সেই ছোট্ট থেকে একটা সাপকে সব সময় আমার আশে পাশে দেখা যেতো। যেখানে আমি থাকতাম সেখানে সাপটাও থাকতো। এমনকি সাপটা আমার দোলনায় উঠে মাথার কাছে বসে থাকতো। বেশ বড় আর মোটাসোটাও। একদিন তো মা রীতিমতো অজ্ঞান হবার যোগাড়।
সাপটা কেনো আমার ছায়া হয়ে থাকতো কেউ জানতো না। (রহস্য)

সে যা হোক আমাদের বাড়িতে বট আর পাকড়ের গাছ এমনি এমনি হয়েছে। মানে লাগাতে হয়নি। দু'টো গাছ একসাথে একই জায়গায় হয়েছে। অর্থাৎ জোড়া লাগা গাছ। সবাই বলে ওখানে  জ্বীন আছে। কথাটার কতোটা সত্যি তা আমার নানী টের পেয়েছিল আমার ছোট ভাইটা যখন হয়েছে। বাড়ির প্রাচীর ঘেঁষে হয়েছিল গাছগুলো। ভোররাতে প্রাচীরে সাদা পোশাকে আবৃত ইয়া বড় দাঁড়িওয়ালা একটা মানুষকে দেখেছিল।  ঐ মানুষটা আসলেই জ্বীন কি না কেউ জানে না। (রহস্য)

আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় তুকতাক করার কিছু না কিছু পাওয়া যেতো। গাছের ডালে, মাটিতে, দেয়ালে এমন কোনো জায়গা ছিলো না যেখান থেকে তাবিজ কবজ পাওয়া যেতো না। দাঁতের সাথে মায়ের মাথার চুল পেঁচিয়ে যাদুটোনা করতো । এমনকি মৃত মানুষের কাটা মাথা দিয়ে তুকতাক করেছিল আমাদের বাড়িতে। এ গুলো করতো আমার বাবার বড় ভাই-ভাবী।  প্রচণ্ড হিংসে করতো বাবা মাকে। জানি না কি ছিলো তার কারণ? কিন্তু কথা হচ্ছে তাবিজ যে করতো তা জানা গেলেও কে বের করে দিতো সেটা জানা যায়নি। (রহস্য)

এতো কিছু ঘটার পরও কিন্তু আমাদের কেউ কোনদিন ক্ষতি করতে পারেনি। সাপ, জ্বীন, তুকতাক কিছুতেই কোনো ক্ষতি হয়নি কখনো। বরং যারা ক্ষতি করতে চেয়েছে তারাই উল্টো বিপদে পড়েছে। আমাদের পাড়ার প্রায় সব বাড়িতে চোর এসেছে শুধু আমাদের বাড়িতে এখনো পর্যন্ত কোনো চার ডাকাত উঠেনি।  আমাদের বাড়িতে চোরের বা ডাকাতের নেবার মতো যে কিছু ছিলো না তা নয়। মায়ের টুকটাক গহনা, গরু, ধান চাল আসবাবপত্র মোট কথা  গেরস্ত বাড়িতে যা যা থাকে আর কি! কেনো আমাদের বাড়িতে চোর আসতো না জানা যায়নি কখনো। (রহস্য)

এবার আসল কথায় আসি। আমি কোনো কাজ করতে চেয়েছি বা শিখতে চেয়েছি তা করিনি বা শিখিনি এমন ঘটনা আমার জীবনে নেই বললেই চলে। শুধু সাঁতার ছাড়া। সাঁতার শিখতে চেয়েছি কিন্তু শিখা হয়নি কারণ মা কখনো পুকুরে নামতে দেননি। উনি এতোই খুঁতখুঁতে টাইপ মানুষ যে পুকুরে নামা একদম পছন্দ করতেন না। সে যা হোক বেশ চলছিল সাঁতার না শিখেই। গত বছর ঘটলো এক বিপত্তি। বন্যা হয়ে নদী ভরে তইতুম্বুর। সবাই দলে দলে দেখতে যাচ্ছে। বললাম আমিও যাবো দেখতে। যাহ্ বাবা! আমাকে কেউ যেতে দেবে না নদীর পাড়ে। কারণ সাঁতার জানি না যদি পা হড়কে পড়ে যাই। সত্যি সত্যিই আর যাওয়া হলো না। প্রচণ্ড মনোকষ্ট নিয়ে ফেবুতে একটা স্ট্যাটাস দিলাম। "ধূর!সাঁতার জানি না বলে নদীর পাড়ে যেতে দেবে না, এ কেমন অত্যাচার?"

অনেকেই হাসাহাসি করলো এই বলে যে এতো বড় মানুষ সাঁতার জানে না। আবার অনেকেই বললো ভালোই তো করেছে সাঁতার না জানলে নদীর পাড়ে যাওয়ার কি দরকার? কেউ কেউ আবার বললো সাঁতার শেখাটা দরকার। কেনো না বিপদের কথা তো আমরা বলতে পারি না। কখন কী ঘটে যায়? সত্যি কথা বলতে সাঁতার জানি না বলে আমি নিজেই পানি থেকে দূরে থাকতাম সবসময়। কখনো নৌকায় উঠিনি গতবছর অব্দি। এক ভাইয়া আবার বললো সুরাইয়া তুমি যদি সাঁতার শিখতে পারো....

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ