লেখা জিনিস টা কি?

অরুণিমা মন্ডল দাস ১৯ জানুয়ারি ২০১৬, মঙ্গলবার, ১০:৫৭:১৬পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি, সাহিত্য ৯ মন্তব্য

দেখুন আমরা লিখছি আর আমি লিখছি কথার মধ্যে কতটা ফারাক। অহং বস্তুুটাই বিনাসের মূল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অহংকার ত্যাগ করতেই বলেছেন। লেখা আগে থাকতে হয় নাহলে কিন্তু পড়াটা ভালোমত হয় না। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন। আবার তসলিমা নাসরিন ও লিখেছেন । জয় গোস্বামী ও লিখেছেন। একটা জিনিস সবাই লক্ষ করবেন সবার লেখার ধারা কিন্তু আলাদা। মন নিঙড়ে নেওয়া কান্নার আবেগ বুকের গেঁথে যাওয়া টান সবার এক। সত্যি কথা বলতে আমি বই পড়তে বই গিলতে ভালোবাসি। আরব্যউপন্যাস ভ্রান্তিবিলাস বিক্রমাদিত্য পড়তে পড়তে মনে হয় পুরো হজম করে নি। খুব ছোটবেলাতেই রামায়ণ মহাভারত শেষ করে ফেলেছিলাম। কৃষ্ণকে স্বচক্ষে দেখার খুব আগ্রহ ছিল। আধ্যাত্মিক ব্যাপারটা মনকে খুব নাড়া দিয়েছিল। প্রসাদ দেখলেই অষ্টোত্তর শতনামের মত
ভক্তি উথলে উঠত। কবিতালেখা গল্পলেখা উপণ্যাস লেখা সবই কিন্তু লেখা লেখার মধ্যে যেটা দরকার সেটা হচ্ছে ভক্তিভাব। কি লিখছি, কেন লিখছি, লিখতে যাব কেন, এই প্রশ্নগুলো যখন আসবে তখন লেখার গতিবেগ বেড়ে যাচ্ছে। লিখতে বসেই যদি ভাবেন আমার নাম হয়ে গেছে বেকার কেন মাথা খাটাব। পাবলিক তো পাল্টি খাওয়া পাবলিক এদিক ওদিক থেকে মেরে সেঁটে দিলেই বোকা পাবলিক খুব খুশি। মনে মনে ভাবছে আর কবি আর বইয়ের নাম পত্রিকার নাম জপছে। একজন বড় স্তাবক যদি আপনার লেখাতে মুগ্ধ হন কোনরকমভাবে তাহলে ছোট স্তাবকদের স্তুতি পাওয়াটা আপনার কাছে জলভাত মনে হবে।
লেখা র প্রকৃত মানে
১)আমার মতে লেখা কারোর মনের বা কোনো স্তুতির উপযোগী না হয়ে নিজের মনকে সান্ত্বনা দিতে পারে নিজের বুকের যন্ত্রণা মেটাতে পারে নিজের নিরিবিলি বিশ্রামের নিশ্চিন্ত পাশবালিশ হওয়াটাই একান্ত কাম্য মনে করি।
২)ধরুন আমি যেটা লিখলাম সেটা আমার ভালো লাগল না বিশাল বিশাল ডিক্সনারী র অর্থ দিয়ে লেখাটা দামী হল শিক্ষিতসমাজে দশটা হাততালিও পেল কিন্তু সেটা প্রকৃত লেখা হল না কারণ আপনি হৃদয় দিয়ে লেখেন নি। আপনার পোষা ময়নার মত লেখাটা কখনই আপনার মুখে মুখ লাগিয়ে কথা বলবে না। পাড়ার বড়বাবুর মত সবসময়ই আপনার কাছ থেকে তফাতে থাকবে।
৩)আমি মোটামুটি লিখি। ভালো লেখার জণ্য ভালো পাঠক হওয়া জরুরি। বেশি বই কিনতে অক্ষম। বাচ্চা সংসার সামলে পেটের দায়ে কাজকর্ম করতে হয়। ফেসবুকের একজন উত্তম পাঠক হতে পেরেছি তাতে খুবই আনন্দিত।
৪)জটিল শব্দভান্ডার দিয়ে জবরদস্ত লেখাই শ্রেয় হয় এইরকম একটা ধারাবাহিক নিম্নচিন্তাধারা কিছু মাঝারি অাধাবড় লেখকদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে?তঁাদের মগজধোলাই হচ্ছে কিভাবে অল্প পরিশ্রমে বিখ্যাত হয়ে যাবেন। আমি তোমাকে ভালোবাসি সেটা বললে সবাই বুঝবে তাই বলা আমি তোমার পাণিগ্রহণ করতে চাই। আমি হৃদয় দান করিতেছি বা আমি তোমার আমরণ পাশে থাকিব । এরকমভাবেই বলা হচ্ছে। মানে আজকাল কবি লেখকগণ কবিতার রসের স্বাদের সেবকের থেকে বাংলা ডিক্সনারী কট্টর পুঁথির সেবক হয়ে পড়েছেন।
৫)আমার একটা জিনিস মাথায় ঢোকে না। কবিতা লিখতে গেলে বই পড়াটা যদি আবশ্যক হয় তাহলে বলব অনেক কমশিক্ষিত কবি আছেন বড় নামকরা কবি হয়েছেন। সেটা কি করে সম্ভব হল আপনারা একটু বলুন দয়া করে। ফেসবুকের পন্ডিতকবি লেখক দাদা ওদিদি দের বলছি আপনারা একটু বুঝিয়ে দিলে নিজেকে কৃতার্থ মনে করব।
৬)সব লেখক কবি শিল্পী গায়ক অভিনেতা অভিনেত্রী সবাইকেই আমি আমার আত্মীয় মনে করি। মানুষের গা কেটে রক্ত বেরোলে আমার কষ্ট হয়। অসহায় গরিবের তিরস্কার দেখলে আমারও বুকে বাজে। কারণ আমি একজন মানুষ তাই। ফেসবুকের লেখকদের মধ্যে কলকাতার লেখকদের তুলনায় বংালাদেশী লেখকদের সহানুভূতি্শীল ব্যবহার ব্যবহার পেয়ে নিজের মায়ের পেটের দাদার ভালোবাসার থেকে কম মনে করি না। বাংলাদেশের লেখকদের সহজ সরল ভাষায় মনকাড়া লেখা আর সাধাসিধে ব্যবহার খুবই প্রশংসনীয় যেটা স্থানীয় বাঙালীদের মধ্যে খুব বেশী দেখা যায় না।
একটা বিষয় অবশ্যই লক্ষণীয় যে একজন কবি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন । বুকের রক্ত দিয়ে সাজান হয় গ্রন্থের হাসি। সবাই যখন রসিয়ে রসিয়ে পড়ে মজা পাই তখন কবিটি কিন্তু কঁাপছে জ্বরে। পড়তে পড়তে চিন্তা চিন্তা করতে মুখ দিয়ে ফেনা উঠে যাচ্ছে তাও ছাড়ছে না। কারণ তঁাকে লিখতে হবেই । দর্শকের মন সন্তুষ্ট করতে হবেই । একেই বলে একাগ্রতা। যেকোন বড় লেখকের এটা প্রধাণ ও বিশেষ গুণ হওয়া উচিত। হিমালয়তে সবাই উঠতে পারে না। কিন্তু ধাক্কা খেতে খেতে, ঠান্ডা খেতে খেতে, লাথি গুঁতো খেতে খেতে যার উঠার ইচ্ছা থাকে সে ঠিক উঠে যায়। যে মারা যায় সেও অমর। মানুষের মনে তঁার নাম গেঁথে যায়।
অনেকের লেখা সম্বন্ধে ধারনাঃ

১)আমি একজন অতি সাধারণ লেখক ও পাঠক। আমার বাবার লাখ লাখ বই সিডি নেই। আমার কবি হওয়ার পিছনে কোন প্রফেসর শিক্ষকের সাহায্য নেওয়ার সামর্থ্য ও নেই। কিছু বিত্তবান লেখকদের ধারণা কবি হতে গেলে উপরের ওইসব জিনিসগুলি খুব প্রয়োজন। কবি হতে কবিতার সামান্য অমৃত কি অতি মূল্যবান নয়। আমার মনে হয় না রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেঁচে থাকলে সবাইকে এইরকম মিথ্যে মগজধোলাই দিতেন। বিশ্বকবির চোখ দিয়ে দেখলেই পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় তিনি কড়াভাবে প্রতিবাদ করতেন। কবি ঠাকুরের মানসিকতা তঁার লেখার অন্তদৃষ্টি দিয়েই গভীরভাবে মন দিয়ে দেখুন তাহলেই বুঝতে পারবেন তিনি কি বলতে চাইছেন আর কেন বলতে চাইছেন। গ্রন্থকীট হয়ে পড়বেন না। পন্ডিতমূর্খ হতে বাঙালীরা খুব অভ্যস্ত। আমি জানি আমি সামান্য । তবু আমি অন্তদৃষ্টিতে এইরকম ব্যাপারগুলো অনুভব করতে পারছি। কাঠ নুন লঙ্কা লবণ পান্তাভাত গরিবের ভাঙা ঘর দিয়েও ভালো কবিতা করা যায়। তঁারজন্য অচিন্ত্যকুমার তারাশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় নির্মলেন্দু কুন্ডু হেলাল হাফিজ পুনরাধুনিক কবিদের মুখস্থ করে দ্বিতীয় নকলের প্রয়োজন নাই।

0 Shares

৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ