
অনেক সাধারণ কয়েকটি ঘটনার বর্ননা করছি। নিজের কোন মেধা নেই, যা ঘটেছে তাই লিখছি।
১. চার বছরের মেয়েকে নিয়ে কিছু একটা উপহার পেয়েছি সেটা আনতে গেলাম। কিছু একটা মানে কি পেয়েছি সেটা জানতাম না, সারপ্রাইজ গিফট ছিল। কন্যাকে আদর করে হোস্ট জিজ্ঞাসা করলেন কিছু…
– আম্মু কি নাম তোমার?
-যেবান, ও নাহ যেবান সারওয়ার।
-কিসে পরো?
– স্কুলে পরি।
-কোন ক্লাসে?
-আমার ক্লাশে।
-কোন ক্লাশ? বুঝিনি (হেসে)
– আমার ফ্রেন্ডদের ক্লাশে।
– ফ্রেন্ডদের ক্লাশ কোনটা?
– আমার ক্লাশই ফ্রেন্ডদের ক্লাশ।
-তোমার ক্লাশ কোনটা?
– যেখানে সবাই খেলা করি, ছোট চেয়ারে বসে সেখানে।
– আচ্ছা, তোমার স্কুল কোথায়?
– আমার আম্মু নিয়ে যায় সেখানে, ব্লু একটি বিগ গেঈটের ভিতরে ।
বুঝলাম শেষ হবে না। মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে বললাম, থাক মা আর বলতে হবে না।
২.
রাস্তায় বের হলে আমি কারো দিকে তাকাই না। কেন, সেটাও জানি না। সংগী যে বা যারা থাকেন তারা অনেক সময়ই বলেন ওই যে একজন তোমাকে ডেকেছি। কিন্তু তাতেও কিছু যায় আসে না। আমার মতে যার দরকার সে সামনে এসে কথা বলবে। যাই হোক, ভাগ্নীকে নিয়ে মেয়ের মেডিসিন কিনতে গিয়েছিলাম। পেছন থেকে হাপাতে হাপাতে একজন ভদ্রলোক ডাকলেন। তাকিয়ে দেখি পুরনো সহকর্মী। কুশলাদি বিনিময়ের পরে জানালেন তার ভাই এর জন্য মেয়ে খুজছে। সৌজন্য মুলক জিজ্ঞাসা করলাম আপনার ভাই কি করে? আরো বিস্তারিত। সে তার ভাই এর বর্ননার আগেই মেয়ের কি কি থাকতে হবে তা বলা শুরু করলো।
সবশেষে যার সারমর্ম এই দাড়ালো যে, আমার ভাই চায় সুন্দর, স্লীম, ধার্মিক, শিক্ষিত, সাংসারিক একটি মেয়ে।যে ওকে বুঝবে। ওর কাজে সাহায্য করতে পারবে। আমার ভাই বিদেশে থাকে তো মাশাল্লাহ টাকা পয়সার অভাব নেই। আমাদের বংশের পুরুষ মানুষের মাথার চুল একটু কম। তাই ও সেইভ করে রাখে মাথা। এই যা। আর এখন তো এগুলো স্টাইল। তার আরও কিছু এই ধরনের কথা শোনার পরে বললাম ভাই কেউই বলে না যে কালো মোটা মেয়ে বিয়ে করবে। সবাই সুন্দর পছন্দ করে। আর বিয়ের পরে তো সাংসারিক এমনই হয়ে যায়। তবে দোয়া আপনার ভাই যেন তার যোগ্য পাত্রী পায়। আমার কথা তার ভালো লাগেনি সেটা বোঝার মতো অল্প জ্ঞান আমার আছে। বুঝতে পেরে খারাপ লাগা সম্পূর্ণ রুপে প্রকাশ করতে পারিনি।
৩.
আমি বাসার ছোট সদস্য হওয়াতে আমার সন্তান মোটামুটি সবার ছোট। সবাই কন্যাকে অনেক আদর করতো। যারা কিনা নিজেই আদর পাওয়ার বয়স তারাও উজাড় করে ভালোবাসতো। তবুও হিংসুটে মায়ের মন যেনো ভরে না। চাকরি করার জন্য নিজেকে আরো বেশী দোষী মনে হতো। তখন ৫ বছরের ভাগ্নীকে ওর মায়ের কোল থেকে টেনে নামিয়ে আমার ২.৫ বছরের মেয়ে তাদের খালামনি ( বড়ো, মেঝো আম্মু) র কোলে বসে থাকতো। কতোবার হয়েছে সে ঘটনা সেটা বলা মুশকিল।
দিন দিন সময় গড়ালো। অন্য আত্বীয় স্বজনের ঘরে সন্তান আসলো। অবাক বিষয় যখন ওদের সন্তান আমার মেয়ের মতো করতে চাইলো সেটা আমি মানতে পারছিলাম না। মেয়ের বয়স ৬ হওয়ার পরেও মনে হয়েছে আহারে আমার ছোট মেয়েটা…….
তারও পেছনের ঘটনা, এখন থেকে ১২/১৩ বছর আগে। যারা চাকরি করেন তারা বুঝবেন সকালে অফিসে যাওয়ার সময় এর বাসের অবস্থা। আমি বরাবর ই আমার থেকে বড়োদের জন্য সীট ছেড়ে দিতাম। একদিন একজন বয়স্ক মহিলা বাসে উঠলেন সাথে আমার বয়সী একটি মেয়ে। আমি তাকে বসতে দিলা নিজে আসন ছেড়ে। বাসা থেকে গন্তব্য প্রায় ১.১৫ ঘন্টা, জ্যাম সহ। কিছু দূর এগিয়ে যাওয়ার পর সে মহিলার পাশের সীট খালি হলো। সে আমাকে বসতে না দিয়ে তার মেয়েকে ডেকে বসালো। পাশে বসা একটি লোক আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। কিযে রাগ হয়েছিলো বোঝানো যাবে না। মনে মনে ঠিকও করে ফেললাম যে জীবনে ও কারো জন্য সীট ছাড়বো না।
আজ বর্তমানে উপলব্ধি করি সে মহিলা মা হিসাবে ঠিকই করেছেন। সে সামাজিকতা রক্ষা করতে পারেননি, কারণ সে মা। মায়েরা সব সময় সবকিছু করতে পারে না। নিজেকে এখন সেই মায়ের জায়গায় নিয়ে যাই। আমি জানিনা সে মায়ের কখনো নিজের কাজের জন্য খারাপ লেগেছে কিনা, তবে আমি অনুতপ্ত। যারা আমার মেয়ের জন্য অনেক সময় দিয়েছেন, তাদের সন্তানের পাওয়া সময় আমার মেয়ের পেছনে দিয়েছে তাদের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা।
প্রথম অংশটা আমি অনেক উপভোগ করেছি। কারণ প্রশ্নকর্তা জ্ঞানী ছিলেন। সে বাচ্চাদের ধৈর্য দেখছিলেন। আর কন্যাটি না বুঝেও তার সাধ্যমতো জবাব দিতে পেরেছে। আর দ্বিতীয় পর্বে প্রশ্নকর্তা কিসের পরিচয় দিয়েছেন জানিনা তবে আমি উপলব্ধি করেছি মেয়ের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।বাচ্চাটি না বুঝেও চুপচাপ উত্তর দিয়েছে আর আমি সব বুঝেও পারিনি। আমি আমার ধৈর্য্যের প্রমাণ দিতে পারিনি। আর সবশেষের ঘটনা আমাকে শিখিয়েছে হুট করেই কোন সিন্ধান্তে পৌছানো ঠিক নয়। মাঝে মাঝে বহু কাল পার হয়েও সঠিক বিষয়টি জানা যায় না।অনেক ভাগ্যবান বলেই হয়তো পরিস্থিতিকে বোঝার সময় পেয়েছি, ভাগ্য এমন আমার প্রতি সব সময় সহায় হবে না হয়তো।
কোন আঘাতের বিনিময়ে নেয়া সিদ্ধান্তের চেয়ে একটু সময় নিয়ে, মন খুলে কিছুক্ষণ নিঃস্বাস নেয়ার পরের সিদ্ধান্ত আশাকরি ভালোই হয়।
২৩টি মন্তব্য
সুপায়ন বড়ুয়া
মেয়ের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।বাচ্চাটি না বুঝেও চুপচাপ উত্তর দিয়েছে আর আমি সব বুঝেও পারিনি। আমি আমার ধৈর্য্যের প্রমাণ দিতে পারিনি।
শাহরিন যে লিখে ভাল
তা তো ছিল না জানা !!’
চালিয়ে যাও !!!
শাহরিন
দাদা আপনাদের দেখে দেখে শেখার চেষ্টা করছি। অনেক ধন্যবাদ দাদা।
এস.জেড বাবু
সত্যিই শেখার বাকি থাকে/ থাকবে কবর পর্যন্ত।
প্রথম অংশটি জটিলতর সুন্দর ছিলো।
শুভকামনা
শাহরিন
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া, দোয়া করবেন কন্যাটির জন্য।
নুর হোসেন
অনেক ক্ষেত্রে ছোটরা বড়দের থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকে,
ছোটদের থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।
ভালো লিখেছেন।
শাহরিন
জ্বি ভাইয়া। স্বীকার করতে লজ্জা নেই। আমি সব সময়ই আমার ছোটদের কথা মূল্যায়ন করি। আর আড়াল থেকে শেখার চেষ্টা করি। এবং পরে ওদের অবগতও করি যে তোমার কাছ থেকে এটা শিখেছি। এতে ওরা অনেক অনুপ্রাণিত হয় ভালো কিছু করার । ধন্যবাদ।
ছাইরাছ হেলাল
প্রথম পার্ট ফাটাফাটি।
দ্বিতীয় পার্টে আপনি ???????
কত কিছুই-তো বলতে পারিনা/পারিনি। আর কত শিখতে হবে কে জানে!
ভাল কথা, আপনি কোন স্কুলে পড়ে এত ভাল লিখতে শুরু করলেন!!
শাহরিন
কন্যার সাথে বিজ্ঞ জনদের সম্পর্ক আছে। এর জন্য তার আত্মবিশ্বাস একটু বেশি। আর মা তো শুধু তার কার্যালাপ লিখে। ☺
মাহবুবুল আলম
হাহাহাহা!
মেয়ের উত্তরে আমিও থ বনে গেছি!!
শাহরিন
ভাইয়া সঠিক সময়ে না থামালে রাত অবদি চলতো এই প্রশ্ন উত্তর পর্ব। অনেক ধন্যবাদ।
সুরাইয়া পারভিন
হা হা হা হা হা চমৎকার
সত্যিই শেখার কোনো বয়স নেই
শাহরিন
অনেক ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়ার জন্য ও ইতিবাচক হিসেবে দেখার জন্য।
নিতাই বাবু
শেখার শেষ কোথায়, তা আমার জানা নেই! তবে এটা জানি যে, যখনতখন ধৈয্য হারা হতে নেই।
দারুণভাবে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বুঝিয়ে দিয়েছেন, শ্রদ্ধেয়। আপনার জন্য শুভকামনা
শাহরিন
দাদা শ্রদ্ধেয় শব্দটা শুনে খুবই কষ্ট পেলাম। আপনি আমার বড় ভাইয়ের মতো। অনেক কৃতজ্ঞতা সময় নিয়ে পড়ার জন্য।
রেহানা বীথি
শেখার যেমন কোনও বয়স নেই তেমনি কার কাছ থেকে শিখলাম সেটাও গুরুত্বপূর্ণ নয়। মূল কথা হচ্ছে শেখা। আর শিশুদের সরল কথোপকথনের মাঝে লুকিয়ে থাকে এমন কিছু শিক্ষার বিষয় যা সত্যিই চমৎকৃত হওয়ার মতো।
খুব ভালো লাগলো আপনার লেখাটি।
শাহরিন
একমত আপু। কার কাছ থেকে শিখলাম তার চাইতেও বড় বিষয় হলো কি শিক্ষা পেলাম। নেতিবাচক পরিবেশ থেকে ইতিবাচক কিছু শেখার চেষ্টা করছি। অনেক ধন্যবাদ আপু।
শারমিন আক্তার
অনেক সুন্দর লেখা। তবে যেবানের ধৈর্য্যের কোনো তুলনা নেই ♥😊
অনেক দোয়া করি, আল্লাহ পাক যেন ওকে ভালো রাখেন। 😊
শাহরিন
অনেক ধন্যবাদ। মায়ের কাছে মেয়েরা অতুলনীয়ই হয়। আপনিতো প্রসংশা করবেনই।
তৌহিদ
বাচ্চাদের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। তারা কত ধৈর্য্য ধরে কথার উত্তর দেয় তা আমরা বড়রা কিন্তু পারতামনা।
আর আমরা সবাই হরিণ বিয়ে করতে চাই, কারন চোখ টানা টানা, দেখতে সুন্দর, স্লিম আরো কত উপমা! হরিণ নয়তো কি?
শিক্ষামূলক লেখা আপু।
শাহরিন
সঠিক ভাইয়া, বাচ্চারা অনেক সহজেই সঠিক কথা বলে ফেলতে পারে। আমারও মন খারাপ লাগে যখন কেউ এসে বলে হরিণ, রাজকন্যাদের মতো মেয়ে খুজে দিতে বলে। কারন মুখের উপর অনেকেই সত্যি বলতে পারি না। অনেক ধন্যবাদ।
জিসান শা ইকরাম
যেবানকে থামিয়ে দেয়া ঠিক হয়নি।
খুবই উপভোগ করছিলাম ওর উত্তর। কত ধৈর্য নিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর দিয়ে যাচ্ছিল সে।
কেউই কালো মোটা মেয়েদের বিয়ে করতে চায় না। বলদ ধরনের ছেলেদেরও ফর্সা আর শ্লিম মেয়ে চাই।
লেখা চমৎকার হয়েছে।
শুভ কামনা।
উর্বশী
জানা ও শেখার তো শেষ নেই।জন্ম থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত শেখার সময় জ্ঞানীরা বলেন।প্রথম পর্ব দারুন,দ্বিতীয় পর্ব ও কিন্ত কম নয়।বাস্তবে কম বেশী এর সমুক্ষীন হয়েই থাকে। দারুন লিখেছেন। আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভ কামনা।
শাহরিন
অনেক ধন্যবাদ আর দুক্ষিত। অনেক সময় ধরে ব্লগে অনুপস্থিত ছিলাম। অনুপ্রেরণা দেয়ার কৃতজ্ঞ।