দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলা।
চিরিরবন্দর দিনাজপুর জেলার আর একটি উপজেলা। পার্বতীপুর উপজেলা থেকে পশ্চীমে চিরিরবন্দর এবং চিরিরবন্দরের দক্ষিনে ভারতের পশ্চীমবঙ্গ।
ব্রিটিশ আমলে এই উপমহাদেশে যে কয়েকটি বানিজ্যিক স্থান উল্ল্যেযোগ্য তার মধ্যে চিরিরবন্দর একটি। এর প্রধান নদী ছোট যমুনা ও আত্রাই। এই নদী বন্দর দুটিই ছিল সেই সময়ের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি প্রধান বানিজ্যিক কেন্দ্র।
চিরিরবন্দর উপজেলার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে আরও আনেক ছোট ছোট নদী। সব নদীই মরে গেছে। খুঁজে পাওয়া যায়না ছোট যমুনা বা আত্রাই নদীকে। মহাসড়কের সেতুর গায়ে লেখা নদীর নাম দেখে বুঝি এটা ছোট যমুনা নদী বা আত্রাই নদী।
চিরিরবন্দর উপজেলার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত নদীর নাম কাঁকড়া। এই নদী চিরিরবন্দর উপজেলাকে দুই ভাগ করেছে। এখানকার মানুষ কৃষি নির্ভর। কিন্তু নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে কৃষিকাজ প্রায় বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছিল। চাষযোগ্য জমির মাত্র ৩১হেক্টর আবাদ হত বাকি সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমি আনাবাদি পরে থাকত । আথচ আমাদের দেশের চাল উৎপাদন হয় বৃহত্তর দিনাজপুরেই বেশি।
কাঁকড়া নদীর উপর রাবার ড্যাম তৈরি করে, সম্পুর্ন উপজেলা জুড়ে দেখা যায় শুধু ফসলের মাঠ , ধান ক্ষেত আর ধান ক্ষেত । আজকাল নিথুয়া পাথার খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু চিরিরবন্দরে এলে মাইলের পর মাইল যত দূর চোখ যায় শুধু ধান ক্ষেত আর ধান ক্ষেত। নদী মরে যেয়ে আমাদের দেশ যে মরুভূমির মত হয়ে যাচ্ছে তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু নদীতে বাঁধ দিয়ে, আমরা যে সবুজের বিপ্লব ঘটাতে পারি তার জলন্ত উদাহরন হল,এই বাঁধগুলি। ওখানে যেয়ে জেনেছি এই ধরনের মোট দশটি বাঁধ আছে সারা দেশ জুরে।
রাবার বাঁধ একটি রাবারের টিউব। বাস বা ট্রাকের চাকার টায়ারের ভিতরের টিউবের মত যা প্রয়োজন মত বাতাস দিয়ে উঁচু নীচু করে পানি কে সংরক্ষন করা ও ব্যাবহার করা হয়। রাবারের যে টিউবটা ব্যাবহার করা হয়েছে তা নদীর প্রস্থের অর্ধেক মাপের । আর্থাৎ, নদীর প্রস্থকে দুই ভাগে ভাগ করে দুইটি টায়ার ব্যাবহার করা হয়েছে। একপাশে টায়ারকে বাতাস দিয়ে ফুলিয়ে উঁচু করে পানি আটকান হয় , আবার অন্য পাশের টায়ারের বাতাস বের করে দিয়ে টায়ার টা নীচু করে পানি ছেরে দেয়া হয়। যে পাশে আটকানো হয় সেই পাশে টিউব টা পানির সমন্তরাল থেকে উঁচু করা হয়। মাঝে মাঝে দুই পাশের টিউব নিচু করে দেয়া হয়। তা করা হয় পানির প্রয়োজনিয়তার উপর।
খুব ভাল লাগল দেখে যে এই শুকনা মৌসুমেও নদীতে থৈ থৈ করছে পানি। আর বাঁঁধের উপর দিয়ে ঝরনার মত গড়িয়ে পরছে পানি। কি পরিস্কার আর স্বচ্ছ পানি। জায়গাটা দেখতে অনেকটা ঢাকার আশুলিয়ার মত। পার্থক্য হল - নেই কোন কলাহল, যান্ত্রিক শব্দ, নেই ফুচকা চটপটি ওয়ালাদের চিৎকার। নেই ভীর বা লোকজন।
নদীতে জেলেরা মাছ ধরছে ছোট ছোট নৌকায় করে। কিছু গ্রামবাসী তাদের মত ঝিনুক, শামুক কুড়াচ্ছে হাঁস কে খাওয়াবে বলে। এখানে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। কিছু দূরেই রয়েছে হাট।
আমরা নদীর পাড় বেয়ে বেয়ে নেমে এলাম নদীতে। যেদিকে পানি কম সেই দিকে। পানি এত পরিস্কার যে নীচের বালি, কাঁকড়, নুড়ি, শামুকের খোল সবই দেখা যায়।
মাছের পোনারা খেলা করছে, আমাদের পায়ের কাছে। পায়ের নীচে চিকচিক করছে বালি। আর আমাদের পাশে ঝরনার মত হইচই করতে করতে কলকল শব্দে পানি পরছে ঝরঝর করে।
আমরা নদীতে নামলাম । নেমে ভাবছি আর যাব কি না? পানি কতটুকু আছে। কারন সাঁতার তো জানি না আমি ও আমার ছেলেমেয়েরা ।
দেখি হাঁসগুলো তো হেঁটে হেঁটেই যাচ্ছে নদীর মাঝ দিয়ে । আমাদের আর ভয় কি ? অতএব শুরু করলাম হাঁটা। আমার পিছন পিছন আমার পরিবারের সদস্যরা। আমিই ওদের বললাম আসতে । পানিই তো নাই। কি মজা! কিছু্টা হাঁটলাম ।
কিছু দূর যেয়ে আমি পরম নিশ্চিন্তে বাড়িয়ে দিলাম এক পা সেই পা পেল না কোন মাটি। যখন পেল তখন আমি কোমর পর্যন্ত পানির তলে। তাকিয়ে দেখি আমার চার বছরের ছেলে তার বাবার কলে চড়া আবস্থায় চিৎকার করছে বাবা তুমি বসছ কেন ? আর আমার ছয় বছরের মেয়ে আমার গাড়ীর ড্রাইভারের কোলে। কারন ড্রাইভার ওর পাশে ছিল। ড্রাইভার নিজে যেই কোমর পানিতে পরেছেন সাথে সাথে তিনি আমার মেয়েকে কোলে তুলে নিয়েছেন। তা না হলে বেচারা মেয়েটা আমার এক ঢোক পানি খেয়েই ফেলত।
এখানে বলে রাখা ভাল যারা যারা কোমর পানিতে আমরা ডুবেছি তাদের মধ্যে আমি ছাড়া সবার ই পরনে ছিল জিন্সের প্যান্ট। স্মৃতিচারন করতে যেয়ে মনে পড়ছে কত মাছ কিনেছিলাম নৌকার জেলেদের কাছ থেকে। সব নদীর টাটকা মাছ। নেশা ধরানো।
মৌনতা রিতু আমার মাছ কেনার বাতিকের কথা কি তোমার মনে আছে। মাছ দেখলে পাগল হয়ে যেতাম। পারলে হাটের সব মাছ কিনে ফেলি। এখন সেই হাট নেই মাছের বাজারে আর যাই না। 🙁
Thumbnails managed by ThumbPress
১৫টি মন্তব্য
আবু খায়ের আনিছ
২০০৯ সালের দিকে এবার হালুয়াঘাট গিয়েছিলাম, তখন দেখেছিলাম কিভাবে রাবার ড্যাম ব্যবহার করে। একদিকে থৈ থৈ পানি অন্য দিকে শুকনো।
খসড়া
বাঁ্ধের জন্য, এর ফলে পানি ধরে রেখে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা যায়।
আবু খায়ের আনিছ
সুবিধা পাওয়ার জন্যই তৈরি করা হয়।
খসড়া
ঠিক বলেছেন।
ইকবাল কবীর
ভাগ্যিস কোমর পানিতে আটকে গেলেন, সাতার না জানলে নদীর পানিতে ঐ এলাকার পরিচিত ছাড়া একা নামা উচিত না, বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য ব্যাপারটা আরো ভয়াভহ। যাইহোক একটা অভিজ্ঞতা হল আপনার। ভাল লিখেছেন আপনি, শুভ কামনা রইল। ভাল থাকবেন।
খসড়া
নদীর মাঝে গর্ত থাকে সেদিনই প্রথম জানলাম।
মৌনতা রিতু
চলো, সেই ঢেলা পীরের হাঁটে যাই। কতো মাছ, মুড়ি মোয়া, আর সেই মাংস :p। তারপর হাঁটে মিষ্টি খাওয়া।
তুমি সব গুলোরে নিয়ে কোমর পানিতে নামছিলে ! তাও জান না সাঁতার। এটা কি তোমার সুইমিংপুল পাইছ ? এতো দস্যি কেন বলোতো ? আমার ভাইটাকে,,,,,,,,থাক আর বললাম না।
বাঁধ সম্পর্কে এতো কিছু তো জানতাম না। পার্বতিপুরে তাই দেখি নি ! এই বার বলো, এই জুলিকে কি করা উচিৎ ?
খসড়া
স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দাও। ভাল থাকবে। ওদের তুমি কিছুই শিখাতে বা বোঝাতে পারবে না।
তোমার মনে নেই আমাকে ফোনে বলেছে —–বাচ্চারাতো স্কুলে যায় , হিসাব কইরে কাজ করতে বলবেন।
স্বপ্ন
রাবার ড্যাম সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না। কোমর পানি পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছেন, বেশী হলে তো সর্বনাশ হতে পারতো। স্মৃতি কথা ভাল লেগেছে।
খসড়া
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অপার্থিব
দিনাজপুর হোমডিষ্ট্রিক্ট হলেও চিরিরবন্দর কখনো যাওয়া হয় নি। নদীতে বাঁধ দিয়ে যদি দুই পাড়ের কৃষকদের উপকার হয় তাহলে ঠিকই আছে তবে নদীতে বাঁধের কিছু সাইড ইফেক্ট থাকে। সেটাও বিবেচ্য হওয়া উচিত।
খসড়া
ভাল, নিজেকে জানাটা আগে দরকার।
জিসান শা ইকরাম
নদীর নাম কাঁকড়া হবার কাহিনী কিছু জেনেছেন? কাঁকড়া নেই তো নদীতে? তাহলে তো রাবার ড্যাম কেটে ফেলবে 🙂
বর্ননায় দেখলাম চিরিরবন্দরকে।
রাবার ড্যাম এত উপকারী এবং কার্যকরী জানা ছিল না
কোমড় সমান পানির নীচে ডুবে গিয়ে কয় ঢোক পানি পান করা হয়েছিলো, তা কিন্তু পোষ্টের কোথাও লেখা হয়নি
ঝাতীকে এমন অন্ধকারে রাখা অন্যায় 🙂
খসড়া
কাঁকড়া দেখিনি তবে প্রচুর চিংড়ি আছে। আর ঐ ড্যাম কাঁটা কাকঁড়ার অসাধ্য।
না ডুবে যাইনি তবে সুইমিংপুলে প্রচুর পানি খেয়েছি। ভাগ্যিস নিজস্ব ছিল পুলটা তা না হলে কি না কি খেতে হত পানির সাথে।
নীলাঞ্জনা নীলা
রাবার ড্যাম নাম শুনেছি, কিন্তু কখনো এ সম্পর্কে জানা হয়নি। ধন্যবাদ আপনাকে।