চোরেরও জাতিভেদ আছে। কে কুলিন আর কে   হরিজন, তা নির্ভর করে চুরি করা দ্রব্যের উপর।যেমনঃ লুটি তো ভাণ্ডার যারা, তারা সম্ভ্রান্ত উঁচু শ্রেণীর আর যারা পেটের দায়ে সামান্য চুরি করে এবং যাদের পিছনে কোনো নেতা থাকে না তারা হয় ছিঁচকে চোর, এবং তারা এই তথাকথিত সভ্য সমাজের জন্য উপহাস ও নির্মমতার স্বীকার হয়। যেমন আমার কাছে রাজা বাদশা আর ডাকাতের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। রাজা ও বাদশা এক দেশ থেকে আর এক দেশে লোকবল অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যে হানা দেয় তার উদ্দেশ্য কিন্তু লুটতরাজই হয় আর সে পরাজিত রাজবাড়ির অন্দরমহলের নারীরা হয় বিজয় দেশের রাজা বাদশার খাসকামরার দাসদাসী। ধর্ষীত হয় প্রতিনিয়ত সে নারীরা। অথচ তারা আমাদের চোখে বীর। ডাকাতের তবুও একটা ধর্ম আছে, তারা ধনসম্পদ লুট শেষে তারা অন্তত নারীদের অসম্মান ও বন্দী করে না।
আসলে সুসভ্য শ্বেতকায়ের অন্তরে যেদিন সভ্যতা বিস্তারের মঙ্গলেচ্ছা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল এবংতাদের প্রযুক্তির অতিব্যাবহারে তাদের দৃষ্টিমতে অসভ্য ও অর্ধসভ্য কৃষ্ণাঙ্গের জীবনে সেটা ছিল প্রথম দুর্দিন। বহু শতাব্দী ধরে বহু রক্ত দিয়ে ক্রীতদাস প্রথা থেকে বের হলেও আমরা এই নিন্ম দেশগুলোর মানুষ এখনো নীপিড়িত।
সভ্য সমাজের অর্থাৎ ইউরোপের মতো দেশগুলোর অতি প্রযুক্তির ব্যাবহার এবং এর অতি উৎপাদন আমাদের জন্য অনেকটা এমন,'শুভাকাঙ্খী শক্তিমানের কল্যাণহস্ত কখন কিভাবে কার মাথায় এসে পড়বে, এই দুর্বলেরা সর্বদাই তটস্থ থাকে এখন, বৃহতেরা সে কথায় কর্ণপাত মোটেও করে না। তারা তাদের একধরনের উপকার করার এক্সপেরিমন্ট চালায়। ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায়, পৃথিবীতে যতো জটিল সমস্যাগুলো তার বেশীরভাগেরই মূলে রয়েছে পরের ভাল করার প্রচেষ্টা। 'যেমন আলফ্রেড নোবেল ডিনামইট আবিষ্কার করেছিলেন মানুষের কল্যাণের জন্য। তার উদ্দ্যেশ্য ছিল মানুষের সুবিধার্থে অর্থাৎ বড় বড় পাহাড় ধ্বস করে মানুষের  বসবাস ও চলার সুবিধা করা। অথচ আজ তাতেই আমরা প্রতিনিয়ত মরছি। আমরা কি চেয়েছিলাম তার এই আবিষ্কার! অথচ তার নামেই নোবেল পুরষ্কার!

' তুমি নিন্ম শ্রেণীর মানুষ তুমি মূর্খ, কি বোঝ! তুমি না চাইলেই কি হয়, আমি তোমার উপকার করেই ছাড়ব, একদল তথাকথিত এমন মহৎ মানুষের মনে যদি এই উগ্র চিন্তা না আসত তবে সাধারণ মানুষ সুখেই থাকতো পারতো। অন্তত আজকের তুলনায় তাদের দুঃখের ভার অনেক লঘু হতো।  ক্ষুদ্রের সরব ও নীরব বাধা অগ্রাহ্য করে তার মঙ্গল হেতু যে কাজ করে তা মূলত অকল্যাণকরই। যেমন এখন অবস্থা আমাদের কৃষকশ্রেণীর। প্রতিবেশী ও দেশীয় অহেতুক কল্যাণহেতু কাজগুলোই এখন কৃষকের জন্য অভিশাপ। শুধু কৃষক শ্রেণীই নয় মরছি আমরাও। প্রযুক্তির অতি ব্যাবহারে আমরা বিষ খাচ্ছি। সরকার মহোদয়ের লোকগুলো বলেই খালাস, কয়েকদিনেই বাম্পার ফলন হবে চিন্তা নেই!
কিন্তু এই বাম্পার ফলনটা হবে কি করে?

জরাসন্দের একটা বই পড়ছিলাম কয়েকটা লাইন পড়ে এই কথাগুলো মনে এলো।

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

  • মেহেরী তাজ

    ভাবীজান আনিস ভাইয়ের “প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ই ধ্বংসের কারন” বিষয়ক কিছু লেখা আছে না? বেপার টা তাই। মানুষ মানুষের উন্নতির চেষ্টা তো করবেই ফলস্বরুপ ক্ষতিও হবে!
    কি বই পড়তেছিলে???

  • বাবু

    চোরেরও জাতিভেদ আছে। কে কুলিন আর কে হরিজন, তা নির্ভর করে চুরি করা দ্রব্যের উপর।যেমনঃ লুটি তো ভাণ্ডার যারা, তারা সম্ভ্রান্ত উঁচু শ্রেণীর আর যারা পেটের দায়ে সামান্য চুরি করে এবং যাদের পিছনে কোনো নেতা থাকে না তারা হয় ছিঁচকে চোর, এবং তারা এই তথাকথিত সভ্য সমাজের জন্য উপহাস ও নির্মমতার স্বীকার হয়।
    সত্যি কথাটাই উপস্থাপন করেছে আপনি, আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।

  • ইঞ্জা

    আপু, কি অসাধারণ অনুভাবী আপনি, কি অসাধারণ চিন্তা শক্তি আপনার, এমন লেখা আসলে আপনাকে দিয়ে হয়।

    মানুষ কাজ করে মানুষের তরে কিন্তু সেই কাজটিই এক সময় মানুষ মারার যন্ত্র হয়ে উঠে, একদম ঠিক বলেছেন আপু। (y)

  • নীলাঞ্জনা নীলা

    দেখেছো বই পড়েই কি দারুণ লিখে ফেলেছো? অথচ আমি জরাসন্ধের লৌহকপাট বইটি পড়েছিলাম বহুবছর আগে। কিন্তু এককলমও লেখা বের হয়নি।
    আমার বরিশালের মা(দিদিমা)-এর কাছে গল্প শুনেছিলাম ডাকাতরা নাকি ডাকাতি করতে গেলে গৃহস্থের ওই বাড়ীতে কিছু খেতোনা। কারণ কিছু খেলে নেমকহারামী করা হয়ে যাবে। এও শুনেছিলাম ডাকাৎ এসেছে, বরিশালের মা তখন সদ্য মা হয়েছে। তছনছ করে নিচ্ছিলো, ওই সময় বরিশালের মা বলে ফেললো, ‘বাবা গো ওখানে কিছু নেই, বাচ্চাটার কাপড় আছে শুধু।” ডাকাতদের সর্দার বললো, “বাবা বলে ডেকে ফেললে গো মা, মেয়ের বাড়ীতে কিভাবে আর ডাকাতি করি?” তারপর নাকি কখনোই আর কোনো ডাকাতি হয়নি মামাদের গ্রামের বাড়ীতে।

    আর রচনা পড়োনি “বিজ্ঞান অভিশাপ নাকি আশীর্বাদ?” আমরা মানুষ ভালো কোনকিছু কি থাকতে দেই? মৃত্যু একদিন আসবে, সেটা জেনে তারপরেও কি অন্যায় করিনা?

    অনেক ভালো লিখেছো। অ———নেক। -{@

    • মৌনতা রিতু

      এই মিশরকন্যা জান, আমি একবার ডাকতদের কবলে পড়েছিলাম। পালাতে গিয়ে কবরে ভিতর পড়েগেছিলাম। তখন আমি এস এস সি দিব। ওরা অবশ্য কারোর কোনো ক্ষতি করেছিল না। শুধু আমার নানিকে কিছুদূর তুলে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিছিল।
      বই পড়তে পড়তে কতো কি যে মাথায় আসে! জান, আমার হাতে একটা কলম থাকে লিখি আর আন্ডার লাইন করি। জুলফিকার প্রথমে রেগে যেতো, এখন কিছু বলে না। বরং এখন ওরই তাতে উপকার হয়। তথ্যগুলো সহজেই বের করতেপারে। শুধু অনুরোধ করে বলে,” প্লিজ একে রক্ষা করো।” তবুও দাগাই।
      আসলেই প্রতিনিয়তই আমরা জেনে অজান্তেই অন্যায় করছি।
      একটা গোপন কথা শুনবে,” আমার রিয়ান আর জুলির কিছু পাখি আছে, একসাথে ডিম দেয় ছয় সাতটা করে, বাচ্চাও হয়। বড় হলে আমি মেমন চুরি করে ছেড়ে দেই।
      বাপ ব্যাটা পরে চিৎকার চ্যাচামেচি করে। গতকাল একজোড়া ঘুঘু দিছে আমার এক ভাই ওকে। অস্ট্রেলিয়ান। ছেড়ে দিব মেমন আসলেই। মজার বিষয় কি জান, এই ঘুঘুরা পরে আমার বারান্দায় আসে।
      কেমন আছো, নীলনদ। -{@ (3

      • নীলাঞ্জনা নীলা

        গতকাল থেকে খুউব বেশি ভালো আছি আপু। এই হ্যামিল্টনে আসার পর থেকে গত পাঁচটি বছর অনেক ঘুরেছি, মজা করেছি। কিন্তু গতকাল ওই কনসার্টে গিয়ে এতো বেশি আনন্দ পেয়েছি। যদি হাড়ে সমস্যা না থাকতো, তাহলে আরও অনেক মজা করতে পারতাম। আমি নাচ-গান পছন্দ করি। যদিও হিন্দী পাগল টাইপ গান শুনিনা। কিন্তু পার্টিতে সেসবের সাথে অনেক নাচতাম।
        তুমি ভাইয়ার পাখিগুলোকে ছেড়ে দাও? বেশ করো। শুনে ভালো লাগলো খুব কিন্তু। 🙂
        এই রে একসময় আমিও বইয়ে আন্ডারলাইন করতাম। তবে আন্ডারলাইনের চেয়ে লিখে রাখতাম খাতায়। আচ্ছা তোমার-আমার বেশ অনেক কিছুতেই মিল দেখছি! 😮 তবে মনে হয়না দুষ্টুমীতে আমার মতো হবে। আমি চরম দুষ্টু কিন্তু। তবে সবার সাথে না। অনেকেই আমাকে কি বলে জানো, আমি খুব চুপচাপ, শান্ত, কম কথা বলি। 😀 :D) প্রিয় মানুষরা জানে আমি যে কি জ্বালাতে পারি। 🙂
        ভালো রেখো কিন্তু নিজেকে। -{@
        **আবার ঝিমিয়ে গেলো ব্লগটা, তাই না? 🙁

      • মৌনতা রিতু

        আসো আপু তুমি আর আমি ব্লগে আড্ডা দেই। কি নিয়ে লিখি বলো তো!
        আমিও খুবই দুষ্টু। আচ্ছা ছোটবেলায় ফিরে যাই। তাই লিখি দু’একটা।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ