অন্য দশটা শিল্পের মত রান্নাও একটি শিল্প হিসেবে আমি মনে করি। যে কোন শিল্পীর হাতে কোন সৃজনশীল সৃষ্টির আগে অনেক ধরনের উপকরন বা সরঞ্জামাদির যেমন প্রয়োজন হয়,তদ্রুপ রান্নার জন্যও প্রয়োজন আনুসাঙ্গিক অনেক উপকরনের।

শুধু মাত্র নিজেদের আহারের জন্য রান্না করে থাকা যতটা সত্য, তার চেয়ে সত্য রান্নার আয়োজনে নিজেকে উৎসর্গ করা। দীর্ঘ সময়,পরিশ্রম,মেধা ও প্রশিক্ষনই তুলে আনতে পারে একটি সুস্বাদু রান্না। শুধু মাত্র বাড়ির গৃহীনিরা রান্না করবে তেমন নয়। অনেক পরিবারেই দেখেছি স্বামী-স্ত্রী ভাগাভাগি করে রান্নার কাজটা শেষ করেছেন। তাঁদের কাছে প্রশ্ন রাখলে উত্তর মিলে শিল্পটাকে দুজনই উপভোগ করি। আবার কেউ কেউ ধারনা পোষন করেন ঘরের বউ-ঝি বা মেয়েরাই এ কাজটি সেরে নিবে। আমাদের সমাজের কোন কোন পরিবারের শ্বাশুড়ির মতবাদ হচ্ছে ঘরের বউ সব রান্না করবে। ছেলে বিয়ে করেছে, ঘরে বউ এসেছে এখন আর বাড়ির কেউ রান্না করবে না। ছেলের বিয়ের আগে যে বোনটি দুদিন আগেও মা’র সাথে রান্না ঘরে কাজ করেছে সেই মেয়েটিও ভাবী আসার পর হাত-পা গুটিয়ে ঘরে বসে আসে। এটা হচ্ছে আমাদের বংশানুক্রমিক সামাজিক রীতি বা সংস্কৃতি।

রান্না ও বাহারি খাবার এসেছে মূলতঃ মোগল সম্রাটদের আমল থেকে। তখন খাবারের নামই ছিলো মোগলী খাবার। মোগলরা এহেনও কোন খাবার নেই যে তারা বাবুর্চি দিয়ে রান্না না করেছেন। তারা আহারের চেয়ে অপচয় করতেন বেশী।

একটু খেয়াল করে দেখুন, পৃথিবীর সবচেয়ে নামকরা “শেফ” বা বাবুর্চী হচ্ছেন পুরুষ। কোন নারী বাবুর্চীর আন্তর্জাতিক পরিমাপে কোন স্বীকৃতি নেই। তা’হলে মেয়েরা বা নারীরাই যে রান্নার জন্য পারদর্শী কথাটা মিথ্যে। আমার নিজের কথাই বলি। ছোটবেলা থেকেই সুস্বাদু ও ভালো খাবারের প্রতি লোভ ছিলো। বাড়ীতে ভালো মন্দ রান্না হলে আগেই সেটি গলঃধকন করে নিতাম। এর জন্য মায়ের কাছে বকুনিও খেয়েছি অনেক। তারপরও আগে আগে খাবারের অভ্যেসটা ত্যাগ করতে পারিনি। যেহেতু খাবারের প্রতি লোভ ছিলো সেহেতু রান্নার প্রতিও আগ্রহ জন্মাতে থাকে সেই ছোট বেলা থেকে। ডিম ভাজি ও আলু ভর্তা দিয়ে শুরু করি। পরে এমন কোন রান্না নেই যে শিখিনি বা রান্না করিনি। আমার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের মাঝে যথেষ্ট সুনাম আছে আমার হাতের কাচ্চি বিরিয়ানী’র। একবার খেলে আশা করি বার বার খেতে মন চাইবে।

যাহা হোক। আমি কথার ফুলঝুরি বেশী দীর্ঘায়িত করবো না। আপনাদের মাঝে ১টি রেসেপি নিয়ে আসলাম। যদিও খুব সহজ ও কম মূল্যের। তারপরও কতজন এই সুস্বাদু খাবারটি খেয়েছেন বা রান্না জানেন আমি জানি না। আশা করি রেসেপি অনুযায়ী রান্না করবেন। নিজে খাবেন এবং পরিবারের সবাইকে সহ বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনদের মাঝেও বিতরন করবেন।

 (১) কাঁঠালের লাঠি ভর্তাঃ আমরা সবাই কম বেশী কাঁঠাল খাই। কাঁঠালের বিঁচি রেখে আর সব ফেলে দেই। এখন থেকে মাঝখানের লাঠিটি আর ফেলবেন না।

উপকরনঃ
পাঁকা কাঠালের মাঝখানের লাঠি ১টি, গরম মশলা,(তেজপাতা ২টি,এলাচ ৪টি,দারচিনি,২টি),হলুদ গুড়া সিকি চামুচ,মরিচ গুড়া সিকি চামুচ, পিয়াজ কুঁচি ১ কাপ, আদা বাটা ১ চা চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, জীরা বাটা অর্ধেক চা চামচ, সয়াবিন বা সরিষার তৈল আধা কাপ ও লবন স্বাদ মত।

ছবিঃ নেট থেকে সংগ্রহ।

প্রস্তুত প্রণালীঃ 

প্রথমে কাঁঠালের লাঠিটি ভালো করে ধুঁয়ে নিন। পরে বোঁটা থেকে নীচের দিকে চার আঙ্গুল ফেলে দিন। বাকি লাঠিটির চামড়া ছুরি দিয়ে ছুঁলে নিন। পরে ছোট ছোট টুকরা করে ফুটন্ত গরম পানিতে সিদ্ধ করুন। ভালো ভাবে সিদ্ধ হলে টুকরা থেকে পানি ঝারিয়ে নিন। পরে পাটায় বা ব্লেন্ডারে পিষে নিন। একটি কড়াইয়ে তেল দিন। তেল গরম হয়ে আসলে গরম মশলা ও পিঁয়াজ কুচি ভেঁজে নিন। পরে ভাঁজা পিঁয়াজে সবগুলি উপকরন দিয়ে একটু পানি দিয়ে ভালো করে কষান। কষানো হয়ে গেলে বাঁটা কাঠালের লাঠি দিয়ে ভাঁজা মশলার সাথে মিশিয়ে নাড়তে থাকুন। নাড়তে নাড়তে যখন পানি শুকিয়ে আসবে তখন চুলা বন্ধ করে দিন। পরে একটি বাটিতে প্রয়োজনীয় সাজানো জিনিষ দিয়ে সাজিয়ে ভাত বা পোলাও এর সাথে পরিবেশন করুন।

আশা করি আমার রেসেপির মত যদি রান্নাটা করতে পারেন তবে খুবই স্বাদ পাবেন। কাউকে যদি নিজ থেকে না বলেন তবে কেউ বলতে পারবেন না এটা কিসের ভর্তা। নিজে রান্না করুন পরে খাবারের স্বাদ গ্রহন আমাকে স্মরন করুন।

সবাই ভালো থাকবেন।

সাবইকে ঈদ মোবারক।

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ