লাইফ ইজ ডিউটিফুল

নীলাঞ্জনা নীলা ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, বৃহস্পতিবার, ১১:৩০:৪৭পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি, বিবিধ ৪১ মন্তব্য

লাইফ ইজ ডিউটিফুল...
লাইফ ইজ ডিউটিফুল...

আমি কখনো বইয়ের রিভিউ লিখিনি। লিখতে জানিও না। আসলে চেষ্টাই করা হয়ে ওঠেনি। এই যে পোষ্টটি লিখতে বসেছি একটি বই প্রকাশের কথা জানাতে। "লাইফ ইজ ডিউটিফুল" একটি রম্য ছড়ার সঙ্কলন। আগেই বলেছি রিভিউ আমার কম্মো নয়। আর বইটি নিয়ে বলার আগে কিছু কথা বলতে চাই।

কিছু কবি-সাহিত্যিক-লেখক আছেন, যারা নিজেদের প্রতিভাকে আড়ালেই রাখেন। পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত হলেও সেসব নিয়ে খুব বেশী মাতামাতি করেননা। আর প্রচারণার তো ধারে-কাছে যা্ননা। তেমনই একজন রম্য ছড়াকার ব্রত রায়। বাংলাদেশের বাইরে পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকা, দেশ ম্যাগাজিনেও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু জেনেছি তার থেকে নয়। প্রচার-বিমুখ এই ছড়াকারের  প্রথম বই "লাইফ ইজ ডিউটিফুল" প্রকাশিত হয়েছে। অভিনন্দন ছড়াকার ব্রত রায়কে। বইটি পাওয়া যাবে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের ভেতরে স্টল নং ৪০৭-৮, দেশ পাবলিকেশন্স।

ওর একটি লেখা এমন, **আপনার সামনে আছে চারটি ইস্যু - বইমেলা, ভ্যালনটাইনস্‌ ডে, বিয়ে দিবস আর বিআরটিসির নষ্ট বাস। আপনি কী করবেন? একটিকে বেছে নেবেন? না একাধিক? এক কাজ করা যাক - বাসে চড়ুন, সেটা নষ্ট হোক বইমেলার কাছে এসে। তারপর? আসুন এগিয়ে যাই ......

বিআরটিসির
বাস এবং ....
ব্রত রায়

বইমেলাতে যাচ্ছি সেদিন অনেক ছিল তাড়া
মেলার থেকে খানিক দূরে - হঠাৎ এ কী ফাঁড়া!
বাসটা গেল নষ্ট হয়ে - হায় রে বিআরটিসি
চলার উপযুক্ত আছে অল্প কয়েক পিসই!
আর কোনো বাস আসছিল না উপায় কী যে করি
গাঁটের কড়ি খরচা করে বিকল্প পথ ধরি।

একটা খালি রিকশা দেখে দৌড়ে গেলাম আমি
যায় কি না যায় চেক করি নি, নাই রে দামাদামি!
উঠতে যাব এমন সময় "রিকশা যাবে নাকি?"
পেছন থেকে কারোর গলা ডাকল যেন পাখি!
কানের কাছে উঠল বেজে চুড়ির রিনিঝিনি
চমকে দেখি বাসের সহযাত্রী ছিলেন ইনি।

ডেস্টিনেশন একই ছিল, রিকশাও নেই আর
একসাথে হয় দু'জন মিলে যাত্রা চমৎকার!
আমায় দেখে হয় নি মনে বোধ হয় খারাপ কিছু
বইমেলাতে ঘন্টাদুয়েক আমার আগুপিছু
চলেন তিনি। ফুচকা খেলেন। আমার লেখা বই
পেলেন তিনি। সংগে পেলেন খোদ লেখকের সই!

ফেব্রুয়ারির চোদ্দ তারিখ দিবস ভালবাসার
দিনটা ছিল নবীন জুটির আরো কাছে আসার!
তারপরে যা হওয়ার ছিল সেটাই হল দ্রুত
যখন-তখন বেরিয়ে যেত কাছে আসার ছুতো!
সেটাও ছিল ফেব্রুয়ারি যেদিন হল বিয়ে
অনেক স্মৃতি অম্লমধুর বিয়ে দিবস নিয়ে!

এখন একই ছাদের নিচে পত্নী এবং পতি
ঝগড়া-প্রেমে দুজন আজও পরস্পরের গতি!
যেদিন লাগে লড়াই সেদিন অনেক কথাই ওঠে
সেইগুলো সব মিষ্টি কথা কেউ ভেবো না মোটে
সব বিষয়ে মত না হলেও এক বিষয়ে হই
দোষ যা সবই বিআরটিসির - আমরা দোষী নই!

এবারে ছড়াকার ব্রত রায়ের কথা দিয়েই লেখাটি শেষ করছি।

বিজ্ঞাপনের মতই ---- ব্রত রায়
=================
লেখালখির জন্য আমি আলাদা একটি আইডি ব্যবহার করি। আমাকে যারা ব্যক্তিগত বা সামাজিকভাবে চেনেন (আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী) তাদের বেশিরভাগই আমার লেখালেখি পছন্দ করেন না। যারা করেন তারা দু’টি আইডিতেই আমার সাথে যুক্ত। লেখালেখির আইডিতে আমার বন্ধুতালিকা এই সামাজিক তালিকার তিনগুণ। যেখানে ৯৫ শতাংশ মানুষ যেচে আমাকে যুক্ত করেছেন। সম্ভবত লেখার টানেই। আগে পত্রিকায় লেখা ছাপা হলে বা নতুন কিছু লিখলে এই সামাজিক আইডিতে পোস্ট করতাম বা শেয়ার করতাম কিন্তু দেখা গেল সেটি বেশিরভাগই না-পসন্দ করছেন (বা পছন্দ করছেন না)! তাই পোস্ট দেয়া বন্ধ করে দিলাম। দু’একজন জিজ্ঞেস করলেন, আপনার লেখা কি আর ছাপা হচ্ছে না? বললাম, হচ্ছে, সপ্তাহে ৩-৪টি করেই হচ্ছে। কিন্তু আপনাদের অগোচরে হচ্ছে!

এখন প্রশ্ন হল – আমার লেখা পত্রিকায় ছাপা হলে আমার আত্মীয় বা বন্ধুরা তার প্রতি প্রবল অনাগ্রহী কেন? কারণ বিশ্লেষণ করা যাকঃ
১। ও তো এখন ‘পরিচিত’। ওর লেখা ছাপা হবেই! এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। এতে মাথা ঘামানোর কী আছে? পড়ারই বা কী দরকার? তার চেয়ে ‘আমার ছেলে হাগু করেছে’ টাইপের স্ট্যাটাস বা গাবতলী এয়ারপোর্টের সেলফি নিয়ে মাথা ঘামানোই বেটার!
২। থ্রি-ইডিয়ট সিন্ড্রম! [এটার ব্যাখ্যার দরকার নাই।]
৩। ধুর, এসব সাহিত্য-টাহিত্য কে পড়ে? রবীন্দ্রনাথের ‘শেষের কবিতা’র পর কি আর ভালো কবিতার বই বেরিয়েছে? [ছড়া আর কবিতার পার্থক্যই বা ক’জন বোঝে?]

আমার জন্য এসব মাথা ঘামানোর ব্যাপার নয়। বইমেলায় আমার একটি বই বেরিয়েছে। এত কিছু ভেবে বই ছাপাই নি আমি। যারা কেনার তারা কিনবেন। মজা হল এই আইডির বন্ধু তালিকার এখন পর্যন্ত একজনও আমার ছাপা বই কেনেন নি! একজন ছাড়া আর কেউ আগ্রহও দেখান নি। কিন্তু অনেক প্রত্যন্ত এলাকা থেকে কেউ কেউ বই চেয়ে বিকাশ করছে। তারা আমাকে বা তাদেরকে আমি চিনিও না। তারা অবশ্যই ওই আইডির বন্ধু! সামটাইমস্‌ ভার্চুয়াল ফ্রেন্ড ইজ বেটার দ্যান রিয়েল ওয়ান। এ্যাট লিস্ট তারা টাকা ধার চেয়ে বসেন না বা ফেরত দিতে ভুলে যান না!
==============================================================

এবার আমি আসি আমার কথায়, আশা করি সকলে বইটি পড়ে দেখবেন। কেমন হলো, কেমন লাগলো। অসংখ্য ধন্যবাদ এবং অশেষ কৃতজ্ঞতা, যারা কষ্ট করে আমার এই পোষ্টটি পড়েছেন।

হ্যামিল্টন, কানাডা
২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ইং।

0 Shares

৪১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ