লকডাউন কেন দেয়া হলো না..?

শামীম চৌধুরী ১২ জুন ২০২০, শুক্রবার, ০৫:০৭:৪৭অপরাহ্ন সমসাময়িক ২৯ মন্তব্য
যারা কারফিউ, জরুরী আবস্থা, লকডাউন কেন দেশে সরকার দিলো না মূলতঃ তাদের জন্যই লেখাটা লিখলাম।
 
বৈশ্বিক এই দূর্যোগে গোটা বিশ্বে যখন কোভিড-১৯ নামক ভাইরাসটি বিশ্ব ভ্রমন করছে তখন আমাদের দেশ এই ভ্রমনকারী ভাইরাস থেকে মুক্ত নয়। মার্চের ৮ তারিখে আমাদের দেশে এই ভাইরাসটির প্রথম অস্তিত্ব পাওয়া যায়। প্রাশ্চত্য বিশ্বে ভাইরাসটি যখন মহামারীর রূপ নেয় তখন থেকেই বাংলাদেশ সরকার তার বৃত্তের ভিতর থেকে দেশীয় সরঞ্জামাদি দিয়ে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় করোনা চিকিসার জন্য হাসপাতালে করোনা ইউনিট তৈরীর কাজ শুরু করে। যদিও এই ইউনিটগুলি আন্তর্জাাতিক মানের স্বাস্থ্য সেবা দেবার উপযুক্ত নয়।
এখানে একটি উদাহারন এমন করে দেয়া যেতে পারে।
 
ধরুন প্রাকৃতিক দূর্যোগে সরকারী ভাবে হুশিয়ার করা হলো আপনারা কেউ এই সময় ঘরের বাহিরে যাবেন না। উপকুলীয় বাসিন্দারা আশ্রয় কেন্দ্রে থাকবেন। ইত্যাাদি ইত্যাদি। দূর্যোগটি আঘাত হানার পূর্বে হয়তো আপনি কোন জরুরী কাজে ঘরের বাহিরে। কাজটি সময় মতন শেষ করে ঘরে ফিরতে পারেননি। কিন্তু দূর্যোগের কালো থাবা আঘাত হানলো। আপনি কোন এক খোলা মাঠের মাঝখানে। কি করবেন?
নিশ্চয়ই দৌড়ে কোথাও আশ্রয় নিবেন। দেখা গেল দৌড়ে আপনি একটি বড় গাছের নীচে দাঁড়ালেন। সেই মুহুর্তে আপনার ভাবনায় নেই ঝড়ের তীব্রতা বা বাতাসের বেগ বেড়ে গেলে গাছের ডাল ভেঙ্গে আপনার মাথায় আঘাত করতে পারে । মূল কথা হলো আপনি আপনার সুরক্ষার পথটি তখন সেই মূহুর্তে এটাকেই উত্তম মনে করেছেন। ঠিক তেমনি করে সরকারও ভেবেছে আমাদের স্বল্পতা দিয়ে এই ব্যাবস্থায় আমরা জনগনকে সেবা দিতে পারবো।
 
এবার আসুন মূল কথায়ঃ
 
গত ২৬ মার্চ থেকে আমাদের দেশে সরকার সাধারন ছুটি ঘোষনা করেন। যা ৭ স্তরে বাড়িয়ে ৩০ মে’২০২০ শেষ হয়। আমাদের দেশে যখন সাধারন ছুটি ঘোষনা হয় তখন মৃত্যুর সংখ্যা ৫ জন। তেমন হারে সংক্রামিত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে নি। ফেব্রুয়ারী শেষ সপ্তাহে ইতালী থেকে প্রবাসীদের যে দলটি দেশে প্রবেশ করে তাদের কোয়ারিন্টিনে রাখার জন্য সরকারের উদ্দ্যোগ ভেস্তে যায়। তারা নিজ নিজ এলাকায় চলে যায়। প্রশাসন তাদের চিহ্নিত করে ১৪ দিন আইসোলেশনে রাখেন। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে অর্থ
জরিমানাও হয়। তখন প্রবাসী সহ দেশের অনেক বুদ্ধিজীবিরা বলেছেন দেশের বিমানবন্দর বন্ধ করা হোক, বিদেশ থেকে যেন কোন মানুষ দেশে আসতে না পারে। ইত্যাদি ইত্যাদি। মানুষ যার যার অবস্থান থেকে সব কিছুই বলতে পারে। কিন্তু বাস্তবায়ন করতে হলে রাষ্ট্রকে ভেবে চিন্তে করতে হয়। বললেই বিমান বন্দর বন্ধ করা যায় না। আমেরিকায় যখন ভাইরাস প্রতিদিন গড়ে ২৫০০জন লোক মারা যাচ্ছে তখনও তাদের নাগরিকদেরকে বাংলাদেশ থেকে চাটার্ড বিমানে ফেরত নিয়ে গেছে। এটা যে কোন রাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার নিজ দেশে ফেরা।
 
দেশে সাধারন ছুটি চলাকালীন সময়ে তিনদিন পর্যন্ত জনগনকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করতে ও ঘরে থাকতে দেখা গেছে। তারপর থেকেই সাধারন মানুষ বেপরোয়া চলাফেরা করেছে। কেউ বাধ্য হয়ে কেউ বা শখে। আস্তে আস্তে জনগনের কাছে সাধারন ছুটিটা ভ্রমন বা আনন্দের হয়ে উঠে। সরকারী আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে আড্ডা থেকে শুরু করে মিল কারখানায় কাজে যোগদান শুরু করে। যদিও এখানে সাধারন শ্রেনীর দিনমুজুররা জীবিকার ঝুঁকি বেছে নিয়েছে। তারপরও কাজটি সঠিক হয়নি। আর তখন প্রবাসী থেকে শুরু করে আবারো দেশের সুশীলরা চিৎকার শুরু করলো লকডাউন বা কারফিউ বা জরুরী অবস্থা ঘোষনা দিলে এমন হতো না। ইত্যাদি ইত্যাদি। সবাইকে নারায়নগঞ্জে নিয়ে যাচ্ছি। মনে আছে, নারায়নগঞ্জকে সম্পূর্ন লকডাউন ঘোষনার পরও কি জনগন ঘরে ছিলো? অথচ তখনও সরকারকে ঢালাও ভাবে দোষারূপ করা হয়েছে।
 
এবার আসুন সরকারের ব্যার্থতা কোথায় ছিলো?
 
প্রথমতঃ
সরকারের দোষ ছিলো এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় কে বা কারা মহামারীতে নিবেদিত হয়ে সেবা দিতে পারবেন তাদের চিহ্নিত করা। শুধু ডাক্তারই যথেষ্ট নয়। সাধারন ছুটি ঘোষনা দেবার পূর্বেই সরকারের নীতিনির্ধারকদের নিয়ে একটা গাইডলাইন তৈরী না করা। নিম্ন আয়ের মানুষদের জীবন ধারনের জন্য খাবারের ব্যাবস্থা না করা। সরকারী লোকজনের মাধ্যমে ত্রান বিতরন করা। সমাজের দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের তালিকা তৈরীতে দলীয় লোকজনকে দায়িত্ব দেয়া। এমন বেশ কিছু ভুলের জন্য সরকারের ব্যার্থতাকে আমি দায়ী করবো।
 
দ্বিতীয়তঃ
যেহেতু ভাইরাসটি স্বাস্থ্যজনিত তাই দেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপরই দায়িত্বটা বেশী। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এমন পরিস্থিতিতে কি ব্যাবস্থা নেয়া যেতে পারে তার কোন অভিজ্ঞতা না থাকায় সরকারকে সঠিক চিত্র দিতে পারেনি। যার জন্য সরকার তাদের পরামর্শ যাচাই বাছাই না করেই তাদের মতন করে স্বাস্থ্য ব্যাবস্থা সাজানো ছিলো সবচেয়ে বড় ব্যার্থতা। চিকিসকদের সুরক্ষার ব্যাবস্থা না করাটাও ছিলো ব্যার্থতা।
অথবা
স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত কর্মচারী বা মন্ত্রনালয়ের সাথে সরকারের দূরত্ব বা সমন্বয়হীনতা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপর শতভাগ নির্ভর করাটাও ছিলো সরকারের ব্যার্থতা।
 
সংক্রামন ছাড়ানোর জন্য জনগনই দায়ীঃ
 
মাত্র একটি মাস যদি আমরা ধৈর্য্য ধরে ঘরে থাকতে পারতাম তাহলে আমাদের দেশে করোনা ভাইরাস এত ছড়াতে না। এখানে সরকারের কোন দোষ নেই। কারফিউ লকডাউন দিয়েও এদেশের মানুষকে ঘরে রাখা যেত না। বিশ্বের কোন দেশই পারেনি। বরঞ্চ যারা প্রবাসী তারা এই কারফিউ ও লকডাউন নিয়ে সরকারের সমালোচনায় ফেসবুকে ঝাড় তুলেছেন।কারফিউ বা লকডাউন যে সংক্রমন রোধ করা সম্ভব না তার একটি উদাহারন দিলাম।
 
সৌদি আরবে একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৭১৭, শুধু রিয়াদে ১৩১৭ এপর্যন্ত মোট কেস ১১২,২৮৮। আমার ফুপতো ভাই ডাঃ আরিফ একজন উচ্চ পদস্থ সৌদি কর্মকর্তাকে ফোনে জানতে চাইলেন,
 
ঘটনা কি?
এত কারফিউ এত লকডাউন,
এতো টেস্ট,
কেস বাড়তেছে কেন?
 
তার জবাব শুনে ফুপতো ভাই আক্কেল গুরুম।
সৌদি বললেন-
 
“ইয়া আখী কুল্লু সাবাব মিন হারিম হাগগেনা।
 
অর্থাৎ এর কারণ হচ্ছে আমাদের নারীগন। তারা বাপের বাড়ী যাবে, ভাইয়ের বাড়ী যাবে লক ডাউনে বেড়াতে। কেমন করে বন্ধ হবে? আমি ভাবছিলাম তিনি বলবেন, বিদেশিদের কারণে বেড়ে যাচ্ছে।
 
যারা প্রবাসে বাস করেন তারা ভাবেন যে, আসমানে বসে আছেন। নীচে দেশের দিকে তাকিয়ে দেখছেন সারা দেশ করোনাময়। আর সরকারকে তুলা-ধূনা করে যার যার ফেসবুক পেইজে পোষ্ট দিচ্ছেন-
“আর কত লাশ দেখবো”
“করোনা নিয়ন্ত্রনে সরকার ব্যার্থ”।
“ আমাদের পরিবারের সদস্যদের কি হবে”?
“টেষ্টের সংখ্যা বাড়ছে না কেন”?
ইত্যাদি ইত্যাদি।
 
সেই সবসপ্রবাসীদের বলছি, আপাততঃ এসব সমালোচনামূখর কবিতা রচনা ও দেশ বিশ্লেষক না হয়ে বহিঃবিশ্বের খোঁজ রাখুন। স্বচ্ছ কাঁচের মতন সব পরিস্কার দেখবেন। তখন না হয় সরকারকে তুলা-ধূনা করবেন।
সবাইকে ধন্যবাদ।
0 Shares

২৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ