– প্রিয় তুমি,
পত্রটা হাতে পাবে আশাকরি। সেই আশাতেই লিখছি। যার জন্য আমার সকাল হতো গোলাপের পাপড়ির উপর পড়া শিশিরের মতো শুভ্রতায় চকচক করা রঙিন তার জন্য কিছু লেখা আমার উচিৎ। মানবিকবোধ কাজ করছে না। তাও তোমাকে নিয়ে লিখছি। আসলে তোমাকে নিয়ে না এই যে লিখছি তা সম্পূর্ণ আমাকে নিয়ে। না না কেমন দ্বিধায় ভুগছি। কাকে নিয়ে লিখছি আমি….!!
একটা ঘুমের ঔষধ খেলাম মাত্র। ফার্মেসি থেকে দিতে চায় নি। কড়া ঘুমের ঔষধ কি আছে বলতেই চিকনা করে যে ছেলেটা ছিলো আমার দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে বললো প্রেসক্রিপশন আছে? আমি অবাক হয়ে দেখলাম একটা অচেনা মানুষও আমাকে নিয়ে কতটা শঙ্কায় ভোগে! আমার চোখের নিচে কালি পড়েছে। ছেলেটা সেটা লক্ষ্য করেছে। আমাকে ঔষধ দিলো না। আর তুমি বলো আমি দুর্বোধ্য! আমাকে বুঝা যায় না। অথচো কখনো কথা না বলা একটা ছেলে আমাকে দেখে বুঝে ফেললো আমি কি করতে যাচ্ছি! কি করে পারলো? জানতে চাও? বলবো না। তোমাকে বলেই বা কি!!
হালকা ঘুম পাচ্ছে। নীল রংয়ের হাই সিডেটিভ কিনেছি। দ্বিতীয়টা খেলাম মাত্র। কি যেন বলছিলাম আমি! ফার্মেসির ছেলেটাকে একটা চড় দিয়েছিলাম, এত উদারিপনা দেখানোর জন্য। যার দেখানো উচিৎ সে আমার দিকে ফিরেও তাকায় না। সে কোন সাহসে দেখাবে!! কি অদ্ভুত না! এতকিছুর পরও আমি শুধু তোমারই কথা ভাবছি! তোমার কাছ থেকেই কেয়ার আশাকরি। যা আজ ছয়মাস ধরে চেষ্টা করেও আমি পাই নি।
পত্র পড়ে কি তোমার ভয় লাগছে? আমি কি তোমাকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছি ভাবছো? এইযে আমি তোমার পাশে পড়ে আছি। মরে গেছি ভাবছো? কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে? হাত পা অবশ হয়ে আসছে? হাহাহাহা। আসলে তোমার কোন দোষ নেই। আবার সব দোষই তোমার।
সামান্য একটা বিষয় নিয়ে তুমি ঝগড়া করো। আমি যে তোমার বউ। কতটা ভালোবাসা নিয়ে বাবা মায়ের অমতের বিরুদ্ধে তোমাকে বিয়ে করে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি তা কি তুমি বুঝো না? অবশ্য তুমিও আলাদা।
তবুও তুমি ব্যস্ত থাকো অফিসে। আমি একা থাকি বাসায়। দিন জুড়ে একাকিত্ব আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়। কোথায় যেন একটা ভুল করেছি। সব থেকেও আজ কিছু নেই। তোমার ইগো সমস্যা। বাবা না হয় একটা চড় বসিয়ে দিয়েছে রাগের মাথায়। তারপর তো তিনি এসে ক্ষমাও চেয়ে গেছেন। তাও তুমি ক্ষমা করলে না। আমি বাবার পক্ষে বলায় তুমি আমাকে চড় দিলে। তোমার হাতের চারটা আঙ্গুলের দাগ স্পষ্ট হয়ে রইলো পাঁচদিন। তুমি ফিরেও তাকালে না। এতটা পাষণ্ডতো ছিলে না তুমি! এতটা একগুঁয়ে তো তুমি ছিলে না। আমার হাতের খাবার পর্যন্ত খেলে না। কিসের এত অভিমান তোমার? যখন জানোই তুমি ছাড়া আমার চারপাশ শূণ্য।
বলেছিলাম একটা বাচ্চা নেই। তুমি নিতে দিলে না। সাতাশটা ঘুমের ঔষধ। এবারে দুইটা খেলাম। পত্রের শেষ ঘনিয়ে এসেছে। একদম ভয় পেও না। আমার কেন জানি মনে হয় তুমি আমাকে আগের মতো ভালোবাসো না। তোমার মোবাইলে গতকাল একটা মেসেজ এসেছিলো “খুব মজা পেয়েছি। লাভ ইউ।” আমি ছোট্ট মেসেজের অর্থ বুঝি নি প্রথমে। কিছুক্ষণ ভাবলাম। তারপর সব ক্লিয়ার হয়ে গেছে। কি করলে কেউ মজা পায়। ‘লাভ ইউ’ বলে সব আমি বুঝে গেছি।
আর কিছু লিখতে পারছি না। আমার চারপাশ কেমন ঝাপসা হয়ে আসছে! বিদায় বেলায় তোমায় কি বলবো বুঝতে পারছি না। এই সুইসাইড নোট পড়ে তোমার রক্ত শীতল হয়ে যাচ্ছে হয়তো। কিন্তু সেটা আমাকে ভালোবাসো বলে নয়, তোমার শাস্তি হবে, ফাঁসি হবে এইভেবে। তোমার মাথা এখন কাজ করবে না। আতঙ্কিত হয়ে আমাকে রাতের আঁধারে কোথাও নিয়ে ফেলে আসতে পারো। এই চিঠিটা আগুনে পুড়িয়ে ফেলতো পারো। তবে তুমি মুক্তি পাবে দুনিয়ার ঝুটঝামেলা থেকে। কিন্তু আমি জানি তোমার বিবেক বলে একটা কিছু আছে। আর সেই কাঠগড়ায় তুমি রোজ হাজিরা দিবে। তোমার রোজ সাজা হবে। হয়তো নাও হতে পারে।
হুট করেই এখন বাঁচতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু বাঁচার ইচ্ছার থেকেও মরার ইচ্ছাটা প্রবল। তাই, শুধু তাই আর ঘুমের ঔষধ খেলাম না। মাত্র চারটা খেয়েছি। আমার চারপাশে ঘোরলেগে গেছে। যদি তুমি সেই আগের তুমি হতে পারো তাহলে আমাকে বাঁচিও। নাহলে তোমার জন্য আমি এক সিরিঞ্জ বিষ রেখেছি। তা আমার শরীরের ভিতরে থাকা রক্ত কণায় মিশিয়ে দাও। আমাকে চিরনিদ্রায় যেতে দিও। তুমি চাইলেই বাঁচতে পারো আমায় ছাড়া কিংবা পারো সেই জোৎস্না রাতে যে শপথ করেছিলে -জনম জনম পাশে রবে আমার তা পূর্ণ করতে।
ইতি
তোমার, তুমি থেকে তুই!
১৬টি মন্তব্য
ইকরাম মাহমুদ
তারপর কি হয়েছিল?
আগ্রহটা রয়েই গেলো।
শেষ চিঠি কিন্তু সুইসাইড নোটই হয়ে রইল।
মুহাম্মদ আরিফ হোসাইন
হয়তো প্রাণ ভরে শ্বাস নিয়েছিলো মেয়েটা!
সেই আগের মতো সুখে দিন কাটাতে লাগলো!!
কিংবা তার আর ঘুম ভাঙ্গে নি!!
নীলাঞ্জনা নীলা
সুইসাইড নোট। আত্মহত্যা করার কথা যারা ভাবে তাদের আমি মোটেও পছন্দ করিনা। যে অন্যায় করেনি সে নিজেকে খুণ করছে। যে নিজেকে ভালোবাসেনা সে আর কাউকেই ভালোবাসতে পারেনা।
তবে আপনার কৃতিত্ত্ব এখানে যে ছেলে হয়েও মেয়ের বয়ানে চিঠিটি লিখেছেন। (y)
মুহাম্মদ আরিফ হোসাইন
আত্মহত্যাকে আমরা কেউই পছন্দ করি না।
এমনকি যে আত্মহত্যা করে সেও একটা সময় আত্মহত্যাকে ঘৃণা করতো। কেন হাতে ধরে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে!!
আসলে যার সিচুয়েশন দাঁড়িয়ে যায় আত্মহত্যা করার, তারজন্য এসব পছন্দ, পরকাল কোন মানে রাখে না। দুনিয়ায় বেঁচে থাকার শেষ খুঁটি টা যে হারায় সে আর বাঁচতে পারে না।
ধন্যবাদ।
মৌনতা রিতু
যার কারণে আত্নহত্যা তাকে সুখি করে দিয়ে আত্নহত্যা করা বোকামী। একাকিত্ব ভাবনা একটা রোগ।
এসব আত্নহত্যা ইদানিং দেখি বেড়েই যাচ্ছে।
ভালো উপস্থাপন হয়েছে।
মুহাম্মদ আরিফ হোসাইন
ঠিকই বলেছেন।
কাউকে সুখী করে দিয়ে আত্মহত্যা করা বোকামি!
কিন্তু সবাই তো প্রতিশোধ নিতে পারে না, কিংবা নতুন করে স্বপ্ন সাজাতে পারে না।
তাই অকালে ঝরে যায়! বড্ড বেশি অভিমান নিয়ে।
ধন্যবাদ আপু।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
শেষ চিঠি হিসাবে চিঠি লেখার গতি ঠিক আছে।দেখা যাক শুভ কামনা -{@
মুহাম্মদ আরিফ হোসাইন
ধন্যবাদ।
শুন্য শুন্যালয়
যেখানে কিছুটা বাঁকি থাকে সেখানে শেষ চিঠি লেখা কী যায়? হতে পারে আরো কোন নতুন শুরু।
আত্মহত্যা পছন্দ না করলেও একটা মেয়ের অভিমান আবেগ কে আমি শ্রদ্ধা করে। কতোটা অবহেলা হলে কেউ চলে যেতে চায় সে যেন আমাদের বোঝার দরকার নেই।
খুব সুন্দর করেই লিখেছেন। হ্যাঁ চিঠি সে লুকিয়েই ফেলবে, এসব চিঠি রাখতে নেই। আমার মৃত্যুর জন্য কেনে দায়ী নয় এমন চিঠি রাখে সবাই। কত্তো স্বার্থপর মানুষ!!
মুহাম্মদ আরিফ হোসাইন
সব বাকী কি আর শোধ হয়? সেই থেকে লেখা।
অভিমান, রাগ যে কত খারাপ তা আজকাল বাংলাদেশের দিকে তাকালেই বুঝা যায়। প্রতিমাসেই তিন চারজন সুইসাইড করছে!!
কিভাব রুখে দেয়া অসম্ভব এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু!! কিভাবে!!
চাটিগাঁ থেকে বাহার
যারা রাগে, অভিমানে, আবেগে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খায় তাদের সাথে আড়ি। := :=
মুহাম্মদ আরিফ হোসাইন
আপনি আর কি আড়ি করবেন!!
তারাইতো জন্মের তরে আড়ি করে চলে যায় দূর অজানায়!
প্রহেলিকা
সুইসাইড নোট খুব বেশি একটা কমন শব্দ হয়ে গেছে। শুনলেই শিরশির কাঁপন ধরে। যাইহোক নীলাঞ্জনা আপার সাথে একমত। ছেলে হয়েও মেয়ের বয়ানে চিঠিটি বেশ সুন্দর লিখেছেন।
মুহাম্মদ আরিফ হোসাইন
হুমমম!!
শুধু নোটই না।
আজকাল সুইসাইড শব্দটা বেশ কমন হয়ে গেছে। প্রতি মাসেই দুই তিনবার শুনি। কেউ না কেউ অভিমান করে চলে গেছে না ফেরার রাজ্যে!
ধন্যবাদ।
জিসান শা ইকরাম
শেষ চিঠি ভাবলেই কেমন বুকটা হুহু করে ওঠে। বেঁচে থাকার ইচ্ছে সম্পুর্ন নিশ্বেষ কিভাবে হয়? এটিও আসলে ভাবতে পারিনা।
শেষ চিঠি ভাল হয়েছে।
মেহেরী তাজ
আত্মহত্যাই সব সমস্যার সমাধান?
আমার তা মনে হয় না।
নতুন করে শুরু করায় যায় অনেক কিছুই।
তবে বেশ ভালো লিখেছেন ভাইয়া……।