ভার্সিটির সেকেন্ড ইয়ারে লাস্ট শিব পুজো দিয়েছি। মানে আর কিছু করি না করি সরস্বতী পুজোর অঞ্জলী আর শিব পুজোর উপবাস বন্ধ হতো না। লোভী মন, বিদ্যা আর বর দুটোর লোভ🥵। ছেলেবেলাতেই শিখে গেছিলাম শিব সন্তুষ্ট হলে বর অনেক ভালবাসবে, ভালবাসা জিনিসটা কে না চায়!

শিবপুজোর উপবাস অনেক কঠিন। বাড়িতে মা কাকীরা পুজো করতো সেই সাথে আমরা বোনেরাও। এই জিনিস আমি মনে হয় সাত আট বছর থেকেই করি। তখন উপোস থাকতে পারতাম না কিন্তু থাকতে চাইতাম, মা জোর করে নিরামিষ খাবার খাইতে দিতো। মায়েরা করে দেখে আমারও ইচ্ছে হতো। যাই হোক শিবের গীত গাইতে শুরু করলাম যে জন্য, একটু বড় হবার পরই সব নিয়ম মেনেই করতাম। আগেই বলেছি শিব পুজোর উপবাস অনেক কঠিন। আগেরদিন সংযম পালন করতে হয়, মানে নিরামিষ খাবার, সূর্য ডোবার পর আর ভাত খাওয়া যাবে না, যা খাবার সন্ধ্যার আগে। রাতে শুধু ফলমূল, জল এসব। সূর্য ওঠার পর একেবারেই নির্জলা উপবাস। সব রকমের খাওয়া বন্ধ, জলও বন্ধ। সন্ধ্যার পর পুজো শুরু। শিব পুজো রাতের চার প্রহরে হয়। চার প্রহরে চারটা পুজো যতোদূর মনে পরে। একেক প্রহরে একটা পুজো এরপর বিরতি।

বিরতির সময় ছোটবেলা বাড়িতে ভিসিআর আনা হতো, ধর্মীয় কাহিনীর ছবি চলতো যেমন তারাপীঠ মহাপীঠ, জয় বাবা তারকনাথ টাইপের। যাতে রাত জাগতে সমস্যা না হয় তাই এই ব্যবস্থা। সব মা কাকীরা আমরা মিলে মুভি দেখতাম।

কিন্তু ওরে ভাই কি যে খিদে লাগতো। গলা শুকিয়ে যেতো। রাত যতো গভীর, খিদেও ততো গভীর। ঘুমানো যাবেও না। একটা কথা বলে মায়েরা, শিব অল্পে খুশি, এতো কষ্ট করে তাকে পুজো করা লাগে না। মেয়েরা এতো কষ্ট করছে দেখে শিবের নাকি কষ্ট হয়। তাই কোনো মেয়ে যদি খিদেয় ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পরে তাহলে ভোলানাথ এসে সেই মেয়ের পা টিপে দেয়, যাতে আরাম হয়। বলে’ আহারে মেয়েটা আমার জন্য এতো কষ্ট করছে’ এজন্য মেয়েরা ঘুমায় না, যদি শিব পা টিপে দেয় তাহলে তো পাপ হবে🙄।

যাই হোক আমি যেজন্য এতো কথা লিখলাম রাত গভীর হতে লাগলেই আমার খাবার কথা মনে পরতো, যতো ভাল ভাল খাবার সব চোখের সামনে ঘুরতো। কলার মোচার তরকারি, নানা রকম মিষ্টি, ইলিশ ভাজি, কই মাছের ভাপা, ওরে বাবা নিজেরে পুরা হাভাতে মনে হতো, আর মনে মনে শিবের কাছে বলতাম খাওয়ার কথা চিন্তা করছি বলে যেন ক্ষমা করে দেয়। এরপর ভোর হতো। পুজো শেষ করে প্রসাদ খেতাম। তারপর স্নান করে এক থালা ভাত, অবশ্যই নিরামিষ খাবার।

কালকে মা জননী বলেছে ছোটবেলায় শিবপুজো দিতাম বলেই নাকি শিব আমার কপালে ভোলানাথ জুটিয়ে দিয়েছে। মাকে বললাম ‘তুমি তো আর জানো না মনে মনে কতোকিছু খেয়ে নিয়েছি, এতো বছর যে দেইনা তার কি হবে? ‘ 😆😆। মা বলে শিবঠাকুর অল্পে খুশি, এতো না মানলেও চলে। আমি বলেছি ‘হু এইজন্য নাস্তিক বর দিয়েছে।’ মা বলল ‘তুই বেশি বুঝিস’🤣🤣। বলে ফোন রেখে দিছে আর ধরে না😤😤

0 Shares

৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ