বিজয়ের মাস চলছে । লাল সবুজের এই পতাকার জন্য ১৯৭১ সনে এক সাগর রক্ত দিতে হয়েছিল আমাদের। শুধু মাত্র দেশ মাতাকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেছিল এই দেশের দামাল ছেলেরা। বাবা মা ভাই বোন স্ত্রীর ভালোবাসার টানকে উপেক্ষা করে ঝাঁপিয়ে পরেছিল যুদ্ধে।রণাঙ্গন থেকে মুক্তিযোদ্ধারা চিঠি দিয়েছেন তাঁদের প্রিয় জনকে। চিঠিতে যুদ্ধের অবস্থা , মুক্তিযোদ্ধাদের দেশের প্রতি ভালবাসা স্পর্শ করে যায় আমাদের ।

মুক্তিযোদ্ধাদের এমন চিঠি প্রকাশ করেছে প্রথম আলোর প্রকাশনী প্রথমা । সুন্দর এই ঐতিহাসিক বইটির মুল্য ৩০০ টাকা।

এই পোস্টে চারটি চিঠি । শহীদ রুমির একটি চিঠিও আছে এখানে।

 

তারিখ: ২৩-০৫-১৯৭১ ইং

জনাব বাবাজান,

আজ আমি চলে যাচ্ছি। জানি না কোথায় যাচ্ছি। শুধু এইটুকু জানি, বাংলাদেশের একজন তেজোদৃপ্ত বীর স্বাধীনতাকামী সন্তান হিসাবে যেখানে যাওয়া দরকার আমি সেখানেই যাচ্ছি। বাংলার বুকে বর্গী নেমেছে। বাংলার নিরীহ জনতার ওপর নরপিশাচ রক্তপিপাসু পাক-সৈন্যরা যে অকথ্য বর্বর অত্যাচার আর পৈশাচিক হত্যালীলা চালাচ্ছে, তা জান সত্ত্বেও আমি বিগত এক মাস পঁচিশ দিন যাবৎ ঘরের মধ্যে বিলাস-ব্যসনে মত্ত থেকে যে ক্ষমাহীন অপরাধ করেছি, আজ সেই অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য যাত্রা শুরু করলাম। সমগ্র বাঙালী যেন আমার ক্ষমা করতে পারেন। আপনি হয়তো দুঃখ পাবেন। দুঃখ পাওয়ারই কথা। যে

সন্তানকে দীর্ঘ যোল বছর ধরে তিল তিল করে হাতে- কলমে মানুষ করেছেন, যে ছেলে আপনার বুকে বারবার শনি কৃপাণের আঘাত হেনেছে, যে ছেলে আপনাকে এতটুকু শান্তি দিতে পারেনি, অথচ আপনি আপনার সেই অবাধ্য দামাল ছেলেকে বারংবার ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছেন, যার সমস্ত অপরাধ আপনি সীমাহীন মহানুভবতার সঙ্গে ক্ষমা করেছেন। আপনি আমাকে ক্ষমা করেছেন সম্ভবত একটি মাত্র কারণে যে, আপনার বুকে পুত্রবাৎসল্যের রয়েছে প্রবল আকর্ষণ।

আজ যদি আপনার সেই জ্যেষ্ঠ পুত্র ফারুক স্বেচ্ছায় যুদ্ধের ময়দানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে, তাহলে আপনি দুঃখ পাবেন, বাব? আপনার দুঃখিত হওয়া সাজে না, কারণ হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যদি নিহত হই, আপনি হবেন শহীদের পিতা। আর যদি গাজী হিসেবে আপনাদের স্নেহছায়াতলে আবার ফিরে আসতে পারি, তাহলে আপনি হবেন গাজীর পিতা। গাজী হলে আপনার গর্বের ধন হব আমি। শহীদ হলেও আপনার অগৌরবের কিছু হবে না। আপনি হবেন বীর শহীদের বীর জনক। কোনোটার চেয়ে কোনোটা কম নয়। ছেলে হিসেবে আমার আবদার রয়েছে আপনার ওপর। আজ সেই আবদারের ওপর ভিত্তি করেই আমি জানিয়ে যাচ্ছি বাবা, আমি তো প্রবেশিকা পরীক্ষার্থী। আমার মনে কত আশা, কত স্বপ্ন। আমি প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করে কলেজে যাব। আবার কলেজ ডিঙিয়ে যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গনে। মানুষের মতো মানুষ হব আমি। আশা শুধু আমি করিনি, আশা আপনিও করেছিলেন। স্বপ্ন আপনিও দেখেছেন। কিন্তু সব আশা, সব স্বপ্ন আজ এক ফুৎকারে নিভে গেল। বলতে পারেন, এর জন্য দায়ী কে? দায়ী যারা সেই নরঘাতকের কথা আপনিও জানেন। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ওদের কথা জানে। ইংরেজিতে একটা কথা আছে- গড়ঃযবৎ ধহফ গড়ঃযবৎষধহফ ধৎব ংঁঢ়বৎরড়ৎ :ড় যধাবহ. স্বর্গের চেয়েও উত্তম মা এবং মাতৃভূমি। আমি তো যাচ্ছি আমার স্বর্গাদপী গরীয়সী সেই মাতৃভূমিকে শত্রুর কবল থেকে উদ্ধার করতে। আমি যাচ্ছি শত্রুকে নির্মূল করে আমার দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। বাব, শেষবারের মতো আপনাকে একটা অনুরোধ করব। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট সব সময় দোয়া করবেন, আমি যেন গাজী হয়ে ফিরতে পারি। আপনি যদি বদদোয়া বা অভিশাপ দেন, তাহলে আমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

জীবনে বহু অপরাধ করেছি। কিন্তু আপনি আমায় ক্ষমা করেছেন। এবারও আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন, এই আশাই আমি করি। আপনি আমার শতকোটি সালাম নেবেন। আম্মাজানকে আমার কদমবুসি দেবেন এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করতে বলবেন। ফুফু আম্মাকেও দোয়া করতে বলবেন। ফয়সল, আফতাব, আরজু, এ্যানি ছোটদের আমার স্নেহসিস দেবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন আর সব সময় হুঁশিয়ার থাকবেন।

ইতি

আপনার স্নেহের ফারুক 

চিঠি লেখকঃ ফারুক। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আমানউল্লাহ চৌধূরী ফারুক। চট্রগ্রাম সিটি কলেজিয়েট স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার বামনী বাজারের দক্ষিণে বেড়িবাঁধের ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। এই যুদ্ধে আরও চার মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। চিঠিটি মৃত্যুর কদিন আগে লেখা।

চিঠি প্রাপকঃ বাবা হাসিমউল্লাহ চৌধুরী। ঠিকানা: অম্বরনগর মিয়াবাড়ি, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী।

চিঠিটি পাঠিয়েছেনঃ মেজর(অব.) কামরুল হাসান ভুঁইয়া।

 

তারিখ: ২৮/৫/১৯৭১ ইং

স্নেহের মা জানু,

আমার আন্তরিক স্নেহ ও ভালোবাসা নিয়ো। তোমার শাশুড়ি আম্মাকে আমার সালাম দিয়ো। দুলা মিয়া, পুত্রা মিয়ারা, ঝিয়ারীগণ ও সোহরাব, শিমুলকে আমার আন্তরিক স্নেহ ও ভালোবাসা জানাইয়ো। এখানে খাওয়াদাওয়ার যেমন অসুবিধা, তেমন লোকের ঝামেলাও অনেক বেশি। সেদিন তোমাদের বাড়ি হইতে আসিতে কোনো অসুবিধা হয় নাই। দেড় ঘন্টার মধ্যে বিলোনিয়া পৌঁছিয়াছি। তোমাদের বাড়ি হইতে যেদিন ফিরিয়াছি সে রাতে মোটেই ঘুম হয় নাই। দুলা মিয়া, তুমি এবং আমার স্নেহের নাতিদের কথা মনে পড়ার সাথে সাথে ২৩/০৪/৭১ ইং তারিখে (....) তোমার মাতা, রেখা, রেণু, রুবি, রৌশন ও তার চারটি ছেলে। আমার বৃদ্ধ ও রুগণ আব্বা ও জীবনের যৎসামান্য *২ লক্ষ টাকার নগদ টাকা ও সম্পদ সবকিছুর কথা। দোকান, বাসা ও মালপত্র ছাড়াও সরকারের ঘরে ৮০ হাজার টাকার মতো পাওনা রহিয়াছে। তা পাওয়া যাইকে কি না যাইবে তাহার কথা বেশি ভাবি কি না। বাংলাদেশে যখন ফিরিতে পারি এবং যদি কখনো ফিরি তবে ফেলিয়া আসা ছাইয়ের উপর দাঁড়াইয়া আবার নতুনভাবে গড়িয়া তোলার চেষ্টা করিবার আশা নিয়া বাঁচিয়া আছি। জানু, কয়েকটা কথা প্রায় দিন বারবার মনে পড়ে। এই কথাগুলো ভুলিতে পারিব দেশে ফিরিবার পরিবেশ সৃষ্টি করিয়া, দেশে ফিরিয়া গিয়া, নতুবা মৃত্যুর পর। ২২/৪/৭১ ইং তারিখ দিবাগত রাত্র দেড়টার সময় দেশের বাড়ি হইতে বাহির হওয়ার সময় সকলের থেকে বিদায় নেওয়ার পর যখন আব্বার থেকে বিদায় নিতে যাই তখন আব্বা আমাকে কোনো অবস্থায় যাইতে দিবেন না বলিয়া হাত চাপিয়া ধরেন এবং জোরে কাঁদা আরম্ভ করিয়া দেন। বাড়িতে বা দেশে থাকা নিরাপদ নহে ভাবিয়া রৌশন এবং অন্যরা জোর করিয়া আব্বার হাত হইতে আমাকে ছিনাইয়া লয় এবং আল্লাহর হাতে সঁপিয়া দিয়া রাত্র ২ ঘটিকার সময় সকলের কাঁদা রোল ভেদ করিয়া তোমার আম্মার সাথে দেখা করিবার জন্য কায়ুমকে সাথে লইয়া কচুয়ার পথে রওনা হই। কচুয়া একদিন থাকিয়া তোমার আম্মা, রেখা, রেণু ও রুবিকে কাঁদা অবস্থায় ফেলিয়া রাত্র ৪টার সময় রওনা হইয়া তোমার নিকট আসিয়া পৌঁছাই।

বাড়ি হইতে রওনা হওয়ার পূর্বেই কথা হইয়াছিল যে রৌশন পরের দিন সকালে চর চান্দিয়া রওয়ানা হইয়া যাইবে। এই ঋতুতে যে কোনো দিন সে এলাকায় থাকার অন্য বিপদ ছাড়াও ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ যেকোনো মুহূর্তেই হইতে পারে। কোনো গত্যন্তর না থাকায় আমার প্রাণের 'মা' রৌশন ও সোনার বরন চারজন নাতিকে সমুদ্রের ঢেউয়ের মুখে ঠেলিয়া দিতে বাধ্য হইয়াছি। তুমিও জানো যে তোমার মাতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমি তাহাদিগকে উক্ত কারণে রাখিতে চাহিতাম। তোমাদের সকলের মুখ উজ্জ্বল করিবার জন্য নিজের চেষ্টায় যাহা গড়িয়া তুলিয়াছিলাম, তাহা আজ অবস্থার গতি পরিবর্তনের সাথে সাথে সব ধূলিসাৎ হইয়া গেল। সবকিছু ভুলিবার চেষ্টা করিয়াও ভোলা যায় না। 'মা' তুমি অনুভব করিতে পার কি না জানি না, তবে আমার ছেলেদের অপেক্ষা তোমাদেরকে অন্তরে অধিক ভালোবাসি। সে ক্ষেত্রে আজ আমার পাঁচ মেয়েকে ভিনদেশে রাখিয়া আসিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিতে পারিতেছি না। জানু, আজকে তুমি আমার একমাত্র নিকটে, তাই তোমাকে দেখিবার চেষ্টা করি। দুলা মিয়া, তুমি ও সোহরাব, শিমুলকে সামনে দেখিতে পাইলে একটু আনন্দ পাই এবং কিছুটা মনের ভাব লাঘব হয়। আত্মীয়স্বজন সকলের আগ্রহ দেখিয়া নিজেকে হালকা বোধ করি, চিন্তামুক্ত থাকি। কায়ুম, মোতা, কবীর, আপসার ও আক্তার সব এখানে আছে। ক্যাম্পে জায়গা হয় নাই বলিয়া। এখানে ফেরত আসিয়াছে। আগামী ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করিতেছে। আশা, কয়েক দিনের মধ্যে যাওয়া হইবে। সোহরাব ও শিমুলের প্রতি লক্ষ রাখিয়ো। আমি ভালো। তোমাদের কুশল কামনা করি।

 

ইতি তোমারই

বাবা

চিঠি লেখক: মরহুম আবদুল মালেক, ফেনী জেলা চেম্বার অব কমার্স ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। মুক্তিযোদ্ধা চলাকালে তিনি ফেনীর বিলোনিয়া ট্রানজিট ক্যাম্পের প্রধান ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণের জন্য ফেনীর মধুপুরের নিজ গ্রাম থেকে রওনা হয়ে বিলোনিয়া ট্রানজিট ক্যাম্পে আসেন। ক্যাম্পে পৌঁছানোর পর এই চিঠিটি লেখেন।

চিঠি প্রাপক: মেয়ে জানু।

চিঠিটি পাঠিয়েছেন: ফরহাদ উদ্দীন আহাম্মদ। চিঠি লেখকের নাতি এবং জানুর দ্বিতীয় পুত্র।

 

তারিখ: আগরতলা, ১৬ই জুন ১৯৭১

প্রিয় পাশা মামা,

অবাক হয়ো না! এটা লেখা হয়েছিল আর তোমার কাছ পর্যন্ত পৌঁছালও। পড়ার পর চিঠিটা নষ্ট করে ফেলো। এ নিয়ে আম্মাকে কিছু লিখে জানানোর চেষ্টা কোরো না। তাহলে তাদের বিপদে পড়তে হবে। তাড়াহুড়া করে লিখলাম। হাতে সময় খুব কম। বেস ক্যাম্পের উদ্দেশে কাল এখান তেকে চলে যেতে হবে।

আমরা একটা ন্যায়সংগত যুদ্ধে লড়ছি। আমরা জয়ী হব। আমাদের সবার জন্য দোয়া কোরো। কী লিখব বুঝতে পারছি না- কত কী নিয়ে যে লেখার আছে। নৃশংসতার যত কাহিনী তুমি শুনছ, ভয়াবহ ধ্বংসের যত ছবি তুমি দেখছ, জানবে তার সবই সত্য। ওরা আমাদের নৃশংসতার সঙ্গে ক্ষতবিক্ষত করেছে, মানব-ইতিহাসে যার তুলনা নেই। আর নিউটন আসলেই যথার্থ বলেছেন, একই ধরনের হিংস্রতা নিয়ে আমরাও তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ব। ইতিমধ্যে আমাদের যুদ্ধ অনেক এগিয়ে গেছে। বর্ষা শুরু হলে আমরা আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়ে দেব। জানি না আবার কখন লিখতে পারব। আমাকে লিখো না। সোনার বাংলার জন্য সর্বোচ্চ যা পারো করো।

এখনকার মতো বিদায়।

ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাসহ

রুমি

চিঠি লেখক: শহীদ মুক্তিযোদ্ধা রুমী। পুরো নাম শাফী ইমাম রুমী। বাবা শরীফুল আলম ইমাম আহমেদ, মা জাহানারা ইমাম।

চিঠি প্রাপক: সৈয়দ মোস্তফা কামাল পাশা। শহীদ রুমীর মামা।

বর্তমান ঠিকানা: ৫ এৎবহভবষষ এধৎফবহং, ঐধৎৎড়ি গরফফষবংবী, ঐঅ৩ ০ছত, টক.

সংগ্রহ: তাহমীদা সাঈদা ও শহীদজননী জাহানারা ইমাম পাঠাগার থেকে।

 

তারিখ: ১৬/৬/১৯৭১ইং

হেনা,

আশা করি ভালো আছ। তোমাদিগকে খবর দেওয়া ছাড়া তোমাদের কোনো খবর পাওয়ার কোনো উপায় নেই, আর আশা করেও লাভ নেই। অনেকের নিকট বলে দেই মহিশখালীর ঈ/ঙ ঝবশধহফধৎ ঘঁৎর চিঠি পাঠালে সে আমার নিকট পাঠাতে পারে। আল্লাহর নিকট শুধু প্রার্থনা এই যে, তোমরা সবাই যেন ভালো থাক। আমি অদ্য মহেশখলা থেকে তুরার পথে রওনা হয়েছি। অদ্য আমি মেঘালয় প্রদেশের মহাদেও ক্যাম্পে আছি। আমার সঙ্গে খালেক সাহেব গ.চ.অ ও জবেদ সাহেব গ.ঘ.অ আছেন। আগামীকল্য রংড়া ক্যাম্পে গিয়ে থাকবার আশা রাখি। সমস্ত পথই হেঁটে চলছি। মহেশখলা হতে রংড়া ৩৫ মাইল। রংড়া হতে গাড়ি পাওয়ার রাস্তা হবে তুরা। যা হোক আমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। নানান দেশের ওপর দিয়ে চলেছি। ছোটবেলা পড়তাম, ময়মনসিংহের উত্তরে গারো পাহাড় আর এখন গারো পাহাড়ের সর্বোচ্চ টিলার উপর ১০ দিন ঘুমিয়ে এলাম আর পাহাড়ের ভিতর দিয়েই রওনা হলাম। দেশ ভ্রমণে আনন্দ আছে কিন্তু যখন তোমাদের কথা মনে হয় তখন মন ভেঙে যায়। বিশেষ করে সোহেলের কথা ভুলতেই পারি না। সোহেলটাই আমাকে বেশি বিব্রত করছে। ওর দিকে বিশেষ লক্ষ রেখো। তোমাকে আর কী লিখব। তোমরা বাড়ি থেকে সরে গেছ কি না জানি না। তোমাদের উপর আক্রমণ আসতে পারে; তাই পূর্ব পত্রে লিখেছিলাম বাড়ি থেকে সরে যেতে। কোথায় আছ তা যেন অন্য লোক না জানে। যেখানেই যাও রাস্তায় যেন কোনো অসুবিধা না হয় তার প্রতি বিশেষ নজর রেখে চলো। সোহেল বোধহয় আমাকে খোঁজে। আস্তে আস্তে হয়তো ভুলেই যাবে। যা হোক নামাজ নিয়মিত পড়তে চেষ্টা করি। তার জন্য কোনো চিন্তা করো না। পূর্বে আরও ২টি চিঠি দিয়েছি তাতে ধান ও গাড়িটার কথাও বলেছিলাম সরিয়ে রাখতে। আজকে স্বাধীন বাংলা বেতারের খবরে নিশ্চয়ই শুনেছ যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িও আক্রমণ করতে ছাড়েনি। সুতরাং খুব সাবধান। বিশেষ আর কি লিখব। ইচ্ছা আছে তুরা হতে ফিরে আসব আসব আবার মহিশখালী দোয়া করিয়ো।

আখলাক

চিঠি প্রেরখ: আখলাকুল হোসেইন আহমেদ। ১৯৭০ সালে তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। চিঠিটি তিনি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলার মাহদেও থেকে লিখেছিলেন। মু্ি‌ক্তযুদ্ধ চলাকালে তিনি প্রথমে তুরার মহিশখালীর ক্যাম্প ইনচার্জ ছিলেন। পরে জোনাল অ্যাডমিনিষ্ট্রেটর নিযুক্ত হন।

তাঁর বর্তমান ঠিকানা: ছায়ানীড়, মোহনগঞ্জ, নেত্রকোনা।

চিঠি প্রাপক: হেনা, লেখকের স্ত্রী। তাঁর পুরো নাম হোসনে আরা হোসেইন।

টিঠিটি পাঠিয়েছেন: সাইফ-উল হাসান, অ্যাপার্টমেন্ট ১ সি, বিল্ডিং-২ এ, রোড ১৩, পিসিকালচার হাউজিং সোসাইটি, আদাবর, ঢাকা।

আগের পোস্ট  : রণাঙ্গন থেকে পাঠানো চিঠি / একাত্তরের চিঠি-১

0 Shares

৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ