
কেউ বলেন জমিদার বাড়ি, কেউ বলেন রাজবাড়ি। নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্তর্গত রূপগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও শতবর্ষী মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি। বিভিন্ন সময় এ জমিদার বাড়িটি কয়েকজন জমিদার কর্তৃক সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়েছিল। এটি উপজেলার মুড়াপাড়া নামক গ্রামে অবস্থিত।
জমিদার রামরতন ব্যানার্জী ১৮৮৯ সালে ৪০ হেক্টর জমির উপর নির্মাণ শুরু করেন মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি। তিনি নাটোর স্টেটের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন এবং তার সততার কারণে একটি উচ্চ পদে উন্নীত হন। কিন্তু প্রচলিত আছে, রামরতন ব্যানার্জী শুধু এই বাড়ির ভিত্তি ও কাঠামো তৈরি করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর ছেলে প্রতাপচন্দ্র ব্যানার্জী ১৮৮৯ সালে পুরনো বাড়ি ছেড়ে পেছনে আরো একটি প্রাসাদ তৈরি করেন। কথিত আছে, ১৯০৯ সালে জগদীশচন্দ্র ব্যানার্জী এই ভবনটি সম্পন্ন করেন। তিনি দুইবার দিল্লির কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। জগদীশচন্দ্র ব্যানার্জী তাঁর শাসনামলে অনেক কিছু তৈরি করেছিলেন। তবে ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় তিনি কলকাতা চলে যান।
এই জমিদার বাড়িতে প্রায় একশ’র উপরে কক্ষ রয়েছে। যার প্রায় সবগুলোতেই পাবেন কারুকার্যের ছোঁয়া। এতে রয়েছে কাছারিঘর, অতিথিশালা, নাচঘর, পুজামণ্ডপ, বৈঠকখানা, ভাঁড়ারসহ বিভিন্ন কক্ষ। জমিদার বাড়ির মূল ভবনটিই মুরাপাড়া ডিগ্রী কলেজ ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তার পাশে ১৯৯৫ সালে আরও একটি প্রশাসনিক ভবন নির্মিত হয়। আমাদের দেশের বেশিরভাগ জমিদার বাড়ির চেয়ে তুলনামূলক ভালো অবস্থায় রয়েছে জমিদার বাড়িটি। কিন্তু মূল ভবনের পেছন দিকে গেলে দেখা যায়, কীভাবে ক্ষয়ে যাচ্ছে এই বাড়িটি।
উপরের তথ্যগুলো নেট থেকে পাওয়া। এখন মুড়াপাড়া জমিদার বাড়িটা কলেজ হিসাবে ব্যবহৃত হওয়ায় সাবলীল ভাবে সব জায়গা ঘুরে দেখার সৌভাগ্য হবে না। আর করোনার এই সময়টাতে কলেজ বন্ধ রয়েছে, তার উপর মূল ফটকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষেধ। তবে ওখানে গেলে পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখতে না পেলেও পাশের শতবর্ষী আম বাগান বিশাল মাঠ-পুকুর, মন্দির সব মিলিয়ে একদিন ঘুরে বেড়ানোর জন্য অত্যন্ত চমৎকার একটা জায়গা।
(২) সিংহের পাহাড়ায় মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ির কলেজের সাইনবোর্ড।
(৩) সামনেই রয়েছে বিশাল পরিচ্ছন্ন পুকুর।
(৪) শেকলাবৃত্ত লৌহ কপাট। জমিদার বাড়ির অন্দর মহলটা দেখার আকাংখা মনের ভেতরে থেকেই গেলো।
(৫/৬) জমিদার বাড়ির সামনের আম বাগানটাও বেশ পুরোনো। কতোটা পুরোনো তা জানা হয়নি। তবে এই জায়গাটা আমার বেশ ভালো লেগেছে। নিচে বসার জন্য কিছু বেঞ্চ নির্মান করে দিয়েছে, ইচ্ছে হলে সবুজ ঘাসেও বসা যায়।
(৭/৮) কাঠ ঠোকরা আর কাঠ শালিক ছাড়াও এলাকাটায় প্রচুর পাখি রয়েছে।
(৯) গাছের ছায়ায় বসে আছে একজন ঝালমুড়ি বিক্রেতা।
(১০) এমন পরিবেশে ঝাল মুড়ি গুলো সত্যিই খেতে অসাধারণ হয়।
(১১) পর্যটকদের ফেলে যাওয়া খাবার ভাগাভাগি করে খাচ্ছে কাঠ শালিক আর ভাট শালিকেরা।
(১২/১৩) আম বাগানের পরেই রয়েছে দুটি পুরোনো মন্দির, তবে নতুন রং করা।
(১৪) মন্দিরের পাশেই রয়েছে এই সাইনবোর্ডটি।
(১৫) পুরোনো মন্দিরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আমি।
(১৬) মন্দিরের দরজার ভেতরে দাঁড়িয়ে তোলা কলেজের ছবি।
(১৭) মা ও শিশু।
(১৮) পর্যটকদের আনাগোনায় আম বাগানটা বেশ মুখরিতই থাকে।
(১৯) যাবার আগে ফুচকা ওয়ালার সাথেও একটু সাক্ষাৎ করতে হয়।
(২০) জমিদার বাড়িগুলো দেখে আমরা যতোটাই আনন্দ উপভোগ করিনা কেন আমার সব সময়ই মনে হয় এখানে রয়েছে বাংলার অনেক দুখী কৃষকের রক্ত-ঘাম। যদিও সব জমিদাররাই অতোটা খারাপ ছিলো না। তবে সব মিলিয়ে মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ির আমি প্রেমেই পড়ে গিয়েছি বলা যায়।
১৮টি মন্তব্য
জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব
অসাধারণ লিখেছেন
শুভকামনা রইল নিত্য
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ জাহাঙ্গীর ভাই, আপনাদের এমন মন্তব্য অনুপ্রেরণা যোগায়…….ভালো থাকবেন সব সময়।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সত্যিই খুবি খুবি ভালো লাগলো,দাদা।
এতো সুন্দর জায়গা তার সাথে দারুণ বর্ণনা।
পরিবেশ ও পাখি, দালানকোঠা, পুকুর সবমিলিয়ে অসাধারণ লাগলো।
কামাল উদ্দিন
আমিও তাই বলি দাদা, একটা দিন কাটিয়ে দেওয়ার মতো অত্যন্ত চমৎকার জায়গা এটা……..ভালো থাকবেন সব সময়।
ছাইরাছ হেলাল
দেখলেই কেমন যেন ভাল লাগা তৈরি হয়।
এত বড় বিশাল বাড়ী, কালের গর্ভে হয়ত একদিন হারিয়ে যাবে।
বাগানটি এখন ও চমৎকার।।
কামাল উদ্দিন
এমন ইতিহাসগুলো ছুয়ে দেখতে আমারও খুবই ভালো লাগে, তাইতো নাগাল পেলে ছুয়ে দেই ওদের, ভালো থাকবেন বড় ভাই।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সব জমিদার বাড়ি দেখার মতই দেখলে আমরা প্রেমে পড়ে যাই। কিন্তু শেষ কথাই সত্যি কৃষকের রক্তঝরা ইতিহাসে গড়া এসব ইমারত।
শুভ কামনা রইলো ভাইয়া।
কামাল উদ্দিন
হুমম, ধন্যবাদ আপু, ভালো থাকবেন সব সময়।
আরজু মুক্তা
জমিদার বাড়ি গুলো কথা বলে।
ভালো লাগলো আপনার বর্ণনা।
কামাল উদ্দিন
শুভেচ্ছা জানবেন আপু।
জিসান শা ইকরাম
জমিদার বাড়িটি এখনো অক্ষত আছে দেখে ভালো লাগলো খুব। এমনি শত শত জমিদার বাড়ি বাংলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে যা অযত্ন অবহেলায় ধ্বংস স্তুপে পরিনত হয়েছে।
বিশাল জমিদার বাড়ির ছবিটির দিকে তাকিয়েই আছি। এই সব পুরাতন ভবনগুলো আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। এটি কলেজ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলেই হয়ত টিকে আছে এখনো। ফিলিপাইনে একটি বাড়ির ধ্বংসাবশেষ দেখার জন্য লাখ লাখ পর্যটকের আগমন ঘটে। সময় পেলে সে কাহিনী লিখবো। আপনার এই পোস্টের কথা উদাহরন হিসেবে থাকবে সে লেখায়।
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ ভাই, ফিলিপাইনের ইতিহাস জানার অপেক্ষায় থাকলাম…….শুভ সকাল।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এখানে গিয়েছিলাম ২০১৩ তে। খুব ভালো লেগেছে। আপনার চমৎকার বর্ণনা আর ছবিতে আবারো দেখতে পেলাম চমৎকার জমিদার বাড়ি টি । ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন শুভ কামনা নিরন্তর
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ আপু, আমারও আগে একবার যাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে, তবে সেই ছবিগুলো আমি হারিয়ে ফেলেছি, ভালো থাকবেন সব সময়।
আলমগীর সরকার লিটন
খুব ভাল একটা জমিদারবাড়ির ছবি দেখালেন কামাল দা অনেক শুভেচ্ছা রইল
কামাল উদ্দিন
আপনার প্রতিও রইল অনেক অনেক শুভেচ্ছা লিটন ভাই।
তৌহিদ
জমিদার বাড়িগুলো দেখে আমরা যতোটাই আনন্দ উপভোগ করিনা কেন আমার সব সময়ই মনে হয় এখানে রয়েছে বাংলার অনেক দুখী কৃষকের রক্ত-ঘাম।
কথাটি সব মনুমেন্ট এর জন্যই প্রযোজ্য কিন্তু ভাই। শুভকামনা সবসময়। চমৎকার পোস্ট।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ তৌহিদ ভাই, ভালো থাকুন সব সময়।