লিভিং রুট ব্রিজ বা শেকড় ব্রীজ

কামাল উদ্দিন ২৬ আগস্ট ২০২০, বুধবার, ০৭:২২:৪৭পূর্বাহ্ন ভ্রমণ ২৬ মন্তব্য

বাংলাদেশের সিলেট ঘেষা মেঘালয়ের পাহাড়ি গ্রাম রিওয়াই। পাহাড়ের ভেতর আকিবুকি কেটে বেড়িয়ে গেছে ছোট একটা পাহাড়ি নদী থাইলং। বর্ষায় এই নদীগুলো ভয়ঙ্কর গতিতে মেঘালয়ের পানিগুলো বাংলাদেশের ভেতর পাঠিয়ে দেয়। রিওয়াই গ্রামের সেই ছোট্ট নদীর দুই ধারে গজিয়ে উঠা কয়েকটি বট গাছের শেকড় জড়ো হয়ে তৈরি করেছে একটা সেতু। ওটাকে স্থানীয়রা নাম দিয়েছে ‘লিভিং রুট ব্রিজ’ বা শেকড় ব্রীজ।

ভারতের মেঘালয়ের রাজধানী শিলং থেকে যাচ্ছিলাম এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম মৌলিনং দেখতে, শিলং থেকে যার দুরত্ব ৮০ কিলোমিটার। শিলং এর গড় উচ্চতা যতটুকু জানি ৫০০০ফিট। আর মৌলিনং এর উচ্চতা আনুমানিক ১০০০ফিটের বেশী নয়। তো শিলং থেকে ট্যেক্সি নিয়ে আঁকাবাঁকা ভয়ঙ্কর পাহাড়ি পথ ধরে একটানা নেমে আসতে আসতে যখন উচ্চতার তারতম্যের জন্য বাতাসের চাপে কান ব্যাথা শুরু হয়ে গেলো তখনি ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে দিলো রিওয়াই গ্রামে। বললো সামনে একটা ব্রীজ আছে একটু হেটে দেখে আসুন। ড্রাইভার বাংলা বলতে পারলেও ওর সব কথা ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। ভাবলাম কি আবার ব্রীজ দেখতে যাবো। শিলং এ ঠান্ডা থাকলেও এখানে বাংলাদেশের মতো প্রচন্ড গরম। অনিচ্ছা সত্বেও প্রথমে সিড়ি ও পরে পাথুরে পথ বেয়ে নেমে গেলাম। আর ঐ শেকড় ব্রীজ দেখে ভাবলাম, না দেখলে বড় মিস হয়ে যেতো। আসুন দেখি আমার ক্যামেরায় ঐ শেকড় ব্রীজ।


(২/৩) মেঘালয়ের রাজধানী শিলং থেকে রিওয়াই গ্রামের দিকে এমন পথ দিয়ে যখন আসি তখন ড্রাইভার অধিকাংশ সময় গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করেই গাড়ি চালিয়েছিলো। কারণ শিলং এর গড় উচ্চতা যতটুকু জানি ৫০০০ ফিট। আর রিওয়াই গ্রামের এর উচ্চতা আনুমানিক ১০০০ফিটের বেশী নয়। মানে আমরা ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে নামছিলাম বলে ইঞ্জিন বন্ধ রেখেই গাড়ি চালানো সম্ভব ছিলো।


(৪) রিওয়াই গ্রামের কার পার্কিং, এখানেই ড্রাইভার আমাদের নামিয়ে দিয়েছিলো শেকড় ব্রীজ দেখার জন্য।


(৫/৬) ট্যাক্সি থেকে নেমেই এমন ফুটপাতের পসার দেখে আমরা চমৎকৃত হলাম।


(৭) রিওয়াই গ্রামে দৈন্যতার ছাপ স্পষ্ট, তবে রাস্তাঘাট গুলো পরিচ্ছন্ন।


(৮) এ্যরো চিহ্ন দেখে ডানের লোকেশন ধরে আমরা এগিয়ে চললাম।


(৯) প্রথমে এমন পাথরের ব্লক দিয়ে বানানো সিড়ি পথ ধরে বেশ কিছুটা নেমে এলাম।


(১০) পরে এমন কিছু বুনো পথ পাড়ি দিয়ে আমাদের পৌছতে হয়েছিলো শেকড় ব্রীজে।


(১১) এক সময় চলে এলাম আমাদের কাংখিত শেকড় ব্রীজে। শেকড় ব্রীজ দেখে আমরা সত্যিই চমৎকৃত। কয়েকটা অশথ্থ মিলে কিভাবে যেন তৈরী করে ফেলেছে চমৎকার একটা ব্রীজ। পরে চলাচলের সুবিধার জন্য মানুষ ব্রীজের উপর কিছু পাথর সেট করে নিয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নীচ দিয়ে বয়ে চলে খড়স্রোতা জলধারা, এখনও অবশ্য এখানে ক্ষীণ জলধারা বহমান।


(১২) দুজন স্থানীয় বাসিন্দার সাথে শেকড় ব্রীজের উপর আমরা দুই বন্ধু।


(১৩) অনেক লোকই আসে এখানে পিকনিক করতে।


(১৪/১৫) নীচে নেমে ব্রীজের দুইপাশ থেকে তোলা দুইটি ছবি।


(১৬) ক্ষীণ পানির ধারায় জমাট বেধে থাকা কিছুটা পানিতে চলে স্থানীয়দের দৈনন্দিন গোসল ও ধোয়া মোছার কাজ।


(১৭) এবার আবার সেই পথেই ফিরে আসার পালা।


(১৮) ফুটপাতের পসারে অনেক দিন পর তুত ফল দেখে চমৎকৃত হলাম।


(১৯) তবে সব চেয়ে মজা পেয়েছিলাম এই টক মিষ্টি স্বাদের তুত ফল খেয়ে। পাতায় মোড়ানো এই ফলগুলো হাতে নিয়ে খেতে খেতে চলে এসেছিলাম আমাদের ট্যাক্সিতে। আর রওয়ানা হয়ে গিয়েছিলাম আমাদের পরবর্তি গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।


(২০) পথেই পড়ে এই "ব্যালেন্সিং রক" একটা ছোট পাথরের উপর বিশাল বড় একটা পাথর। ওটাকেও এক নজর দেখে রওয়ানা হয়ে গেলাম এশিয়ার ক্লিন ভিলেজ খ্যাত মৌলিনং এর পথে।

0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ