রূপকথার অতল বক্স

ছাইরাছ হেলাল ১৬ জানুয়ারি ২০১৬, শনিবার, ০৬:৫০:৫৭পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৭১ মন্তব্য

ফেবুতে একটি মেসেজ বেশ কয়েকদিন ধরে লাল বাত্তি জ্বালিয়ে রেখেছে, সাথে একটি ফ্রেন্ড রিকু। কালে ভাদ্রে ইনবক্সে মেসেজ আসে, আসবে কি করে, আকামা অকর্মণ্য অপুষ্ট যে। অজ্ঞানতা হেতু ইনবক্সটি আমার কাছে তল বক্সের মত লাগে, যাক যা বলছিলাম। মেসেজ না দেখে ফেলে রাখা খুব পুরনো অভ্যাস, অবশ্য এর জন্য জবর ভুগেছিলাম একবার, সেই মেসেজটির উত্তর দিয়েছিলাম ঝাড়া তিন মাস পর। শেষে হাত পা সহ অনেক কিছু ধরেও কাজ না হওয়াতে নাকে খত দিয়ে মাফ পেতে হয়েছিল। ভাগ্যিস দয়াবান শালিসবৃন্দ শূল দণ্ড থেকে রেহাই দিয়েছেন বার্ধক্যের কারণে, সে এক বিতিকিশ্রি ব্যাপার।
যথা নিয়মমতো উত্তর তো দেই না, দেখি ও না, ব্যামো। সপ্তাহ খানেক পর চেক করি,

*কেমন আছেন?
#ভাল আছি, আপনি কি আমাকে চেনেন? আপনি কি ব্লগার?
*ভাল করেই চিনি, লিখি না, তবে লিখব।
#আমি আপনাকে চিনি না,
*সমস্যা কি? আমি তো চিনি, লেখালেখি করতে চাই।
#কেউ তো নিষেধ করেনি।
*আমি আপনাকেই খুঁজছি।
#আপনি যে কোন ভাল চুলা দেখে আপনার লেখা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ুন।
*সুন্দর করে কথা বলুন। রেকু ঝুলিয়ে রেখেছেন কেন?
#ফেক আইডি নিয়ে আপনার মহামূল্যবান সময় নষ্ট না করে অন্য ঘাটে নাও লাগান।
ভুল জায়গায় এসেছেন।

ফেবু করি নিজের মত, অনেক ঋণ এখানে, অনেক শিখেছি, শিখছি। চোখসুখ ও নিয়েছি, নিরবে দেখেছি নিপুন হৃদ্যতা, কড়া নোংরামি, তল বক্স ছাড়াই। অনলাইনে পৌনে দু’গণ্ডা!মানুষ আমাকে ভাল করে চেনে, জানে, আমিও। আর আশেপাশে সবাই জানে আমি ফেবু করি না, ফেবুতে আমাকে পাওয়া যায় না, আপাতত কবরে পাঠিয়েছি। কোন হেলদোল নেই। তুলব আবার হয়ত, “ফেবু ছাড়া আমার চলেই না বা একবার ফেবু সারা জীবনের ফেবু” এই অপ্ত বাক্যটি ‘অপারগদের’ জন্য কিঞ্চিত অপ্রযোজ্য, এমন মনে হয় মাঝে মাঝে।
এর পর যে মেসেজটি এলো তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।
*দোস্ত, ডাঁট মারো? পনের দিন ধরে বহুত জ্বালাতন সহ্য করেছি, আর না, ফোন নম্বর দেবে কিনা বল? যদিও ফোন নম্বর নেয়ার আরও রাস্তা ছিল, তোমার কাছ থেকেই নিতে চাই, আর যদি না দাও ফেবুতে তোমার নামে এমন স্টাটাস দেব ঘুম হারাম হয়ে যাবে।
প্রমাদ গুনলাম, তার ফলোয়ারের সংখ্যা হাজার খানেক। তার প্রোফাইল চেক করে পুরনো কিছু ছবি দেখে চোখ মাথায় রাখলাম। আগে দেখার প্রয়োজন ই মনে করিনি। এ নামের আই ডি তখন ছিল ও না।
চার বছর পর আবার কথা হোল, মনে রেখে খুঁজে বের করেছে, নিজেকে অপরাধী লেগেছে অনেক। ব্যক্তিগত ফোন নম্বর দিয়ে বলেছে অষ্ট প্রহর ‘খোলা’ আমার জন্য, খুব ভীত তাই পরীক্ষা নেয়া বা দেয়ার ঝুঁকি নেইনি, ঝুঁকি আছে বলেই,
সে ছিল হাল্কা বিড়ি খোর, নির্দিষ্ট ছিল ব্রান্ড। রাইফেল স্কয়ার ছিল আড্ডার জায়গা। মূল গেটের উল্টো দিকে সিঁড়িতে বসে কত যে বিড়িয়াড্ডা দিয়েছি ভাবলে মন উদাস হয়,
কথা দিয়েছি আবার আড্ডা দেব ম্যারাথন (যদিও দাক্তারের নিষেধ) সকাল-সন্ধ্যার, আমাকে তাঁর জন্য বিড়ি নিয়ে যেতে বলেছে, রাজি ও হয়েছি,
চা-বিড়ি এখন আর খাই না তা বলতে পারিনি।

হেঁজিপেঁজি কেউ না, জবড়জং ও না, জাঁক করে বসে রাজা-উজির মারা বা হা-হুতাশ, কিছুই নেই,
অন্তর্লীন অগভীরতা, বুড়ো ও মুঢ়তার ঝুলি বয়ে ‘দায়িত্ববান পুরুষ’ না হলেও হুশ-হুশ করে তাড়িয়ে-খেদিয়ে বা বিলোল কটাক্ষে চুবিয়ে-ডুবিয়ে ছানাবড়া চোখ লাল করে দেবে ব্যাপারটি এমন তেমন ও না,
তবুও কেউ কেউ বন্ধু থেকেই যায়, বন্ধুত্বের অমলিনতায়।

উড়নচণ্ডী মন
খোঁজে
নিবিড় নিঝুম বন,

ইট্টু বাদ পড়ছে,
শুচিরুচিতা সত্বেও সিঁড়ির কান্দায় বসে গল গল করে ধোয়া ওড়াচ্ছিল, আমিও।
হঠাৎ গায়ের মধ্যে সেঁধিয়ে গেল, আমি চিঁ চিঁ করে উঠলাম, বলে “ গাড়ীতে যাওয়ার সময় বড় ভাইয়া মনে হয় বিড়ির ধোঁয়া দেখে ফেলেছে!” মনে মনে ভাবি, বিড়ির ধোঁয়া দেখে দেখুক, জড়াজড়িটি না দেখলেই এ যাত্রা বাঁচি।
কৃতজ্ঞতা: মায়াবতী পাহলবী কে।

0 Shares

৭১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ