শুরু হলো কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ

ইঞ্জা ১৯ মার্চ ২০২১, শুক্রবার, ০২:৪৪:৫৩অপরাহ্ন সমসাময়িক ২৩ মন্তব্য

এলো এলো করে সত্যি চলে এলো করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, এ ঢেউ মহামারী আকারের ঢেউ হতে পারে বাংলাদেশের জন্য তা ভেবে দেখেছেন কি?
এখন সময় হয়েছে ভেবে দেখার। 

 এর আগে শীতের শুরুতেই প্রেডিকশন ছিলো দ্বিতীয় ঢেউ আসবে বলে এবং তা শীতেই কিন্তু সব প্রেডিকশনকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে শীত চলে গেলো কিন্তু গরম শুরু হতেই বাড়তে লাগলো আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা। 

আগের তুলনায় এখন নবীনরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, গতবার ৫০ উর্দ্ধ মানুষরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছিলো, এখন নতুন জিনোমের কারণে অল্প বয়সীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। 

মহামারি করোনা ভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ১৬ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮ হাজার ৬২৪ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ১৮৭ জনের শরীরে। যা গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ নিয়ে আজ পর্যন্ত দেশে মোট করোনা শনাক্ত দাঁড়াল ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩৯ জন।

আজ বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

কেন বাড়ছে এই করোনা তা কি জানেন? 

সত্যি কথা হলো এ দেশে করোনা বা কোভিড-১৯ এর দুটো ভিন্ন ধারার জিনোম পাওয়া গেছে যা অন্যান্য জিনোমের থেকে বহু গুণে ভিন্ন এবং আগ্রাসী। 

এছাড়া করোনা বাড়ার অন্যতম কারণ হলাম আমাদের নির্লিপ্ততা, করোনাকে ভয় না পাওয়া, যথাযথ সোস্যাল ডিস্টেন্স না মানা, করোনা আক্রান্ত না হওয়ার জন্য করণীয় কর্মকান্ড না করা, যেমন মাস্ক পরিধান, ঘন ঘন হাত মুখ ধৌত করণ না করা, যেখানে সেখানে খাদ্য গ্রহণ, বিয়ে, জন্মদিন সহ না না প্রোগ্রামে যাওয়া, মানুষের সাথে মেলামেশা করাই এখন আমাদের জন্য বুমেরাং হয়ে উঠেছে। 

নীচের লেখাটি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ প্রধান ডা. Shahjad Hossain Masum স্যারের.. সময় থাকতে সতর্ক হোন, দয়া করে সতর্ক হোন...

"কোভিড পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। মাস দুয়েক একটু শ্বাস ফেলার সুযোগ পেয়েছিলাম। কখনো একটা বেডও খালি রাখতে না পারলেও রোগিদের ওয়ার্ডে শিফট করা যাচ্ছিল। মৃত্যুহার অনেক কম ছিল। এক সপ্তাহের মাঝে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। আক্ষরিকভাবে রোগিদের বাঁচিয়ে রাখতে আমরা এখন যুদ্ধ করছি এবং হেরে যাচ্ছি। বারবার। এই পরিবর্তন আমরা আমাদের চোখের সামনে ঘটতে দেখছি।

আমাদের কথায় আপনারা বিরক্ত হন জানি, কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই, আমরা বারবার বলে যাই। কেউ না শুনলেও, সবাই মুচকি হাসলেও আমাদের বলে যেতে হবে। একটুখানি শ্বাস বুকের ভিতরে নেওয়ার জন্য মানুষের তীব্র কষ্টটা আপনারা কেউ পাশে দাঁড়িয়ে দেখেন না, শেষ সময়ের কষ্টটা কি তীব্র! আমার তেমন কোন শত্রু নেই, থাকলেও আমি তার এমন মৃত্যু চাইতাম না। 

এর বিস্তার বাইরে থেকে তেমন বোঝা যায়না। যেই পরিবারের কেউ এর মাঝ দিয়ে যায় শুধু তারা জানেন। হয়তো আমরা আরেকটি ওয়েভের শুরুর পথে । এই সময়ে রোগিরা দ্রুত খারাপ হচ্ছেন। মনে রাখবেন, এখনো কোভিডের কোন চিকিৎসা পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের হাতে নেই। তাই এর প্রতিরোধই একমাত্র পথ। 

আমাদের ফোন আবার ব্যাস্ত হয়ে গেছে চেনা অচেনা মানুষের কলে। খুব কষ্ট হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের কিছু করার থাকেনা। 

বিশ্বাস করুন, আমাদের একমাত্র চাওয়া সবাই ভালো থাকুন। কার্ভের শুরুতে যদি এই অবস্থা থাকে তবে এর পিকে আমরাই বা কেমন থাকবো।

অনুরোধ জানাই বিনয়ের সাথে:

১. সকল সামাজিক জমায়েত থেকে অসামাজিকভাবে দূরে থাকুন।

২. পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের নিরাপদ রাখুন। (তবে এটাও মনে রাখবেন এবার আমরা প্রচুর তরুন রোগিও পাচ্ছি।)

৩. গত বছর মার্চ মাসে যে সকল সাবধানতা পালন করেছিলেন সেগুলোই একইভাবে পালন করুন, রিলিজিয়াসলী।

৪. মাস্ক নিজে পড়ুন, অন্যকে পড়তে বাধ্য করুন। প্রয়োজনে সীন ক্রিয়েট করুন।

৫. হাত সাবান দিয়ে বারবার ধুয়ে নিন। না পারলে স্যানিটাইজ করুন।

৬. অপ্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হওয়া একদম বন্ধ করে দিন, এই মুহুর্ত থেকে। 

৭. বিপদে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয় আর হৃদয় প্রসারিত করতে হয়।

পরম করুনাময় সবাইকে নিরাপদ রাখুন।"

এখন ভেবে দেখুন অবস্থা কি হতে পারে, হয়ত এই দ্বিতীয় ঢেউ সর্বকালের সেরা আঘাত হতে যাচ্ছে এই দেশের জন্য, সুতরাং এখনই সময় সাবধান হওয়ার, আসুন আগে নিজে বাঁচি এবং অন্যকে বাঁচানোর চেষ্টা করি।

আমাদের সেই ২০২০ সালের মার্চে যেভাবে নিজেদেরকে রক্ষার জন্য যা যা ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, তার তিন চারগুণ  সাবধানতা অবলম্বন করুন, অযথা বাইরে বেরুবেন না, যারা দরকারে বেরুবেন তারা মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস পরিধান করুন, বারবার হাত, মুখ, নাক ধোয়ার ব্যবস্থা রাখুন, সাথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার ব্যবস্থা রাখুন। 

করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে নিজেকে দূরে রাখুন, কোথাও বা যত্রতত্র থুথু ফেলবেন না।

জ্বর, সর্দি, কাশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন অনলাইনে, দরকার হলে নিকটস্থ কোভিড সেন্টারে গিয়ে টেস্ট করুন। 

যাদের সময় হয়েছে টিকা নেওয়ার, তারা দ্রুত টিকা নিন। 

আমাদের সরকারের করণীয়ঃ

১) সকল পর্যটন স্পট আগামী ৬ মাসের জন্য জন সমাগম স্থগিত রাখা, অবস্থার উন্নতি হলে স্বল্প সংখ্যক পর্যটক সীমিত সময় পর্যন্ত পর্যটন এলাকাতে যেতে পারবে তাও আগেই লিখিত পারমিশন নিতে হবে বাধ্যতামূলক। 

বর্তমানে যেভাবে লক্ষ লক্ষ পর্যটকরা পর্যটন এড়িয়া গুলোতে ভিড় করছে, তা বন্ধ করতে হবে। 

২) সকল গার্মেন্টস সহ অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রি গুলোতে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং সোস্যাল ডিস্টেন্স পালন করতে হবে, সবাইকে মাস্ক পরিধান সহ সকল ধরণের পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

৩) সরকারের উচিত এই মুহূর্ত থেকেই সকল বিয়ে শাদী, কাবিন, জন্মদিন, মেজবান বা যেসব অনুষ্ঠানে জন সমাগম হয় তাহা রোহিত বা বন্ধ ঘোষণা করা।

৪) সকল হাসপাতাল, যথা সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল গুলোকে সরকারের নিয়ম অনুযায়ী কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য উম্মুক্ত করা এবং তা যথাযথ সরকারের তত্তাবধানে আনা। 

৫) টিকার কর্মকাণ্ড আরও জরুরী ভাবে বৃদ্ধি করে ঘরে ঘরে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা। 

৬) সকল স্বাস্থ্যকর্মির ছুটি বাতিল করত, সকলকে কর্মস্থলে যোগদান করতে বাধ্য করতে হবে, স্বাস্থ্যকর্মিদের জন্য ভালোমানের হোটেল গুলোতে বিনা খরচে থাকার এবং খাওয়ার ব্যবস্থা করা একান্ত জরুরী। 

৭) সরকারি হাসপাতাল গুলোতে রুগীর খাদ্য সরবরাহ খুবই অস্বাস্থ্যকর, ইহার পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর খাদ্য সামগ্রী এবং জরুরী ফলমূল যোগানের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। 

৮) সকল রুগীদের পথ্য, তথা ঔষধ কম মূল্যে সরবরাহ করা জরুরী।  

৯) করোনা যেন আর বাড়তে না পারে, তার জন্য দরকার কঠিন লকডাউন, সম্ভব হলে কারফিউ দিতে যেন সরকার কার্পণ্য না করে। 

সাধারণ মানুষের উচিত নিজেকে রক্ষার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা, নতুবা সমূহ বিপদ। 

আবার বলছি, সাবধান হোন, নিজে বাঁচুন, অন্যকেও বাঁচতে দিন।  

ছবিঃ গুগল।

 

জনস্বার্থেঃ

0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ