রূপা
বরাবরের মত এবারও আশা করছি তুমি ভালো আছি। আর তোমার জন্যে সেই নিয়মিত প্রশ্ন... বল... আমি কেমন আছি?

আগামী কাল পূর্নিমা গেল।
কাল রাতে কি তুমি পূর্নিমা দেখেছিলে!!
ভাবছিলাম এবার তোমার সাথে জোৎস্না যাপন করবো। তোমাদের বাড়ির ছাদে। নীল রঙের শাড়িটা পরবে তুমি। চোখে কাজল দেবে আর চুল থাকবে খোলা। আমি খানিক চিন্তিত এবং গম্ভীর ভাব নিয়ে তোমার পাশে থাকবো। আর সারা রাত তোমার আমাকে ঘিরে যত স্বপ্ন আশা যা কিছু আছে সব শুনবো.. এরকম থাকার কারণটা কি জানো সেটা হচ্ছে তোমার বাবা। তোমার বাবা যে কোন সময় লাঠিসোটা নিয়ে উপস্থিত হতে পারে আমাকে আচ্ছা মত ধোলাই দেবার জন্য। আচ্ছা রূপা তোমার বাবার ও কি আমার খালুসাহেবের মত বোতল খাবার বদঅভ্যাস নেই তাই না!! যে তিনি সে সময় আনন্দের ভুবনে থাকবেন। তিনি থাকবেন ধ্বংসাত্মক মুডে ...তিনি হিমু নামক মানুষ টাকে অনেক ঘৃনা করে কারণ একটাই হিমু তার মেয়েকে কাঁদায় কষ্ট দেই আর হিমুর জন্য তার মেয়েকে সে সুপাত্রের কাছে হস্তান্তর করতে পারছেনা কি ঠিক বলেছিনা......???

রূপা গত জোছনাযাপন করেছি বুড়িগঙ্গা ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে। বুড়িগঙ্গার দূষিত পানিও খানিকক্ষণের জন্যে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। ইচ্ছে হয়েছিল যে ঝাঁপ দিয়ে পড়ি। কিন্তুু ঐ পানি খোস পাঁচড়ার জন্যে অত্যন্ত উপকারী বিধায় লাফ দেই নি। জোৎস্না যাপন করতে এসে খোসপাঁচড়ার জীবাণু সঙ্গে নিয়ে যাবার কোন মানে হয় না। সাথে ছিল মজিদ। মজিদকে তো চেন। জোৎস্না কিংবা বুড়িগঙ্গা কোনটাই তাকে আকর্ষণ করতে পারেনি। তাকে আকর্ষণ করেছে লাল এবং কালো কাপড় বাধা দুটো কলসি। ওতে করে তাড়ি বিক্রি করা হয়। সে পাঁচ ছয় গ্লাস তাড়ি খেয়েই জীবনানন্দ দাশ স্টাইলে কথা বলা শুরু করে দিল। নদী এবং জোছনা নিয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য শুনলাম। তার মাতলামির কারণেই টহল পুলিশের পাল্লায় পড়তে হয়েছে। এই টহল পুলিশেরা জোছনার মর্ম উপলব্ধি করতে পারলো না। চাঁদের উপর তাদের বিরক্তির কারণও ঠিক পরিষ্কার নয়। আমাদের স্থান হল ছোট একখানা জেলে। মজিদের তাতে কোন ভ্রূক্ষেপই নেই। সে চাঁদের বুড়ি এবং বুড়িগঙ্গার বুড়ির পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা সভা শুরু করল। আরও কয়েকজন আসামীকেও দেখলাম মন দিয়ে বক্তব্য শুনছে। দুজন কনস্টেবল ও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছে। একটা সুখী পরিবার!! আর আমি মনে মনে আমার ময়ূরাক্ষী নদীর তীরে বসে ঝিমাচ্ছি।

এই জোৎস্না টা নষ্ট করতে চাচ্ছিলাম না। তাই তোমাদের বাসায় তোমার সাথে কাটানোর ইচ্ছে হচ্ছিল অনেকদিন তোমাকে দেখি না তোমার শাষন শুনিনাই.. আচ্ছা রূপা তোমার বাবা কী আমাকে দেখামাত্র কি ক্ষেপে যাবে!! তিনি কি আমাকে পুলিশে দেবেন না কি দেবেনা সেই দোটানায় মন আর স্থির করতে পারলাম না আর তাই তোমার বাড়ীর সামনে দিয়ে গিয়ে ও তোমাদের বাসায় প্রবেশ করিনি!! তোমার বারান্দা বরাবর যেই হলুদ ল্যাম্পপোস্ট ছিলো সেই খানে দাড়িয়ে ছিলাম আর তোমাকে দেখার চেষ্টা করছিলাম প্রথমে দেখতে পাইনি অনেকক্ষন দাড়িয়ে থাকার পর দেখলাম তুমি বারান্দায় এসেছো সেই নীল শাড়ি কাজল দিয়েছিলে কিনা অন্ধকারে দেখতে পাইনি কিন্তুু চাদের রূপালী আলো তে তোমাকে অসাধারন রূপবতী লাগছিলো কিন্তুু তার সাথে মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো
কেন যে তুমি কাঁদছিলে সেইটা অজানা আমার মনে হয় তুমি আমার জন্য কাঁদছিলে তবে তোমার চোখের অশ্রু গুলো যখন তোমার গালের দুপাশে দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিলো তোমার চোখের অশ্রু চাদের আলোই মুক্তা দানার মত লাগছিলো...
আমার তখন খুব ইচ্ছে জেগেছিলো তোমার কাছে গিয়ে তোমার সেই মুক্তা দানার অশ্রু আংগুল দিয়ে মুছে দিয়ে বলি কেঁদোনা রূপা এই দেখো আমি এসেছি... চল যাই তোমাকে নিয়ে আজ তোমার অনেকদিনের স্বপ্ন আমার সাথে জোৎস্না রাতে আমার হাত ধরে হাঁটার স্বপ্ন পুরন করবো...
কিন্তুু তোমার সেই ইচ্ছা পুরন করতে চাইলে আমার বাবার আমাকে নিয়ে যে মহাপুরুষ বানানোর ইচ্ছে সেই কথা মনে পড়ে আর তখনি আমি দূরে চলে যাই.....আমি আমার বাবার শেষ ইচ্ছে টা পুরন করার জন্য অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছি মাঝে মাঝে মনে হয় সব বাদ দিয়ে তোমাকে নিয়ে মুয়রাক্ষী নদীর তীরে চলে যাই... এইসব যখনি ভাবি ঠিক তখনি বাবাকে স্বপ্নে দেখি বাবা আমাকে বলছে বাবা হিমালয় সংসার জীবন তোমার জন্য নয় তোমার জীবন আমি তোমাকে যে সাধনা করিবার ট্রেনিং দিয়েছি সেইটা পালন কর..... কিন্তুু জানো রূপা স্বপ্নে যখন মাকে দেখি মা বারবার বলে বাবা হিমু তুই তোর বাবার এইসব পাগলামি ট্রেনিং বাদ দিয়ে সংসারী হও রূপা খুব ভালো মেয়ে ও তোকে অনেক ভালোবাসে তুই ওকে বিয়ে করে সুখী হবি..আমি তোর সন্তান আমার নাতি নাতনি দেখতে চাই....তখন খুব ইচ্ছে করে মায়ের কথা শুনতে কিন্তুু তার পরক্ষণেই বাবা এসে ধমক দিয়ে বলে হিমালয় তুই তোর বাবার কথা রাখবি না আমি তোর জন্য কিনা করেছি বল...!!
তুই তোর মায়ের কথা শুনবি!!! আমি তখনি দোটানায় পড়ে যাই আর তোমার থেকে দূরে চলে যাই.....

তোমার জন্যে একটা উপহার ছিল। বল তো কি ? সকালে যদি তুমি দরজা খুলো তাহলে পাবে.....
শেষে একটা ধাঁধাঁ দিলাম...

ইতি
হিমু

0 Shares

১১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ