এই কয়েকদিনের অনুপস্থিতির কারণ অনেকগুলো বিভিন্নধরনের ব্যস্ততা। তার প্রধানটি হলো জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে একটি লেখাকে ব্লগের ই-ম্যাগাজিনের জন্য তৈরী করা। ব্লগে কখনো প্রবন্ধ দিইনি আমি। আসলে এখন মন দিয়ে কোনোকিছুই পড়া হয়ে ওঠেনা। তাই লিখতেও পারিনা। একটা সময় ছিলো প্রচুর প্রবন্ধ লিখতাম, কিন্তু কালের গহবরে হারিয়ে গেছে। ভাগ্য ভালো যে এই লেখাটি থেকে গিয়েছিলো। এটাকে সম্পাদনা করলাম আরোও কিছু যুক্ত করলাম এবং অনেককিছু কাটছাটও করতে হয়েছে।
আমার মতো সাধারণ একজনের পক্ষে কবি জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কে বলা এবং তাঁর সাহিত্যিক মানসকে তুলে ধরা যে কতোটা কঠিন, লিখতে গিয়ে বুঝেছি। কিন্তু আমার সবচেয়ে প্রিয় কবিকে জানা এবং বোঝার চেষ্টা করে গিয়েছি বাংলা নিয়ে স্নাতক সম্মান পড়ার বহু আগে থেকেই। একটা স্বপ্ন ছিলো যদি কোনোদিন সুযোগ পাই তাহলে কবির কাব্যমানসকে নিয়েই গবেষণা করবো। সেই কারণে প্রচুর বই পড়েছি, বোঝার জন্য সাহায্য নিয়েছি শ্রদ্ধেয় শিক্ষক রায়হান সেলিম স্যারের থেকে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন এম.ফিল করার সুযোগ পেয়েছিলাম, আনন্দের সীমা ছিলোনা। যদিও শেষ পর্যন্ত আর শুরু করাই হয়নি। কিন্তু বেলজিয়ামে যাবার পর সেখানে একজন বেলজিক প্রফেসরের সাথে পরিচয় হয়। উনার মতে বাংলা ভাষা বড়ো নরম, আহ্লাদী এবং আবেগী। জানতে পারলাম তিনি কিছুদিন আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যের উপর গবেষণা করে ফিরেছেন। দেখলাম বাংলা কবিতার প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা। তিনি আমায় বললেন, “তুমি কি লক্ষ্য করেছো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে সাহিত্য সমালোচকরা যতোটা ব্যস্ত, ততোটা কিন্তু জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে নয়?” আমি তখন বললাম আমার প্রিয় কবি জীবনানন্দ। স্বপ্ন ছিলো কবিকে নিয়ে গবেষণা করার, অতীতের সব কথা প্রফেসরকে বললাম। উনি তখন আমায় প্রস্তাব দিলেন রিসার্চে আমায় উনি সাহায্য করবেন এবং তার জন্য সার্টিফিকেটও প্রদান করবেন। যেই সেই সার্টিফিকেট নয়, সরাসরি PhD. আমি খুশীতে লাফিয়ে উঠলাম। বললাম আমায় কিছুটা সময় দিতে হবে। কারণ দেশ থেকে বইগুলো নিয়ে আসতে হবে, তাছাড়া যেহেতু ইংরেজিতে Proposal Note লিখতে হবে, আমার জন্য সেটা যথেষ্ট কঠিন ছিলো। কিন্তু আমার ভাগ্যে সেটা ছিলোনা, কারণ তারপরই চলে এলাম কানাডায়। তারপরেও আমি লিখেছিলাম, যদিও আমার Proposal Note সেভাবেই থেকে গেলো।
অবশ্য একবার ভেবেছিলাম অনলাইনের কোনো পত্রিকায় জমা দিতে, কিন্তু দেয়া হয়নি। এর কারণ হয়তো আমার এই “সোনেলা”র জন্যই থেকে গিয়েছিলো। সে তার সঠিক স্থান-ই খুঁজে পেয়েছে। লেখাটি ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছি, তাই কিছুটা সময় লাগলো। এতোদিন তাই ব্লগে আসিনি। আশা করি ভবিষ্যতে কারো না কারো কিছুটা হলেও কাজে আসবে। এখানে আমি জীবনানন্দের কাব্যপ্রতিভার চেয়ে কবি জীবনানন্দ’র অবস্থান তাঁর সমকালীন কবি এবং সাহিত্যিকদের কাছে কেমন ছিলো, সেসবের দিকেই প্রাধান্য দিয়েছি। বিশাল বড়ো আকারের লেখাটিকে ছোট আকারে নিয়ে আসতে ভাবনার কক্ষটিকে বিভিন্নভাবে সাজাতে গিয়ে প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়েছে। Proposal Note’টিতে ৮০টি পৃষ্ঠা ছিলো, তার মধ্যে অনেকগুলো ভাগও। তারই মধ্যে থেকে এই একটি ভাগ সোনেলা নীড়ের পাখীদের জন্য নিয়ে এলাম। যা আগামীকাল প্রকাশিত হবে।
★★★★★★★★★★★★★★★★★★★
হ্যামিল্টন, কানাডা
৩০ এপ্রিল, ২০১৯ ইং।
১৮টি মন্তব্য
🎖প্রহেলিকা🎖
এতদিন পরে এলেও খুব ভালো সুসংবাদ নিয়ে এলেন। এখন তো আপনার সেই গবেষণামূলক পোস্ট দেখার জন্য অপেক্ষার তর সইছে না। আপনি যেহেতু তৈরি করেছেন তাহলে অবশ্যই ভালো কিছু পেতে যাচ্ছে সোনেলা। অগ্রিম অভিনন্দন।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভালো হবে কিনা জানিনা। কারণ কাটছাট করতে হয়েছে অনেক। তাছাড়া বেশ অনেকগুলো বই, বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধের সাহায্য নিতে হয়েছে, যার কারণে তথ্যসূত্র তুলে দিতেও পারিনি।
রিতু জাহান
এমন সব বিষয়ে ছোটো পরিসরে লেখা খুব কঠিন।
আমার বাংলা সাহিত্য নিয়ে লেখাটা লিখতে গিয়ে খুব বেগ পেতে হয়েছে। যেমন চর্যাপদ নিয়ে এতো বিস্তর আলোচনা যে ওটা আমি আর তুলতেই পারিনি। দীনেশচন্দ্র সেনের বই পড়েছো নিশ্চায়ই।
জীবনানন্দ দাস আমারও খুব প্রিয় কবি। জীবনানন্দ এক আপনভোলা জগতে বাস করতেন। একাকিত্বের দুর্গম নভশ্চর জীবনানন্দ তার কাছের মানুষের কাছে এক পরম বিস্ময় আর দূরের মানুষের কাছে আত্মার আত্মীয়। তিনি সমস্ত সত্ত্বা দিয়ে, সমগ্র চেতনা দিয়ে বিশ্ববোধ ও ব্যক্তিবোধের সমম্বয় খুঁজেছেন। কখনো আত্মার গভীরে হারিয়ে গেছেন। কখনোও দূর দেশকালের স্মৃতি-বিস্মৃতির মধ্যে পথ চলেছেন।
জীবনানন্দকে আমরা কোথাও কোথাও পাই চির পথিক হিসেবে। যেনো অবিরাম পথ চলাতেই তার আনন্দ। সমস্ত বিশ্বের রূপমাধুরিকে বিচিত্র প্রতীকের মারফতে উপলব্ধি করে, কখনো তিনি ‘রূপদক্ষ’ হয়েছেন। কখনো ধ্বনিব্যঞ্জনার মধ্য দিয়ে রুপলোকের আভাস-ইঙ্গিতের সাহায্যে এমন এক অধরার সন্ধান পেয়েছেন, যা মুগ্ধ করে পাঠকককুলকে পাঠ করার পরও দীর্ঘ সময় ধরে।
জানো আপু, তাকে নিয়ে পড়তে গিয়ে আমি বার বার শব্দের অন্যলোকে চলে গেছি। মনে হয় তাকে দেখতে পাচ্ছি রুপের এক ঐশ্বরিক ক্ষমতা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কোনো দেবতা।
লেখো আপু। তবে আবারো বলছি, এমন সব বিস্তর আলোচনা ছোটো করে লেখাটা লেখকের জন্য কষ্টকর।
কারণ, কোন তথ্য উপাত্ত তুমি বাদ দিবে এটা তুমি তোমার সাথেই মনে হয় যুদ্ধ।
নীলাঞ্জনা নীলা
আসলে বিশাল বড়ো লেখা আপু। ৮০ পৃষ্ঠাকে দুই পাতায় নিয়ে আসা খুবই কঠিন কাজ। যদিও ভালো লেগেছে লিখতে। প্রিয় কবিকে নিয়ে লিখতে গেলে মনটা ভালো হয়ে যায়। তোমাদের কাছে কেমন লাগবে জানিনা, তবে চেষ্টায় ত্রুটি রাখিনি।
শুন্য শুন্যালয়
কাল কখন হবে? জীবনানন্দ দাশ, নামটির মধ্যেই যেন তার অক্ষরগুলো ভাসতে থাকে। আধুনিক সাহিত্যচর্চায় জীবনানন্দ সত্যিই এক সুপ্রিয় নাম, সবার প্রিয় কবি।
সত্যিই অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি প্রিয় এই মানুষটিকে আরো জানবার জন্যে।
সোনেলার জন্যেই আসলে এটি রয়ে গিয়েছিল। তবে পিএইচডির মতো এমন সুযোগ তুমি হাতছাড়া করে ফেললে? মেয়েরা ক্যারিয়ার গড়তে কতো যে বাঁধা! 🙁
নীলাঞ্জনা নীলা
কাল এখনই হবে।
আপু জানিনা ভালো লাগবে কিনা! তবে যুদ্ধ করতে হয়েছে কাটছাঁট করতে গিয়ে।
ছাইরাছ হেলাল
তর সইছে না!!
আগে ঘোষণা দিতে কেডা কইছে!!
নীলাঞ্জনা নীলা
এইতো আর কিছুক্ষণ। কী জানি ভালো লাগবে কিনা আপনার!
রাফি আরাফাত
Vlo lagse😍
নীলাঞ্জনা নীলা
ধন্যবাদ।
বাংরেজিতে টাইপ কেন?
তৌহিদ
অগ্রিম অভিনন্দন জানিয়ে রাখছি। ☺
নীলাঞ্জনা নীলা
তৌহিদ ভাই এই তো দিচ্ছি।
তৌহিদ
ধন্যবাদ আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
🙏🙏
মনির হোসেন মমি
নাটোরের বনলতা সেন…..কখন পড়ব।
নীলাঞ্জনা নীলা
মনির ভাই নাটোরের বনলতাকে খুঁজে পাইনি। যে পোস্টটি দিতে যাচ্ছি, তা কবি জীবনানন্দ দাশের অবস্থান কেমন ছিলো তাঁর সমসাময়িক লেখকদের মধ্যে।
মায়াবতী
পোস্ট পড়ার পরে নীলা আপুর এই একান্ত অনুভূতি নজরে পরলো! পি এইচ ডি করার সুযোগ টা হাত ছাড়া করে দিলেন আপু! আপু, মেয়ে হয়ে জন্মানোর এতো এতো বাধা বিপত্তি আর সয় না জানেন…. কত যে ইচ্ছা ছিলো পি এইচ ডি করার!!! দিন রাত চোখের পানির সাথে সাথে ইচ্ছে গুলো ও ঝড়ে গেছে আপু…. আমার বইয়ের নেশায় ঘুণ ধরেছে…. বই সংগ্রহ করতে ও কেমন যেন আলসেমিপনা! অথচ সাহিত্য আমার প্রাণের স্পন্দন!!!!
আপনার লেখা পড়তে পড়তে নিজের উপর বিরক্ত লাগছে কেন জানি না….
তাহলে ই ঈর্ষা কাজ করছে হটাৎ! কিন্ত আমি তো ষষ্ঠ ইন্দ্রীয়র কার্যকারিতা ওফ করে রেখেছিলাম…. উফ কি সব লিখছি????
নীলাঞ্জনা নীলা
ঈর্ষা করার মতো আমার কাছে যে কিছু নেই প্রিয় মায়াবতী। কিছুদিন আফসোস ছিলো, এখন আর নেই। এখন অন্যরকম একটা অনুভূতি, চমৎকার একটা পেশায় নিয়োজিত ছিলাম, হঠাৎ একটা ঝড় এলো সব এলোমেলো হয়ে গেলো। আবারও জীবনটাকে গুছিয়ে নিয়েছিলাম, এখন আমার বাপি-ই চলে গেলো।
অনেক ভালো থাকবেন।