লেডি হ্যাকার পর্ব_১

সুরাইয়া পারভীন ৫ ডিসেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ০৯:১১:৫৯অপরাহ্ন গল্প ২১ মন্তব্য

সারা শহর জুড়ে তোলপাড় চলছে। টিভি চ্যানেল পত্রিকার পাতায় পাতায় এখন একটাই নাম নীলাঞ্জনা। নীলাঞ্জনা কোন শিল্পী, মডেল, নায়িকা কিছুই না। তবুও চলছে তাকে নিয়েই শোরগোল। দলে দলে লোক ভিড় জমাচ্ছে নীলাঞ্জনাকে এক পলক দেখার জন্য। কে এই নীলাঞ্জনা? কেন তাকে নিয়ে শহর জুড়ে তোলপাড় চলছে। চলুন জেনে নিই কে নীলাঞ্জনা, কি তার পরিচয়?

নীলাঞ্জনা, 27-28 বছরের তরুণী নীলাঞ্জনা। সুশ্রী সুন্দর এক যুবতী নারী নীলাঞ্জনা। এই বয়সে প্রত্যেক নারী ঘর সংসার স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে থাকে। কেউ এমন খবরের কাগজের পাতায় পাতায়, টিভি চ্যানেলের শিরোনাম হয় কিনা জানিনা। সাইবার ক্রাইমের আলোড়ন তোলা ক্রিমিনালদের সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। নীলাঞ্জনাও ক্রিমিনাল। সাইবার ক্রাইম অপরাধী।
অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে না! একজন নারী সাইবার ক্রাইম অপরাধী কিছুটা তো অবাক হবারই কথা। তাও যে সে অপরাধী নয় হ্যাকার। একজন দুর্ধর্ষ হ্যাকার এই নীলাঞ্জনা। শহর কাঁপানো হ্যাকার নীলাঞ্জনা কেনো এই  অপরাধীর জগতে প্রবেশ করলো? সুন্দর সুখের ঘর না হয়ে কেন সংশোধনাগার হলো তার আশ্রয় কেন্দ্র? কেন একজন নারীকে এমন জঘন্য অপরাধের সাথে জড়াতে হলো চলুন তা  নীলাঞ্জনার  মুখে শুনে নিন।

রিপোর্টারঃ নীলাঞ্জনা কেমন আছেন আপনি?
নীলাঞ্জনাঃ জ্বী ভালো আছি ।
রিপোর্টারঃ নীলাঞ্জনা আমরা আপনার সাথে কথা বলতে চাই। জানতে চাই আপনার এ অপরাধ জগতে প্রবেশ এর কারণ। কেনই বা একজন দুর্ধর্ষ অপরাধীতে পরিণত হলেন আপনি? আপনার তো সুখের সংসার করার কথা।
সেটা না করে কেন একজন হ্যাকার হয়ে উঠবেন? প্লীজ আমাদের সাথে শেয়ার করুন।

নীলাঞ্জনাঃ মৃদু হাসি!  কি হবে এসব জেনে? আমি একজন অপরাধী এবং আমার কৃতকর্মের জন্য শাস্তি প্রাপ্ত আসামী। ব্যাস আর কি জানা থাকতে পারে?

রিপোর্টারঃ জ্বী নীলাঞ্জনা আমরা জানি আপনি সাজাপ্রাপ্ত আসামি। কিন্তু আমরা যা জানি না সেটাই জানতে চাই আপনার থেকে। প্লীজ বলুন

নীলাঞ্জনাঃ বলুন কি জানতে চান?

রিপোর্টারঃ কিভাবে এবং কেন অপরাধ জগতে প্রবেশ? একজন নারী হয়ে এমন একটা পেশাকে কেন বেছে নিলেন? আপনি চাইলে একটা সুন্দর জীবন পেতেন। সেটা না করে এমন দুর্বিষহ জীবন কেন বেছে নিলেন।

নীলাঞ্জনাঃ সবকিছুরই শেষ থাকে। আমার যাত্রাও শেষ হবে জানতাম। একদিন এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে সেটাও জানতাম। জানেন তো আর দশটা নারীর মতো আমিও স্বপ্ন দেখতাম নিজের পায়ে দাঁড়ানোর, সুখের সংসারের, স্বামী ছেলে মেয়ে নিয়ে ভালো থাকতে। কিন্তু অদৃষ্ট আমায় সে স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি। জীবন দেয়নি আমাকে ভালো থাকার অধিকার। চাইলেও সবাই ভালো থাকতে পারে না। দুচোখ ভরে স্বপ্ন নিয়ে সেদিন পাড়ি জমিয়েছিলাম শহরে। স্বপ্ন ছিল মস্ত বড় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হবো।

রিপোর্টারঃ সেই পূরণ হলো না কেন? কি এমন ঘটল যে আপনাকে এরকম একটা পথ বেছে নিতে হলো?

নীলাঞ্জনাঃ জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় এসে আবার ফিরে যেতে হবে এক যুগ আগের সময়ে। শুনুন তবে,,,,

তখন ঘোর সন্ধ্যা। আনোয়ার রাতের খাবার খেয়ে ঘরে প্রবেশ করে। তার স্ত্রী পান সাজিয়ে হাতে দিয়ে বের হবে, এমন সময় আনোয়ার বললে উঠলো।

আনোয়ারঃ নিলুর মা কই যাও? একটু পাশে এসে বসো, কথা আছে।
আয়েশাঃ জ্বী বলেন
আনোয়ারঃ নিলুর কি  এখনোও পড়ছে?
আয়েশাঃ জ্বী,,মেয়েটা রাতদিন পড়েই চলেছে। সামনের মাসে এস এস সি পরীক্ষা।
অানোয়ারঃ মেয়েটা আমার ছাত্রী হিসাবে অনেক ভালো।স্কুলে সব সময় প্রথম হয়। এবারও তাই হবে। নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে সারাদিন এতো পড়তে হবে না। দেখে রেখো মেয়েকে।

আয়েশাঃ আপনার মেয়ে কি শোনে আমার কথা? পড়তে পারলে যেনো আর কিছই চাই না মেয়ের। আল্লাহর অশেষ কৃপায়  এমন মেধাবী সন্তান পেয়েছি আমরা।

আনোয়ারঃ এবার যাও মেয়েকে খেয়ে বিশ্রাম নিতে বলো।

আয়েশাঃ নিলু মা হয়েছে, অনেক পড়েছো। এখন খেয়ে ঘুমে পড়ো মা।

নিলুঃ হ্যা মা, এখন আর পড়তে ইচ্ছে করছে না, খাবার দাও। নিলু খেয়ে ঘুমিয়ে

কিছু দিন পর,,,,

পরীক্ষা শেষ ও রেজাল্ট বের হয়েছে। গোল্ডেন ৫ পেয়ে এস এস সি পাশ করে নিলু। মেয়ে এমন রেজাল্টে আনন্দে আত্মহারা হন আনোয়ার, মনে মনে ভাবে আমার পরিশ্রম বিফলে যায়নি। মেয়েকে জিজ্ঞেস করে

আনোয়ারঃ তুমি তো অনেক ভালো রেজাল্ট করেছো।আমি খুব খুশি মা। এখন তুমি কি নিয়ে পড়তে চাও।

নিলুঃ বাবা আমার অনেক স্বপ্ন আমি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হবো।

আনোয়ারঃ ঠিক আছে মা তাই হবে

নিলুঃ কিন্তু বাবা এতে তো অনেক টাকার দরকার ।বাড়ির কাছে কোনো  ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নেই। শহরে গিয়ে পড়তে হলে অনেক টাকার খরচ। হোস্টালে থাকা, খাওয়া, পড়া লেখা। চিন্তার রেখা নিলুর কপালে।

অানোয়ারঃ হেসে ওঠে,,পাকা বুড়ি একটা। তোমায় এ নিয়ে ভাবতে হবে না। সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে তুমি শুধু মন দিয়ে পড়া লেখা করো। যাও মা রেস্ট করো

আনোয়ারঃ  নিলু মা,মেয়েকে বললাম তো সব ব্যবস্থা হবে। কিন্তু রোজগার তো তেমন নেই। যা হয় তাতে কোনো মতে খেয়ে বেঁচে আছি।  কিন্তু মেয়ের স্বপ্নও তো নষ্ট হতে দিতে পারি না। একটা কিছু তো উপায় করতে হবে।

আয়েশাঃ দেখুন যা ভালো বোঝেন করেন। ভেবে চিন্তে কাজ করেন। এখন ঘুমিয়ে পড়েন

মাঝরাত আনোয়ার এপাশ ওপাশ করতে থাকেন, দু'চোখে নেই বিন্দুমাত্র ঘুমের রেশ। একদিকে মেয়ের স্বপ্ন অন্য দিকে আর্থিক টানাপোড়েন। অর্থ সম্পদ বলতে কয়েক শতক বাড়ি ভিটে ছাড়া আর তেমন কিছুই নেই। আনোয়ার ঠিক করে নিলো বাড়ি ভিটে বন্ধক রেখে মেয়েকে পড়াবে!‌ যেই ভাবা সেই কাজ। পরের দিন গেলো কাদের ব্যাপারীর বাড়ি।

আনোয়ারঃ ভাই বাড়ি আছেন?

কাদেরঃ কে? আনোয়ার আসো আসো। তা শুনলাম তোমার মেয়ে নাকি দারুণ রেজাল্ট করেছে।

আনোয়ারঃ হ্যা ভাই, আল্লাহর রহমতে আর আপনাদের দোয়ায় মেয়েটা আমার অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে।

কাদেরঃ তা কি মনে করি তুমি এখানে এলে?

আনোয়ারঃ ভাই আমার মেয়ের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হবে। তার জন্য বাইরে থেকে পড়াশোনা করতে হবে মেয়েকে।

কাদেরঃ সে তো ভালো কথা, তা দাও ভর্তি করে।

আনোয়ারঃ সেজন্যই আপনার কাছে আসা, জানেন তো আমার সংসারের কথা। ভাই যদি কিছু টাকা,,,,

কাদেরঃ আরে আনোয়ার এখন তো হাতে কোনো টাকা পয়সা নেই। কোথা থেকে টাকা দেবো তোমাকে?

আনোয়ারঃ ভাই আপনিই শেষ ভরসা। আমি মেয়েকে কথা দিয়েছি ওর স্বপ্ন পূরণ করবো। ভাই যদি আমার বাড়ির দলিল নিয়ে কিছু টাকা দেন। তাহলে আমি আমার মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।

কাদেরঃ বললাম তো আনোয়ার এখন টাকা পয়সা নেই। তবে তুমি যখন এতো করে বলছো তখন ঠিকই কিছু একটা ব্যবস্থা করবো।

নিলুর শহরে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা শুরু করে। যেহেতু নিলুর পূর্বের রেজাল্ট ভালো ছিলো তাই সে অনায়াসে
কলেজ হোস্টেলে সিট পেয়ে গেলো। কম খরচেই থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে গেলো। নামকরা ভালো কলেজে ভর্তির চান্স পেয়েছে । নামিদামি কলেজ হওয়ায় এখানকার সেমিস্টার ফি একটু বেশিই। তবে মেধাবী ছাত্রী হওয়ায় নিলুর জন্য কিছুটা কম করা হয়েছে। নিলু দুর্দান্ত রেজাল্ট নিয়ে একটার পর একটা সেমিস্টার শেষ করে আর নিলুর বাবা কাদের ব্যাপারীর থেকে একটু একটু করে টাকা নিয়ে মেয়েকে পাঠাতে থাকে।

দেখতে দেখতে তৃতীয় বর্ষ কেটে গিয়ে ফাইনাল বর্ষে পা রাখলো নিলু। নিলুুর এমন রেজাল্টে কলেজে সবাই বেশ খুশি। সবার মুখে মুখে একটাই নাম নিলু,,,,

হঠাৎ কালবৈশাখীর ঝড় এলো নিলুর জীবনে।

0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ