FB_IMG_1454689269159

শাহবাগ- ঐতিহাসিক গর্ভপাত হলেও, আপামর বাঙালীর বিভ্রান্ত প্রজন্মটিকে মাতৃগর্ভ ঠিক চিনিয়ে গিয়েছে।

FB_IMG_1454689411493

শুরুটা সীমাহীন স্বপ্ন জাগিয়েছিলো ঘুমন্ত বাঙালী চেতনায়। কাদের মোল্লার 'বিজয়' চিহ্ন দ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিলো বাঙালীর মননে।

FB_IMG_1454689609569

মনে আছে, কাদের মোল্লার রায় শুনে অফিসেই বসেই কেঁদে চোখ লাল করেছিলাম। হতাশার সীমাহীন যন্ত্রণা বুকে জন্ম দিয়েছিলো তীব্র ক্ষোভ আর ঘৃণা।
মাত্র একটা আহ্বান 'চলো যাই শাহবাগ'। আমিও সেদিন আমার ফেসবুক ওয়াল থেকে এ আহবানটি শেয়ার দেই। মাত্র একটা আহ্বানেই স্রোতের মতো লোকজন জমায়েত হতে শুরু করে।

FB_IMG_1454689603212

মনে পড়ে, ৮ ফেব্রুয়ারির সেই মহাসমাবেশে অজানা টানে সেদিন ছুটে গিয়েছিলাম। হায়! বর্ষায় বাঁধ ভাঙলে বানের পানি যেভাবে ধেয়ে আসে সেদিন ঠিক তেমনি মানুষের স্রোতকেও ধেয়ে আসতে দেখেছি। সেদিন অনুভব করেছিলাম বাঙালী যুদ্ধকালীন সময়ে কেমন ভাইভাই হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাঠে নেমেছিলো। কেউ কাউকে চিনে না কিন্তু সবার দাবী এক, লক্ষ্য এক। আর এখানেই সকলের মিলিত স্রোত এক কেন্দ্রবিন্দুতে এসে দাঁড়ায়।
পরদিন ভোর ছ'টায় দু'জনে মিলে রওয়ানা দেই। পৌঁছে দেখি তখনো ৭টাও বাজেনি, কিন্তু মানুষ অনেক। বেলা বাড়ার সাথেসাথে মানূষের ঢল! মনে আছে, দু'জনকে প্রশ্ন রেখেছিলাম। বুকের ভেতর লালন করা ঘৃণা আর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ সকলের মাঝে খুঁজে পেয়ে অজান্তেই যেনো নিজেও সাংবাদিকদের মতো পাবলিক সেন্টিমেন্ট জানতে কৌতূহলী হয়ে উঠলাম। এক ৭০/৭২ বয়সী ভদ্রমহিলা, তিনি কাদের মোল্লার 'ভি' চিহ্নকে সহ্য করতে না পেরে নীলফামারী থেকে প্রতিবাদে শরীক হতে চলে এসেছেন। আর দেড়মাসের শিশু কোলে নিয়ে আসা মা'কে প্রশ্ন রেখেছিলাম, এতো ছোট্টবাচ্চাকে নিয়ে আসতে সাহস করলেন কিভাবে? তাঁর উত্তর, নিজ সন্তানকে এমন ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী রাখতে তাঁদের ছুটে আসা। ভোরে চলে এসেছেন, যাতে ভীড় বাড়ার আগেই চলে যেতে পারেন, কিন্তু তাঁকে অবাক করে দিয়ে সাত সকালেই লোকে লোকারণ্য!!
FB_IMG_1454689509099

সেদিনের শাহবাগ বাঙালীকে আবারও তার শেকড় দেখিয়ে দিয়েছিলো। সেদিন থেকে শেকড় চিনতে শুরু করেছে বিভ্রান্তির বেড়াজালে আটকে থাকা নতুন প্রজন্ম।
বছরের পর বছর নানা ফন্দিফিকির করে গড়ে তোলা প্রজন্মকে নিয়ে সাজানো সেই বাগানে সত্যের আলোর বিচ্ছুরণ ঘটেছিলো সে সময়টাতে। তাইতো নিজেদের কঠিন সময়কে মোকাবেলা করতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছিলো নষ্টচক্র।

FB_IMG_1454689622124

ভয় পেয়ে গিয়েছিলো! হ্যাঁ, ভয় পেয়ে গিয়েছিলো! তাইতো ঐতিহাসিক সেই জনসমাগমকে দুর্বল করে দিতে কলুষিত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলো। নাম দিয়েছিলো, 'শাহবাগী' 'নষ্ট ছেলেপেলে' ট্যাগায়িত করেছিলো 'নাস্তিক' হিসাবে। তার সাথে যোগ হয় আরো একটি ভয়! যোগ-বিয়োগের হিসাব! সেই হিসাবের টানাপোড়ন আর পারষ্পারিক অবিশ্বাস নষ্ট করে দেয় বাঙালীর এই গরজে উঠা দ্রোহকে।

FB_IMG_1454689257652

তবুও আমি আশাহত হই না। ২০১৩ সালে যেই দাগ বাঙালীর বুকে আঁচড় কেটেছিলো, এর সুফল আসবেই। ইতিহাসের সুফল অল্পদিনে আসে না। সেদিনের গণ বিস্ফোরণের তাজা সুফল ছিলো 'জয় বাংলা' স্লোগানকে ফিরিয়ে আনা। এক সময় এই 'জয় বাংলা' উচ্চারণ করতেই মানুষ ভয় পেতো।

৭৫-৯০, বাঙালীকে যে উল্টো রাস্তা দেখানো হয়েছিলো, সময়ের ঘেরাটোপে বিভ্রান্ত বাঙালী সে পথেই হাঁটতে বাধ্য হয়েছিলো। ওই সময়টাতে বেড়ে উঠা বিভ্রান্ত প্রজন্ম ২০১৩ তে তার সঠিক পথটি খুঁজে পেয়েছে, এবার হাঁটতে হাঁটতে আলোকিত অবস্থায় ফিরে আসবেই।
ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। কাজেই আমাদের দায় বেশি। নষ্টচক্র কিন্তু বসে নেই! নতুন করে বিভ্রান্তির ফাঁদ পাতার জন্য তৎপর। তাদের এই অপতৎপরতাকে রুখে দেয়ার দায় কিন্তু আমাদেরই।

বিঃদ্রঃ অনিবার্য কারণবশতঃ আজকের পোস্টটি দেরী করে দেয়ায় আগামীকালের নির্ধারিত পোস্টটি রাত ১১:৪০ এর পরে প্রকাশ করা হবে, ব্লগের ২৪ ঘন্টার নিয়ম মেনে।

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ