
হোটেল শেরাটনের সামনে এসে আমাদের লাল বাস চাকা পাঙ্কচার।তুমি আমাকে হাত ধরে নামালে। আমরা ফুটে বসলাম। প্রচন্ড খিদে পেটে বোধ করি পাখির গান কিবা ফুলের সৌরভ কোনটাই মনে ধরে না। সুকান্ত যথার্থ বলেছেন– খিদের রাজ্যে পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি। আরেক কবি কোন দিন উপোস করেনি বলেই হয়তো রোমান্টিক ছন্দে বলেছেন– ফুল কিনিও ক্ষুধার লাগি। খিদে লাগলে কি ফুলের গন্ধে পেট ভরে?
— খুব খিদে লেগেছে রে।
— আমারো।
চল কিছু খাই।
আমার পকেট খালি।
তুমি পার্সে খুঁজে পাঁচ টাকার একটি কয়েন পেয়ে বললে– আমার কাছে পাঁচ টাকা আছে।– পাঁচ টাকা দিয়ে তুই আমাকে শেরাটনে খাওয়াবি?আহা! শেরটন, শুধু দেখেই গেলাম।খাওয়া তো দূরে থাক,কোনদিন ভেতরটাও দেখা হয়নি। একদিন একবেলা যদি শেরাটনে খেতে পারতাম তাহলে জীবনটা ধন্য হতো।
কথা গুলো বলছিলাম শেরাটন হোটেলের দিকে তাকিয়ে।তুমি আমার কথায় কোন আক্ষেপ করেছিলে কিনা তা আমি জানি না, তবে তোমার মুখে কেমন জানি দুখি একটা ভাবছিল।চোখছিল খুব শান্ত।আমি তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলাম।তুমি চুপ মেরে রইলে। ঠিক তখনি সহপাঠীদের হৈ চৈ– বাস সচল হয়েছে।আমরা হৈ হুল্লোর করে বাসে উঠলাম। সহপাঠীদের একজন আজম খানের গান ধরলো– আলাল ও দুলাল– তাদের বাবা হাজী চাঁন—
সাথে আমরাও তাল মিলালাম। সে কী আনন্দ,কী উল্লাস,কী উচ্ছাস!আমি খিদের কথা ভুলে গেলাম।
তিন মাস পরের ঘটনা।
ভার্সিটি বন্ধ। তুমি এসে সকালের ঘুম ভাঙালে। বললে,এক্ষুণি শাহবাগে যেতে হবে– তাড়াতাড়ি ভাল জামাকাপড় পড়ে রেডি হও।
— শাহবাগ কেন? কেউ কি অসুস্থ?পিজি বা বারডেমে আছে?তুমি বললে দেরী হচ্ছে, জলদি করো!
আমাকে সঙ্গে নিয়ে বহুবার শপিং করেছো। আমার পছন্দ নাকি অন্যরাও খুব পছন্দ করে।শুনে ভালোই লাগে আমার। তা ছাড়া বিয়েবাড়িতে, জন্মদিনের উৎসবে অনেকবার আমাকে সংগে নিয়েছো।হিন্দু বাড়ির বিয়ের সাতপাকে বাধা এবং যদিদং হৃদয়ং মম মন্ত্রটা শুনতাম অবাক হয়ে। আমার খুব ভাল লাগতো।
ভাবলাম হয়তো এমন কোন কিছু হবে একটা। রোগী দেখতে গেলে তো এতো সাজগোজ করার কথা নয়।
রিক্সা তোমার প্রিয় বাহন। তার নামও দিয়েছো ময়ূরপঙ্খী!
এই ময়ূরপঙ্খী!শাহবাগ যাবে? বারণ করা সত্ত্বেও রিক্সায় উঠেই হুট তুলে দিলে। বললে আজ হুট থাকুক,অন্যদিন খোলা থাকবে। কারণ কি জিজ্ঞেস করেও উত্তর পেলাম না।তোমার চুল উড়ে আসছিলো নাকেে মুখে—–চুলে কী মেখেছিস?– রেভলন।– খুব নেশা ধরে রে!–কেমন?–মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা সুগন্ধী রেড লেবেল ওয়াইনের মতো!- ফুসফুস ভরে গন্ধ নে,যত খুশী তত!আমি চুলে মুখ লুকালাম। শুধু ফুসফুস নয়,হৃদপিন্ড ভরে নিলাম তোমার শ্যাস্পু করা চুলের গন্ধ। তুমি আমার হাত শক্ত করে ধরে রাখলে। বললে আড়ং থেকে নতুন এই থ্রীপিসটা নিয়েছি– কেমন হয়েছে?–খুব সুন্দর!– যে পরেছে সে কি সুন্দর না?
— তুমি কালো,মেরুন কালার তোমাকে মানায় না।ফর্সা হলে মানাতো।ব্যস!মুহুর্তেই তোমার ফুরফুরে মেজাজ গভীর মৌনতায় রূপ নিলো।অনেক বুঝিয়ে বলার পরও তোমার অভিমান ভাঙাতে পারলাম না।শত সহস্র চুমু দিলাম। বললাম ওরে গাধী তোর ভালটাও আমার মন্দটাও আমার।ভেজা চোখে চুমু দিতে গিয়ে বললাম,চোখে এত জল যে গোসল করা যাবে! তা,চোখে কি কাজল দিয়েছো গো সখী- এতো জলেও দেখি কাজল নষ্ট হচ্ছে না! তুমি ক্ষীণ কন্ঠে বললে– লেকমে! আমরা দুজনেই হাসলাম।
(চলবে)
৯টি মন্তব্য
রোকসানা খন্দকার রুকু
দুরো, কাজলের অনেক দাম। কাঁদিয়ে দেয়া ঠিক হয়নি। নষ্ট হলে তো কিপটে কিনেও দিবে না।
বন্ধুরাই ভালো যুগল হয়। একে অপরকে বোঝে। তখন দৈন্যতাও হার মানে।
লোভ সামলাতে পারছিলাম না তাই টি ব্রেকে, সামান্য ফাঁকি মেরে লেখা পড়া স্বার্থক হলো। চলুক লাল বাস আমরা অপেক্ষায়,,,,,
বন্যা লিপি
পড়লাম…..
পরের পর্বের অপেক্ষায়।
জিয়া আল-দীন
আজ দ্বিতীয় পর্ব পোস্ট দেবো।।ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
জিয়া আল-দীন
কেঁদে যদি কাজল লেপ্টেই না যায় সে কাজল যতই দামী হোক — আমার কাছে চারআনাও দাম নেই।
মোটা করে চোখে কাজল দিলে বাঙালি মেয়েদের যতটুকু সুন্দর আর মায়াবতী লাগে তা অন্য কোন দেশের মেয়েদের লাগে না।
দীনতা ছিল,তবে ভালবাসার ঘাটতি ছিল না। প্রেমিকা হলেও শ্রেষ্ঠ বন্ধুছিল।
লাল বাস চলবে বুকের ভেতর শব্দ করে– এমনকি মৃত্যুর পরেও।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আহা! চারুকলা ছিল কি?
ব্লগে হয়ে ভালো হয়েছে। ফেসবুকে মজা করা যায় না। এবার আপনাকে খুব জ্বালাতে হবে।
মাথা ব্যথা ঘুমাই। কাল আবার ফাঁকি মেরে লাল বাসে উঠবো থুক্কু পড়বো।।
মনির হোসেন মমি
চলুক লাল বাস ।।পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়ে গেছে।লাল বাসের টোল ফ্রি।
দুজনার মাঝে চমৎকার রসায়ণ।চলুক।
হালিমা আক্তার
কাজল দেয়া চোখে কেন জল আসে গো। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
বেশ আন্তরিক সৃজন বোঝা যাচ্ছে!
আকর্ষণ রেখে সমাপ্তি , অসামান্য।
শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানবেন সতত।
সাবিনা ইয়াসমিন
আমি এখানে লাল বাসের গল্প পড়তে এলাম আর লেখক চড়ে বসলো হুড তোলা রিক্সায়! এইটা কিছু হইলো!?
আবার “ খিদের রাজ্যে পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি” সুকান্তের লাইনটাও আধা-আধি লিখেছে।
গায়ের রঙ কালো বলে মেরুন কালার মানাবে না! এটা কোন কথা! মেয়েটা অনেক ভালো তাই কেঁদেই মন হাল্কা করেছে, কপাল খারাপ হলে রিক্সা থেকে ছুঁড়ে ফেলতো।
যাই, এখন পরের পর্বে