শিক্ষা জাতির মেরু দন্ড।কথাটি কি ঠিক? হয়তো ঠিক তবে মনে হয় আমাদের ক্ষেত্রে এ কথাটি নয়।নতুবা দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থা শিক্ষার মান উন্নয়ণ নিয়েতো আর কম কথা হল না! যেই বয়সটায় আমি হাফপেন্ট পড়ে দূরন্তপনায় আকাশঁ ছোঁয়ায় স্বপ্নে বিভোর ছিলাম সেই একই বয়সে আমার সন্তানেরা বইয়ের ব্যাগ কাধে নিয়ে কূজোঁ হয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় যাওয়া আসা করে।তাও আবার প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করতে মেটট্রিকের মত ফাইনাল পরীক্ষা দিতে দিন-রাত কচিঁ মাথাটায় যেন বেল ফাটায়।অতপর সে শৈশব হারায়,হারায় তার মন মানষিকতা বিকাশের অভায়া স্থল।অনেকটা কোমা রোগীর মত কেবল পাঠ্য বই আর বইয়ে চোখ বুলিয়ে দিন রাতের সময়ের সাথে যুদ্ধ করে যায়।বাস্তবতায় জ্ঞানের ঝুড়িতে জমে কিছু আলসেমী, কিছুটা ভাল না লাগার অনুভুতি এবং বহিঃ নলেজ শুন্য এক অসার ব্রেন ।

ছেলে এবার পিএসসি দিবে। কয়দিন ধরে সে কেবল বলছে-আব্বু ভাল লাগছে না। আমি বললাম-কেন? ছেলে উত্তর দিল-জানি না,কেবল মাথা ঘাড় ব্যাথা করে,সন্ধ্যা হলেই চোখে ঘুম আসে ।আমার কিন্তু বুঝতে অসুবিদা হল না-এ তার অপরিপক্ক বয়সে লেখা পড়ার অত্যাধিক চাপ।ক্লাশ ফাইভে তেমন ঘটা করে ক্লাস করা বা পরীক্ষা দেয়া কখনো আমাদের সময় হয়নি আর প্রাইভেট মাষ্টারের কাছে পড়াতো প্রশ্নই উঠেনি।সিক্সে উঠেই কিছুটা বুঝতে পারি “এখন আমার লেখা পড়া করার সময় হল শুরু।অথচ আমাদের সন্তানদের ক্লাস শুরু হয় প্রাইভেট মাষ্টারের কঠিন মাষ্টারগিরিতে- এক স্তুব বইয়ের ব্যাগ বহনে।আর যে সব অংক ইংরেজীর প্রশ্ন থাকে তা অবাক করার মত।ব্রেনতো টেম্পার কমার মধ্যেই থাকবে।মনতো তার কোমায় থাকবেই।

আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পাঠ্য বইয়ের লেখাগুলোর একটু আধটু আধুনিক লেভেল থাকবে এটা মানি যখন একটা ফাইভে পড়ুয়া বিষয় বস্তুতে যদি নিউটন সূত্রের আর্বিভাব ঘটে তবেতো ছেলে মেয়েদের মেধার অতিরিক্ত ক্ষয়ের চিন্তার বিষয় আসবেই তবুও ভাল যে দেশে এ সব ছোট ছোট অবুঝ মনের সন্তানেরা নিয়মিত স্কুল করে,পড়া লেখায় মন দেয়।অন্য আরেকটি বিষয় হল বর্তমান সময়ে একজন সন্তানের লেখা পড়ার খরচ চালাতে অভিবাভকদের হিমসিম খেতে হয়।টাকার কুমির হলেতো সমস্যা নেই কিন্তু যারা মধ্যবিত্ত দিন আনে দিন খায় তারা তাদের সন্তানদের দেশের ভাল কোন স্কুলে লেখা পড়ার খরচ চালানোর সক্ষমতাতো দুরে থাক ভর্তি করানোই যেন কল্পনাতীত।

এ দেশে নরমাল পাসের কোন মুল্য নেই।আর কারিগরি শিক্ষারতো তেমন কোন সুযোগ নেই।সামর্থ্যের বিচারে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার তাহলে সাধারন শিক্ষার কি দরকার?।এক মাত্র কারিগরি শিক্ষাটাকে যদি দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতা মুলক করে দেয়া যেত তবে এ দেশে যে কর্মহীন সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষীত বেকারের হাহাকার চলছে তা আর থাকত না।তখন প্রতিটি ঘরের সন্তানেরা  হত কর্মঠ উপার্জনক্ষম।যে শিক্ষায় জীবন কর্মের কোন যোগ সাজেস নেই সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে কবি সাহিত্যিক ইতিহাসবিদ হতে পারবেন কিন্তু দেশ তথা নিজের দারিদ্রতাকে দুর করতে পারবেন না।তাই কারিগরি শিক্ষায় আরো জোর দেয়া এখনি মোক্ষম সময়।

দেশের একমাত্র টেকনোলজিক্যাল শিক্ষা ব্যাবস্থা বুয়েট।এর পরিধি আরো বাড়াতে হবে।আবার শুধু এ সব বিদ্যালয় বাড়িয়েও কোন লাভ নেই যদি না তার মেধার বিকাশ ঘটে।মতামত প্রদানে কথা বলার স্বাধীনতা যদি না থাকে তবে সেখানে মেধার বিকাশও হয় না। কয়েক দিন আগেই বুয়েটে ঘটে গেল আবরার হত্যাকান্ড যা দেশবাসীকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা ভঙ্গুর কতটা ভয়ংকর ভাবে চলছে।এর মুলে হল দেশের নোংরা রাজনিতীর খেলা। ক্ষমতা পাবার আসায় এক দল এসব সন্ত্রাসী দল পালেন যাতে রাতারাতী আঙ্গুলফুল ফুলে কলাগাছ হতে দূর্ণীতিটা করতে দ্রুত ক্ষমতাসীনদের নজরে আসতে পারেন।অবশেষে বুয়েটে সকল পেশীগত রাজনৈতীক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করেছেন। এটা একটা ভাল লক্ষণ।

বুয়েটের মত দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ছাত্র অছাত্র ও শিক্ষকদের দলীও পেশীগত রাজনীতি বন্ধ না হলে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে একের পর এক বিশৃংখলা লেগেই থাকবে।আজ যেমন অনিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ব বিদ্যালয়।

জাবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ-জাবির উন্নয়ণের বরাদ্ধকৃত অর্থ হতে ক্ষমতাধর ছাত্রলীগকে প্রায় দুইকোটি টাকা দিয়ে দেয়া সহ উপচার্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দূর্ণীতির অভিযোগ উঠে।যা নিয়ে প্রায় মাস দুএক যাবৎ ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ও ‘উপাচার্য অপসারণ মঞ্চ’ ব্যানারে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।ইতিমধ্যে জাবির সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যায়টির বন্ধ ঘোষনা করেন।কিন্তু আন্দোলনরত ছাত্র শিক্ষকরা এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে সরকারও কঠোর অবস্থানে আছেন।যদিও এ ক্ষেত্রে সরকারের তেমন কিছু করার নেই কিন্তু আবার অনেক কিছুই করার আছে।উপচার্যকে অভিলম্বে পদত্যাগে বাধিত না করলে হয়তো বড় কোন ঘটনা ঘটে যেতে পারে।কারন জাবির উপচার্য হয়তো ভাবছেন বুয়েটের উপচার্যের তো কিছুই হলো না তাহলে আমারো কিছুই হবে না।এদেশে বিচারিক ব্যাবস্থার অক্ষমতায় অপরাধীরা সাহস পায় আরেকটি অপরাধে জড়িত হবার।তাইতো ক্ষমতায় যে যখন বসতে পারেন সে তখন শত অপরাধেও নিজেদের পৈর্তীক সম্পদ মনে করেন।আর যখন রক্তক্ষয়ী কিছু একটা ঘটনা ঘটে যায় তখন সবারই হয়তো টনক নড়ে কিন্তু ততক্ষণে হয়তো কোন না কোন মায়ের বুক খালি হয়ে যায়।

আজ দেশের প্রায় প্রতিটি শিক্ষাঙ্গণেই চলছে নৈতীক স্খলনের মহড়া।সে দিনও নিউজেও দেখলাম রাজশাহী পলিটেকনিক্যাল কলেজের এক শিক্ষককে ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা জোর করে ধাক্কা দিয়ে পুকুরে জলে ফেলে দেয়। এটা অন্যায় আর এ রকম অন্যায় কর্মকান্ড যদি প্রশ্রয় দিতেই থাকি তবে শিক্ষাঙ্গণগুলো অচিরেই বেয়াদবের আখড়ায় পরিনত হবে

দেশকে শিক্ষায় এগিয়ে নিতে সরকার এবং দেশের রাজনিতীবিদদের এ সব দিকের নজর দেয়াটা বেশ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।আজকের শিশু যদি আগামী দিনের ভবিষৎ হয় তবে শিক্ষার পুরো ব্যাবস্থাপনা নিয়ে সরকার তথা সকল রাজনৈতিকবিদদের নতুন করে ভাবতে হবে,বাস্তবায়ণে দ্রুত যেতে হবে।নতুবা একদিন মেধাশুন্য হয়ে পড়বে এদেশ,দেশের মেধাবীরা স্থায়ী নীড় খুজঁবে পরদেশে।

------------------

ধন্যবাদ
তথ্য ও ছবি অনলাইন

0 Shares

৩০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ