লেডি হ‍্যাকার পর্ব_৪

সুরাইয়া পারভীন ৯ ডিসেম্বর ২০১৯, সোমবার, ০৮:২৫:২২অপরাহ্ন গল্প ১৮ মন্তব্য

নিলু আস্তে আস্তে তার বাবার পাশে এসে দাঁড়ায়। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। আনোয়ার একবার মেয়ের দিকে তাকায় তারপর বলে

আনোয়ারঃ মা নিলু বসো আমার সামনে। তোমাকে কিছু কথা বলার আছে।

নিলুঃ বলো বাবা কি বলার আছে?

আনোয়ারঃ মা তোমাকে না জানিয়ে আমি কাদের ব‍্যাপারীর থেকে টাকা নিয়েছিলাম।  তোমাকে কলেজে ভর্তি করার জন‍্য। তুমি তো জানোই আমার সামর্থ্য ছিলো না তোমাকে কলেজে ভর্তি করার। তাই নিরুপায় হয়েই আমাকে টাকা নিতে হয়েছে। তুমি যখন নিজের মুখে বললে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে চাও। তখন তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে আমি ব‍্যাপারীর কাছে হাত পাতি।

নিলুঃ বাবা শুনেছি লোকটা খুব বদমাইশ। কাউকে সে এমনি এমনি কিছু দেয় না। তোমাকে দিলো টাকা!

আনোয়ারঃ তুমি ঠিকই শুনেছো মা। এমনি এমনি টাকা ধার দেবার মতো মানুষ নয় সে। কিন্তু টাকাটা খুব দরকার ছিলো । তাই  বাড়ির দলিলটা দিয়ে টাকা নিয়েছিলাম। যা টাকা নিয়েছিলাম তা চার বছরে সুদে আসলে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আর তাছাড়া মাঝে মধ্যেই টাকা নিয়েছি। আমাকে ডেকে পাঠিয়ে বললো

কাদেরঃ দেখো আনোয়ার অনেক দিন তো হলো। টাকা নিয়েছো। তা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। টাকা গুলো তো ফেরত দিতে হবে নাকি? তা তুমি কি টাকা ফেরত দিতে পারবে? নাকি বাড়ি ভিটে ছেড়ে ,,,

আনোয়ারঃ ভাই যদি আরো কিছু দিন সময় দেয়া। আর কিছু দিনের মধ্যে আমার মেয়ের পড়ালেখা শেষ হবে। একটা চাকরি পেয়ে গেলেই আপনার সব টাকা শোকরে দেবো ভাই

কাদেরঃ তা না হয় নাও আরো কিছুদিন সময়। কিন্তু টাকাটা ফেরত দিতে পারবে তো?

নিলুর মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। মনে মনে বললো এসব কী বলছে বাবা, কেনো নিতে গেলো ঐ লোকটার থেকে টাকা? আমাকে একবারটিও জানালো না। নির্বাক নিলু কেবল তার বাবার কথা শোনে, কিচ্ছু বলে না।
মেয়ের এমন বিমর্ষ মুখ দেখে আনোয়ার জিজ্ঞেস করে
আনোয়ারঃ নিলু মা তা তোমার রেজাল্ট কবে বের হবে?
হঠাৎ চমকে উঠে নিলু। কি বলবে এখন নিলু? সারাজীবনে যে মেয়েটি তার বাবাকে একটাও মিথ্যে কথা বলেনি  আজ কি তবে মিথ‍্যে বলবে?
নিলুঃ থতমত খেয়ে বলে না,,,

এমন সময় আয়েশা ঘরে এসে  বলতে শুরু করলো

আয়েশাঃ অনেক সময় পাবেন বাবা মেয়েতে গল্প করার। এখন আসুন খেয়ে নেবেন। নিলু মা বাবাকে নিয়ে এসো।

নিলু যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। এ যাত্রায় নিলুকে বাঁচিয়ে নিলো ওর মা। কিন্তু কতোক্ষণ এভাবে এড়িয়ে যাবে সত‍্যিটা। নিলু ভাবছে ব‍্যাপারীর কথা।টাকাগুলো কোথা থেকে দেবে সে? যদি ভালো রেজাল্ট নিয়ে পাশ করতে পারতো তবে না হয় একটা চাকরি পাওয়া যেতো। তিন জনের সংসার খরচ চালিয়ে যা থাকতো তা দিয়ে আস্তে আস্তে বন্ধকী ঘর ছাড়াতো। কিন্তু এখন কি করবে নিলু। এস এস সি পাশে ওকে কে দেবে চাকরি? ডিপ্লোমাতে তিন বছর যতোই ভালো রেজাল্ট করে পাশ করুক না কেনো ফাইনাল রেজাল্ট না থাকলে তা মূল‍্যহীন।
হতাশায় গহ্বরে নিমজ্জিত হতে শুরু করলো নিলু।
এমন কেনো হয়? জীবন এতো জটিল কেনো?

নিলুর চোখে ঘুম নেই। সারারাত এপাশ ওপাশ করতে থাকে নিলু।  দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে গেছে, কাল সকালে শহরে যেতে হবে রিপোর্ট গুলো আনতে। না জানি রিপোর্টে কি আসে? অস্থির এক সময় কাটতে থাকে নিলুর। নির্ঘুম রাত কেটে গেলো নিলুর।

সকালে উঠে শহরের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে গেলো নিলু। আজ আর ভ‍্যানে নয় বাসস্ট্যান্ড অব্দি হেঁটেই গেলো নিলু। বাসে উঠে বসে আছে নিলু। বুকের ভেতর কেমন যেনো খচ খচ করছে নিলু। অজানা এক ভয়ে বার বার কেঁপে উঠছে নিলু বুক।  কি আসবে তার বাবার রিপোর্টে? সব ঠিকঠাক আছে তো!

রিসিপশন থেকে রিপোর্ট গুলো নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে গেলো নিলু। ডাক্তার রিপোর্ট গুলো হাতে নিয়ে একপলক দেখেই বললো
ডাক্তারঃ যা ভেবেছিলাম তাই হয়েছে। বলেই চুপ করে গেলেন।
নিলুঃ কি কি হয়ে স‍্যার বাবার? খুব খারাপ কিছু কি? প্লীজ স‍্যার চুপ করে থাকবেন না। বলুন কি হয়েছে বাবার?
ডাক্তারঃ প্লীজ শান্ত হন। আপনাকে শক্ত হতে হবে। আপনিই যদি ভেঙ্গে পড়েন তাহলে সবকিছু সামলাবেন কি করে?
নিলুঃ বলুন স‍্যার বাবার কি হয়েছে। আমি সব সইতে পারবো। বলুন আপনি
ডাক্তারঃ আপনার বাবার লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক‍্যান্সার হয়েছে। এখনো স্বাভাবিক পর্যায়ে আছে। উন্নত চিকিৎসার ব‍্যবস্থা হলে উনাকে বাঁচানো সম্ভব।

নিলু হতভম্ব হয়ে ডাক্তারের দিকে চেয়ে থাকে। এই মুহূর্তে কি করবে ভেবে পায় না, এ কেমন নির্মম নিয়তি, এ কেমন নিষ্ঠুরতা? কি করবে নিলু, কি করে বাঁচাবে তার বাবাকে? কথায় বলে না বিপদ যখন আসে চতুর্দিক থেকে আসে। নিলু চোখে অন্ধকার দেখে। একদিকে ব‍্যাপারীর টাকা ফেরত দিতে হবে অন‍্যদিকে বাবাকে বাঁচাতে অনেক অনেক টাকা দরকার।

নিলু দ্রুত বাড়িতে ফিরে আসে। বড্ড অসহায় নিলুর চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সে কাঁদতেও পারে না, যদি তার বাবা অথবা মা জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে, কেনো কাঁদছো?  বুকের মধ‍্যে কাল জলোচ্ছ্বাস বয়ে গেলেও তাকে থাকতে হচ্ছে শান্ত।  এ যে কতোটা যন্ত্রণার তা বলে শেষ করা যায় না। কিন্তু নিলু ভাবলো এভাবে চোখের সামনে বাবাকে শেষ হতে দেখতে পারবে না। সে ঠিক করলো বাড়ি জমি বন্ধক থাকলেও খুব বেশি টাকা নেইনি। বড়ো জড়ো ৫০-৬০ হাজার হবে। সে ঠিক করলো বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে বাবার চিকিৎসা করবে। নিলু বের হবে ব‍্যাপারী বাড়ির দিকে যাবার জন‍্য এমন সময় তার মা আয়েশা জিজ্ঞেস করে,

আয়েশাঃ নিলু কোথায় যাচ্ছো এই দুপুর বেলায়? তোমার বাবার রিপোর্টে কি বের হয়েছে কিছুই তো বললে না।

নিলুঃ মা আমি একটু বাইরে যাচ্ছি কাজ আছে। ফিরে এসে সব বলবো তোমাকে। আসছি আমি

আয়েশার বুকের ভেতর ধক করে উঠে। এই একটু আগেই এলো মেয়েটা আবার কোথায় বের হয়ে গেলো। মুখটা কেমন থমথমে দেখাচ্ছিলো। খারাপ কিছু কি হয়েছে?

নিলুঃ চাচা, ব‍্যাপারী চাচা বাড়িতে আছেন?
কাদেরঃ কে, কে এই ভর দুপুরে বাড়িতে এলো? এই খাঁ খাঁ দুপুরে একটু বিশ্রাম নেবার ও জো নেই। তা কে এমন হাঁকডাক করছো বাপু?

হঠাৎ অল্প বয়সী মেয়েকে দেখে ব‍্যাপারীর চোখ ছানাবড়া, হায় আল্লাহ এতো সুন্দর দেখতে! কে এই মেয়ে? মাথা থেকে পা অব্দি দেখতে থাকে ব‍্যাপারী। ভর দুপুরে এমন একটা সুন্দর মনে দেখে মনের মধ‍্যে কুবাসনা জেগে ওঠে। কেমন বিশ্রী দৃষ্টিভঙ্গি ৫৫-৬০ বছরের এই কাদের ব‍্যাপারীর।
কাদেরঃ কে তুমি?
নিলুঃ আসসালামু ওয়াইকুম। চাচা আমি আনোয়ারের মেয়ে।

এতো সুন্দর আনোয়ারের মেয়ে! লোক মুখে শুনেছে তবে আগে কখনো চোখে দেখেনি।
কাদেরঃ আসো আসো। ঘরে আসো,,,,,,,

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ