
লক্ষ শহীদের রক্তে রঞ্জিত এই বাংলার মাটি স্বাধীন হয়েছে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসেই। বাংলার মানুষ পেয়েছে লাল-সবুজ পতাকা। এই পতাকা আনতে গিয়ে মা হারিয়েছে সন্তানকে, বোন হারিয়েছে ভাইকে, স্ত্রী হারিয়েছে স্বামীকে, সন্তান হারিয়েছে পিতাকে। দেশমাতৃকাকে ভালোবেসে যারা যুদ্ধে গিয়েছেন তারা সকল মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে জীবনবাজি রেখে করেছে যুদ্ধ। এইকটাই পণ - "স্বাধীনতা আনবোই ঘরে আর নয় পরাধীনতা"।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে লক্ষ শহীদ। বাংলার হাজার বছরের ইতিহাসে ১৯৭১ এমন একটি বছর যা কোনদিন ভুলবে না এই জাতি। এই স্বাধীনতা প্রাপ্তিতে আমাদের হারানোর বেদনা যেমন আছে, তেমন আছে চির মূল্যবান স্বাধীনতার প্রাপ্তি। এ প্রাপ্তি সকল প্রজন্মের অহংকার। যা পৃথিবীতে জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ নামের একটি দেশের।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বাংলার স্বাধীনতাকে ঘরে আনতে বাঙালি জাতি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে হাতে তুলে নিয়েছিলো অস্ত্র। সাধারণ কৃষক শ্রমিক জনতা জেগে উঠে। নিজেদের যা ছিল তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিবাদে প্রতিরোধ সংগ্রামে। এই ইতিহাস কি করে ভুলে যাই, এও কি সম্ভব?
দীর্ঘ নয় মাস বাঙালি করেছে যুদ্ধ। ১৬ ডিসেম্বর জাতি অর্জন করেছে স্বাধীনতা। বিশ্ব মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়ালো বাংলাদেশ নামে একটি দেশ। বিজয় প্রাপ্তির এ ইতিহাস বাঙালিকে করেছে চিরঅম্লান। কারণ এ বিজয় অর্জনে বাংলার মাটিতে ৩০ লাখ তাজা প্রাণ ঢেলে দিয়েছে তাদের রক্ত।
ইতিহাস চলে তার নিজস্ব গতিতে। কালের প্রবাহে এক প্রজন্মের কর্ম আরেক প্রজন্মের কাছে হয়ে যায় ইতিহাস। তারই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার বীর জনতারা তাদের কর্ম দিয়ে হয়ে আছেন কালের সাক্ষী। বাংলাদেশের জাতীয়তাবোধের পরিচায়ক এই মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধারা। তারা দেশ দিয়েছেন, পতাকা দিয়েছেন বলেই আজ বাঙালি জাতি আপন সত্তা দিয়ে পরিচিত হয়েছে বিশ্বের কাছে।
ইতিহাসের পিছনে থাকে আরও ইতিহাস। থাকে নানা তর্ক-বিতর্ক। কিন্তু যাদের নিয়ে ইতিহাস তাদের জবানি অনেক বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে দেয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন এদেশের স্বাধীনতার জন্য যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন তারা সবাই বীরসেনা। সম্মুখ সমরের কমান্ডে সেনা সদস্য থাকলেও এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের ময়দানে লাখো জনতা শামিল হয়েছেন। তাই সবাই এক বাক্যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে 'জনযুদ্ধ' হিসেবে অভিহিত করেন।
মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিসেনার পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছেন হাজারো ভারতীয় সেনা। তাদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে বাংলার পথঘাট। বাংলাদেশের বিজয় ছিনিয়ে আনতে শহীদ হয়েছেন অনেক ভারতীয় সেনা। ভারতের জনগণ এবং সরকারের এই সাহায্যের কথা আমরা আজীবন চির কৃতজ্ঞ স্মরণ করবো। ভারতীয় সেনাদের প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
মহান মুক্তিযুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাসের নানান ঘটনা যা শিহরিত করে মনকে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যখন কোন মুক্তিযোদ্ধার মুখ থেকে জানতে পারি, কখনো কখনো মনে হয় কেন আমি তখন ছিলাম না? কেন পারলামনা যুদ্ধে যেতে? সেইসঙ্গে শ্রদ্ধা বিনম্র হয়ে বলি -আপনাদের সৌভাগ্য যে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। আর আমরা গর্বিত আপনাদের উত্তরসূরি হতে পেরে।
বিজয়ের মাসে এদেশের মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ, রাজাকার-আলবদরদের সঠিক তালিকা প্রকাশ সহ সকল বিতর্কের অবসান ঘটুক। আমরা তরুণ প্রজন্ম সত্য ইতিহাস জানতে চাই, বুকে লালন করতে চাই একাত্তরের বীরত্ব ও বিজয়গাথা।
এই মহান বিজয়ের মাসে সোনেলার সকল পাঠক, লেখক এবং শুভানুধ্যায়ীদের বিজয়ের শুভেচ্ছা রইল।
"সবক'টা জানালা খুলে দাওনা
আমি গাইবো গাইবো বিজয়ের-ই গান...
যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে দিয়েছিলো প্রাণ
সবক'টা জানালা খুলে দাওনা...."
[ছবি- নেট থেকে
কৃতজ্ঞতা - ৭১ বীরত্ব বীরগাথা বিজয় বইটির প্রকাশক জনাব শোয়েব মোঃ তারিকউল্লাহর লেখা থেকে কিছু অংশ সংকলিত।
গান - সব কটা জানালা খুলে দাওনা
শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন।]
১২টি মন্তব্য
জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব
বাঙালি বহু ত্যাগ আর প্রতীক্ষার পরে পেয়েছে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের স্বাধীনতা।
যার জন্য বাঙালি দিয়েছে কত বুকের তাজা রক্ত
সহ্য করতে হয়েছে শাসন নামক পৈশাচিক নির্যাতন।
দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা।
শুভকামনা রইল সতত।
বিজয়ের শুভেচ্ছা নিবেন।
তৌহিদ
বিজয়ের শুভেচ্ছা আপনাকেও। ভাল থাকুন ভাই।
আলমগীর সরকার লিটন
বিজয় মাসের অনেক শুভেচ্ছা রইল প্রিয় কবি তৌহিদ দা
তৌহিদ
ধন্যবাদ ভাই, আপনাকেও অনেক শুভেচ্ছা রইল।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
বিজয় মাসের শুভেচ্ছা। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতাকে আমরা অর্জন করেছি। কিন্তু এর মর্যাদা বা সম্মান কোনটাই ধরে রাখতে পারিনি। নিজেকে নিজেই ধিক্কার জানাই এমন অভাগা জাতি হিসেবে। ভারতীয় সেনাবাহিনীদের ত্যাগ কেও অস্বীকার করে , ভুলে গেছে। বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো সেইসব বীর সেনা, মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা, লাখো শহীদের প্রতি।
তৌহিদ
স্বাধীন জাতি হিসেবে আমরা আমাদের স্বাধীনতার মর্যাদা অনেকাংশেই খর্ব করেছি। এর পেছনে রয়েছে স্বার্থপরতার দীর্ঘ ইতিহাস। বিজয়ের শুভেচ্ছা আপনাকেও।
ভাল থাকুন দিদিভাই।
রোকসানা খন্দকার রুকু
বিনম্র শ্রদ্ধা রইল সেই সব ত্যাগীদের জন্য। আমরা ছিলাম না কিন্তু আজও শিউরে ওঠে লোমগুলো। কি ভয়ানক ছিল!
শুভ কামনা রইলো। শুভ সকাল।
তৌহিদ
দেশের স্বাধীনতার রক্তাক্ত ইতিহাস এর পিছনে রয়েছে নাম জানা অজানা লক্ষ মানুষের রক্তাক্ত বলিদান। আমরা যেন তাদের কথা বলি না যাই। চিরকৃতজ্ঞ ভরে স্মরণ করি দেশমাতৃকা সেবায় নিয়োজিত সকল বীর সন্তানদের।
ধন্যবাদ জানবেন আপু।
জিসান শা ইকরাম
বিজয়ের শুভেচ্ছা আপনাকেও।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বাঙালির ত্যাগ, আত্মদান কখনোই ভুলে যাবার মত নয়।
শ্রদ্ধা জানাই শহীদ ত্রিশ লক্ষ বাঙালির আত্মাকে,
নত মস্তকে শ্রদ্ধা জানাই সম্ভ্রম হারানো দুই লক্ষ মা বোনের প্রতি।
ভারত সরকার এবং যুদ্ধে নিহত ভারতের সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা।
পুরান শকুনেরা আবার ফিরে এসেছে,
জাতিয় পতাকাকে খামচে ধরেছে পুরান শকুন।
এদের প্রতিরোধ করা না গেলে ভোগান্তি হবে বাঙালিদের।
শুভ কামনা।
তৌহিদ
মাঝেমধ্যে মনে হয় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যদি আমি থাকতাম তাহলে সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে দেশের জন্য জীবন দিয়েও সার্থক জনম পেতাম। ঘৃণ্য স্বার্থপরতার আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে স্বাধীনতার রক্তাক্ত ইতিহাস।
এ দেশের পতাকাকে খুবলে খাওয়া শকুনেরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তাদের প্রতিহত করতেই হবে।
বিজয়ের শুভেচ্ছা আপনাকেও ভাই। মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আরজু মুক্তা
লাল সবুজের পতাকা পতপত করে আকাশে উড়ুক
তৌহিদ
ধন্যবাদ আপু। এই পতাকার মান ধরে রাখা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য।