হঠাৎ ঘুম ভাঙলো নিশির।
ইদানিং প্রায় প্রতিদিন সকালে ওর ঘুম ভাঙে একটা না একটা দুঃস্বপ্ন দেখে। হয়তো সে দেখে কোনো ট্রেন মিস হয়ে যাচ্ছে, অথবা প্রচন্ড উত্তপ্ত কোনো মরুভূমিতে তৃষ্ণায় বুকের ছাতি ফেটে যাচ্ছে, কিংবা খুব ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন কোনো জায়গায় একাকী বসে আছে! ঘুম ভাঙার পরেই খুব পানির পিপাসা পায় তার।
বালিশের পাশে রাখা মোবাইল ফোনটা চোখে পরতেই পানির কথা ভুলে গেলো সে। তাড়াতাড়ি চেক করে, কোনো কল আসেনি তো অপরিচিত কোনো নাম্বার থেকে!
গত কয়েকমাস ধরে নিশি বিভিন্ন জায়গায় সিভি দিয়ে বেড়াচ্ছে একটা চাকরির আশায়। দুই এক জায়গায় ভাইবাও দিয়েছে। কিন্তু এটা তো এখন ওপেন সিক্রেট, সবখানে আগে থেকেই ঠিক করা থাকে কাকে চাকরি দিবে। তবুও আশা তো করতেই হয়।
একটা চাকরি খুব দরকার নিশির।
অশিক্ষিত মেয়ে হলে চাকরি না করেও কেটে যায় দিন। হাজবেন্ড মেনেই নেয় যে, তারা শুধুই ঘরের ভেতরটা সামলাবে, ছেলেমেয়ে পালবে, রান্না করবে...ব্যস্!
নিশি তো আর যেনতেন মেয়ে না। স্কুল, কলেজে টপ স্টুডেন্ট ছিল যে, নামকরা সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছে অনার্স, মাস্টার্স...তার কী আর এভাবে বেকার বসে থাকা মানায়?
তার স্বামী রাফি তো প্রায়ই বলে, "এত ভালো স্টুডেন্ট ছিলে, তারপরও যদি স্বামীর কাছ থেকে হাতখরচ আশা করো, এর চেয়ে লজ্জার কিছু আছে তোমার, বলো?"
কাবিনের পর এখনো বাবার বাসায় থাকে ও। কতজনের কত কথা! "মেয়েকে এত পড়াশুনা করিয়েছে, তারপরও এখনো বাবার ঘাঁড়ে বসে খাচ্ছে, ছিঃ!"
খাবার টেবিলে খেতে যেতেও অস্বস্তিবোধ করে নিশি। হাতে একটা টাকা নেই, তবুও কারো কাছেই চাইতে পারেনা। পাশ করার পর এই ২/৩ মাস বাসায় থেকেই চারপাশের বাক্যবাণে হাঁপিয়ে উঠেছে ও...আর পারছেনা।
মাঝে মাঝে মনে হয়, কী লাভ এতো শিক্ষিত হয়ে? এর চেয়ে বরং অশিক্ষিত হয়ে জন্মালে সারাদিন ঘরকন্যা করেই কেটে যেতো, এত কথা শুনতে হতোনা তাকে উপার্জন না করার জন্য।
নিজের উচ্চশিক্ষা আর ভাল ফলাফলকে এখন রীতিমত অভিশাপ বলে মনে হয় নিশির কাছে!
মোবাইল ফোনটা বাজছে, দৌড়ে ধরল নিশি।
অসীম হতাশার মধ্যে বাঁচতে চাইলে আশা বাঁধতেই হবে, উপায় তো নেই আর। ।
১৩টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
এটা শুধু নিশির নয় অনেক ছেলেমেয়েদেরই শুনতে হয় এমন কথা।যখন পড়ালেখা শেষ করেও উপযুক্ত কাজ খুজে না পায় তখন অনেক কস্টে অর্জিত সারর্টিফিকেট কেই অভিশপ্ত মনে হয়। এখন শিক্ষিত মেয়েদেরকেও বিয়ে করা হয় উপার্জন করবে এই আশায়। খুব সুন্দর করে লিখেছেন। শুভকামনা রইলো।
পথহারা পাখি
বেশিরভাগ শিক্ষিত মেয়েকেই এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। সবাই মুখ বুজে সহ্য করে নেয়, যতদিন পারে 😔
রিতু জাহান
বেশ ভালো একটা বিষয় উঠে এসছে। এ সমাজের এই এক সমস্যা। চাকরি করলে আবার বলবে, বাচ্চা সামলাবে কে! সংসার স্বামীকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া উচিৎ।
কতো কতো কথা!
সোনেলার উঠনে স্বাগতম। অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
সবার লেখা পড়ুন এবং বেশি বেশি করে লিখুন। -{@
পথহারা পাখি
ধন্যবাদ উৎসাহিত করার জন্য…খুব আনাড়ি হাতে প্রথমবার লিখেছি।
আশা করি আরো ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারবো । ।
জিসান শা ইকরাম
গল্পের মাধ্যমে নিশি তথা শিক্ষিত মেয়েদের একটি কঠিন সমস্যার কথা বলেছেন।
যারা জব যব করতে চান, তেমন শিক্ষিত মেয়েরা মানসিক পিড়নের মধ্যে থাকেন। সমাজ ব্যাবস্থার কারনেই ছেলেরা যে কোনো একটি চাকুরী জুটিয়ে নিতে পারে, মেয়েরা পারেনা।
অশিক্ষিত বা কম শিক্ষিত মেয়েদের এই সমস্যা নেই।
ভালো একটি টপিক্স নিয়ে লিখলেন।
আমাদের সোনেলায় স্বাগতম -{@
নিজের ব্লগ ভেবে লিখুন এবং পড়ুন নিয়মিত।
শুভ কামনা।
পথহারা পাখি
ধন্যবাদ…সময় পেলেই লিখবো, আশা করছি 🙂
মায়াবতী
মেয়েরা শিক্ষিত আর অশিক্ষিত যে কোনো ভাবে ই সে অভিশপ্ত , এই টা আমার বুক্তিগত অভিমত । এর সামনে পেছনে অগণিত অভিজ্ঞতার ব্যাক্ষা আমার ঝুলিতে রয়েছে । দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত একটা মেয়ে কে প্রতি নিয়ত নিজের অস্তিত্বের আসল নকল হিসাব করতে করতে ই শুণ্যে মিলিয়ে যায় ।
খুব বাস্তব ভিত্তিক বিষয় কে তুলে ধরেছেন আপনি । সুস্বাগতম সোনেলায় আপনাকে । লিখে লিখে নারী মনের সকল দুর্বলতা কে প্রকাশ করে নিজেকে হালকা করে ফেলুন আর বেঁচে থাকার ভাললাগা টুকু শুধু উপভোগ করতে থাকুন ।
-{@ -{@ -{@
পথহারা পাখি
মন খুলে লিখতে পারব এখানে, সেটা ভাবতেই খুব ভালো লাগছে! সকলের উৎসাহ পেয়ে খুব অনুপ্রাণিত হচ্ছি, ধন্যবাদ 😊
মোঃ মজিবর রহমান
আমাদের অভাবী ও ঘুনেধরা সমাজে বিপদে উৎসাহ না দিয়ে বিভিন্নভাবে ছেলেমেয়েদের ঘুটা বা হেয়পন্ন করা হয়।
এইরকম আর লেখা আর চাই।
ধন্যবাদ আপনাকে। -{@
শুন্য শুন্যালয়
কি বলবো বুঝতে পারছিনা। বেকারত্ব ছেলে মেয়ে দুইকেই বেশ বিপাকে ফেলে দেয়। মনেহয় শুধুমাত্র চাকরীর কথা না ভেবে মেয়েরা বিজনেসের কথা চিন্তা করতে পারে। আমাদের দেশে চাইল্ডকেয়ার সাপোর্ট ওয়ার্কার খুব কম। ড্রপ অফ, পিক আপ এই কাজগুলো যে শিক্ষিত মেয়েরাও করতে পারে, সেটা কেউ ভাবছে না।
লেখাটা ভাবালো। ছোটখাটো একটা রিসার্চ করা যেতে পারে, নেগলিজেবল জব এরিয়া নিয়ে।
লিখুন আরো। আইডিটা সুন্দর আপনার। 🙂
পথহারা পাখি
ধন্যবাদ! 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
চমৎকার একটি বিষয় নিয়ে লিখলেন।
স্বাগতম আপনাকে সোনেলা নীড়ে।
আপনার ভাবনার ধার বেশ। লিখুন।
পথহারা পাখি
ধন্যবাদ! 🙂