হয়ে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ওঁত পেতে থাকে।মোহনাকে দেখলেই যেনো ফণা তুলে ছুটে আসে। বুকে জলোচ্ছ্বাসের ঢেউ তোলে, হৃদয় নদীর পাড় ভাঙ্গে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে মোহনার।
বড্ড জ্বালায় এ শহর আমায়
কখনো হাসায় কখনো কাঁদায়
কখনো সুখের সাগরে ভাসায়
কখনো দুঃখের সমুদ্রে ডোবায়
কখনো হতাশার চাদোরে মুড়ায়
কখনো ঘৃণার আবরণে জড়ায়
কষ্টের দোলাচলে দুলতে দুলতে কোনো ক্রমে ঘরে ফিরে মোহনা। ক্লান্ত শ্রান্ত মোহনা আরাম কেদারায় শরীর এলিয়ে দেয়। এতোক্ষণ ধরে আটকে রাখা অশ্রুরা যেনো বাঁধভাঙ্গা উত্তাল স্রোতের মতো ধেয়ে এসে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সবকিছু। এবার আর নিজেকে সামলাতে পারে না মোহনা। রীতিমত চিৎকার করে কেঁদে ওঠে।
১৩টি মন্তব্য
অনন্য অর্ণব
বাহ্ চমৎকার সব কথোপকথন। চলতে থাকুক, দেখা যাক কোথাকার জল কোন মোহনায় গিয়ে আঁচড়ে পড়ে😄
সুরাইয়া পারভিন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন❤
তৌহিদ
অর্ণব মোহনার মনে ভালোভাবেই গেঁথে গিয়েছে দেখা যাচ্ছে। মোহনাও আর নিজের কাজে মন বসাতে পারছেনা। অনলাইনে ক্ষনিকের কথোপকথন ভালো লাগলেও এর সুদুরপ্রসারী ক্ষতিকর দিকও কিন্তু বিদ্যমান। হয়তো বাস্তবতা চিন্তা করেই মোহনার মন খারাপ।
ভালো লিখেছেন আপু।
সুরাইয়া পারভিন
মোহনার মন কেনো খারাপ তা ক্রমশ প্রকাশ্য ভাইয়া।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
সঞ্জয় মালাকার
অর্ণব মোহনার মনে ভালোভাবেই গেঁথে গিয়েছে দেখা যাচ্ছে। মোহনাও আর নিজের কাজে মন বসাতে পারছেনা। গল্প পড়ে খুব ভালো লাগলো দিদি, চলুক, আমি পাঠক হয়ে থাকলাম।
সুরাইয়া পারভিন
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন দাদা।
মোহনার মনে কি চলছে দেখা যাক।
সঞ্জয় মালাকার
ধন্যবাদ দিদি, চলুক
এস.জেড বাবু
মেসেঞ্জার বন্ধ না হউক,
দেখতে চাই মোহনা আসলে কি ফিল করছে “ অর্ণবের লিখা” না অর্ণবের সংস্পর্শ
মনে হলো মোহনার অতিতের একটা জলছবি দেখতে পেলাম-
এগিয়ে যাক দেখি কি হয় …..
সুরাইয়া পারভিন
হুম ,,,,
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
জিসান শা ইকরাম
আমার একজন বন্ধু আছেন যাকে বাই বলা যায় না,
বাই বলাকে আপনার মতই ব্যাখ্যা করে সে,
বাই নাকি চির বিদায় 🙂
কথোপকথন দিয়েই একজন অন্য জনকে বুঝতে পারে,
মোহনার মনে অর্নব সুন্দর ভাবে আসুক, এই কামনা করি।
ভালো লাগছে পর্বগুলো,
শুভ কামনা।
প্রফাইল পিকচারটা এবার লেখকের মতই মানিয়েছে 🙂
সুরাইয়া পারভিন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
কৃতজ্ঞতা অশেষ
হালিম নজরুল
অর্ণব-মোহনার “শেষ বিকেলের রোদ্দুর” আমাকে মুগ্ধ করেছে।লেখায় অনেক বাস্তবতার চিত্র ফুটে উঠেছে।
সুরাইয়া পারভিন
কৃতজ্ঞতা অশেষ ভাইয়া