৩
মতিনের ঘর আলোকিত জন্মনিলো এক ফুটফুটে শিশু। ছেলে হইছে বলে সকলেই খুশি। মতিনের ছেলেটা জন্ম হওয়ার পর বেশিক্ষন কাঁদে নি। সবাই হাসাহাসি করছে। সে কেন কাঁদবে! কোন দুঃখে কাঁদবে বিষয়টা যেন এমন। মতিনের ছেলেকে মতিন ছুঁয়ে দেখছে। নাক, মুখ সব মতিনের মতো হয়েছে। মতিন তার তার ছেলেকে দেখছে আর তার ছেলে তাকে দেখছে। মতিন তার ছে অস্পষ্ট স্বরে ছেলেকে একটা নামে ডাকলো। ছেলে যেন অবাক করা চোখে তাকিয়ে আছে। এবার সবাইকে শুনিয়ে বললো আমার ছেলের নাম হবে রসিক। এমন বাক্য শ্রবন করে সবাই হাসতে লাগলো। কিন্তু প্রতিবাদ করলো লুবনা। বলে উঠলো স্বজোরে " আপনার কি মাথা খারাপ হইছে! মাআআআ ও মাআআআ দেখেন আপনার ছেলে কি বলে! আমার কিন্তু এসব একদম ভালো লাগে না "মতিন আর কিছু ভালো মন্দ জবাব না দিয়ে সে স্থান ত্যাগ করলো।
সাতদিন পর মতিনের ছেলেকে চুল কাটিয়ে গোসল করিয়ে নাম রাখার পালা এলো। অনেকেই অনেক নাম দিলো। মতিন তার রসিক নামেই স্থির আছে। লুবনা নাম দিলো " মেহেরাব হোসেন, দাদির পক্ষ থেকে এলো "দুলাল মেয়া, নানির পক্ষ থেকে আসলো "লতিফ মেয়া "।
ছেলেকে তিন নামে ডাকবা হইলো কোন শায় নাই! যখনই রসিক নামে ডাকা হইলো ছেলের চোখ মুখ উজ্জল হয়ে উঠলো।
অবশেষে ছেলের নাম রাখা হইলো " মেহেরাবব হোসেন রসিক " মেহেরাবব নামে শুধু লুবনাই ডাকে। বাকী সবাই ডাকে রসিক নামে। লুবনা এ নাম শুনলেই ক্ষেপে যায়! কিন্তু রসিক নামে ডাকলে তার ছেলে যে অঙ্গভঙ্গি করে তা দেখে লুবনা অবাক হয়ে যায়। এক মাসের একটা বাচ্চা নামের কি বুঝে!! নির্ঘাত এ ছেলে বড় হলে অনেক জ্বালাবে। দেখতে দেখতে রসিক বড় হতে লাগলো। সময় এবং স্রোত যেমন কারো জন্য অপেক্ষা করে না, তেমনি রসিকের বৃদ্ধি হওয়াও কারো জন্য অপেক্ষা করে না।
৪.
রসিকের বয়স এখন ছয় বছর। রসিক তার নামের মর্যদা ধরে রেখেছে। রসিকতায় সে পুরো এলাকায় বিখ্যাত হয়ে গেছে। বাপের সাথে যাত্রাপালা তো দেখেই সেই সাথে বাংলা সিনেমা ও দেখে। রসিকের বুদ্ধি সুদ্ধিও আছে বেশ। রসিকের সাথের ছেলেমেয়ারা এখন স্কুলে যায়! রসিক এখনো যাওয়া শুরু করে নাই। তার বন্ধুবান্ধবরা এখন খেলাধূলা করা কমিয়ে দিয়েছে। আগের মতো হুটহাট খেলতে আসে না। বিষয়টা রসিককে অনেক পীড়া দেয়। তাই একদিন বাড়ির পাশে স্কুল বলেই স্কুলে গেল। ভর্তি না হয়েও তার বন্ধুদের সাথে গিয়ে ক্লাসে বসে থাকলো। ক্লাস শিক্ষক শহিদুল ইসলাম ক্লাসে এসে হাজিরা খাতা খুলে রোল ডাকা শুরু করে শেষও করলেন। শেষ করেই হটাৎ উদয় হওয়া নতুন মুখ রসিকের দিকে নজর দিলেন। রসিক বিপদের পূর্বাভাস পেয়ে কচ্ছপের মতো মাথা নিচু করে ফেললো। শিক্ষিক তাকে ডাকলেন......
- এই ছেলে দাঁড়াও তো। নাম কি তোমার?
- আমার নাম রসিক, আপনার?
- বদ পোলা, মাস্টারের নাম কেও জিজ্ঞেস করে! ভর্তি না হয়ে ক্লাসে ঢুকছস ক্যান?
-আমি তো টেস্ট করতে আসছি। ভর্তি তো পরে হবো।
- কি বললি! :@ ভর্তি হওয়া ছাড়া ক্লাসে ঢুকা যায় না। এখুনি বের হ...
- না! আমি যাবো না, আমি পড়বো আমার বন্ধুদের সাথে। আমি তাহলে এখন ভর্তি হবো।
- ভর্তি হইতে হলে কান লাগ পাওয়া লাগে।
- হে হে হে! এটা তো সবাই পারে।
- হে হে হে! হাসি বন্ধ কর, বেয়াদপ! ডান হাত মাথার উপর দিয়া তুলে বাম কান ধরে দেখা।
- এই যে ...... ধরলাম ....
- এইভাবে বলছি! মাথার উপর দিয়ে ধর!
- এইভাবে তো আমার আব্বা ও পারবে না। আমি অন্যভাবে পারি।
- কিভাবে?
- দুপায়ের ভিতর দিয়ে হাত ঢুকিয়ে কান ধরতে পারি।
- দেখা .....
রসিক খুশি মনে পায়ের ভিতর দিয়ে হাত ঢুকিয়ে কান ধরার চেষ্টা করলো। কিন্তু রসিক তার পিছনে দুইটা শব্দ শুনতে পেল। রসিকের মনে পড়লো সে রাতে মুলা তরকারি খেয়েছে। এটা খেলে হালকা পাতলা গ্যাস বের হয়। এখনো তাই হয়েছে। তবে শব্দটা জোরেই হয়েছে। সেজন্যই ক্লাসের সবাই হাসাহাসি শুরো করলো। রসিকের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। সে দ্বিতীয় শব্দের কারণ বের করার চেষ্টা করছে। একটা হাত তার পেছনে নিয়ে গেল! বুঝলো তার প্যান্টটা গরুত্ববপূর্ণ সময়ে মূল পয়েন্টে ছিঁড়ে গেছে!
সে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। প্যান্টের পিছনে হাত রেখে ভৌ দৌড় দিলো। আর ঐ স্কুল মুখী হয় নি। তিন চারদিন তার খেলাধূলাও বন্ধ থাকলো। তবুও তার বন্ধু বান্ধবরা এসে তার মায়ের কাছে স্কুলের সে কাহিনী অনেক রস কস মিশিয়ে বর্ননা করছে। রসিক ছোট খাটো যেসকল গালি আয়ত্ব করেছিলো সেগুলো তার বন্ধুদের উপর প্রয়োগ করলো। যাতে তারা এখানে আসা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। বরং তারা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে তাকে তলা ছেঁড়া রসিক বলে খেলতে আসার জন্য জোরে জোরে ডাকতো আর হা হা হা হো হো করে হাসতো। রসিক সেসকল শুনতো আর তেলে বেগুনে জ্বলে উঠতো। কিন্তু ঘটনা তো সত্য, তাই সে তাদের গালি ছুড়িয়া মারিতো।
৫.
নিলুফা আক্তার। দশম শ্রেণীর ছাত্রী। রসিকের পাশের বাড়িতে থাকে। নিলুফার সাথে রসিকের বেজায় ভাব। নিলুফার প্রেম আছে পাশের গ্রামের হানিফের সাথে। হানিফ ইন্টারফেল করা মাছ চাষী। হানিফ আর নিলুফার প্রেমের একমাত্র সহযোগী হচ্ছে রসিক। নিলুফা তার গাছের যাবতীয় ফল টল খাইয়ে রসিকের মন জুগিয়ে চলে। কিন্তু সমস্যা হলো অন্য জায়গায়। একদিন নিলুফা ও হানিফ পুকুর পাড়ে ............
Thumbnails managed by ThumbPress
২২টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
ও আচ্ছা , আপনি ই সেই রসিক!!
চলুক আরো।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
আমি রসিক না।
আপনি মনে হয় ঐ কাহিনীটা পড়েছিলেন আমার ফেসবুকে। এ রকম আরেক অনেক কাহিনী জমে আছে রসিকের জন্য।
খসড়া
তা রসিক চান আপনেতো শুধু রসিক না আপনের বেসিক ও ভাল না হলে এই বয়সেই প্রেমের ডাকপিয়ন। আর পর্ব নেই?
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
একটা কমার (,) মূল্য অনেক বেশী :D)
পর্বের কি আর শেষ আছে। সবে তো স্কুল এ পৌছালো….
নাসির সারওয়ার
“একদিন নিলুফা ও হানিফ পুকুর পাড়ে …………”, রসিক নিশ্চয়ই বেরসিক কিছু করে ফেলেছিলো!
ভাবছি রসিকের হাই স্কুল এবং কলেজ লাইফ কেমন হবে! ঝেড়ে ফেলুন!!
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
হুম……
রসিকের কাজই হচ্ছে রসিকতা করা।
সেটা বৈ কিছু করবে না।
অরুনি মায়া
আপনার রসিক পর্ব গুলো ভালই লাগে |
তা শেষ অব্দি রসিকের লেখা পড়া হয়েছিল কিছু? নাকি রসে রসেই ভেসে গেছে? 🙂
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
জেনে প্রীত হইলাম।
লেখা পড়া তো হবেই।
একজন শিক্ষিত রসিক ই হবে। 😀
ইলিয়াস মাসুদ
রসিক ভাল লাগছে………. বড় কালের রসিক দেখতে চাই 🙂
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
ধন্যবাদ।
বড় কালের রসিক অবশ্যই দেখবেন।
লেখা হলে অবশ্যই দিবো।
শুন্য শুন্যালয়
টিচার রে জিজ্ঞেস করছে, আপনার নাম কি? এইটা দারুন মজা পাইছি 😀
রসিক বেরসিক কিছু করতেই পারেনা :p
দেখা যাউক।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
:D) 😀
রসিক তো রসিক।
বেরসিকতা আসতেই পারে নাহ্ :p
মেহেরী তাজ
মাঝখানে ঢুকে পড়ছি! তবে শেষ না পড়ে কোত্থাও যাচ্ছি না! চলুক।।।।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
মাঝখানে ঢুকেছেন!
এটা কোন সমস্যা নাহ্। আগের তো দুইটা পর্ব, ঐগুলা এর একটা লিখা আগেই আছে। খুঁজলেই পাবেন।
সাথে আছেন জেনে ভালো লাগলো।
অনেক ধন্যবাদ।
অপার্থিব
বড় কালের রসিকের রসিকতা জানার অপেক্ষায় থাকলাম।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
চেষ্টা করিবো অপেক্ষার পালা জলদি সমাপ্ত করিবার জন্য।
ব্লগার সজীব
রসিক চানের পরের পর্ব গুলোর অপেক্ষায় থাকলাম। আপনার উপস্থাপনা জটিল 🙂
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
ধন্যবাদ।
আবু খায়ের আনিছ
আরে পরের পর্ব কই., রসিক চান কি করল আবার বেরসিক কিছু করল না ত আবার?
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
রসিকতা ছাড়া রসিক অন্যকিছু কি করতে পারে নাকি!
নীলাঞ্জনা নীলা
রসিক গেলো কই? অপেক্ষায় আছি তো 😀
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
রসিকের লেখকের পরীক্ষা। ^:^